1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের অস্বস্তি কাটবে কীভাবে?

১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের অবনতি ঘটছে৷ সরকারি পর্যায়ে দুই দেশের মধ্যে দুই-একটি বৈঠক হলেও তাতে পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি৷ তলব ও পাল্টা তলব, বিবৃতি ও পাল্টা বিবৃতি চলছেই৷ তাহলে সম্পর্ক উন্নয়নের পথ কী?

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
এপ্রিলে ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনে ড. ইউনূস এবং নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে বৈঠক হতে পারেছবি: Fabrice Coffrini/Luis Robayo/AFP/Getty Images

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলছে, অবশেষে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর একটি বৈঠকের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে৷ আর সেটা হতে পারে আগামী এপ্রিলে ব্যাংককে৷ ৪ এপ্রিল ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনে ড. ইউনূস এবং নরেন্দ্র মোদী দুইজনই যোগ দিচ্ছেন৷ ওই সময় তাদের দুইজনের মধ্যে আলাদা বৈঠকের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে৷ আর দায়িত্ব নেয়ার পর আগস্টে দুইজনের মধ্যে ফোনালাপ হয়েছে৷

এদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে আবারো দেখা হচ্ছে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সাথে৷ বৈঠক হওয়ারও কথা রয়েছে৷ আর সেটা হতে পারে ওমানের রাজধানী মাস্কটে ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনে৷ ৮ম ইন্ডিয়ান ওসান কনফারেন্সের তারিখ নির্ধারণ হয়েছে ১৬-১৭ ফেব্রয়ারি৷ আর ওই সম্মেলনে যোগ দেয়ার জন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ওই বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন৷ এবং সম্মেলনের ফাঁকে তাদের দুইজনের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে৷

আমাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত আমরা নির্ধারণ করব: ড. লাইলুফার ইয়াসমিন

This browser does not support the audio element.

এর আগেও অবশ্য তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে জয়শঙ্করের বৈঠক হয়েছে গত বছরের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সময় নিউইয়র্কে৷ ওটা ছিলো ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম বৈঠক৷ পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে তখন দুই দেশ পারস্পরিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে সম্মত হয়৷

অন্যদিকে বাংলাদেশে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর গত ডিসেম্বরে সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকা আসেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি৷ ১২ ঘন্টার ওই বৈঠকে তিনি বাংলাদেশের পরারাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং সেনা প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন৷

এছাড়া আগামী ১৭-২০ ফেব্রুয়ারি ভারতের নয়াদিল্লিতে চারদিনের ৫৫তম বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠক হবে ৷

তাহলে সমস্যা কোথায়?

বলতে গেলে ৫ আগস্টের পর থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের  সম্পর্কের টানাপড়েন শুরু হয়৷ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিং-এ বাংলাদেশ ইস্যু থাকছেই৷ আর বাংলাদেশেও তাই৷ আর আছে ভারতীয় মিডিয়ার ‘অপপ্রচার'৷ সেটা বাংলাদেশি মিডিয়ায়ও কমবেশি হচ্ছে৷ সীমান্ত সংকট আরো বেড়েছে৷ ভারতের রপ্তানি বাংলাদেশে কমে গেছে৷ আর বাংলাদেশিদের জন্য ভারতীয় ভিসা বলতে গেলে প্রায় বন্ধ৷ বাংলাদেশি বিশ্লেষকরা বলছেন ৫ আগস্টের পর দুই দেশের সম্পর্কে যে সমস্যা হচ্ছে তার মূল কারণ হলো ইউনূস সরকারকে ‘গ্রহণযোগ্যতার মধ্যে নিতে চাইছেনা ভারত'৷ আর বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান নিয়ে তাদের মতো করে তারা ন্যারেটিভ তৈরি করছে৷ সেটা ভারতীয় মিডিয়াও করছে৷ তারা বাংলাদেশকে সমমর্যাদার প্রতিবেশি মনে করছেনা৷ এইসবের বাইরে শেখ হাসিনা একটা বড় ইস্যু৷ বাংলাদেশ মনে করে ভারত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে ঠিক করেনি৷ আর তাকে ফেরত না দিয়ে উলটে তাকে ‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে' কাজে লাগাচ্ছে

পারস্পরিক অবিশ্বাস এবং অস্বস্তির কারণেই সম্পর্কটা স্বাভাবিক হচ্ছে না: এম হুমায়ূন কবির

This browser does not support the audio element.

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ূন কবির বলেন, ‘‘ভারত তো বলেই দিয়েছে যা তারা বাংলাদেশে একটি নির্বাচিত সরকারের অপেক্ষায় আছে৷ সেই সরকারের সঙ্গেই তারা কাজ করতে চায়৷ এখান থেকেই বোঝা যায়  অন্তর্বর্তী সরকারকে তারা কী চোখে দেখে৷ এটা তো এই দেশের জন্য সম্মানের নয়৷ শেখ হাসিনা একটা উপাদান৷ এটা ছাড়াও ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান, স্বাধীনতা-এইসব ব্যাপারে বাংলাদেশ নিয়ে ভারত ন্যারেটিভটাই পরিবর্তন করে দিতে চায়৷ আমাদের মধ্যে এখন এটা ধারণা তৈরি হয়েছে যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে ভারত চায় না৷ পারস্পরিক অবিশ্বাস এবং অস্বস্তির কারণেই সম্পর্কটা স্বাভাবিক হচ্ছে না বলে আমার ধারণা'' বলেন তিনি৷

এম হুমায়ূন কবির বলেন,'' তারা কোনোভাবেই বাস্তবতাকে মানতে চাইছেনা৷  আহলে এখন যারা বাংলাদেশে ক্ষমতায় আছে তারা কারা? এটা তারা না বুঝলে সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে বলে মনে হয়না৷ আগে তারা যা চাইতো তাই পেত৷ এখন তো আর পায় না৷”

আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. লাইলুফার ইয়াসমিন বলেন, ‘‘আমাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত আমরা নির্ধারণ করব৷ আমরা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় আমরা কিভাবে দেখব কিভাবে সমাধান করবো সেটা আমাদের বিষয়৷ ভারতকে এটা বুঝতে হবে৷ তারা বাংলাদেশের সরকারকে অনির্বাচিত সরকার বলছে৷ কিন্তু ভারত তো অনির্বাচিত আফগান সরকারের সঙ্গে কাজ  করেছে৷ তারা আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে কাজ করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করে৷ এই চিন্তা থেকে তাদের বেরিয়ে আসতে হবে৷ ”

আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘‘ভারত বাংলাদেশকে সম্মানের চোখে দেখে না৷ এটই বড় সমস্যা৷ তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সব সময়ই মন্তব্য করে৷ এটা সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় বাধা৷ আর তারা যে বলছে বাংলাদেশে একটি নির্বাচত সরকার এলে সম্পর্ক এগিয়ে নেবে – এটা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের সামিল৷ কারণ বাংলাদেশে এখন যে সরকার আছে তারা নির্বচিতের চেয়েও বড়৷ তারা সবার সম্মতি ও পছন্দের সরকার৷”

ভারত বাংলাদেশকে সম্মানের চোখে দেখে না: ড. দিলারা চৌধুরী

This browser does not support the audio element.

বৈঠকে সমাধান?

পরারাষ্ট্র উপদেষ্টা বা মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অথবা একদম শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে যে বাংলাদেশ ভারতের সম্পর্ক ভালো হয়ে যাবে এমন আশা করেন না কেউই৷ তারপর বৈঠক হওয়া ভালো, তাতে যদি অস্বস্তি কিছুটা কাটে৷ ‘‘আর আমার মনে হয় সম্পর্ক সাবলীল হতে পারে যদি প্রফেসর ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে কোনো বৈঠক হয়৷ আসলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা উপদেষ্টা, সচিব পর্যায়ে  বৈঠকে এর কোনো সমাধান আসবে বলে আমার মনে হয়না৷ এই বৈঠকগুলো আসলে আনুষ্ঠানিকতা মাত্র'' বলেন এম হুমায়ূন কবির ৷

আর অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরীর মতে, ‘‘উপদেষ্টা বা প্রধান উপদেষ্টা বা প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠক হলে সম্পর্কের বরফ গলতে পারে৷ স্বাভাবিক হওয়ার পথ তৈরি হতে পারে৷ তবে এর চেয়েও বড় বিষয় হলো ভারত যে চোখে বাংলাদেশকে দেখে, যেভাবে ট্রিট করে – এটা তাদের বদলাতে হবে৷ পরিবর্তনটা বুঝতে মেনে নিতে হবে৷ আন্তরিক হতে হবে৷ বাংলাদেশকে তারা ছোট চোখে দেখে৷ সেটা হলে তো হবে না৷''

অধ্যাপক ড. লাইলুফার ইয়াসমিন মনে করেন, ‘‘দুই দেশের মন্ত্রী বা শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক হলে  সম্পর্কের বরফ গলতে পারে৷ কিন্তু তাতেও আমি মনে করি সময় লাগবে৷ কারণ সম্পর্কের দূরত্ব অনেক বেড়েছে৷ সবার আগে আমি মনে করি দুই দেশের মিডিয়াকেই তাদের লাগাম টানতে হবে৷ বিশেষ করে ভারতীয় মিডিয়া বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যাপক অপপ্রচার করছে৷ বাংলাদেশেও যে একদম হচ্ছেনা তা কিন্তু নয়৷ তবে ভারতের তুলনায় অনেক কম৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ