বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি চান মমতা
৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন সাউথ ব্লক। প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ চাইলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে নানা ঘটনা ঘটছে। আলোচনা হচ্ছে পার্লামেন্ট এবং বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনেও। তারই মধ্যে সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলিতে বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে। যা নিয়ে সতর্ক সাউথ ব্লক। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে ডয়চে ভেলেকে জানানো হয়েছে, ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলির দিকে নজর রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।
ত্রিপুরায় গ্রেপ্তার
সোমবার ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশ হাই কমিশনে যে হামলার ঘটনা ঘটেছিল, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে। ওই ঘটনায় এখনো পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনজন পুলিশ কর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। ডেপুটি পুলিশ সুপার পদের এক অফিসারকে ক্লোজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ত্রিপুরা পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, ওই ঘটনা নিয়ে পুলিশ একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করেছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কলকাতায় কমেছে বাংলাদেশি পর্যটক, ব্যবসায় মন্দা
03:24
বিধানসভায় মমতা
বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, ''বাংলাদেশে ভারতীয়রা আক্রান্ত হলে আমরা তা সহ্য করব না। প্রয়োজনে আমরা তাদের ফিরিয়ে আনতে পারি।'' উল্লেখ্য, গত জুলাই মাসেও মমতা একই ধরনের মন্তব্য করেছিলেন। বলেছিলেন, বাংলাদেশে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের তিনি পশ্চিমবঙ্গে জায়গা দেবেন। যা নিয়ে বিরাট বিতর্ক হয়েছিল। একজন মুখ্যমন্ত্রীর আদৌ একথা বলার এক্তিয়ার আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এবারও সেই প্রশ্ন উঠেছে। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র এবং বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''পশ্চিমবঙ্গে রোহিঙ্গাদের অবাধে ঢুকতে দেওয়ার সময় এসব কথা মনে ছিল না মুখ্যমন্ত্রীর?'' শমীকের অভিযোগ, অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের সেফ হাউসে পরিণত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ।
এদিন অবশ্য মমতা বলেছেন, তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত। তার কথায়, ''আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের পরামর্শ মেনে চলব। কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে পার্লামেন্টে বিবৃতি দিতে হবে। তিনি না দিলে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে এবিষয়ে ভারতের অবস্থান জানাতে হবে।'' মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব, প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় সরকার জাতিসংঘে এবিষয়ে আলোচনা করুক এবং বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তি বাহিনী বা পিস কিপিং ফোর্স পাঠানোর জন্য আবেদন জানাক।
১৬ জন ভারতীয় মৎসজীবী আটক বাংলাদেশে, চিন্তায় পরিবার
মাছ ধরতে গিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছিলেন এই মৎসজীবীরা। কীভাবে তাদের ফেরানো যাবে, তা নিয়ে চিন্তায় পরিবার।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কাকদ্বীপের ছবি
পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার কাকদ্বীপের অনেক বাড়িরই বর্তমান ছবিটা এরকম। সংসারের মূল উপার্জনকারী বাংলাদেশ প্রশাসনের হাতে বন্দি, আর পরিবারের লোকেরা দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কী ঘটেছিল
গত ২২ নভেম্বর ১৬জন ভারতীয় মৎসজীবীকে আটক করে বাংলাদেশের নৌবাহিনী। অভিযোগ ওই মৎসজীবীরা বাংলাদেশের জল-সীমান্তে ঢুকে পড়েছিলেন। জানা গেছে, বাংলাদেশর নৌবাহিনী সমুদ্রে নজরদারি চালানোর সময় দেশের জলসীমায় অবৈধ গতিবিধি লক্ষ্য করে। এরপরেই অভিযান চালিয়ে ১৬ জন ভারতীয় মৎস্যজীবীকে আটক করা হয়। পরে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
আগেও ঘটেছে
দেড় মাস আগে সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে বাংলাদেশের উপকূলরক্ষী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছিলেন ৭৯ জন ভারতীয় মৎস্যজীবী। তারাও সকলে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। সকলেই এখনো বাংলাদেশের জেলে বন্দি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পরিবারের বক্তব্য
জানা গিয়েছে, গত ১৫ নভেম্বর সমুদ্রে মাছ ধরার জন্য রওনা দিয়েছিল এফবি ঝড় নামক ট্রলারটি। কাকদ্বীপের হারউড পয়েন্ট এলাকা থেকে ট্রলারটি নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন মৎস্যজীবীরা। এরপর ২২ নভেম্বর তাদের আটক করা হয়। এই ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে মৎস্যজীবীদের পরিবার।
ছবি: Subrata Goswami/DW
তেজেন্দ্রের পরিবার
কাকদ্বীপের পশ্চিম গঙ্গাধরপুর এলাকার বাসিন্দা তেজেন্দ্র মাঝি ছিলেন ওই ট্রলারে।পরদিন সকাল ন’টা নাগাদ পরিবারের কাছে খবর আসে বাংলাদেশ প্রশাসন ধরে নিয়ে গিয়েছে তেজেন্দ্রকে। পরিবারের লোকেরা যোগাযোগ করেন ট্রলারের মালিকের সঙ্গে। ট্রলার মালিক তাদের জানান, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ওখানে যোগাযোগ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে যতটুকু খবর পাওয়া গেছে, তেজেন্দ্ররা কলাপাড়া থানায় আছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বাংলাদেশ সূত্র
তেজেন্দ্রের স্ত্রী মঞ্জরী দাসের বাপের বাড়ি বাংলাদেশ। মঞ্জরী জানান, তার বাপের বাড়ির লোকেরা চেষ্টা করেও দেখা করতে পারেননি ওই মৎসজীবীদের সঙ্গে। তেজু মাঝি নামে পরিচিত মঞ্জরীর স্বামী ‘ঝড়’ নামের ট্রলার নিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন বাংলাদেশের জলসীমায়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বন্দি সুরজিৎ
শিপ্রা দাসের স্বামী সুরজিৎ দাসও এখন বাংলাদেশের নৌবাহিনীর হাতে বন্দি। তার ট্রলারের নাম ‘জয় জগন্নাথ’। শিপ্রা জানাচ্ছেন, তারা বহুবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন ট্রলার কোম্পানির সঙ্গে কিন্তু কেউ ফোন ধরছেন না। ম্যানেজারকে ফোন করলে তিনি ফোন সুইচ অফ করে দিচ্ছেন। এমন অবস্থায় দিশাহারা শিপ্রারা সরকারি মদতের আশায় মুখ্যমন্ত্রীদপ্তরে আবেদন জানিয়েছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ছেলেকে ছাড়া বাঁচব কী করে
“আমার ছেলেকে ছাড়া বাঁচব কী করে” বলে কান্নায় ভেঙে পড়লেন প্রসেনজিৎ দাসের মা চিনু দাস। ট্রলার মালিকেরা বলছেন ‘চেষ্টা করছি’, ব্যাস ওইটুকুই। কাকদ্বীপেরই অক্ষয়নগরের বসন্তপুরে থাকেন প্রসেনজিৎ দাস। অভাবের সংসারে হাল ধরতে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরেন তিনি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
মুখ্যমন্ত্রীর উদ্বেগ
সোমবার এই ঘটনা নিয়ে বিধানসভায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, মৎস্যজীবীদের গ্রেপ্তারের ঘটনা তিনি কেন্দ্র সরকারকে জানিয়েছেন। কিন্তু কেন্দ্র এখনো কোনো সদর্থক উত্তর দেয়নি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
9 ছবি1 | 9
মুখ্যমন্ত্রী যখন বিধানসভায় একথা বলছেন, তখন পেট্রাপোল সীমান্তে একটি প্রতিবাদসভায় যোগ দেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে ওই সভায় সরব হন শুভেন্দু। আবারও সীমান্তের কাছে এই ধরনের প্রতিবাদসভা আয়োজনের হুমকি দিয়েছেন তিনি। শুভেন্দু বলেছেন, ''ভুলে গেলে চলবে না, ভারত একটি বড় শক্তি। প্রয়োজনে আরো কঠিন পদক্ষেপ নিতেও ভারত পিছুপা হবে না।''
আদানি প্রসঙ্গ
চলতি পরিস্থিতির মধ্যেই সংবাদসংস্থা রয়টার্স একটি রিপোর্টে জানিয়েছে, গৌতম আদানির থেকে বিদ্যুৎ কেনা অর্ধেকে নামিয়ে আনার কথা বলেছে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার। ২০১৭ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি হয়েছিল আদানি গোষ্ঠীর। সেই বিদ্যুৎ কেনা এবার প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে আনার কথা বলেছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি আদানিকে বকেয়াও মিটিয়ে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এই বিদ্যুৎ বিতর্কও সার্বিক পরিস্থিতির উপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ।
সাউথ ব্লকের অবস্থান
বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলিতে উত্তেজনা তৈরি হলেও গোটা পরিস্থিতি নিয়ে এখনো অত্যন্ত সতর্ক সাউথ ব্লক বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শংকর এখনো পর্যন্ত এবিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে সামগ্রিকভাবে পুরো বিষয়টির দিকে ভারত নজর রাখছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে জানানো হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক অফিসার ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ৫ অগাস্টের পর থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণের যে ঘটনাগুলি ঘটেছে, তার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া উচিত। বাংলাদেশ সরকার এবিষয়ে কী অবস্থান নিচ্ছে, ভারত সেদিকে নজর রাখছে। সাউথ ব্লকের ধারণা, বাংলাদেশ পুরো বিষয়টিকেই রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা করছে। সংখ্যালঘুর উপর আক্রমণ কেবল রাজনৈতিক চোখে দেখলে চরমপন্থিদের আরো উৎসাহ দেওয়া হয় বলেই ভারত মনে করে। তবে সরকারিভাবে ভারত এখনই এবিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চায় না। আপাতত পরিস্থিতির দিকে নজর রাখাই ভারতের অবস্থান বলে জানিয়েছেন ওই অফিসার।
আদালতে বিচারপ্রার্থীদের যত দুর্ভোগ
আদালত অঙ্গনে গিয়ে বিচারপ্রার্থীদের অভিজ্ঞতার কথা শুনেছে ডয়চে ভেলে৷ তাদের নানা ধরনের দুর্ভোগের কথা থাকছে ছবিঘরে...
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
সন্তানের জন্য মায়ের সংগ্রাম
সাভারের অ্যানি আক্তার তার মেয়ে রাবিয়া বুসরিকে নিয়ে তিন মাসে একবার ঢাকার আদালতে আসেন সন্তানের ভরণপোষণের টাকা নিতে। রাবিয়ার বাবার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর আদালতের মাধ্যমে মাসিক তিন হাজার টাকা ভরণপোষণের জন্য নির্ধারিত হলেও সেই টাকা তুলতে ঢাকায় যাতায়াত ও অন্যান্য কাজে প্রায় দেড় হাজার টাকা খরচ হয়। বাকি টাকায় মেয়ের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন অ্যানি। তবুও মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য অ্যানি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
ছবি: Abdul Goni
শারমিনের অভিজ্ঞতা
ঢাকার মিরপুরের শারমিন আক্তার। তার ভাই ইব্রাহিম সরকার পালিয়ে একটি মেয়েকে বিয়ে করেন। ইব্রাহিম ও শারমিনের বিরুদ্ধে ওই মেয়েটির বাবা ধর্ষণ মামলা করেছেন। সেই মামলায় শারমিন ছয় মাস জেলও খেটেছেন। একজন নারী হওয়া সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দেয়ায় তিনি বিস্মিত ও হতাশ৷ ন্যায় বিচারের আশায় তাকে প্রতি মাসেই আদালতে আসতে হয়। শারমিন জানালেন, মামলার পেছনে তার অনেক টাকাও খরচ হয়েছে।
ছবি: Abdul Goni
বিগত সরকারের আমলের মামলার কারণে আদালতে আসা-যাওয়া
কৃষক দলের সদস্য হারুনুর রশিদ সুমন। রাজনীতির কারণে বিগত সরকারের আমলে তার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা হয়েছে। ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর অনেকের মামলা প্রত্যাহার করা হলেও সুমনের মামলাগুলো আগের মতোই আছে। কিভাবে মামলা প্রত্যাহার হবে, কার কাছে যাবেন, কাকে ধরলে কাজ হবে জানেন না তিনি। তারপরও মামলা প্রত্যাহার হবে এমন আশায় প্রতিদিনই আসছেন পুরনো ঢাকার কোর্টে।
ছবি: Abdul Goni
ছেলেকে নিয়ে আদালতে
ছেলে আলামিন শুভর স্ত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। ছেলের কারণে গত দুই বছর ধরে আদালতের বারান্দায় ঘুরছেন আব্দুর রাজ্জাক। তার দাবি, স্বামীর সঙ্গে অভিমান করে শুভর স্ত্রী আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু শুভর স্ত্রীর পরিবারের সদস্যরা প্রভাবশালী হওয়ায় হত্যা মামলা করেছে। সেই মামলায় জেল খেটেছে শুভ। এখন প্রতিনিয়তই হাজিরা দিতে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে আসেন আব্দুর রাজ্জাক।
ছবি: Abdul Goni
মামলার নিষ্পত্তিতে ধীর গতি
মামলা নিষ্পত্তিতে অনেক সময় লাগছে বলে মনে করেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি খুরশিদ মিয়া আলম। বর্তমান সরকারের কাছে মানুষের যে প্রত্যাশা, সেই গতিতে মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে না বলেই মত তার। তিনি বলেন, লাখ লাখ রাজনৈতিক মামলা ছিল। সেগুলোর নিষ্পত্তি হচ্ছে কিছু কিছু। কিছু মামলা রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের বিষয়। ঘন ঘন জজদের বদলিতেও বিচার কিছুটা বিঘ্ন হচ্ছে। বিচারপ্রার্থীদের ন্যায় বিচার, সুবিচার পেতে সময় লাগছে।
ছবি: Abdul Goni
‘নারী নির্যাতন-মাদকসহ অন্যান্য মামলায় প্রশাসনের নজর কম’
অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাসে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি বলে মনে করেন আইনজীবী মোরশেদ হোসেন শাহীন। তার মতে, ‘‘উল্টো দুর্ভোগ বেড়েছে। রাজনৈতিক মামলার কারণে নারী-মাদকসহ স্বাভাবিক সময়ে যে মামলাগুলো হয়, সেগুলো হচ্ছে না। এসব মামলার দিকে প্রশাসন নজর দিতেও পারছে না। প্রশাসনকে অস্থির মনে হচ্ছে। এই সরকারের আমলে ন্যায় বিচারের প্রত্যাশা ছিল, সেটা পূরণ হচ্ছে না।’’
ছবি: Privat
আদালতেও বৈষম্য
আদালতেও এক ধরনের বৈষম্য হচ্ছে বলে মনে করেন আইনজীবী আমিনুল গনি টিটো। তার মতে, রাজনৈতিক মামলা কিছুটা কমলেও অন্যান্য মামলা আগের মতোই আছে। আদালতে বিচারপ্রার্থী বা আইনজীবীদের ওপর হামলার ঘটনায় এক ধরনের বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘আগে কিন্তু আইনজীবীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেনি। এই পরিস্থিতিতে আইনজীবীরা আদালতে দাঁড়াতে ভয় পাচ্ছেন। এভাবে তো আদালত চলতে পারে না।’’
ছবি: Privat
‘সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ আগের মতোই’
আগে জজ সাহেবরা অনেক বেশি চাপে থাকতেন বলে মনে করেন আইনজীবী তরিকুল ইসলাম। এখন জজ সাহেবদের উপর সেই চাপ নেই। পরিস্থিতিতে এক ধরনের ইতিবাচক গতি এসেছে। তবে তিনি মনে করেন, সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ আগের মতোই আছে। এখন একজন বিচারপ্রার্থী এক বছর পর একটি ডেট পান। সেদিনও যদি শুনানি না হয় তাহলে তারা তো হতাশ হবেনই।
ছবি: Privat
ন্যায় বিচারের আশায়
তিন সন্তানকে নিয়ে কেরানীগঞ্জের পলি আক্তারের এখন দিন কাটছে থানা আর আদালতের বারান্দায়। ন্যায়বিচারের আশায় সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত আদালতেই থাকছেন। তার স্বামী মো. কবির তার দেখাশোনা করে না। কিস্তিতে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা দিয়ে একটি গাড়ি কিনে দিয়েছিলেন পলি। সেই গাড়ি নিয়ে কবির তাকে ছেড়ে চলে যায়। এখন স্বামীর বিচার চেয়ে ঘুরছেন আদালতের দরোজায়।
ছবি: Abdul Goni
9 ছবি1 | 9
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো কথা বলতে চাননি ওই অফিসার। তবে পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে ভারত এখনই কোনো পদক্ষেপ নেবে না বলেই জানিয়েছেন তিনি।
বিজেপি নেতা এবং পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য হুমকি দিয়েছেন যে, ''প্রয়োজন হলে ভারত বাংলাদেশকে পণ্য রপ্তানি বন্ধ করে দেবে।'' বস্তুত, আসামের করিমগঞ্জে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলিও এমনই একটি বিবৃতি দিয়েছে সোমবার। তবে জেলাশাসক প্রদীপ কুমার দ্বিবেদী ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''যারা ব্যবসা বন্ধ রাখার কথা বলছেন, তা তাদের ব্যক্তিগত মতামত। সরকারের তরফে এমন কোনো নির্দেশ আসেনি।''
পররাষ্ট্র বিশেষজ্ঞ তথা ভারতীয় সেনা বাহিনীর সাবেক লেফটন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''সীমান্তবর্তী অঞ্চলে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তা স্পষ্ট। তবে এই পরিস্থিতিতে সতর্কভাবে পা ফেলাই বিচক্ষণতার পরিচয়। ভারত সরকার সে কাজই করছে। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখাই এখন একমাত্র কাজ।'' উৎপলের বক্তব্য, বাংলাদেশ ঐতিহাসিকভাবে ভারতের বন্ধু। ভারতের এই বন্ধুত্ব বজায় রাখতে হবে কারণ, বাংলাদেশের সঙ্গে বিরাট সীমান্ত আছে। সীমান্তে শান্তি বজায় রাখার জন্যই এই বন্ধুত্ব জরুরি। বাংলাদেশের বর্তমান সরকারও সে কথা জানে। ফলে দুই দেশের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে এই সম্পর্ক জারি রাখা জরুরি। একই সঙ্গে বাংলাদেশের যে মানুষেরা বিভিন্ন কাজে ভারতে এসেছেন, তাদের নিরাপত্তার বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে বলে মনে করেন উৎপল।