বাংলাদেশ মনে করে, রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনযোগ এবং সক্রিয় ভূমিকা জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন৷ কিন্তু মিয়ানমার তা একেবারেই চায় না৷ এক বিবৃতিতে অং সান সু চির দপ্তর সে কথাই পরিষ্কার বুঝিয়ে দিলো৷
বিজ্ঞাপন
রাখাইন প্রদেশে নির্যাতন হয়, গ্রামের পর গ্রাম পুড়ে ছাই হয়, ধর্ষণের শিকার হয় অসংখ্য নারী – এ সব বিষয়ে তেমন কোনো বক্তব্য নেই মিয়ানমারের৷ নেই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশমুখী স্রোত বন্ধ করার কোনো উদ্যোগ৷ সীমান্ত খোলা৷ কোনো প্রহরা নেই৷ যার খুশি যেতে পারো৷ কিন্তু যাঁরা দেশ ছাড়ছেন, তাঁদের ফেরার কী উপায়? আপাত দৃষ্টিতে কোনো উপায়ই নেই৷ বরং কেউ যাতে ফিরতে না পারে সেরকম উদ্যোগও আমরা দেখেছি৷ মিয়ানমার সেনাবাহিনী তো বাংলাদেশসীমান্তসংলগ্ন এলাকায় মাইনও পুঁতেছে!
সংকট ঘণীভূত হওয়ায় একটু দেরিতে হলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের টনক নড়তে শুরু করেছে৷ তার সর্বশেষ প্রমাণ নিরাপত্তা পরিষদের এক বিবৃতি৷ সোমবার এক বিবৃতিতে নিরাপত্তা পরিষদ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে৷ আরো বলেছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী যেন রাখাইন প্রদেশে আর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ বন্ধ করে৷ রাখাইনে বেসামরিক প্রশাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন নিশ্চিত করা এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে বিবৃতিতে৷
রোহিঙ্গাদের বর্তমান দিনকাল
আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কেয়ার-এর ত্রাণ সহায়তা নিয়ে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ঘুরে এলেন জেনিফার বোস৷ সেখানকার ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের দিনযাপনের ছবি তুলে এনেছেন তিনি৷
ছবি: DW/ P. Vishwanathan
উদ্বাস্তু জীবন
এ বছরের আগস্ট থেকে মিয়ানমারে সহিংসতার মুখে বাংলাদেশে এসেছে ৬ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা৷ এর আগে বিভিন্ন সময়ে যারা এসেছিলেন তারাসহ বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু বাস করছে৷
ছবি: CARE/T. Rahman
শিশুদের অসহায়ত্ব
নির্যাতন, সহিংসতার স্মৃতি গাঢ় হয়ে চেপে বসেছে রোহিঙ্গা শিশুদের চোখে-মুখে৷ প্রায় ৩ লাখ ৪০ হাজার জন শিশু রয়েছে এখন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে৷
ছবি: CARE/J. Bose
টিকে থাকার সংগ্রাম
স্বল্প পুঁজি নিয়ে ক্যাম্প এলাকার মধ্যেই ব্যবসা শুরু করেছেন এক রোহিঙ্গা ৷ এর মধ্যে অনেক রোহিঙ্গাই দিনমজুরের কাজ থেকে শুরু করে ছোটখাট ব্যবসা করে আয়ের পথ সচল রাখছেন৷
ছবি: CARE/J. Bose
ক্যাম্পজীবন
প্লাস্টিক ঢাকা বাঁশের আচ্ছাদনে দিন কাটছে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের৷ কক্সবাজারের নির্ধারিত ক্যাম্পে গাদাগাদি করে বাস করছে রোহিঙ্গারা৷
ছবি: CARE/J. Bose
বনভূমি উজাড়
কক্সবাজারে পাহাড় ও বনভূমি উজাড় করে গড়ে উঠেছে রোহিঙ্গা বসতি৷ ক্যাম্প এলাকার আশেপাশের অনেক গাছ এরই মধ্যে উজাড় হয়েছে রোহিঙ্গাদের বসতি স্থাপন ও জ্বালানির প্রয়োজনে৷
ছবি: CARE/J. Bose
অনিশ্চয়তা
পরিবারের সাথে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা এই রোহিঙ্গাদের সংগ্রাম টিকে থাকার প্রয়োজনে৷ অন্যসব অনিশ্চয়তা ছাপিয়ে সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেয়ার চিন্তাই বড় হয়ে দাঁড়ায়৷
ছবি: CARE/J. Bose
ক্যাম্পে শিশুকাল
মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা নারীদের মধ্যে অন্তত ৫৪ হাজার গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারী রয়েছেন৷ অনেকে ক্যাম্পের আসার পথে বা ক্যাম্পেই জন্ম দিয়েছেন শিশুর৷
ছবি: CARE/J. Bose
নিবন্ধিত রোহিঙ্গা
গত দু’ মাসে নিবন্ধিত হয়েছেন অন্তত ৩ লাখ রোহিঙ্গা৷ ক্যাম্প এলাকায় কয়েকটি কেন্দ্রে চলছে এই নিবন্ধন কার্যক্রম৷
ছবি: CARE/T. Haque
টিকাদান কর্মসূচি
শরণার্থী শিবিরগুলোতে সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন বয়সের শিশুদের প্রয়োজনীয় টিকা দেয়া হচ্ছে৷ বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে ছোঁয়াচে রোগ প্রতিরোধে নেয়া হয়েছে ব্যবস্থা৷
ছবি: CARE/J. Bose
ত্রাণ সহায়তা
সরকারের আশাবাদ সত্ত্বেও ৬ লাখেরও বেশি নতুন আসা রোহিঙ্গার জন্য মিলছে না পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা৷
ছবি: CARE/A. Captain
রোহিঙ্গা শিশু-কিশোর
সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রায় ২০ হাজার রোহিঙ্গা এতিম শিশুকে পুর্নবাসিত করতে কাজ করছে মনোচিকিৎসক, স্বেচ্ছাসেবক ও চিকিৎসক৷
ছবি: CARE/T. Rahman
11 ছবি1 | 11
এই বিবৃতিতে মিয়ানমার চরম নাখোশ৷ সে দেশের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির দপ্তর বুধবার পাল্টা বিবৃতিতে বলেছে, নিরাপত্তা পরিষদের বিবৃতিটি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে চলমান আলোচনার জন্য ‘মারাত্মক ক্ষতিকর' হতে পারে৷ তাদের দাবি, রোহিঙ্গা সংকটের নিরসন যে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমেই সম্ভব, সেই বিষয়টিকে গুরুত্বই দেয়নি নিরাপত্তা পরিষদ৷
সুতরাং, এটা পরিষ্কার যে, মিয়ানমার চায় না, রোহিঙ্গা ইস্যুতে তৃতীয় কোনো পক্ষ তাদের ওপর কোনোভাবে চাপ প্রয়োগ করুক৷ কিন্তু চাপ ছাড়া আপনা-আপনি তারা সংকট নিরসনে উদ্যোগী হবে না – এ বিষয়টি বুঝতে পেরে বাংলাদেশ সরাসরিই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছে৷ গত রোববারও কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সংসদ সদস্যদের এক সম্মেলনে এ আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷
বাংলাদেশ বুঝতে পারছে, চাপ ছাড়া মিয়ানমারকে নড়ানো যাবে না৷ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা গত কয়েক বছরের নিষ্ফল দ্বিপাক্ষিক আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, ‘‘বছরের পর বছর ধরে আমরা এই সংকট দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমেই নিরসন করার চেষ্টা করেছি৷ কোনো কাজই হয়নি৷ এখন আমরা মনে করি, সংকট নিরসনের প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের সম্পৃক্ততা অত্যাবশ্যক৷''
ধর্ষণ আর অপহরণের শিকার রোহিঙ্গা এতিম শিশুরা
মিয়ানমার সেনাদের সীমাহীন নির্যাতনের কারণে গত আড়াই মাসে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে৷ সবচেয়ে দুর্বিষহ পরিস্থিতির মুখে পড়েছে শিশুরা৷ জন ওয়েনস এর ছবিতে উঠে এসেছে সেইসব দুর্দশার কিছু কথা৷
ছবি: DW/J. Owens
গুলি আর ছুরিকাঘাত
গত আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়েছে৷ তাদেরই একজন মোহাম্মদ বেলাল৷ দৌড়ে পালাতে পেরেছিল ১০ বছর বয়সি এই কিশোর৷ সে জানায়, ‘‘সেদিন সেনাবাহিনী এসে পুরো গ্রাম পুড়িয়ে দেয়৷ আমার মা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল, সেসময় তাঁকে গুলি করা হয়৷ আমার বাবা হাঁটতে পারছিলেন না, তারা তাঁকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে৷ আমি নিজ চোখে এসব দেখেছি৷’’
ছবি: DW/J. Owens
আতঙ্কগ্রস্ত
মোহাম্মদ বেলালের বোন নূরও হত্যাযজ্ঞ দেখেছে৷ নিঃসঙ্গ হয়ে সে আর তার ভাই এখন বাংলাদেশে শিশুদের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে আছে৷ এখানে সে নিয়মিত খাবার পাচ্ছে এবং খেলতে পারছে৷এ এক অদ্ভুত বৈপরীত্য৷ মিয়ানমারে থাকার সময় তাদের দুই ভাই-বোনকে বেশিরভাগ সময়ই না খেয়ে থাকতে হতো৷ তারপরও সাম্প্রতিক এই ট্রমা থেকে কিছুতেই বের হতে পারছে না সে৷ ‘‘আমি আমার বাবা-মা, বাড়ি আর দেশ, সবকিছুই ভীষণ মিস করছি,’’ জানায় নূর৷
ছবি: DW/J. Owens
গভীর সঙ্কট
৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মিয়ানমারে চলছে এই সঙ্কট৷ সংঘাতে ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত দু’ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছে৷ সাম্প্রতিক সেনা নিপীড়নের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে ১২ বছর বয়সি রহমান বলে, ‘‘তারা আমার বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়৷ অসুস্থ ছিল বলে আমার মা পালাতেও পারেনি৷’’
ছবি: DW/J. Owens
শিশুদের বাঁচাও
বাবা-মাকে হত্যার দৃশ্য নিজ চোখে দেখার পর দিলু আরা তার বোন রোজিনার সাথে পালায়৷ এখন ক্যাম্পে আছে ৫ বছর বয়সি এই শিশু৷ ‘‘আমি খুব কাঁদছিলাম আর পুরোটা সময়ই আমাদের মাথার উপর দিয়ে বুলেট উড়ে যাচ্ছিল৷ কোনো রকমে আমি পালিয়ে এসেছি,’’ বলে শিশুটি৷ বাবা-মা ছাড়া কুতুপালংয়ে আসা এই শিশুদের সাহয়তা দিচ্ছে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন৷ বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের শতকরা ৬০ ভাগই শিশু৷
ছবি: DW/J. Owens
পশুদের মতো শিকার
জাদেদ আলমও বাবা-মা ছাড়া কুতুপালংয়ে এসেছে৷তবে ভাগ্য ভালো বলে সে তার চাচীকে সাথে পায়৷চাচীই এখন তার দেখাশোনা করছেন৷ সে বলছিল ‘মান্দি পাড়া’ নামে এক গ্রামে বেড়ে উঠেছে সে৷ ফুটবল খেলতেও সে খুব পছন্দ করতো৷ তবে সেনা অভিযানের পর থেকে সবকিছুই বদলে যায়৷ সে জানায়, ‘‘তারা আমাদের বাড়ি ছেড়ে যেতে বলে৷ আমি আমার বাবা-মা’র সাথে দৌড়ে পালাচ্ছিলাম, এমন সময় তাঁদেরকে গুলি করে সেনারা৷ সাথে সাথে মারা যায় তারা৷’’
ছবি: DW/J. Owens
শিশু অপহরণ
এসব ঘটনার সময় সব পরিবারকেই যে আলাদা হতে হয়েছে, তা নয়৷ গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রহমান আলী নামে এই ব্যক্তি এই ক্যাম্পে আছেন৷ তবে এখন তিনি তার ১০ বছর বয়সি ছেলে জিফাদকে খুঁজে পাচ্ছেন না৷ ক্যাম্প এলাকায় প্রায় সারা বছরই শিশু অপহরণের গুজব শোনা যায়৷ রহমানের আশংকা, তাঁর ছেলেও পাচারকারীদের হাতে পড়েছে৷ ‘‘আমি খেতে পারছি না, ঘুমাতে পারছি না৷ আমি মনে হয় পাগলই হয়ে গেছি,’’ বলে রহমান৷
ছবি: DW/J. Owens
‘আমি স্বাভাবিক নেই’
যখন গুলি শুরু হয়, তখন সকিনা খাতুন তাঁর বাচ্চাদের বাঁচাতে প্রাণপণে চেষ্টা করেছে৷ তারপরও ১৫ বছরের ইয়াসমিন আর ২০ বছরের জামালিকে বাঁচাতে পারেননি৷ ঘটনার সময় তারা পাশের গ্রামে ছিল৷ সকিনা বলছিল, ‘‘দাদা-দাদীর সামনে তাদের গলা কেটে হত্যা করা হয়৷ আমি এতটাই অনুভূতি শূণ্য হয়ে পড়েছি যে, এই কষ্টও অনুভব করতে পারছি না৷ তাই এই মুহূর্তে আমি স্বাভাবিক নেই৷’’ দুই সন্তানকে হারালেও বাকি নয় জনকে রক্ষা করতে পেরেছেন তিনি৷
ছবি: DW/J. Owens
হামলা, ধর্ষণ এবং লুটপাট
ইয়াসমিনের বয়স ১৫-র কাছাকাছি৷ তবে তাকে তার চেয়েও কম বয়সি বলে মনে হয়৷ গ্রামে থাকার সময় সে মার্বেল খেলতো আর বাড়ির কাছের মাঠে খেলতো৷ এখন অবশ্য ভিন্ন স্মৃতি তাড়িত করছে তাকে৷ মিয়ানমারের সেনারা তার বাবা ও ভাইদের প্রথমে মারধর ও পরে হত্যা করে৷ একদল সেনা তাকে ধর্ষণও করে৷ এখন ইয়াসমিন কেবল এটুকু বলতে পারে,‘‘আমার শরীরে ভীষণ ব্যথা৷’’
ছবি: DW/J. Owens
8 ছবি1 | 8
কিন্তু মিয়ানমার বলছে উলটো কথা৷ তারা মনে করে, জাতিসংঘের এ বিষয়ে কোনো বিবৃতি দেয়াও অনধিকার চর্চার মতো৷
অন্যদিকে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ক্ষেত্রেও কি মিয়ানমার খুব আন্তরিক? সু চির এক মুখপাত্রের সাম্প্রতিক বক্তব্য কি তা প্রমান করে? সেই মুখপাত্রের মতে, মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চায়, কিন্তু বাংলাদেশ বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বিদেশি সাহায্যের লোভে অহেতুক বিলম্ব করছে৷
অকথ্য নির্যাতনের মুখে দেশ ছাড়তে বাধ্য হলো ছয় লাখেরও বেশি মানুষ৷ তাদের ফিরিয়ে নেয়ার অঙ্গীকারের পাশাপাশি কি শর্ত দিয়েছে মিয়ানমার? বলেছে, যাঁরা প্রমাণ দেখাতে পারবেন যে সত্যিই রাখাইনে দীর্ঘকাল ছিলেন, তাঁদেরই ফিরিয়ে নেয়া হবে৷ তা যে দেশ তাঁদের নাগরিক হিসেবেই স্বীকার করে না, সে দেশের ‘পরিচয়পত্র' কি রোহিঙ্গারা গুরুত্ব দিয়ে সংরক্ষণ করতো? যদি করেও থাকে, প্রাণ রক্ষার জন্য যখন ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে, সঙ্গে করে আনতে পেরেছে? অধিকাংশের কাছেই তো সেই ‘পরিচয়পত্র' থাকার কথা নয়৷ না থাকলে চিহ্নিত করার উপায়?
মিয়ানমার মনে করে, রাখাইনে যাঁরা আছেন, তাঁদের মতামত এক্ষেত্রে গুরুত্ব দেয়া উচিত৷ তো যাঁরা আছেন, তাঁরা কি রোহিঙ্গাবান্ধব? যদি না হয়?
এ সব বিষয় পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত কি বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ শুরু করতে পারে?
আপাতত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, খুব সঙ্গত কারণে বাংলাদেশের তাতে আপত্তি থাকলেও মিয়ানমার ঠিক তা-ই চায়৷ তারা চায়, বাংলাদেশ সবদিক বিবেচনা না করে, সব সম্ভাবনা আর আশঙ্কার দিকগুলো ভালো করে খতিয়ে না দেখেই প্রত্যাবাসন শুরু করুক৷ শুরু করে দিলে আন্তর্জাতিক চাপটা কমে আসবে৷ প্রত্যাবাসন শুরুর পর যদি সংকট দেখা দেয়, তাহলে আবার আলোচনার নামে সময় নষ্ট করা যাবে৷
আসলে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার যা করছে, তাকে অমানবিক অপকৌশল ছাড়া কিছুই বলা যায় না৷ রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে তাদের আন্তরিকতার খুব উল্লেখযোগ্য নিদর্শন একেবারেই নেই৷ দ্বিপাক্ষিক আলোচনা, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরুর আগেই একদিকে সু চির মুখপাত্র এবং অন্যান্য মহল বাংলাদেশের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, অন্যদিকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ বা তৃতীয় কোনো পক্ষের ভূমিকাকে মনে করা হচ্ছে অপ্রয়োজনীয়৷
বাংলাদেশ চাইলেও মিয়ানমার কি সত্যিই চায়, রোহিঙ্গারা দেশে ফিরে যাক?