বাংলাদেশ দেয় আম, পাকিস্তান দেয় পাকিস্তানি ‘কালচার'
হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৫ জুলাই ২০২২
কয়েক দিন আগেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে আম পাঠিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ সেই আম শেষ না হতেই বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননা করলো পাকিস্তান৷
বিজ্ঞাপন
এর আগেও বাংলাদেশের জন্য অবমননাকর অনেক ঘটনাই ঘটিয়েছে একাত্তরে গণহত্যা ও ধর্ষণ, লুটপাটের জন্য এখনো ক্ষমা না চাওয়া পাকিস্তান৷
গত ৩ জুলাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফকে একটন আম্রপলি” আম উপহার হিসেবে পাঠান৷ওই আমের খুশবু বাতাসে মিলানোর আগেই বাংলাদেশে পাকিস্তান হাইকমিশন তাদের ফেসবুক পেজে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা বিকৃত করল৷ তারা তাদের ফেসবুকের কাভার পেজে গ্রাফিক্স-এর মাধ্যমে পাকিস্তানের পতাকার সাথে বাংলাদেশের পতাকা এক করে আপলোড করে গত বৃহস্পতিবার৷ তবে প্রতিবাদের মুখে পরে ওই পতাকা ফেসবুক থেকে রবিবার সরিয়ে নেয়া হয়৷
ঘটনা সম্পর্কে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন,"আমরা তাদের (পাকিস্তান) বলেছি, এটা আমাদের পছন্দ নয়৷ তবে তারা জানিয়েছেন, তারা কোনো অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এই ছবি প্রকাশ করেনি৷” পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া এই কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ৷ এর আগে শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাকিস্তান দূতাবাসকে পতাকা সরিয়ে ফেলতে বলে৷
বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশ পাকিস্তানের প্রতি নমনীয় আচরণ করছে, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়৷ তারা মনে করেন, পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের এত ঘনিষ্ঠতার দরকার নেই৷ কারণ, পাকিস্তান এখনো চায় বাংলাদেশ তাদের সঙ্গে একীভূত হোক৷
এর আগের বছর ২০২১ সালের জুলাই মাসে ইমরান খান যখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, তখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এক হাজার কেজি ‘হাঁড়িভাঙা' আম পাঠিয়েছিলেন৷ এটাকে দেখা হয়েছে ‘‘ম্যাঙ্গো ডিপ্লোম্যাসি'' হিসেবে৷'' তবেপাকিস্তান বাংলাদেশের ব্যাপারে কখনোই ইতিবাচক মনোভাব দেখায়নিবলে মনে করেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির৷ তিনি বলেন, পাকিস্তান এখনো বাংলাদেশে গণহত্যার জন্য ক্ষমা চায়নি৷ তারা তাদের পরাজয়কে মেনে নেয়নি৷ তাই তারা যখনই সুযোগ পেয়েছে, তখনই বাংলাদেশকে অপমান করার চেষ্টা করেছে৷
আর সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন বলেন, পাকিস্তান একাত্তরের গণহত্যার বিচার না চেয়ে তার ধারাবাহিকতাই রক্ষা করছে৷
২০২১ সালের ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম পাকিস্তানকে বাংলাদেশে গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে বলেন৷ তার সঙ্গে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত ইমরান আহমেদ সিদ্দিকী দেখা করতে গেলে তিনি এই আহ্বান জানান৷ কিন্তু জানানো হয়, পাকিস্তান ক্ষমা চাইবে না৷ ২০০৯ সালে তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি পাকিস্তানি দূত আলী বাসারকে একই আহ্বান জানান৷ কিন্তু তখনও জানানো হয় পাকিস্তান ক্ষমা চাইবে না৷
ঢাকারমাঠেপাকিস্তানিপতাকা: ২০২১ সালের নভেম্বরে ঢাকার মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে মাঠে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময় পাকিস্তানি খোলোয়াড়রা পাকিস্তানের পতাকা ওড়ায় পতাকাবিধি লঙ্ঘন করে৷ ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে তারা ক্ষান্ত দেয়৷
চীন-পাকিস্তান, নাকি ভারত?
48:45
মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা: ২০২১ সালের অক্টোবরে ঢাকায় পাকিস্তান দূতবাসের ওয়েব সাইটে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়৷ ৯ অক্টোবর পাকিস্তান রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় প্রতিবাদ জানালে ভিডিওটি সরিয়ে ফেলা হয়৷ ২০১৯ সালে পাকিস্তানের একটি অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করা হয়৷
কূটনীতিকবহিষ্কার: ২০০০ সালে পাকিস্তানের ডেপুটি হাই কমিশনার ইরফান-উর রাজাকে বাংলাদেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল এক সভায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে চরম অবমাননাকর মন্তব্য করার কারণে৷
যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষেপাকিস্তান: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যখনই জামায়াতের কোনো নেতা একাত্তরের অপরাধের জন্যদণ্ডিত হয়েছেন, তখনই পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে জামায়াত, মুসলিম লীগ ও ইমরান খানের দল তেহরিক-ই ইনসাফ, তার প্রতিবাদ করেছে৷ জামায়াত নেতাদের ফাঁসির নিন্দা জানিয়ে পকিস্তানের জাতীয় পরিষদে প্রস্তাবও পাস হয়েছে৷
জঙ্গিদেরমদতদাতাপাককূটনীতিক: ২০১৫ সালের ৩১ জানুয়ারি ঢাকায় পাকিস্তানি দূতাবাসের কনস্যুলার কর্মকর্তা মাজহার খানকে বহিস্কার করা হয়৷ তিনি জঙ্গিদের কাছে জাল টাকা হস্তান্তর করার সময় গুলশানের এক হোটেলে গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়েন৷
বিজয়ের পতাকা যেভাবে পেলো বাংলাদেশ
লাল-সবুজের এই পতাকা শুধু দেশমাতৃকার পরিচয় নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধের আবেগ ও চেতনা৷ ছবিতে তুলে ধরা হলো বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার গৌরবোজ্জ্বল পথ পরিক্রমা৷
ছবি: MOHAMMAD PONIR HOSSAIN/REUTERS
প্রথম জাতীয় পতাকা
সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা বাংলাদেশের প্রতীক গাঢ় সবুজ রঙ, তার মাঝে বিপ্লবের প্রতীক লাল সূর্য৷ সূর্যের মাঝখানে সোনালি বাংলাদেশের প্রতীক সোনালি মানচিত্র– বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় পতাকার নকশা ছিল এমন৷ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তা সাত কোটি মানুষকে সাহস জুগিয়েছে৷ ছবি: মুক্তির গান৷
ছবি: AudioVision
পতাকার জন্মকথা
১৯৭০ সালের ৭জুন ঢাকার পল্টন ময়দানে একটি সামরিক কুচকাওয়াজে আসবেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান৷ আগের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের (তৎকালীন ইকবাল হল) একটি কক্ষে ‘স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস’ সংগঠনের কয়েকজন কর্মী এবং ছাত্রনেতারা পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেন৷ ঢাকার নিউমার্কেট থেকে সবুজ কাপড় কিনে তাতে লাল একটি বৃত্ত সেলাই করে আনা হয়৷ লাল বৃত্তের মাঝে মানচিত্র আঁকেন শিবনারায়ণ দাস৷
ছবি: AP/picture alliance
প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন
১৯৭১ সালের ২মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে জাতীয় পতাকা প্রথম উত্তোলন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)-র তৎকালীন ভিপি আ স ম আবদুর রব৷ তার সঙ্গে পতাকাটির নকশা চূড়ান্তে আরো ছিলেন ছাত্রনেতা শাহজাহান সিরাজ, হাসানুল হক ইনু, ইউসুফ সালাহউদ্দিন আহমেদ, কামরুল আলম খান (খসরু) প্রমুখ৷
ছবি: Rajib Paul
বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে পতাকা
বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে নিজ বাসভবনে প্রথমবার জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন৷ ১৯৭১ সালের ৬ মার্চ থেকে ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত এই পতাকা ব্যবহৃত হয়৷ ছবি: ১৯৭১-এর ১৮ ডিসেম্বর ঢাকায় বিধ্বস্ত শহিদ মিনারের সামনে বাংলাদেশের তখনকার পতাকা হাতে জনতা৷
ছবি: Journey/A. Hoque
পরিমার্জিত পতাকা
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ৷ ১৯৭২ সালে চিত্রকর কামরুল হাসানকে পতাকার মাঝের মানচিত্র বাদ দিয়ে মাপ ও রঙসহ নতুন নকশা এবং এর ব্যাখ্যা সম্বলিত একটি প্রতিবেদন তৈরির দায়িত্ব দেন বঙ্গবন্ধু৷ সবুজ আয়তক্ষেত্রের মাঝে লাল বৃত্ত রেখে পতাকা পরিমার্জন করেন কামরুল হাসান৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
মানচিত্র সরিয়ে লাল-সবুজ
১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি জাতীয় পতাকা থেকে সোনালি মানচিত্র সরিয়ে ফেলা হয়৷ এরপর ১৭ জানুয়ারি এই নতুন রূপ সরকারিভাবে গৃহীত হয়৷ সবুজ রং বাংলার প্রকৃতি ও চিরতারুণ্যের প্রতীক৷ বৃত্তের লাল রঙ উদীয়মান সূর্য এবং মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের আত্মত্যাগের প্রতীক৷
ছবি: MOHAMMAD PONIR HOSSAIN/REUTERS
জাতীয় পতাকার মাপ
১৯৭২ সালে জাতীয় পতাকা বিধিমালা জারি করা হয়৷ তিন নম্বর বিধিতে বলা হয়েছে, পতাকার দৈর্ঘ্য ১০ ফুট ও প্রস্থ হবে ছয় ফুট৷ লাল বৃত্ত পতাকার দৈর্ঘ্যের এক-পঞ্চমাংশ ব্যাসার্ধ, অর্থাৎ দুই ফুট৷ পতাকার দৈর্ঘ্যের সাড়ে চার ফুট ওপরে প্রস্থের মাঝ বরাবর অঙ্কিত আনুপাতিক রেখার ছেদবিন্দু হবে লাল বৃত্তের কেন্দ্র৷
ছবি: Rajib Paul
পতাকার রং
বিধি অনুযায়ী, গাঢ় সবুজ রঙের মাঝখানে একটি লাল বৃত্ত থাকে৷ পতাকার সবুজ পটভূমি প্রতি হাজারে প্রোসিয়ন ব্রিলিয়ান্ট গ্রিন এইচ-২ আর এস ৫০ পার্টস৷ লাল বৃত্তাকার অংশটি প্রতি হাজারে প্রোসিয়ন ব্রিলিয়ান্ট অরেঞ্জ এইচ-২ আর এস ৬০ পার্টস৷
ছবি: Rajib Paul
মানব পতাকার বিশ্বরেকর্ড
২০১৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে ঢাকার শেরেবাংলা নগরের জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ২৭ হাজার ১১৭ জন মানুষ ‘মানব পতাকা’ গঠন করে বিশ্বরেকর্ড গড়ে৷ গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানব পতাকা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সেই উদ্যোগ৷
ছবি: Reuters
যানবাহনে পতাকা
রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর মোটরযান, নৌযান এবং উড়োজাহাজে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা যায়৷ এছাড়া জাতীয় সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী বা একই পদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ, চিফ হুইপ, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ কূটনৈতিক/কনস্যুলার/ মিশনের প্রধান ভ্রমণকালীন মোটরযান ও নৌযানে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করতে পারেন৷
ছবি: Rajib Paul
পতাকা উত্তোলন দিবস
রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রীবর্গ, চিফ হুইপ ও পার্বত্য জেলার স্থানীয় সরকার পরিষদ চেয়ারম্যানের বাসভবন, গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সব কর্মদিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়৷ ঐতিহাসিক দিবস, ঈদে মিলাদুন্নবী এবং বিশেষ দিবসে বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে অবস্থিত কূটনৈতিক মিশনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়৷
ছবি: Rajib Paul
পতাকা অর্ধনমিত রাখা
২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস এবং সরকার কর্তৃক প্রজ্ঞাপিত বিশেষ দিবসে পতাকা অর্ধনমিত থাকে৷ এক্ষেত্রে খুঁটির ওপর থেকে পতাকার প্রস্থের সমান নীচে রাখা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বিদেশে প্রথম পতাকা উত্তোলন
১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল ভারতের কলকাতায় তৎকালীন পাকিস্তান উপ-হাইকমিশনে কর্মরত উপ-হাইকমিশনার এম হোসেন আলী প্রথমবার বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন৷ বিদেশের মাটিতে সেটাই ছিল বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন৷ আন্তর্জাতিক ও দ্বিপাক্ষিক অনুষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য টেবিল পতাকার মাপ ১০*৬ ইঞ্চি৷ ছবি: ২০১১ সালে স্বাধীনতা দিবসে বার্লিনে বাংলাদেশ দূতাবাসের পতাকা উত্তোলন৷
ছবি: Botschaft von Bangladesch, Berlin
জাতীয় দিবসে পতাকা সেলাইয়ের ধুম
২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশে জাতীয় পতাকার চাহিদা বাড়ে৷ ঢাকার মাতুয়াইলে বিভিন্ন কারখানায় দর্জিরা লাল-সবুজ কাপড় দিয়ে বুনতে থাকেন বিভিন্ন আকারের পতাকা৷ তাদের মধ্যে নারীর সংখ্যা বেশি৷
ছবি: Rajib Paul
মাস্কে পতাকা
করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বানানো মাস্কেও জুড়ে দেওয়া হয়েছে লাল-সবুজের আবেগ৷ স্বাধীনতার মাসে চোখে পড়েছে এমন দৃশ্য৷ এছাড়া বিভিন্ন বিপণি বিতানে ও রাস্তার ধারে ছোট-বড় সবার পোশাকে লাল-সবুজ রঙের প্রভাব দেখা যায়৷
ছবি: Rajib Paul
লাল-সবুজের বাংলাদেশ
স্বাধীনতা ও বিজয়ের মাসে পরম মমতায় জাতীয় পতাকা ওড়ান অনেকে৷ মুক্তিযুদ্ধ ও দেশপ্রেমের চেতনায় লাল সবুজের বাংলাদেশ হয়ে থাক অপরূপ৷
ছবি: Rajib Paul
16 ছবি1 | 16
বহিষ্কৃত আরেক ‘জঙ্গিবান্ধব' কূটনীতিক: ২০১৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে ঢাকা থেকে বহিস্কার করা হয় আরেক পাকিস্তানি কূটনীতিক ফারিনা আরশাদকে৷ ওই ঘটনার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে পাকিস্তানও বাংলাদেশের এক নারী কূটনীতিককে পাকিস্তান থেকে বহিষ্কার করেছিল৷
বিশ্লেষকরাযাবলেন
শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘‘পাকিস্তানের সাথে তো আমাদের এত প্রেম-প্রীতির দরকার নেই৷ প্রথম বার যখন প্রধানমন্ত্রী আম পাঠিয়েছেন তখনো আমরা প্রতিবাদ করেছি৷ কিন্তু আমরা দেখছি পাকিস্তানের প্রতি বাংলাদেশের নমনীয় আচরণ৷ বাংলাদেশের ৩০ লাখ শহিদের প্রতি যদি কারুর দায়বদ্ধতা থাকে, তাহলে পাকিস্তানের প্রতি এ ধরনের নমনীয় আচরণ উচিত না৷”
‘‘পাকিস্তানের সাথে তো আমাদের এত প্রেম প্রীতির দরকার নাই’’
This browser does not support the audio element.
তার কথা, ‘‘ মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের নৈতিক ও রাজনৈতিক পরাজয় হয়েছে৷ তারা এটা মেনে নিতে পারেনি৷ তাই যখনই তারা পেরেছে তখনই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে৷ তাদের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করলে তো আমরা আমাদের পাওনা আদায় করতে পারবো না৷ তাই আমাদের পাস্তিানের সাথে সর্বনিম্ন কূটনৈতিক সম্পর্কের বেশি কোনো সম্পর্ক রাখার দরকার নেই৷ তিনি বলেন, ‘‘এবার পতাকা বিকৃতির পরও পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে সাধারণ নমনীয় ভাষা ব্যবহার করেছেন তা গ্রহণযোগ্য নয়৷
‘‘বাংলাদেশের গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল’’
This browser does not support the audio element.
আর সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘‘একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তানে যে সরকার ছিল, তাদের উচিত ছিল বাংলাদেশে তারা যে গণহত্যা করেছে, অপরাধ করেছে তার জন্য ক্ষমা চাওয়া৷ কিন্তু তারা সেটা করেনি৷ তার পরের সরকারগুলোও একই অবস্থানে থেকেছে৷ হয়ত রাজনৈতিক কারণে, অথবা তাদের মনোভাবই এটা৷ ফলে পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালো হয়নি৷ ক্ষমা চাইলে সম্পর্ক ভালো হতে পারতো৷ আর ওই মনোভাবের কারণেই তারা এখনো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানাভাবে তৎপর৷ তা না হলে বাংলাদেশে বাংলাদেশি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে তো হইচই করার কিছু নেই৷''
এরপরও পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশ কি নতজানু পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করছে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘না আমি সেটা মনে করি না৷ বাংলাদেশকে কি যুদ্ধ জাহাজ পাঠিয়ে পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ করতে হবে? বাস্তব অবস্থা হলো, পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালো নয়৷ সেটা পাকিস্তানের কারণেই৷ কিন্তু তারা যদি ক্ষমা চাইতো, ওইসব আচরণ বন্ধ করতো, তাহলে ভালো হতে পারতো৷ কারণ, এখন তো ওই বিষয় ছাড়া তাদের সাথে আমাদের স্বার্থের তেমন কোনো সংঘাত নেই৷ তাদের আচরণের কারণেই সম্পর্ক ভালো হচ্ছে না৷”
তার কথায় , ‘‘আমাদের মনে রাখতে হবে পাকিস্তানের সাধারণ নাগরিকরা আমাদের সাথে কোনো অন্যায় করেনি৷ করেছে একাত্তরে পাকিস্তানের সরকার৷ পরবর্তী সরকারগুলোও একই আচরণ করছে৷ হতে পারে তাদের কালচারই এরকম৷ ''
বাংলাদেশকে যেমন নিরাপত্তা দিচ্ছে পাকিস্তান
২০০৯ সালে করাচিতে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের ওপর হামলার পর দেশের মাটিতে ক্রিকেট ফিরিয়ে আনতে মরিয়া পাকিস্তান৷ তাই সফররত বাংলাদেশ দলকে নজিরবিহীন নিরাপত্তা দিচ্ছে দেশটি৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Ali
দশ হাজার নিরাপত্তাকর্মী
হোটেল থেকে স্টেডিয়ামে যাতায়াতের সময় প্রায় দশ হাজার পুলিশ ও আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য বাংলাদেশ দলকে নিরাপত্তা দিচ্ছে৷ ২০০৯ সালে হোটেল থেকে স্টেডিয়ামে যাওয়ার সময়ই শ্রীলঙ্কা দলের উপর হামলা হয়েছিল৷ ছবিতে বাংলাদেশ দলের স্টেডিয়ামে যাওয়ার দৃশ্য দেখতে পাচ্ছেন৷
ছবি: Reuters/M. Raza
স্টেডিয়ামে নিরাপত্তা
পাকিস্তান পুলিশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, স্টেডিয়ামে তিন স্তরের নিরাপত্তা থাকবে৷ ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বে থাকবে ১৭টি সুপার পুলিশ ডিভিশন এবং ৪৮টি ডেপুটি সুপার পুলিশ ডিভিশন৷ ছবিটি স্টেডিয়ামের সামনে থেকে তোলা৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Ali
পাকিস্তান দলের নিরাপত্তা
পাকিস্তান পুলিশ জানিয়েছে, শুধু বাংলাদেশ নয় পাকিস্তান ক্রিকেট দলের সদস্যদেরও একই ধরনের নিরাপত্তা দেয়া হবে৷ ছবিতে পাকিস্তান দলকে কড়া প্রহরায় গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখতে পাচ্ছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Ali
থাকবে স্নাইপার
লাহোর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাবর সাঈদ জানিয়েছেন, ক্রিকেট দলের যাওয়া-আসার পথে বিভিন্ন ভবনের ছাদে স্নাইপাররা থাকবেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Ali
বাংলাদেশের নিরাপত্তাকর্মী
টাইগারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দলের সঙ্গে বাংলাদেশ থেকেও একটি নিরাপত্তা প্রতিনিধি দল পাকিস্তানে গেছে৷ জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সদস্যরা দলের সঙ্গে থাকবেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড(বিসিবি)-এর সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন৷