বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির সঙ্গে ব্যাংকেরই কিছু কর্মকর্তা জড়িত বলে খবর৷ তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি জানিয়েছে, হ্যাকারদের সুযোগ করে দিতেই ব্যাংকের পাঁচজন কর্মকর্তা রিজার্ভ অরক্ষিত রাখেন৷ তবে তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি৷
বিজ্ঞাপন
সুইফটের গ্রাহক নিরাপত্তা কর্মসূচির প্রধান স্টিফেন গিলডেরডেল আর্ন্তজাতিক সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘‘বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির পর সুইফট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে এমন কেন্দ্রীয় ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এখনও হামলার শিকার হচ্ছে৷'' অবশ্য ঠিক কতগুলো ব্যাংকে নতুন করে হামলা করা হয়েছে, হামলাকারীরা কারা, কত টাকা চুরি হয়েছে, এ সব ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি৷
গত ২ নভেম্বর বিশ্বের যে সব ব্যাংক সুইফটের সেবা নেয়, তাদের চিঠি দেয়া হয় নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে৷ ব্যাংকগুলোর কাছে সুইফটের পাঠানো চিঠিটি প্রকাশ না করা হলেও, আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স ঐ চিঠিটি দেখেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে৷ চিঠিতে ব্যাংকগুলোকে তাদের লেনদেন হুমকির মুখে বলে সতর্ক করা হয়৷ সাইবার হামলা এবং নতুন নতুন হ্যাকিং কৌশলের কাছে সুইফট মেসেজিং নেটওয়ার্ক নাজুক হয়ে পড়েছে৷ তারপরও সুইফট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রতিদিন কোটি কোটি ডলার লেনদেন হচ্ছে৷
ইব্রাহিম খালেদ
এই ব্যবহার করে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অফ নিউ ইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় এক বিলিয়ন ডলার সরানোর চেষ্টা করা হয়৷ শেষ পর্যন্ত ফিলিপাইন্সের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে (আরসিবিসি) বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিতে সক্ষম হয় হ্যাকাররা৷ মামলাটি বর্তমানে বাংলাদেশে সিআইডি তদন্ত করছে৷ এছাড়া ফিলিপাইন্স এবং শ্রীলংকা পুলিশের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআইও ঘটনাটির তদন্ত করছে৷
সিআইডি-র অরগ্যানাইজড ক্রাইমের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. শাহ আলম এরইমধ্যে সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘‘ব্যাংকের রিজার্ভ যেভাবে রাখা হয়েছে, তা অত্যন্ত সুরক্ষিত৷ এটাকে জেনেশুনে বা বুঝেই অরক্ষিত রাখা হয়েছে৷ অর্থাৎ সেখানে যারা দায়িত্ব পালন করছেন, তারাই কাজটি করেছেন৷''
তিনি জানান, ‘‘হ্যাকাররা এখানে তিন ধাপে কাজ করেছে৷ প্রধান কম্পিউটারটিতে ইন্টারনেট ছিল না, সেটাতে ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া হয়েছে৷ হ্যাকাররা অরক্ষিত নিশ্চিত হওয়ার পর তারা কাজটি করেছে৷ আর তারা টাকা বের করে নিতে বিশ্বের দুর্বল ব্যাংকিং পদ্ধতি যারা করে, সেই সব ব্যাংক বেছে নিয়েছে৷''
শাহ আলম সংবাদমাধ্যমকে আরো বলেন, ‘‘অত্যন্ত সুক্ষভাবে কাজটি করা হয়েছে৷ এর সঙ্গে বাংলাদেশ কর্মকর্তা ও আন্তর্জাতিক চক্র জড়িত৷ আমরা কয়েকজনকে চিহ্নিত করেছি৷ তবে এই মুহূর্তে তাদের নাম বলতে চাই না৷ তাদের নাম বলা ঠিক হবে না৷''
তথ্য গোপন রাখার সাতটি সহজ উপায়
আধুনিক প্রযুক্তির কারণে মানুষের সুযোগ-সুবিধা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে তথ্য চুরির ঘটনা৷ ফোর্বস জানাচ্ছে কোন সাতটি উপায়ে আপনি খুব সহজেই ব্যক্তিগত তথ্য রক্ষা করতে পারেন৷
ছবি: Fotolia/davidevison
পাসওয়ার্ড নিজের কাছে রাখুন
কম্পিউটার, স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটের পাসওয়ার্ড যেন কখনই এক না হয়৷ আর ব্যাংক কার্ড-এর সঙ্গে যেন এই পাসওয়ার্ডের মিল না থাকে৷ এছাড়া কম্পিউটার, স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটে কোনো পাসওয়ার্ড লিখে রাখবেন না৷ এর ফলে আপনার তথ্য চুরির সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়৷ বাড়ির বাইরে গেলে এগুলি ‘লক’ করে যাবেন৷
ছবি: Sergey Nivens - Fotolia.com
নামে ‘গুগল অ্যালার্ট’ ব্যবহার করুন
এটা খুব সহজ পন্থা, আপনি যদি দেখতে চান ইন্টারনেটে আপনার সম্পর্কে সবাই কী বলছে৷ সোজা এই ঠিকানায় যান – http://www.google.com/alerts এবং আপনার নাম লিখুন৷ তারপর আপনার নামের বিভিন্ন ধরন লিখে, তার আগে ও পরে ‘কোটেশন মার্ক’ জুড়ে দিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Berg
ব্যবহারের পর লক্ষ্য রাখা
আপনি যদি অন্য কারো কম্পিউটার বা ট্যাবলেট ব্যবহার করেন, তবে একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন৷ আপনার পর যিনি সেটা ব্যবহার করবেন, তিনি যাতে আপনার অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে না পারে – সেটা খেয়াল রাখুন৷ আপনি যদি এটা করতে ভুলে যান, তাহলে ফলাফল ভয়াবহ হতে পারে৷
ছবি: AFP/Getty Images
ফোন, ই-মেল বা জিপ কোড ব্যবহার করতে না দেয়া
অচেনা কোনো মানুষ এই নম্বরগুলো জানতে চাইলে, আপনারা দেবেন না৷ দেখা যায় কোনো অফিস তাঁর কর্মীর কাছ থেকে এ সব তথ্য চাইলে, অনেকেই সেচ্ছ্বায় তা দিয়ে দেয়৷ বহু অফিস এ নিয়ে একটি প্রোফাইল তৈরি করে৷ আপনার কিন্তু এ সব তথ্য না দেয়ার অধিকার আছে৷ তাই আপনি যদি এতে স্বাচ্ছ্বন্দ্যবোধ না করেন, তবে দেবেন না৷
ছবি: picture-alliance/ZB
কার্ড নয় ক্যাশ
আপনি যদি চান আপনি যে পণ্যটি কিনছেন, সেই কোম্পানি আপনারা পরিচয় না জানুক, তবে নগদ অর্থে জিনিস কিনুন৷
ছবি: AP
ফেসবুকে নিরাপত্তার জন্য ‘ফ্রেন্ডস’ ব্যবহার করুন
ফেসবুকে সবসময় ‘সিকিউরিটি’ বা নিরাপত্তা পরীক্ষা করুন৷ পোস্ট করার পর লক্ষ্য রাখুন আপনি আপনার ছবি বা মন্তব্য ‘ফ্রেন্ডস’ করে রেখেছেন, নাকি ‘পাবলিক’ করেছেন৷ আপনি যদি ‘স্পেশ্যাল’ নির্বাচন করেন এবং ঠিক করে দেন কে কে আপনার পোস্ট দেখতে পাবে, তবে সেটা আপনার তথ্য নিরাপত্তার জন্য তুলনামূলকভাবে ভালো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Bozoglu
‘হিস্ট্রি’ এবং ‘কুকিস’ মুছে ফেলুন
আপনি সবশেষ কবে এটা করেছেন? আপনি যদি নিশ্চিত না হন, ব্রাউজারে গিয়ে এটা পরিবর্তন করুন৷ ব্রাউজারের ‘প্রাইভেসি সেটিংস’-এ যান, সেখানে ‘নেভার রিমেমবার হিস্ট্রি’ নির্বাচন করুন৷ এর ফলে ইন্টারনেটে আপনাকে ‘ট্র্যাক’ করাটা হ্যাকারদের জন্য কঠিন হবে৷ এছাড়া আপনি ‘অ্যাড অন’-ও ব্যবহার করতে পারেন৷
ছবি: Fotolia/davidevison
7 ছবি1 | 7
এ নিয়ে সিআইডি কর্মকর্তা শাহ আলমের সঙ্গে মঙ্গলবার ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি৷
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্ণর খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রিজার্ভ চুরি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে একেক সময় একেক ধরনের খবর এসেছে, আসছে৷ আমি মনে করে, কোনো কিছু নিশ্চিত না হয়ে তা প্রকাশ করা উচিত নয়৷ সিআইডিই তাদের বক্তব্যে একই অবস্থানে থাকছে না৷ একজন বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকজন জড়িত৷ আবার আরেকজন বলছেন, জড়িত থাকার প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি৷ আমার মনে হয়, তদন্ত চূড়ান্ত হওয়ার আগে কোনো কিছু বলা ঠিক নয়৷''
তাঁর কথায়, ‘‘সিআইডি এখনো তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করেনি৷ তারা তাই মাঝপথে কথা বলতে পারে না৷ এছাড়া ফরাসউদ্দিনের কমিটির প্রতিবেদন নিয়েও সংশয় আছে৷ তিনিও দু'রকম কথা বলেছেন৷ সর্বশেষ তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তার অবহেলার কথা৷''
মঙ্গলবার রাতে সিআইডি কর্মকর্তা শাহ আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা এখন চেষ্টা করছি এই কর্মকর্তারা হ্যাকারদের সহযোগিতা করে কীভাবে লাভবান হয়েছেন, তা বের করতে। আমরা আশা করি তা পারব। বলতে পারেন আমারা তদন্তের একদম শেষ ধাপে আছি। তারপরই গ্রেপ্তারের প্রশ্ন আসবে। আমরা স্বস্তিকর অবস্থায় তাদের গ্রেপ্তার করতে চাই। হ্যাকারদের সহযোগিতায় তাদের কার কী ভূমিকা ছিল, তার সব তথ্য-প্রমাণ আমাদের আছে৷’’
এ বিষয়ে আপনার কি কিছু বলার আছে? থাকলে লিখুন নীচের ঘরে৷
দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ার পাঁচ কৌশল
বিশ্বব্যাংকের ‘গ্লোবাল ইন্ডিকেটরস গ্রুপ’-এর পরিচালক আওগুস্তো লোপেজ-কার্লোস এক ব্লগ পোস্টে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ার কয়েকটি কৌশল আলোচনা করেছেন৷ ছবিঘরে থাকছে সে’সব কথা৷
ছবি: Getty Images
সরকারি চাকুরেদের জন্য ভালো বেতন
যাঁরা সরকারি চাকরি করেন তাঁদের বেতন যদি খুব কম হয়, তাহলে আয় বাড়াতে তাঁরা ‘অনানুষ্ঠানিক’ পথ অবলম্বন করতে পারেন৷ বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে সরকারি চাকুরেদের কম বেতন ও দুর্নীতির মধ্যে সম্পর্ক পাওয়া গেছে৷
ছবি: DW
অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতা
যে সমস্ত দেশের নাগরিকদের সরকারি কর্মকাণ্ড পর্যালোচনার সুযোগ আছে সেসব দেশে দুর্নীতি কম হয়৷ অর্থাৎ যেখানে গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, শিক্ষিতের হার বেশি এবং সক্রিয় সুশীল সমাজ রয়েছে সেখানে দুর্নীতির হার কম৷ কেননা এর ফলে বিভিন্ন প্রকল্পে সরকারের ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়, সরকারের নীতি নিয়ে আলোচনা করা যায়৷
ছবি: Colourbox/Hin255
লাল ফিতার দৌরাত্ম কমানো
বিশ্বব্যাংকের ‘ডুয়িং বিজনেস’ প্রতিবেদন বলছে, যে সব দেশে ব্যবসা শুরু করতে, সম্পত্তি নিবন্ধন করতে, আন্তর্জাতিক ব্যবসায় জড়িত হতে নানা ধরনের সার্টিফিকেট, আইন, লাইসেন্স ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে সে’সব দেশে দুর্নীতি বেশি হয়৷ তাই বিশ্বব্যাংকের এক গবেষক দুর্নীতির জন্ম দিতে পারে এমন আইনকানুন বাদ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন৷
ছবি: DW
ভর্তুকি নয়
জ্বালানি খাতে ভর্তুকির নানা সমস্যা আছে৷ প্রায়ই এর সুবিধাভোগী হন ধনীরা৷ এছাড়া ভর্তুকি মূল্যে কেনা জ্বালানি চোরাচালানের মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হন অনেকে৷ তাই ভর্তুকির মতো ব্যয়বহুল পদ্ধতির চেয়ে নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মানুষদের অর্থ সহায়তা দেয়া যেতে পারে৷
ছবি: DW/W.Jantschits
স্মার্ট প্রযুক্তির ব্যবহার
সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে নাগরিকদের সরাসরি যোগাযোগ যত কমানো যাবে, দুর্নীতি কমানো ততই সম্ভব হবে৷ এক্ষেত্রে বিভিন্নক্ষেত্রে ইন্টারনেটের সহায়তা নেয়া যেতে পারে৷ সরকারি কেনাকাটার ক্ষেত্রে অনলাইনে টেন্ডার আহ্বানের মতো বিষয়াদি চালু করলে দুর্নীতির সুযোগ কমবে৷