বাংলাদেশের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে জাতিসংঘের অর্থায়নে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করা হয়েছে৷ ‘থার্টি মিলিয়ন' নামের এই তথ্যচিত্র ইতিমধ্যে একটি অ্যাওয়ার্ড জিতেছে৷
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘের হিসেবে, ২১০০ সাল নাগাদ সাগরের পানির উচ্চতা প্রায় এক মিটার বাড়তে পারে৷ সেটি হলে বাংলাদেশের প্রায় ৩১.৫ মিলিয়ন বা তিন কোটিরও বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়তে পারে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বাংলাদেশের বেসরকারি সংস্থা ‘উন্নয়ন অন্বেষণ'৷ তখন এত মানুষ কোথায় যাবে – তথ্যচিত্র নির্মাণের সময় এই প্রশ্নটি করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক শহিদ ইসলামের কাছে৷ উত্তরে কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর তিনি বলেন, ‘‘আমি জানি না৷''
উন্নয়ন অন্বেষণ সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, সাগরের পানির উচ্চতা এক মিটার বাড়লে বাংলাদেশের প্রায় ১৮ শতাংশ এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷ বাংলাদেশের সাবেক পরিবেশ ও বন প্রতিমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের মতে, পানির উচ্চতা এক মিটার বাড়লে বাংলাদেশের মানচিত্র পরিবর্তিত হয়ে যাবে৷
ব্রিটিশ চলচ্চিত্রকার ড্যানিয়েল প্রাইস পরিচালিত তথ্যচিত্রটি নির্মাণে অর্থায়ন করেছে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি৷ জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে ৩৪ মিনিটের এই ডকুমেন্টারিটি দেখানো হয়৷ তথ্যচিত্রটি ইন্টারনেটেও দেখা যাচ্ছে৷
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি গ্রামের বেশিরভাগই বছরের পুরোটা সময় জলাবদ্ধ থাকে৷ এ সব গ্রামের মানুষেরা ভাসমান পদ্ধতিতে গাছের চারা এবং সবজি উৎপাদন করে কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছেন৷
ছবি: DW
কৃষকের কৌশল
বছর জুড়েই জলাবদ্ধতা, সাথে কচুরিপানার মিছিল৷ ফলে পিরোজপুরের নাজিরপুর এলাকার নিম্নাঞ্চলে স্বাভাবিক উপায়ে কৃষিকাজ কার্যত অসম্ভব৷ তবে বৈরী এই পরিবেশের সঙ্গে লড়াই করে নাজিরপুরের কৃষকরা নিজেদের কৌশলে চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষিকাজ৷
ছবি: DW
ভাসমান কৃষিক্ষেত্র
নাজিরপুরের মুগাঝোর এলাকার জলাভূমিতে ভাসমান কৃষিক্ষিত্র৷ নিজেদের উদ্ভাবিত ‘ধাপ’ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করেন এ সব এলাকার মানুষরা৷ জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) ‘কৃষি ঐতিহ্য অঞ্চল’ হিসেবেও স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে নাজিরপুরে উদ্ভাবিত ভাসমান পদ্ধতির এ চাষাবাদ৷
ছবি: DW
যেভাবে তৈরি হয় ধাপ
নাজিরপুরের পানিতে ডোবা নিম্নাঞ্চল কচুরিপানা, দুলালীলতা, শ্যাওলা ও বিভিন্ন জল সহিষ্ণু ঘাসসহ নানান জলজ উদ্ভিদে ভরপুর৷ এ সব জলজ উদ্ভিদকে স্তূপ করে পচিয়ে তারা তৈরি করেন ভাসমান এক ধরণের ধাপ৷ এই ভাসমান ধাপের উপরেই চাষাবাদের এক নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেন তাঁরা৷
ছবি: DW
পুরনো ধারা
কৃষি জমির বিকল্প হিসেবে জলাশয়ে ভাসমান চাষাবাদ দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে এ অঞ্চলে৷ কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, এ পদ্ধতিতে কৃষির উৎপাদনশীলতা জমির চেয়ে ১০ গুণ বেশি৷
ছবি: DW
জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদ
ধাপ পদ্ধতির এ চাষাবাদ হয় সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে৷ রাসায়নিক সারের ব্যবহার নেই বললেই চলে৷ ফলে উৎপাদন খরচও কম এবং স্বাস্থ্যকর৷
ছবি: DW
ভাসমান বীজতলা
জলাভূমিতে প্রথমে কচুরিপানা, শ্যাওলা ও বিভিন্ন জলজ ঘাস স্তরে স্তরে সাজিয়ে দুই ফুট পুরু ধাপ বা ভাসমান বীজতলা তৈরি করা হয়৷ এগুলো কয়েকদিন ধরে পচানো হয়৷ একেকটি ভাসমান ধাপ ৫০-৬০ মিটার লম্বা ও দেড় মিটার চওড়া হয়৷
ছবি: DW
চাষ করা যায় অনেককিছু
ভাসমান এ সব ধাপে সাধারণত লাউ, সিম, বেগুন, বরবটি, করলা, পেঁপে, টমেটো, শশা, পুঁইশাক, মিষ্টি কুমড়া, চালকুমড়া, মরিচ ইত্যাদি শাকসবজি ও মশলার চারা উৎপাদন করে থাকেন কৃষকরা৷ অনেক কৃষক আবার লাল শাক, ঢেঁড়স, হলুদ ইত্যাদিও চাষ করে থাকেন৷
ছবি: DW
নেই কোনো কৃষিঋণের ব্যবস্থা
মুগারঝোরের চাষীদের জন্য কৃষি ঋণের কোনো ব্যবস্থা নেই৷ স্থানীয় মহাজনদের কাছ থেকে চরা হারে সুদ নিয়ে গরিব এ চাষীরা তাঁদের কৃষি কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন৷ স্থানীয় কৃষক আশুতোষ জানান, সরকার সহজশর্তে ঋণ দিলে তাঁরা ভাসমান এ চাষাবাদের আরও বিস্তৃতি ঘটাতে পারবেন৷
ছবি: DW
বিক্রি হয় কচুরিপানা
নাজিরপুরের মুগারঝোরে নৌকা বোঝাই কচুরিপানা নিয়ে ক্রেতার খোঁজে এক বিক্রেতা৷ এক নৌকা কচুরিপানা সাধারণত বিক্রি হয় ২-৩ হাজার টাকায়৷ এছাড়া নাজিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় এসব কচুরিপানার হাটও বসে৷