দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে প্রবল বৃষ্টিতে বন্যা ও ভূমিধসে অন্তত ৪০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে৷ শুধু ভারতের আসামেই বন্যায় সাড়ে আট লাখেরও বেশি মানুষের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর মিলেছে৷
বিজ্ঞাপন
দুই সপ্তাহ ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন স্থানে৷ শুধু নেপালেই ২৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে৷ পুলিশ জানিয়েছে দেশটির পূর্ব ও দক্ষিণের সমতলভূমিতে অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন, নিখোঁজ রয়েছেন ১৫ জন৷
নেপালের আবহাওয়া অধিদপ্তর কোশি নদীর বিপদসীমা নিয়ে অ্যালার্ট জারি করেছে৷ মানুষকে এরই মধ্যে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে৷ দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা উমাকান্ত অধিকারী বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, ‘‘আমাদের প্রথম কাজ সবার জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা৷ এ কাজে আমাদের সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করা হয়েছে৷''
নদীর জল বেড়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে৷ নৌকা ব্যবহার করে মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছে পুলিশ৷ ৬৮টি সরকারি শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন অন্তত আট হাজার মানুষ৷
জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলা বর্ষাকালে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিবছরই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়৷ শুধু গত বছরই এই অঞ্চলে ঝড়ের তাণ্ডবে নিহত হয়েছেন অন্তত ১২০০ মানুষ৷
পরিবেশবাদী সংগঠন জার্মানওয়াচ ‘গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স ২০১৯’ প্রকাশ করেছে৷ সেখানে গত ১৯ বছরে চরম আবহাওয়ার শিকার দেশের তালিকা করা হয়েছে৷
ছবি: bdnews24.com
বাংলাদেশ সপ্তম
জার্মানওয়াচ বলছে, ১৯৯৮ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত চরম আবহাওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশ সপ্তম অবস্থানে আছে৷ চরম আবহাওয়া বলতে ঝড়, বন্যা, তীব্র গরম এসবকে বুঝিয়েছে জার্মানওয়াচ৷
ছবি: Getty Images/AFP
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পুয়ের্টো রিকো
ক্যারিবীয় সাগরে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চল পুয়ের্টো রিকোতে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে হারিকেন মারিয়া আঘাত হেনেছিল৷ এতে সরকারি হিসেবে প্রাণ হারান ২,৯৭৫ জন৷ তবে শুধু ২০১৭ সালেই নয়, অঞ্চলটি প্রায়ই দুর্যোগের শিকার হয়৷ ফলে জার্মানওয়াচের তালিকায় গত ১৯ বছরে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে পুয়ের্টো রিকোর নাম উঠে এসেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Arduengo
স্বল্পোন্নত দেশগুলোতেই ক্ষতি বেশি
বাংলাদেশ (৭) ও পুয়ের্টো রিকো (১) ছাড়া সূচকে শীর্ষ দশের অন্য দেশগুলো হচ্ছে হন্ডুরাস (২), মিয়ানমার (৩), হাইতি (৪), ফিলিপাইন্স (৫), নিকারাগুয়া (৬), পাকিস্তান (৮), ভিয়েতনাম (৯) এবং ডোমিনিকা (১০)৷ অতীত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে জার্মানওয়াচ বলছে, সাধারণত শিল্পোন্নত দেশগুলোর চেয়ে স্বল্পোন্নত দেশগুলোই চরম আবহাওয়ার কারণে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. K. Thu
আরেক সূচকে বাংলাদেশ নবম
এই সূচকটিও জার্মানওয়াচের করা৷ তবে এটি তৈরিতে শুধুমাত্র ২০১৭ সালের তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে৷ এতে দেখা যাচ্ছে, ঐ বছর বাংলাদেশে দুর্যোগে ৪০৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন৷ আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় ২৯০ কোটি ডলার৷
ছবি: bdnews24.com
দক্ষিণ এশিয়ার তিন দেশ
২০১৭ সালের সূচকে বাংলাদেশ ছাড়াও শ্রীলঙ্কা (২) ও নেপালের (৩) নাম আছে৷ ২০১৭ সালের মে মাসে শ্রীলঙ্কায় ভারী বর্ষণের কারণে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে দুশ’র বেশি মানুষ প্রাণ হারান৷ নেপাল, বাংলাদেশ ও ভারতেও (১৪) বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যা দেখা দিয়েছিল৷ ফলে ঐ তিন দেশের প্রায় ৪০ মিলিয়ন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Paudel
ধনী দেশগুলোও টের পাচ্ছে
২০১৭ সালে আটলান্টিক মহাসাগরে সৃষ্ট একের পর এক হারিকেনের আঘাতে যুক্তরাষ্ট্রসহ ধনী কয়েকটি দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ ফলে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়টি যে দিন দিন সার্বজনীন সমস্যায় পরিণত হচ্ছে, তা ধনী দেশগুলো এখন বুঝতে পারছে বলে মনে করছে জার্মানওয়াচ৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Arduengo
6 ছবি1 | 6
‘পরিস্থিতি ভয়াবহ'
ভারতের আসামে ২১টি জেলার দেড় হাজারেরও বেশি গ্রাম থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে৷ বন্যার্তদের মধ্যে খাবার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহ করছে ত্রাণ সংস্থা৷ ব্রহ্মপুত্র ও এর শাখাগুলোর জল বাড়তে থাকায় প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা৷
শনিবার আসামের দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণ কক্ষের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‘বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ৷ মোট ৮৬৯,০২৪ জন মানুষ এ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন৷ তাঁদের বাড়িঘর তলিয়ে গেছে, অথবা ফসলের ক্ষতি হয়েছে৷'' তিনি বলেন, ‘‘পাঁচজন বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছেন, একজন মারা গেছেন ভূমিধসে৷''
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে এই অঞ্চলে আরো বেশ কিছুদিন ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে৷