ছেলেবেলায় প্রচুর ওয়েস্টার্ন উপন্যাস পড়েছি, যেখানে ভিলেন ঘোড়ায় চেপে পিস্তল হাঁকিয়ে ব্যাংক ডাকাতি করছে৷ হলিউডি সিনেমাতেও দেখেছি৷ এহেন ব্যাংক ডাকাতি কিন্তু কম ঝুঁকির নয়৷ ব্যাংক থেকে টাকা নেওয়া হয়ত সহজ, কিন্তু পালানোটা কঠিন৷
বিজ্ঞাপন
ঘোড়া বা হালের গাড়িতে করে পালাতে গেলে পিছনে পুলিশ লাগবেই, তাদের এড়ানো বেশ কঠিন৷ আর ব্যাংকের নানা শাখায় খুব বেশি অঙ্কের টাকাও নেই যে সেই টাকার জন্য এত বড় ঝুঁকি নেয়া চলে৷ কিন্তু সময়টা যে ডিজিটাল! আজ ইন্টারনেটভিত্তিক আমাদের সমাজব্যবস্থার সব কিছু! তাই এই একবিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকে এসে অপরাধও হয়ে পড়েছে সাইবার অপরাধ৷
ডাকাতরা আজকাল আর পিস্তল দেখিয়ে দিনে-দুপুরে ডাকাতি করে না৷ এখন আবির্ভাব হয়েছে সাইবার ক্রিমিনালদের, যারা ইন্টারনেটে ভর করে দুনিয়ার অপর প্রান্ত থেকে ব্যাংকের টাকা-পয়সা অনায়াসে করতে পারে লোপাট৷ কোনো পুলিশের ধাওয়া বা গুলি খাবার ভয় নেই আর টাকার অঙ্কটাও অনেক৷ এ কারণে সাম্প্রতিক বিশ্বে যেসব বড় ব্যাংক ডাকাতি হয়েছে, তার সবটাই হয়েছে সাইবার ক্রাইমের মাধ্যমে৷ মাস দুয়েক আগে বাংলাদেশ ব্যাংকে যে বড় মাপের ডাকাতি হলো, তা এর একটা বড় উদাহরণ৷
সাইবার অপরাধের বিভিন্ন ধরন
ইন্টারনেটের ব্যবহার যত বাড়ছে তত বাড়ছে সাইবার অপরাধের ঘটনা৷ ফলে আর্থিক ক্ষতি থেকে নানা রকমের হয়রানির শিকার হচ্ছেন অনলাইন ব্যবহারকারীরা৷ এমনই কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে এখানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পরিচয় চুরি
আজকাল অনলাইনে কেনাকাটা করছেন অনেকে৷ এরজন্য নাম, ঠিকানা, ই-মেল, ক্রেডিট কার্ডের তথ্য ইত্যাদি দিতে হয়৷ সমস্যাটা সেখানেই৷ যেসব ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো নয়, সেখানে এই তথ্যগুলো দিলে তা অপরাধীর কাছে চলে যাবার সম্ভাবনা থাকে৷ সেক্ষেত্রে অপরাধী আপনার তথ্য ব্যবহার করে আপনার ক্রেডিট কার্ড শূন্য করে দিতে পারে৷ কারণ আপনার যে পরিচয় চুরি হয়ে গেছে!
ছবি: picture alliance/maxppp/S. Mortagne
স্প্যাম ও ফিশিং
একদিন ই-মেল খুলে দেখলেন আপনি অনেক টাকার লটারি জিতেছেন৷ সেটা পেতে আপনাকে কিছু তথ্য দিতে বলা হচ্ছে৷ হঠাৎ করে বড়লোক হওয়ার লোভে আপনি সেই তথ্যগুলো দিয়েও দিলেন৷ ব্যস, যা হবার হয়ে গেছে৷ পরে দেখলেন টাকা পাওয়ার বদলে আপনার কাছে যা আছে সেটাও চলে যাচ্ছে! অর্থাৎ আপনি ফিশিং-এর শিকার হয়েছেন৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/McPHOTOs
ব়্যানসমওয়্যার
উন্নত বিশ্বে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে৷ অপরাধীরা ম্যালওয়্যার ঢুকিয়ে অন্যের কম্পিউটারের ফাইলগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়৷ তারপর ঐ কম্পিউটার ব্যবহারকারীকে বার্তা পাঠায় এই বলে যে, ফাইল ফেরত পেতে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/ZB/T. Eisenhuth
সাইবার মবিং বা সাইবারবুলিং
হয়ত মজা করার জন্য কিংবা ইচ্ছে করে একজনকে কষ্ট দিতে তার বন্ধুরা একজোট হয়ে হয়রানি করে থাকে৷ বাস্তবে স্কুল-কলেজে এমনটা হয়ে থাকে৷ আজকাল ইন্টারনেট সহজলভ্য হয়ে ওঠায় ভার্চুয়াল জগতে এমন ঘটনা ঘটছে৷ কিন্তু অনেক সময় বিষয়টি আর মজার পর্যায়ে না থেকে ভয়ানক হয়ে ওঠে৷ ফলে যাকে নিয়ে মজা করা হচ্ছে সে হয়ত এমন কিছু করে ফেলে যা কারও কাম্য থাকে না৷
ছবি: Sylvie Bouchard - Fotolia.com
ম্যালভার্টাইজিং
ধরুন আপনি কোনো ওয়েবসাইটে আছেন৷ সেখানে একটি বিজ্ঞাপন দেখে ক্লিক করলেন৷ ব্যস আপনার কম্পিউটারে একটি কোড ডাউনলোড হয়ে গেল৷ এটি কোনো নিরীহ কোড নয়৷ অপরাধীরা এর মাধ্যমে আপনাকে হয়রানির পরিকল্পনা করবে৷ সুতরাং...৷
ছবি: Getty Images
ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড স্কিমিং
রেস্টুরেন্ট, সুপারমার্কেটের বিল পরিশোধ, এটিএম থেকে টাকা তোলা, অর্থাৎ এমন কোথাও যেখানে আপনার ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডকে যন্ত্রের মধ্যে ঢোকাতে হয় সেখান থেকেও তথ্য চুরি হতে পারে৷ এটাই কার্ড স্কিমিং৷ স্কিমার যন্ত্রের মাধ্যমে এই তথ্য চুরি করা হয় বলে এর এমন নামকরণ হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Baltagiannis
ফোন ফ্রড
অচেনা কোনো নম্বর থেকে (বিশেষ করে বিদেশ থেকে) মিসড কল পেলে সঙ্গে সঙ্গে কলব্যাক না করাই ভালো৷ কারণ কে জানে হয়ত ফোন ফ্রড অপরাধীরা এই কলটি করেছিলেন৷ আর আপনি কলব্যাক করতে যে টাকা খরচ করলেন তার একটি অংশ পেয়ে গেল অপরাধীরা!
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
বাংলাদেশ ব্যাংকের ১ বিলিয়ন ডলার চুরির চেষ্টা এবং প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার আসলেই চুরি হয়ে যাওয়াকে আসলে ডাকাতির বদলে প্রতারণা বলাই শ্রেয়৷ কারণ এখানে ব্যাংকের ভিতরে কেউ ঢুকে পড়েনি, কাউকে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করা হয়নি, বরং ব্যাংকের পরিচয়ে বার্তা পাঠিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে টাকাটা হাতাবার চেষ্টা করেছে সাইবার ক্রিমিনালরা৷
কম্পিউটার নিরাপত্তা ও সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ নিয়ে গবেষণা ও শিক্ষকতার সুবাদে একটা কথা প্রায়ই উপলব্ধি করি যে, নিরাপত্তার সমস্যা আসলে কারিগরি সমস্যা নয় বরং সেটা মানবীয় সমস্যা৷ হাজার বছর আগেও নিরাপত্তার যে সমস্যা, প্রতারণার যে প্রক্রিয়া ছিল, এখনো তা আছে, কেবল পুরানো বোতল ফেলে তা পরিবেশিত হচ্ছে ডিজিটাল মোড়কে৷
কী ঘটেছে বাংলাদেশ ব্যাংকে?
বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা কীভাবে লোপাট হলো, তা বুঝতে হলে প্রথমে বুঝতে হবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাংকরা টাকা কীভাবে আদান-প্রদান করে৷ ধরা যাক, বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা অ্যামেরিকার একটি ব্যাংকে গচ্ছিত আছে৷ বাংলাদেশ ব্যাংক যদি অন্য কোনো দেশে টাকা পাঠাতে চায়, তাহলে কিন্তু অ্যামেরিকা থেকে বস্তায় করে সেই টাকাটা অন্য দেশে যাবে না, বরং ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার পদ্ধতিতে যাবে৷ আর টাকাটা পাঠাবার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে একটি আদেশ-পত্র পাঠাতে হবে অ্যামেরিকার সেই ব্যাংকে৷ আদেশ-পত্রটি আসলেই বাংলাদেশ ব্যাংক পাঠিয়েছে কিনা, তা যাচাই করে তবেই অ্যামেরিকার ব্যাংকটি টাকাটা গন্তব্যে পৌঁছে দেবে৷
ডার্কনেটের ব্যবহার বাড়ছে
বাংলাদেশে তথ্য অধিকার আইন হওয়ার পরও তথ্য পাওয়া মুশকিল৷ নিরাপত্তা সংস্থাগুলি যে প্রক্রিয়ায় তথ্য সংগ্রহ করছে, তাতে সব সময় তথ্য প্রদানকারীর পরিচয় পাওয়া নাও যেতে পারে৷
ছবি: Fotolia/Amir Kaljikovic
ইন্টারনেটে তথ্য
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা প্রতিদিনই বিভিন্ন ওয়েবসাইটে কিছু না কিছু তথ্য যোগ করেন৷ স্মার্টফোনের বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনগুলোও ব্যবহারকারীদের ধারণার চেয়ে বেশি তথ্য নিয়ে থাকে৷
ছবি: imago/Schöning
মেটাডাটা
গুপ্তচর বিভাগ বেশি আগ্রহী ‘মেটাডাটা’ সম্পর্কে৷ নেট ব্যবহারকারী সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য ওয়েবভিত্তিক বিষয়বস্তুর সঙ্গে পাওয়া যায়, যাকে বলা হয় মেটাডাটা৷
ছবি: Reuters
মেটাডাটার তথ্য
কে কাকে ই-মেল করছেন, সেই ব্যক্তির পরিচয়, সময় সম্পর্কে তথ্য থাকে মেটাডাটায় যা গুপ্তচর বিভাগ পেতে চায়৷ প্রেরক, ঠিকানা, তারিখ থেকে শুরু করে যে সার্ভার ব্যবহার করে ই-মেলটি করা হয়েছে, সেই তথ্যও এভাবে সংগ্রহ করা সম্ভব৷
ছবি: Raigo Pajula/AFP/Getty Images
ডার্কনেটের ব্যবহার
ডার্কনেটের মাধ্যমে পরিচয় গোপন রেখে যোগাযোগ করা সম্ভব৷ প্রযুক্তিগত কারণে এখনো সরকার বা নিরাপত্তা কর্মীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডার্কনেট ব্যবহারকারীদের সনাক্ত করতে পারেন না৷
ছবি: Fotolia/Gina Sanders
ফ্রিনেট
সবচেয়ে আলোচিত ডার্কনেটের নাম ফ্রিনেট৷ তাদের ওয়েবসাইটে গেলে বিনামূল্যে একটি সফটওয়্যার ডাউনলোড করা যায়৷
ছবি: Reuters
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তথ্য
ফেসবুক এবং টুইটারে একজন ব্যবহারকারী শুধু নিজের সম্পর্কে সাধারণ তথ্যই জানান না, তাঁরা তাঁদের পছন্দ, অপছন্দ, এমনকি বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কেও জানান৷ ব্লগে সমাজ সচেতনতা, মানবাধিকার, সরকার বিরোধী লেখাও লেখা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাংলাদেশে ডার্কনেট
বাংলাদেশে ডার্কনেটের ব্যবহার আগে না হয়ে থাকলেও খুব শিগগিরই যে সেটা শুরু হয়ে যাবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না৷
ছবি: Fotolia/Amir Kaljikovic
7 ছবি1 | 7
এখানে পুরা সিস্টেমটির ভিত্তি হলো বাংলাদেশ ব্যাংক আসলেই কোনো মেসেজ পাঠিয়েছে কিনা, তা যাচাই করার উপরে৷ সুরক্ষিতভাবে মেসেজ পাঠাবার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে যে পদ্ধতি চালু আছে তার নাম হলো সুইফট (এসডাব্লিউআইএফটি)৷ এটি একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, যার সদরদপ্তর বেলজিয়ামে অবস্থিত৷ সুইফট-এর সিস্টেমের কাজ হলো ব্যাংকিং সংক্রান্ত মেসেজগুলাকে সুরক্ষিতভাবে আদান-প্রদান করা, যাতে করে কেউ নকল মেসেজ দিতে না পারে, এবং প্রাপক যাতে করে প্রতিটি বার্তা আসলেই প্রেরকের কাছ থেকে এসেছে কিনা, তা যাচাই করে নিতে পারে৷ সুইফট সিস্টেমের সুরক্ষা বেশ শক্তপোক্ত৷ যথাযথ অ্যাকাউন্ট নম্বর ও পাসওয়ার্ড জানলেই চলে না, বরং মেসেজ পাঠাবার মেশিনে থাকতে হয় বিশেষ একটি যন্ত্রাংশ বা ডঙ্গল৷ সুইফটের সর্বাধুনিক ডঙ্গলটি হলো ৩এসকি, যা ইউএসবি পোর্ট-এ লাগাতে হয়৷ মেসেজ পাঠাবার সময়ে লগিন পাসওয়ার্ড কেউ জানলেও ডঙ্গলটি যদি না থাকে, তাহলে কেউ ব্যাংক সেজে ব্যাংকের নামে নকল মেসেজ পাঠাতে পারে না৷
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে নিউ ইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের যে সিস্টেম ছিল তা অনেকটা এ রকম — বাংলাদেশ ব্যাংক দরকার মতো গচ্ছিত অর্থ স্থানান্তরের জন্য সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে মেসেজ পাঠাবে৷ সেই মেসেজ পাওয়ার পর সুনিশ্চিত করার জন্য নিউ ইয়র্ক ফেডের ফ্যাক্স বা ই-মেল কনফার্মেশন পাঠাবার কথা আছে কিনা তা জানি না৷ তবে মনে হচ্ছে মেসেজ পাওয়ার পরে কনফার্মেশন পাওয়াটা বাধ্যতামূলক ছিল না৷ মেসেজটা সুইফট সিস্টেমের মাধ্যমে ঠিক জায়গা (বাংলাদেশ ব্যাংক) থেকে এসেছে এটা নিশ্চিত করতে পারলেই নিউ ইয়র্ক ফেড টাকা পাঠিয়ে দিবে, বন্দোবস্তটা সম্ভবত এ রকমই ছিল৷
তাহলে এই সিস্টেমে সাইবার ক্রিমিনালরা হানা কীভাবে দিলো? খেয়াল রাখতে হবে, সুইফট সিস্টেমের এনক্রিপশন এবং ডিজিটাল সিগনেচার বেশ ভালো রকমের শক্তিশালী – সেটা ভাঙাটা বিশ্বের সেরা হ্যাকারের পক্ষেও প্রায় অসম্ভব৷ আর নিউ ইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের নিজের নিরাপত্তাও কিংবদন্তীসম — সেখানে হ্যাক করা গেলে আসলে বাংলাদেশের অল্প টাকা না, অনেক বড় অঙ্কের টাকাই যেত৷
তথ্য গোপন রাখার সাতটি সহজ উপায়
আধুনিক প্রযুক্তির কারণে মানুষের সুযোগ-সুবিধা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে তথ্য চুরির ঘটনা৷ ফোর্বস জানাচ্ছে কোন সাতটি উপায়ে আপনি খুব সহজেই ব্যক্তিগত তথ্য রক্ষা করতে পারেন৷
ছবি: Fotolia/davidevison
পাসওয়ার্ড নিজের কাছে রাখুন
কম্পিউটার, স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটের পাসওয়ার্ড যেন কখনই এক না হয়৷ আর ব্যাংক কার্ড-এর সঙ্গে যেন এই পাসওয়ার্ডের মিল না থাকে৷ এছাড়া কম্পিউটার, স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটে কোনো পাসওয়ার্ড লিখে রাখবেন না৷ এর ফলে আপনার তথ্য চুরির সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়৷ বাড়ির বাইরে গেলে এগুলি ‘লক’ করে যাবেন৷
ছবি: Sergey Nivens - Fotolia.com
নামে ‘গুগল অ্যালার্ট’ ব্যবহার করুন
এটা খুব সহজ পন্থা, আপনি যদি দেখতে চান ইন্টারনেটে আপনার সম্পর্কে সবাই কী বলছে৷ সোজা এই ঠিকানায় যান – http://www.google.com/alerts এবং আপনার নাম লিখুন৷ তারপর আপনার নামের বিভিন্ন ধরন লিখে, তার আগে ও পরে ‘কোটেশন মার্ক’ জুড়ে দিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Berg
ব্যবহারের পর লক্ষ্য রাখা
আপনি যদি অন্য কারো কম্পিউটার বা ট্যাবলেট ব্যবহার করেন, তবে একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন৷ আপনার পর যিনি সেটা ব্যবহার করবেন, তিনি যাতে আপনার অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে না পারে – সেটা খেয়াল রাখুন৷ আপনি যদি এটা করতে ভুলে যান, তাহলে ফলাফল ভয়াবহ হতে পারে৷
ছবি: AFP/Getty Images
ফোন, ই-মেল বা জিপ কোড ব্যবহার করতে না দেয়া
অচেনা কোনো মানুষ এই নম্বরগুলো জানতে চাইলে, আপনারা দেবেন না৷ দেখা যায় কোনো অফিস তাঁর কর্মীর কাছ থেকে এ সব তথ্য চাইলে, অনেকেই সেচ্ছ্বায় তা দিয়ে দেয়৷ বহু অফিস এ নিয়ে একটি প্রোফাইল তৈরি করে৷ আপনার কিন্তু এ সব তথ্য না দেয়ার অধিকার আছে৷ তাই আপনি যদি এতে স্বাচ্ছ্বন্দ্যবোধ না করেন, তবে দেবেন না৷
ছবি: picture-alliance/ZB
কার্ড নয় ক্যাশ
আপনি যদি চান আপনি যে পণ্যটি কিনছেন, সেই কোম্পানি আপনারা পরিচয় না জানুক, তবে নগদ অর্থে জিনিস কিনুন৷
ছবি: AP
ফেসবুকে নিরাপত্তার জন্য ‘ফ্রেন্ডস’ ব্যবহার করুন
ফেসবুকে সবসময় ‘সিকিউরিটি’ বা নিরাপত্তা পরীক্ষা করুন৷ পোস্ট করার পর লক্ষ্য রাখুন আপনি আপনার ছবি বা মন্তব্য ‘ফ্রেন্ডস’ করে রেখেছেন, নাকি ‘পাবলিক’ করেছেন৷ আপনি যদি ‘স্পেশ্যাল’ নির্বাচন করেন এবং ঠিক করে দেন কে কে আপনার পোস্ট দেখতে পাবে, তবে সেটা আপনার তথ্য নিরাপত্তার জন্য তুলনামূলকভাবে ভালো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Bozoglu
‘হিস্ট্রি’ এবং ‘কুকিস’ মুছে ফেলুন
আপনি সবশেষ কবে এটা করেছেন? আপনি যদি নিশ্চিত না হন, ব্রাউজারে গিয়ে এটা পরিবর্তন করুন৷ ব্রাউজারের ‘প্রাইভেসি সেটিংস’-এ যান, সেখানে ‘নেভার রিমেমবার হিস্ট্রি’ নির্বাচন করুন৷ এর ফলে ইন্টারনেটে আপনাকে ‘ট্র্যাক’ করাটা হ্যাকারদের জন্য কঠিন হবে৷ এছাড়া আপনি ‘অ্যাড অন’-ও ব্যবহার করতে পারেন৷
ছবি: Fotolia/davidevison
7 ছবি1 | 7
গন্তব্য স্থান যদি হ্যাক না হয়, এবং মেসেজ পাঠাবার মাধ্যম সুইফট সিস্টেম যদি ঠিক থাকে, নকল মেসেজ কেউ যদি বানাতে না পারে, তাহলে কীভাবে হলো? জবাব একটাই – টাকা পাঠাবার মেসেজগুলা গেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কম্পিউটার থেকেই৷ এবং সেটা করার জন্য অপরাধীদের সেই কম্পিউটারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হাতে নিতে হয়েছে৷ সেই কম্পিউটারের কিবোর্ড মনিটর করে পাসওয়ার্ড এবং ইউএসবি পোর্টে লাগানো থাকা ডঙ্গলটির দখল নিয়ে সেখান থেকেই মেসেজ পাঠানো হয়েছে৷
কিন্তু এ রকম গুরুত্বপূর্ণ একটি কম্পিউটারের দখল কীভাবে যাবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে দুনিয়ার অপর প্রান্তে বসে থাকা অপরাধীদের কাছে? এর দুইটি সম্ভাবনা আছে৷ প্রথম সম্ভাবনা – এই কম্পিউটারটির নিরাপত্তা অত্যন্ত দুর্বল ছিল৷ বাইরের আক্রমণ ঠেকাবার জন্য অনেক ভালো শক্তপোক্ত ফায়ারওয়াল ইন্সটল করাটা খুব সহজ একটা ব্যাপার, আর যে কোনো নেটওয়ার্কে সবার আগে সেটাই করা হয়৷ কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের কম্পিউটার বিশেষজ্ঞদের সেই দিকে খেয়াল কতটা ছিল, তা বোঝা যায়৷ যদি না সেই কম্পিউটারের ফায়ারওয়াল না থাকে বা যাচ্ছেতাই রকমের না হয়ে থাকে, তাহলে বাইরে থেকে টার্গেট করে সুইফট সিস্টেমের টার্মিনালটি হ্যাক করা বেশ দুরূহ কাজ বটে৷
দ্বিতীয় সম্ভাবনাটির সাথে জড়িত আছে আসলে সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং – মানে মানবীয় দুর্বলতা ভিত্ত্বিক আক্রমণ৷ যে কোনো সিস্টেমের সবচেয়ে দুর্বল অংশ হচ্ছে সেটার ইউজাররা৷ যন্ত্র ঘুস খায় না, যন্ত্র বোকা বনে না, যন্ত্রকে ভুলিয়ে ভালিয়ে কাজ সারা যায় না৷ কিন্তু মানুষকে যায়৷ এই সুইফট টার্মিনাল কম্পিউটারের ব্যবহারকারী কেউ নিজের অজান্তেই বা জেনেশুনে যেভাবেই হোক সেখানে ম্যালওয়ার ইন্সটল করে ফেলতে পারেন৷ হতে পারে, ই-মেলে পাঠানো কোনো লিংকে ক্লিক করে ম্যালওয়ার ইন্সটল করা হয়েছে অথবা কোনো ফ্ল্যাশ ড্রাইভের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে৷ অথবা কেউ জেনেশুনে সেই মেশিনটিতে ম্যালওয়ারটি বসিয়েছে, যা সেই মেশিনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলেছে এর পরে৷
ওরা ইন্টারনেটে যা দেখে
জার্মানির মাইনৎস মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোদৈহিক বিভাগের একটি জরিপের ফলাফলে জানা গেছে, আজকের কিশোর-কিশোরীরা অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছে৷ কী দেখে তারা? ছবিঘরে পাবেন...
ছবি: Pub Crawl Cologne
অতিরিক্ত ইন্টারনেট টিন-এজারদের নিঃসঙ্গ করে তোলে
সম্প্রতি ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সি ২,৪০০ কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে একটি জরিপ করা হয়েছিলো৷ যারা দিনের ৬ ঘণ্টাই কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল বা ট্যাবলেটের সামনে বসে সময় কাটায়, তাদের সমবয়সি বা বন্ধুবান্ধবদের সাথে মেশার তেমন কোনো আগ্রহ নেই৷ কারণ সামনে থাকা যন্ত্রটিই তাদের বড় বন্ধু ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. von Jutrczenka
কম্পিউটার গেম
যখন মানুষের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার সবচেয়ে ভালো সময় ঠিক সেসময়ই যদি তারা দিনের এতটা সময় কম্পিউটার গেম বা যৌন বিষয়ক ওয়েবসাইট নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটায় তাহলে কারো সাথে বন্ধুত্ব হওয়া খুব কঠিন৷ এ কথা বলেন গবেষক টিমের প্রধান ডা.মানফ্রেড বয়টেল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নেশা
যাদের নিয়ে গবেষণা করা হয়, তাদের মধ্যে শতকরা ৩.৪ শতাংশই ইন্টারনেটে নেশাগ্রস্ত৷ অর্থাৎ তারা দিনে ৬ ঘণ্টার বেশি অনলাইনে থাকে, অন্য কিছুর প্রতি তাদের কোনো আগ্রহ নেই৷ ১৩.৮ শতাংশ কিশোর-কিশোরীদের নেশা না হলেও তারাও ইন্টারনেটের প্রতি খুবই আগ্রহী৷ সময়ের দিক থেকে ছেলেমেয়ে সমানভাবেই ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে৷
ছবি: Shaikh Azizur Rahman
ছেলে-মেয়ের পার্থক্য
সময়ের দিক থেকে পার্থক্য না থাকলেও ছেলে এবং মেয়েদের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে৷ যেমন মেয়েরা বেশি সময় কাটায় সামাজিক যোগাযোগ এবং অনলাইন শপিং-এ, আরা ছেলেরা বেশি সময় খরচ করে কম্পিউটার গেম এ, এবং যৌনআনন্দে৷
ছবি: Fotolia/apops
বন্ধু চাই
যেসব টিন-এজ বা কিশোর-কিশোরীরা সমাজে ভালোভাবে মেলামেশা করতে পারেনা, তারা এমন অনলাইন কার্যক্রমে ব্যস্ত থাকে যেগুলোতে সামাজিক যোগাযোগ কম হয়৷ এ তথ্য জানান ড.বয়টেল তাঁদের ক্লিনিকের আউটডোর পেশেন্ট হিসেবে আসা কম্পিউটারে ‘নেশা’ টিন-এজারদের সম্পর্কে৷
ছবি: Fotolia/Doreen Salcher
সামাজিকভাবে মেলামেশার পরামর্শ
এরকম ছেলে-মেয়েদের বাবা-মা এবং শিক্ষকদের প্রতি ডা.মানফ্রেড বয়টেলের পরামর্শ, টিন-এজারদের প্রযুক্তির উন্নয়ন ব্যবহারের পাশাপাশি সামাজিকভাবে মেলামেশার বিষয়টির দিকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া এবং লক্ষ্য রাখা উচিত৷
ছবি: Pub Crawl Cologne
6 ছবি1 | 6
একবার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পরে সেই টার্মিনাল থেকে সুইফট অপারেটরের বেশ ধরে টাকা চুরির সেই সুইফট বার্তা পাঠানো একেবারেই ডাল-ভাত ধরনের কাজ৷ যেহেতু আসল পাসওয়ার্ড ও ডঙ্গল বিশিষ্ট আসল সুইফট টার্মিনাল থেকেই টাকা পাঠানো হয়েছে, নিউ ইয়র্ক ফেডের সন্দেহ করার একেবারেই কোনো কারণ ছিল না৷ কারণ বার্তাটা যেভাবে যার কাছ থেকে আসার কথা, তাই-ই তো এসেছে৷
হ্যাকাররা নিজেদের ট্রাক ঢাকতে আরো কিছু কাজ করেছে, মেশিনগুলাতে লগিন বন্ধ করে দিয়েছে, সাথে লাগানো প্রিন্টারগুলাকে করে দিয়েছে অচল এবং সব লগ মুছে ফেলেছে৷ ফলে কম্পিউটার হ্যাক হয়েছে বা টাকা চুরি গেছে, এটা বুঝতেই লেগেছে অনেক সময়৷ সেই ফাঁকে টাকা চলে গেছে ফিলিপাইন্স ও শ্রীলঙ্কায়৷ আমাদের ভাগ্য ভালো, বানান ভুলের জন্য ডয়চে ব্যাংকের সন্দেহ হয়েছিল, তাই পুরা ১ বিলিয়ন টাকাটা খোয়া যায়নি৷ সেটা না হলে কিন্তু সবটাই যেত৷
কিছু পর্যবেক্ষণ
১) বাংলাদেশ ব্যাংকের সাইবার সিকিউরিটি সংক্রান্ত সব কিছুর অবস্থা যাচ্ছেতাই রকমের বাজে৷ যে কোনো সিকিউরিটি সিস্টেমের একেবারে গোড়ার কাজ হলো থ্রেট মডেল করে সিস্টেমের দুর্বল জায়গা খুঁজে বের করা এবং সেখানকার সমস্যা দূর করা৷ আর কোনো সিস্টেম একবার চালু হলে সেটা দুর্ভেদ্য বলে বিশ্বাস না করে পেনিট্রেশন টেস্টিং অর্থাত সিস্টেমের শক্তি নিয়মিত আক্রমণের মহড়ার মাধ্যমে যাচাই করে দেখা৷ ব্যাংকের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার যেখান থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়, সেই টার্মিনালগুলার নিরাপত্তা এবং অর্থ লেনদেনের এই সিস্টেমের দুর্বলতা বের করতে ন্যূনতম প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কোনো সিকিউরিটি এনালিস্ট পারবে না, এটা বিশ্বাস করা খুব কঠিন৷ সন্দেহ হয়, আদৌ কি বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্তাব্যক্তিরা সাইবার সিকিউরিটির কিছু বোঝেন বা খেয়াল রাখেন কিনা৷
টাকা, সুখ ও সুস্বাস্থ্য অর্জনের কিছু উপায়
পেটে খিদে নিয়ে বাজারে গেলে কি মানুষ বেশি কেনা-কাটা করে? কিংবা কয়েকদিন ফেসবুকে না ঢুকলে মন কি ভালো হয়ে যায়? নাকি যাদের মগজ বড় তারা বেশি বুদ্ধিমান? এ রকম নানা প্রশ্নের উত্তর জানাচ্ছেন বিভিন্ন দেশের গবেষকরা৷
ছবি: DW/Arne Lichtenberg
কয়েকদিনের ফেসবুক বিরতি আনন্দ আনে
সম্প্রতি ডেনমার্কের কোপেনহাগেন শহরের ‘হ্যাপিনেস রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এ ১,০৯৫ জন মানুষকে নিয়ে একটি গবেষণা করা হয়৷ এদের মধ্যে অর্ধেক মানুষ এক সপ্তাহ ফেসবুক থেকে দূরে থাকার পর কাজে যোগ দিলে দেখা যায় যে, তাদের কাজে মনোযোগ বেড়েছে৷ যারা ফেসবুক থেকে দূরে ছিলেন, তাদের তুলনায় এরা ছিলেন অনেক শান্ত, সন্তুষ্ট এবং খুশি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Weigel
ক্ষুধা কেনায় আগ্রহ বাড়ায়
যারা পেটে খিদে নিয়ে শপিংয়ে যান তারা যে শুধু বেশি খাবার কেনা-কাটা করেন তাই নয়, সব কিছুই তারা বেশি বেশি কেনেন৷ যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের করা এক গবেষণার ফলাফল থেকে এই তথ্য জানা গেছে৷ শপিং সেন্টার থেকে বের হওয়ার সময় খদ্দেররা কতটা ক্ষুধার্থ ছিলেন এবং কত টাকার বাজার করেছেন – তার একটা সম্পর্ক বের করেন বিজ্ঞানীরা৷ গবেষকদের পরামর্শ, ‘ভরা পেটে শপিংয়ে যান, পয়সা বাঁচান৷’
ছবি: picture-alliance/dpa/S.Can
বড় মস্তিষ্কে কি বুদ্ধি বেশি থাকে?
আমরা জানি যে, বুদ্ধি মাপা যায় আইকিউ টেস্ট-এর মাধ্যমে৷ তবে সেখানে মগজের মাপের ভূমিকা নেই৷ ৮,০০০ মানুষকে নিয়ে নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রিয়া এবং জার্মানির গবেষকদের করা সমীক্ষা থেকে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে৷ সম্ভবত বুদ্ধিমত্তা নির্ভর করে মগজের গঠনের ওপর, সাইজ বা আয়তনের ওপর নয়৷ তথ্যটি প্রকাশ করা হয় বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নিউরো সাইন্স অ্যান্ড বিওবিহেভিওরাল রিভিউ’-এ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W.Grubitzsch
সমবেদনা কম হলে ইন্টারনেটে আসক্তি বাড়ে?
যারা নিজেকে নিয়ে বেশি ব্যস্ত, অর্থাৎ যাদের অন্যের প্রতি অনুভূতি বা সমবেদনা কম থাকে, তারা নাকি ইন্টারনেটে বেশি আসক্ত হয়৷ এমনটাই জানাচ্ছেন জার্মানির উল্ম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা৷ ৬০০-রও বেশি চীনা এবং জার্মান ছাত্র-ছাত্রীকে নিয়ে একটি গবেষণা করে তারা দেখান যে, এর সঙ্গে বয়েস, লিঙ্গ, এমনকি সংস্কৃতির কোনো সম্পর্ক নেই৷ জার্মানিতে আনুমানিক ১ মিলিয়ন মানুষ ইন্টারনেটে আসক্ত৷
ছবি: Fotolia/Aaron Amat
কফি ক্ষুধার্ত করে তোলে!
যাদের বিকেলে ঘটা করে নিয়মিত কফি পান করার অভ্যাস, তারা সাধারণত বেশি খায় এবং সহজেই তাদের ওজন বাড়ে৷ কারণ তারা কখনো তাদের প্রিয় পানীয়টি ‘কিছু’ ছাড়া পান করেন না৷ অর্থাৎ কফির সাথে তাদের চাই কেক, বিস্কুট অথবা চকলেট৷ চায়ের সাথে যেমন অনেকের ‘টা’ চাই, এটাও অনেকটা তেমনি৷ ২০ হাজার মানুষেকে নিয়ে করা একটি গবেষণা থেকে এই তথ্যটি তুলে ধরেন ডা. রুয়োপেং৷
ছবি: DW/Arne Lichtenberg
5 ছবি1 | 5
২) টাকা চুরি যাবার ঘটনা বুঝে ফেলার পরে যে কাজটা হলো, সেটাকেও রীতিমত তুঘলকি কাজ বলতে হবে৷ সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশনের কোর্স আমি ও আমার সহকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়ে থাকি৷ সাইবার ক্রাইম তদন্তের জন্য দরকার সুদক্ষ ফরেন্সিক এক্সামিনার৷ ডিজিটাল ফরেন্সিক্সে দক্ষতা যাদের আছে, তারাই এই কম্পিউটার সহ নানা সিস্টেমের খুঁটিনাটি ঘেঁটে আসল ঘটনা বের করতে পারবেন৷ বাংলাদেশ ব্যাংক অথবা বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলাতে দক্ষ ফরেন্সিক্স এনালিস্ট আদৌ আছে কিনা তা মনে হচ্ছে না, কারণ আসল ঘটনা বের করতে দ্বারস্ত হতে হয়েছে অ্যামেরিকার একটি প্রতিষ্ঠানের৷ দেশে ডিজিটাল ফরেন্সিক্স-এর উপরে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা প্রায় বছর তিনেক ধরে যাকে পেয়েছে, তাকেই বলেছি, কিন্তু কান যে কেউ দেয়নি, এবারে তা বোঝা গেলো হাড়ে হাড়ে৷
৩) সবশেষে পুরানো সেই প্রশ্ন – কীভাবে হ্যাকারেরা ঢুকে পড়লো এই কম্পিউটারে? আমার আন্দাজ (এবং এটাকে আন্দাজই বলবো, যেহেতু আসল ঘটনার অনেক তথ্যই পাবলিক না), ইন্টারনেটের মাধ্যমে এসে ব্যাংকের সিস্টেমে বাইরে থেকে ঢুকে মেশিন হ্যাক করার কাজটা অনেক অনেক কঠিন, যদি না কেউ ভিতর থেকে দরজাটা খুলে দেয়৷ অর্থাৎ ভিতরের কেউ হয় ইচ্ছাকৃতভাবে অথবা বোকামির জন্য নিজের অজান্তেই সেই টার্মিনালগুলার নিরাপত্তা ভেঙে ম্যালওয়ার ইন্সটল করতে সাহায্য করেছে৷ পত্র-পত্রিকার খবর অনুসারে এই মেশিনগুলাতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশনেরও ব্যবস্থা ছিল, সেটা কতটা কীভাবে ছিল তা জানি না, কিন্তু দুনিয়ার অধিকাংশ বড় সাইবার অপরাধের কিংবা তথ্য লিক হওয়ার সাথে ভিতরের কারো যোগসাজস ছিল, সেটা উইকিলিক্স হোক অথবা হালের পানামা পেপার্সই হোক না কেন৷ সুনির্দিষ্টভাবে কে দায়ী তা বলা কঠিন৷ আমি আশা করবো আমার আন্দাজটি ভুল, দেশের এত টাকা চুরির সাথে দেশের কেউ জড়িত না৷ তবে যৌক্তিক হিসাবে ব্যাংকের সিস্টেম কীভাবে কাজ করে তা জানে ভালোভাবে এবং ব্যাংকের সিস্টেমে এক্সেস আছে, এমন কারো পক্ষে খুব সহজেই অপরাধীদের সাহায্য করা সম্ভব৷ আর এক্ষেত্রে তাই সম্ভবত হয়েছে৷
শেষ কথা
দেশের আর সব গুজব ও হুজুগের মতো বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা চুরির ঘটনাটাও ধামাচাপা পড়ে গেছে৷ ক্রিকেট অথবা দেশের নানা ঘটনা দুর্ঘটনার মাঝে এই টাকা চুরির ঘটনা অল্প কয়দিন পরেই জনতার মন থেকে মুছে যাবে৷ কিন্তু এই অভাবনীয় দুর্ঘটনাটির একটি ভালো দিক আছে বৈকি৷ সাইবার ক্রাইম মানে ওয়েবসাইট দখল করে সেখানে হাবিজাবি লিখে ডিফেইস করা না, বরং আসল সাইবার ক্রাইম মানে গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেমের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কোটি কোটি টাকা চুরির মতো ঘটনা, সেটা আশা করি কর্তাব্যক্তিদের মাথায় ঢুকবে৷ তার সাথে সাথে কেবল ডিজিটাল সিস্টেম সর্বত্র বসালেই চলে না, বরং তার নিরাপত্তার কথা আগে থেকে ভাবতে হয়, সিস্টেম এনালাইসিস করে নিরাপত্তার সমস্যা আগাম বুঝে নিতে হয়, এবং দুর্ঘটনা ঘটলে ডিজিটাল ফরেন্সিক এনালাইসিস করে তার তদন্ত করতে হয়, এই ব্যাপারটা আশা করি দেশের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা বুঝবেন এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন৷ আমাদের দেশটা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে, হতেই হবে, কিন্তু তার নিরাপত্তার জন্য খুব জরুরিভাবে দরকার এখন কম্পিউটার সিকিউরিটির উপরে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষা এবং পেশাজীবীদের প্রশিক্ষিত করা এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের সাইবার ক্রাইম ও ডিজিটাল ফরেন্সিক্সের উপরে দক্ষতা অর্জন৷
নিরাপত্তা কিন্তু কারিগরি সমস্যা না, মানবীয় সমস্যা৷ এই সমস্যা থাকবেই৷ সেজন্য হতে হবে সতর্ক, নিতে হবে সময়োপযোগী পদক্ষেপ৷
বন্ধু, আপনি কি রাগিব হাসানের সঙ্গে একমত? জানান নীচে, মন্তব্যের ঘরে৷