নির্বাচনের আগে তাঁর অভিবাসী এবং মুসলিম বিদ্বেষী কথাবর্তা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অনেক বাংলাদেশির মনেই ঘোর দুশ্চিন্তার জন্ম দিয়েছে৷ বাংলাদেশের জন্যই বা কেমন হবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প?
ছবি: Getty Images/C. Somodevilla
বিজ্ঞাপন
এমন কিছু প্রশ্নই রাখা হয়েছিল আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ভয়েস অফ অ্যামেরিকার বাংলা বিভাগের প্রধান রোকেয়া হায়দার এবং অর্থনীতিবিদ ড. বিনায়ক সেনের কাছে৷ টেলিফোনে দু'জনই কিছুটা সংশয় নিয়ে কথা শুরু করলেও শেষ করেছেন আশা নিয়ে৷
ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ে তাঁ প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে ড. বিনায়ক সেন বলেন, ‘‘ওবামার বিজয়টা যে অর্থে আমরা অ্যামেরিকার রাজনীতিতে প্রগতিশীল ধারার উন্মোচন, ট্রাম্পের বিজয়ে তার ঠিক বিপরীতটা হয়েছে৷''
ড.বিনায়ক সেন
This browser does not support the audio element.
তবে ওবামা প্রার্থী হিসেবে যাঁকে ‘ডিস্টিংটলি, ইউনিকলি আনকোয়ালিফাইড' বলেছিলেন, সেই ট্রাম্প তো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতেই নির্বাচিত হলেন! আসলে বিনায়ক সেন মনে করেন এর মাধ্যমে গণতন্ত্রের বড় একটা দুর্বলতাই প্রকাশিত হলো৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘একটা মিথ ছিল যে রাজনীতিতে আমরা গণতন্ত্রের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ফল পাই, আমরা শুনে আসছিলাম যে, সমাজতন্ত্র ভেঙে গেছে, এখন গণতন্ত্র ছাড়া আর কোনো উপায় নেই এবং এই গণতন্ত্রই আমাদের অপটিমাল বা সর্চোচ্চ সিদ্ধান্ত দেবে৷ কিন্তু সেটা যে ঠিক নয় তা প্রমাণ হলো ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই বিজয়ে৷''
তো কোন জাদুবলে হিলারি ক্লিন্টনের মতো প্রার্থীকে একরকম কুপোকাত করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প? ড. সেনের মতে, জয়ের অন্যতম কারণ ‘হোয়াইট ওয়ার্কিং ক্লাস'-এর দীর্ঘদিনের অসন্তোষ এবং ক্ষোভ৷ দেশের জনসংখ্যার মাত্র এক শতাংশের প্রতিনিধি অভিজাতদের কাছে ষাট ভাগ সম্পদ, বিপরীতে শ্বেতাঙ্গ শ্রমিক শ্রেণির সমস্ত অপ্রাপ্তি আর অনিশ্চয়তা তাদের মনে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছিল৷ যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়াসহ অনেক দেশে যুদ্ধের পেছনে অর্থ ব্যয় করে, যুক্তরাষ্ট্র অথচ দেশের দরিদ্র শ্রেণির জন্য তেমন কিছুই করা হয় না – এই বাস্তবতাও পুঞ্জীভূত ক্ষোভ হয়ে পরিবর্তনের পক্ষে রায় দিতে উদ্বুদ্ধ করেছে৷ তাই প্রার্থী হিসেবে খুব আকর্ষণীয় বা আদর্শ না হলেও ট্রাম্পের কথায় আস্থা রেখেছেন অনেকে৷
ট্রাম্পের জয়ে বিশ্বের প্রতিক্রিয়া
প্রথমে বিমূঢ়তা, পরে পরিস্থিতি সামাল দেবার প্রচেষ্টা, এই ছিল ইউরোপের রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া, তবে দক্ষিণপন্থি মহল ট্রাম্পের জয়ে উৎসাহিত বোধ করছে৷ অপরদিকে মুসলিম দেশগুলিতে উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে৷
ছবি: Reuters/C. Allegri
মুসলিম দেশগুলিতে উদ্বেগ
পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া অথবা বাংলাদেশের মতো মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলিতে ট্রাম্পের এই জয় ইসলামি দুনিয়ার পক্ষে কী তাৎপর্য বহন করছে, তাই নিয়েই দুশ্চিন্তা৷ বিশেষ করে ট্রাম্প যে মুসলিমদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার হুমকি দিয়েছেন, তা নিয়ে অনেকে উদ্বিগ্ন কেননা অ্যামেরিকায় তাদের বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজন আছেন৷ এছাড়া ট্রাম্পের নীতি ইসলামি চরমপন্থিদের উসকে দিতে পারে, বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Indahono
বাংলাদেশ: আমন্ত্রণ
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, উভয়েই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন৷ শেখ হাসিনা তাঁর পত্রে প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ও তাঁর ফার্স্ট লেডিকে বাংলাদেশে এসে দেশের বিস্ময়কর উন্নয়ন দেখে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন৷ বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াও ট্রাম্পকে একটি বার্তা পাঠিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন৷
ছবি: imago/Xinhua
জার্মানি: ‘একটা বড় ধাক্কা’
জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী উর্সুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন ট্রাম্পের জয় নিশ্চিত হবার পর পরই টেলিভিশনে তাঁর প্রতিক্রিয়া হিসেবে একটা বড় ‘শক’ পাওয়ার কথা বলেন৷ অপরদিকে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার বলেছেন, ‘‘আমাদের (ট্রাম্পের জয়) মেনে নিতে হবে’’৷ তাঁর মতে আগামীতে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি আগের মতো ভবিষ্যৎবাচ্য থাকবে না৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Schwarz
ব্রিটেন: ‘বিশেষ সম্পর্ক’
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে উভয় দেশের ‘‘বিশেষ সম্পর্কের’’ কথা বলেছেন৷ ‘‘আমরা বাণিজ্য, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষায় আগের মতোই জোরালো ও ঘনিষ্ঠ অংশীদার থাকব’’, বলে মে তাঁর বিবৃতিতে মন্তব্য করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Rain
ভারত: ‘ভারতের প্রতি বন্ধুত্ব’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে টুইটারে অভিনন্দন জানিয়েছে বলেছেন, ‘‘আপনি আপনার নির্বাচনি প্রচার অভিযানে ভারতের প্রতি যে বন্ধুত্ব দেখিয়েছেন, আমরা তা উপলব্ধি করি৷ ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে একটা নতুন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা আপনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবার আশা রাখি৷’’
ছবি: picture-alliance/Xinhua
ইসরায়েল: ‘প্রকৃত বন্ধু’
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘‘ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রকৃত বন্ধু’’ বলে অভিহিত করেছেন৷ অপরদিকে কট্টরপন্থি ইহুদি স্বদেশ দলের প্রধান শিক্ষামন্ত্রী নাফতালি বেনেট মন্তব্য করেছেন, ‘‘ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ধারণার এখানেই অবসান৷’’ ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস একটি বিবৃতিতে ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ‘‘তাঁর কর্মকালে শান্তি অর্জিত হবে’’, বলে আব্বাস আশা করেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Sultan
রাশিয়া: ‘গঠনমূলক সংলাপ’
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন ডেনাল্ড ট্রাম্পকে টেলিগ্রাম পাঠিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন৷ পুটিন একটি বিবৃতিতে বলেন, তিনি রুশ-মার্কিন সম্পর্ককে বর্তমান ‘‘সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি’’ থেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করার আশা রাখেন৷ মস্কো এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে ‘‘গঠনমূলক সংলাপ’’ গড়ে উঠবে, বলে তাঁর আস্থা আছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M.Schreiber
ইউরোপীয় ইউনিয়ন: গভীর সম্পর্ক
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদেশনীতি বিষয়ক প্রধান ফেদেরিকা মোঘেরিনি একটি টুইটে বলেছেন যে, ইইউ-মার্কিন সম্পর্ক রাজনৈতিক পরিবর্তনের চেয়ে বেশি গভীর৷ আমরা একত্রে কাজ করে ইউরোপের শক্তি পুনরাবিষ্কার করব’’, লিখেছেন মোঘেরিনি৷ অপরদিকে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট মার্টিন শুলৎস ট্রাম্পকে ‘‘লক্ষ লক্ষ মার্কিনির ভয়ভীতির প্রতিনিধি’’ বলে অভিহিত করেছেন৷
ছবি: DW/B. Riegert
হাঙ্গেরি: ‘গণতন্ত্র আজও বেঁচে’
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওর্বান ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়কে ‘‘দারুণ খবর’’ বলে অভিহিত করেছেন৷ এর থেকে বোঝা যায় যে, ‘‘গণতন্ত্র আজও বেঁচে’’৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে ইতিপূর্বে ওর্বানের সমালোচনা করা হয়েছে, তিনি হাঙ্গেরিতে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে দুর্বল করছেন বলে – পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টনও যে সমালোচনায় যোগ দিয়েছিলেন৷ ওর্বান তাঁর ফেসবুক পেজে ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/V. Simicek
9 ছবি1 | 9
নির্বাচনি বৈতরণী সহজে পার হলেও দেশ পরিচালনার কাজটি কি ট্রাম্পের জন্য সহজ হবে? বিশ্ব রাজনীতিতে কেমন প্রভাব ফেলতে পারে ট্রাম্পের জয়? বিনায়ক সেন মনে করেন, নির্বাচনের আগের ট্রাম্পই থেকে গেলে, অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রকৃত অর্থে দায়িত্বশীল না হলে পরিণাম খুব ভয়াবহ হতে পারে৷ তবে আশার কথা, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট চাইলেও সব কিছু করতে পারেন না৷ যথেচ্ছচারী হতে গেলে কংগ্রেসে, সেনেটে, এমনকি নিজের দলের ভেতরেও বিরোধীতার মুখোমুখি হতে পারেন ট্রাম্প৷ আর ‘চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স'-এর এই প্রক্রিয়াই আপাত ‘উদ্ধত' ট্রাম্পকে সংযত এবং দায়িত্বশীল করতে পারে বলে মনে করেন তিনি৷
সাংবাদিক রোকেয়া হায়দারও এ কারণেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নিয়ে খুব কম চিন্তিত৷ এর কারণ জানাতে গিয়ে টেলিফোনে ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আসলে দেখুন, অ্যামেরিকায় প্রেসিডেন্ট কিন্তু সর্বকর্তৃত্বশীল কোনো ব্যক্তি নন৷ যদিও ৩৪টি সেনেটের আসন এবং ৪৩৫টি প্রতিনিধি পরিষদের আসনেও রিপাবলিকানের প্রাধান্য রয়েছে৷ সেটা নিশ্চয়ই ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য সুবিধা৷’’
রোকেয়া হায়দার
This browser does not support the audio element.
তিনি আরো বলেন, ‘‘তবে এটাও ভাবতে হবে যে রিপাবলিকানদের মধ্যেও অনেক মধ্যপন্থি আছেন৷ তাই সবাই পরিবর্তন চাইছেন, কিন্তু একটা বিরাট পরিবর্তন এনে সবকিছু ওলটপালট করে দেয়ার গতিতে এগিয়ে যাবেন, সবাই সেক্ষেত্রে একমত হবেন বলে আমার মনে হয় না৷''
রোকেয়া হায়দার এবং ড. বিনায়ক সেন – দু'জনই মনে করেন, নতুন প্রেসিডেন্ট এলেও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি খুব একটা বদলায় না, তাই বাংলাদেশেরও ট্রাম্পকে নিয়ে বেশি চিন্তার কিছু নেই৷
যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে বসবাসরত বাংলাদেশিদের জন্যও ট্রাম্প বড় কোনো হুমকি হয়ে দাঁড়াবেন এমনটি মনে করার কোনো কারণ দেখছেন না তাঁরা৷ তবে বিনায়ক সেন এবং রোকেয়া হায়দার মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রে যারা অবৈধভাবে বসবাস করছেন, তাদের নিশ্চয়ই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকার কারণ আছে৷
বন্ধু, আপনার কী মনে হয়? ট্রাম্পকে নিয়ে দুশ্চিন্তার কি আদৌ কোনো কারণ আছে? লিখুন নীচের ঘরে৷
নতুন প্রেসিডেন্টের জন্য যা অপেক্ষা করছে
নতুন প্রেসিডেন্টকে স্বদেশে ও বিদেশে বিভিন্ন সমস্যা ও পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে, যার উপর শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নয়, সেই সঙ্গে আধা দুনিয়ার ভালো-মন্দ নির্ভর করবে৷ কী ভাবছেন দুই প্রতিযোগী এই সব সমস্যা সম্পর্কে?
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Nelson
বারাক ওবামা যা করে যেতে পারেননি
তার মধ্যে প্রথমেই আসে স্বাস্থ্য বীমার সংস্কার৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষের কোনো স্বাস্থ্য বীমা নেই, এছাড়া আছে চলতি বীমা পদ্ধতির নানা ঘাটতি ও দুর্বলতা৷ এর বিরুদ্ধে তথাকথিত ‘ওবামাকেয়ার’ কিছুদূর এগোলেও, এখনও অনেক কাজ বাকি৷ এছাড়া দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও অবকাঠামোর চরম দুরবস্থার কথা ভুললে চলবে না৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Samad
ধনি-দরিদ্রের ব্যবধান
ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধিকাংশ সমর্থক যে পর্যায়ের মানুষদের মধ্য থেকে উঠে এসেছেন, তারা হলেন শিল্পায়ন পরবর্তী যুগের অ্যামেরিকায় যারা সবচেয়ে বেশি হারিয়েছেন বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন৷ বড় বড় শহরগুলি ছেড়ে একটু বাইরে গেলেই সে ধরনের অবক্ষয় চোখে পড়ে: রোগগ্রস্ত, অসুস্থ মানুষ; উপেক্ষিত, অবহেলিত শিশুরা যাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই৷ এই ব্যবধান থেকেই জন্ম নিয়েছে এক নতুন পরস্পরবিরোধিতা৷
ছবি: picture alliance/U. Baumgarten
ইরান
ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তিকে ‘‘ইতিহাসের সবচেয়ে নিকৃষ্ট চুক্তিগুলির মধ্যে একটি’’ বলে খারিজ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে এই চুক্তি নিয়ে নতুন করে আলাপ-আলোচনা করবেন৷ অপরদিকে হিলারি ক্লিন্টন এই চুক্তিকে ‘‘মহান কূটনীতি’’ বলে স্বাগত জানিয়েছেন৷ তবে ইরানের প্রতি ক্লিন্টনের মনোভাব অতীতে বেশ কড়াই ছিল এবং তিনি প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার চেয়ে বেশি ইসরায়েল ঘেঁষা বলে কথিত৷
ছবি: Colourbox/Getty Images
সিরিয়া
ক্লিন্টন সিরিয়ায় নো-ফ্লাই জোন স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন ও বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য ‘সেফ জোন’ কামনা করেছেন৷ নো ফ্লাই জোন থেকে রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতের বিপদ বাড়বে, বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা৷ ট্রাম্প তো স্পষ্টই বলে দিয়েছেন, ‘‘আমাদের আইএস-এর দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত, সিরিয়ার দিকে নয়’’৷ বস্তুত তাঁদের প্রথম ৯০ মিনিটের টেলিভিশন বিতর্কে ২২ বার আইএস-এর নাম করা হলেও, আলেপ্পোর নাম করা হয়েছিল মাত্র একবার৷
ছবি: Reuters/A.Ismail
রাশিয়া
লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসের একটি রেস্টুরেন্টের দেয়ালে আঁকা ছবি, যাতে ট্রাম্পের সম্ভাব্য পুটিন-প্রীতির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে৷ ট্রাম্পকে পরে বলতে শোনা গেছে, ‘‘আমি পুটিনকে চিনি না....রাশিয়া সম্পর্কেও কিছু জানি না’’৷ তবে রাশিয়ার সঙ্গে মিলে আইএস-এর মোকাবিলা করলে ভালো হয়, বলে তাঁর ধারণা৷ অপরদিকে ক্লিন্টনের দৃষ্টিতে ক্রেমলিন শুধুমাত্র সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতায় রাখতে আগ্রহী৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Malukas
ন্যাটো ও ইউরোপ
ছবিতে পোল্যান্ডের প্যারাট্রুপার সৈন্যরা ন্যাটোর একটি সামরিক মহড়ায় অংশ নিচ্ছে৷ ট্রাম্প এর আগে ন্যাটো ও ইউরোপের সঙ্গে সহযোগিতার ব্যাপারে নানা অবহেলাকর মন্তব্য করেছেন৷ অপরদিকে ক্লিন্টন যদিও ‘অ্যাটলান্টিসিস্ট’ হিসেবে পরিচিত, তাঁর মুখেও প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটে একবার বা দু’বারের বেশি ইউরোপ কিংবা ন্যাটোর নাম শোনা যায়নি৷ বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর এতে সন্তুষ্ট না হবারই কথা৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Skarzynski
চীন
ছবিতে চীনের একটি বোমারু বিমান দক্ষিণ চীন সাগরের উপর টহল দিচ্ছে৷ এলাকার বিতর্কিত দ্বীপপুঞ্জগুলিকে নিয়ে বিরোধে ক্লিন্টন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি সংশ্লিষ্ট করতে চান না, কিন্তু ট্রাম্প বলেছেন যে, তিনি একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা প্রণালী স্থাপন করে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো মিত্রদের আশ্বস্ত করতে চান৷ নয়তো ট্রাম্পের ধারণা যে, চীন তাঁর ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িক স্বার্থের হানি ঘটাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot/Xinhua/Liu Rui
পরিবেশ
ছবিতে ক্যালিফর্নিয়ার মৌহাভি মরুভূমিতে অবস্থিত একটি সৌরবিদ্যুৎ পার্ক৷ ট্রাম্প কিন্তু নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে বলেছেন ‘‘অনির্ভরযোগ্য ও ভয়ঙ্কর’’; বিশ্বের উষ্ণায়নকে বলেছেন ‘‘মার্কিন শিল্পোৎপাদনকে বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতার অযোগ্য করে তোলার জন্য চীনাদের তৈরি একটি কল্পকাহিনি’’৷ অপরদিকে ক্লিন্টন ওবামার পরিবেশ নীতি চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা করলেও, তাঁর প্রচার অভিযান বা রাজনৈতিক জীবনে পরিবেশ বিশেষ গুরুত্ব পায়নি৷