মাগুরার কৃষক আমজাদ হোসেন এখন জার্মান ফুটবল দলের অফিসিয়াল ফ্যান ক্লাবের সদস্য৷ শুধু তাই নয় জার্মান ফুটবল দলের প্রতি তাঁর ভালবাসায় মুগ্ধ হয়ে তাঁর গ্রামের বাড়িতে ছুটে গিয়েছিলেন ঢাকায় জার্মানির ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত৷
বিজ্ঞাপন
আমজাদ প্রায় তিন কি.মি. দীর্ঘ জার্মানির পতাকা তৈরি করে জার্মানির প্রতি তাঁর ভালবাসা প্রকাশ করেন৷ সেই পতাকার প্রদর্শনী হয়ে গেল মাগুরা স্টেডিয়ামে, শনিবার বিকেলে৷ ১৯৮৭ সালে দুরারোগ্য এক অসুখে আক্রান্ত হলে কৃষক আমজাদ হোসেন (৬৫) চিকিত্সার জন্য বিভিন্ন পথ্য ব্যবহার করেও কোনো সুফল পাননি৷ শেষে জার্মানি থেকে আনা ওষুধ সেবনে সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি৷ তারপর থেকেই জার্মানির প্রতি অনুরাগ তাঁর৷
পারলেন না মেসি, জয়ী জার্মানি
বিশ্বসেরা ফুটবলার হলেও দেশকে বিশ্বকাপ এনে দিতে পারলেন না লিওনেল মেসি৷ বরং টিম হিসেবে খেলে জিতেছে জার্মানি৷ বদলি খেলোয়াড় গোটৎসের গোলে নিশ্চিত হয় চতুর্থ বিশ্বকাপ৷ ফাইনাল নিয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চতুর্থবার বিশ্বকাপ জয়
নব্বইয়ের পরে ২৪ বছরের প্রতীক্ষার অবসান হলো৷ ব্রাজিলে বিশ্বকাপ ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে চতুর্থবার বিশ্বকাপ জয় করেছে জার্মানি৷ যদিও অনেকের আশা ছিল চমক দেখাবেন মেসি, কিন্তু সেটা হয়নি৷ জগৎসেরা মেসি তাঁর দলকে ফাইনালে কিছুই দিতে পারেননি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
লামের হাতে কাপ
বিশ্বকাপ হাতে জার্মান অধিনায়ক ফিলিপ লাম৷ জাতীয় দলের পক্ষে শতাধিক বার মাঠে নামা লাম এবার তাঁর সাফল্যের তালিকায় যোগ করলেন বিশ্বকাপ ট্রফি৷ ৩০ বছর বয়সি এই ফুটবলার জার্মান জাতীয় দলের অধিনায়ক৷
ছবি: Reuters
গোল্ডেন গ্লোভস নয়ার, গোল্ডেন বল মেসি
বিশ্বকাপের ‘মোস্ট আউটস্ট্যান্ডিং প্লেয়ার’ হিসেবে ‘গোল্ডেন বল’ অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন মেসি৷ আর সেরা গোলরক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন জার্মানির মানুয়েল নয়ার৷ বিশ্বকাপ ফাইনাল শেষে তাঁদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images
গোটৎসের গোল
জার্মান কোচ ইওয়াখিম ল্যোভ ভরসা রেখেছিলেন অভিজ্ঞ খেলোয়াড় মিরোস্লাভ ক্লোজের উপর৷ তাই ৮৮ মিনিট পর্যন্ত মাঠে ছিলেন তিনি৷ এরপর ক্লোজের বদলে মাঠে নামেন বায়ার্নের মারিও গ্যোটৎসে৷ শেষ পর্যন্ত তিনিই জার্মানদের মুখে হাসি ফোটালেন৷ শ্যুর্লের কাছ থেকে পাওয়া পাস বুকে ঠেকিয়ে নিয়ে সেই বল পাঠিয়ে দেন আর্জেন্টিনার জালে৷
ছবি: Reuters
বান্ধবীর সঙ্গে গোটৎসে
গোটৎসের বান্ধবী আন-কাথরিন ব্র্যোমেল গ্যালারিতে ছিলেন৷ খেলা শেষে তিনি নেমে আসেন মাঠে৷ অভিনন্দন জানান সঙ্গীকে৷
ছবি: Reuters
পোডোলস্কির সেলফি
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সঙ্গে সেলফি তুলে বিশ্বকাপের শুরুতেই আলোচনায় আসেন লুকাস পোডোলস্কি৷ ফাইনালে খেলার সুযোগ পাননি তিনি৷ কিন্তু তাই বলে কি সেলফি তোলা বাদ থাকবে? ছবিতে সতীর্থ শোয়াইন্সটাইগারের সঙ্গে সেলফি তুলছেন পোডোলস্কি৷ মাঠে থাকতেই সেটা আবার ফেসবুকে আপলোড করেছেন তিনি৷
ছবি: AFP/Getty Images
আট বছর পর চূড়ান্ত সাফল্য
জার্মান ফুটবল দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর সবচেয়ে বড় সাফল্য পেতে আট বছর সময় নিলেন ইওয়াখিম ল্যোভ৷ গত বিশ্বকাপে ফাইনালে পৌঁছাতে পারেনি তাঁর দল৷ চূড়ান্ত জয় পায়নি দুটো ইউরো কাপেও৷ এবার সমালোচকদের মুখ চিরতরে বন্ধ করে দিলেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP
হিগুয়াইনকে তুলে নেয়া কি ভুল ছিল?
খেলার শুরুতে কিন্তু বেশ এগিয়ে ছিল আর্জেন্টিনা৷ একের পর এক আক্রমণে কাবু করে দিচ্ছিল জার্মানির রক্ষণভাগ৷ কিন্তু খেলার দ্বিতীয়ার্ধে হিগুয়াইনকে তুলে নেন আর্জেন্টিনার কোচ সাবেলা৷ এরপরই আর্জেন্টিনার দুর্বলতা ফুটে উঠতে থাকে৷ মেসিও হয়ে যান নিষ্প্রাণ৷ সাবেলার সিদ্ধান্ত কি ভুল ছিল?
ছবি: Reuters
গ্যালারিতে ম্যার্কেল
জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলকে জাতীয় দলের এক নম্বর ভক্ত বলা হয়৷ এই ভক্ত ফাইনাল দেখতে উড়ে যান ব্রাজিলে৷ সঙ্গে ছিলেন জার্মানির প্রেসিডেন্ট ইওয়াখিম গাউক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাধভাঙা উচ্ছ্বাস
জার্মানির বিজয়ের খবরে আনন্দের বন্যায় ভাসছে গোটা জার্মান জাতি৷ জার্মানির বিভিন্ন শহরে গভীর রাতেও ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় বিজয়োল্লাস করছেন ফুটবল ভক্তরা৷ তবে জাতীয় দলকে সংবধর্না দেয়া হবে মঙ্গলবার, বার্লিনে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
10 ছবি1 | 10
আর এই অনুরাগ ও কৃতজ্ঞতাবোধ থেকে ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের সময় প্রায় ৩৫০ গজ লম্বা জার্মানির একটি পতাকা তৈরি করেন তিনি৷ ২০১০ সালের বিশ্বকাপের আগে পতাকাটি প্রায় সাত হাজার গজ লম্বা করেন আমজাদ৷ ঐ বছর গ্রামের লোকজন নিয়ে পতাকাটি মাগুরা শহরের নোমানী ময়দানে নিয়ে প্রদর্শন করেন৷
আর এবারের বিশ্বকাপের আগে পতাকাটি প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ করেন তিনি৷ পতাকা তৈরিতে তাঁর খরচ হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা৷ এক যুগ ধরে তিনি অল্প অল্প করে ওই পতাকা তৈরি করেছেন৷ অভাবের সংসারে এজন্য তাঁকে নানা গঞ্জনাও সহ্য করতে হয়েছে৷ বিক্রি করেছেন চাষযোগ্য জমি৷
এ খবর সংবাদ মাধ্যমে জানতে পেরে আকৃষ্ট হয় ঢাকার জার্মান দূতাবাস৷ ঢাকায় জার্মানির শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ড. ফ্যার্ডিনান্ড ফন ভেহে শনিবার বিকেলে মাগুরায় যান আমজাদের তৈরি করা তিন হাজার গজ দীর্ঘ পতাকাটি দেখতে৷ মাগুরা স্টেডিয়ামে তাঁর সেই পতাকার প্রদর্শনী হয়৷ আমজাদের গ্রামের লোকেরাই সাজিয়ে তোলেন দীর্ঘ পতাকাটি৷ ড. ফ্যার্ডিনান্ড ফন ভেহে তা ঘুরে ঘুরে দেখেন৷
দেখার পর সেখানে জার্মানির ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত আমজাদ হোসেনকে জার্মান ফুটবল দলের অফিসিয়াল ফ্যান ক্লাবের আজীবন সদস্যপদ দেয়ার ঘোষণা দেন৷ পাশাপাশি তার হাতে তুলে দেয়া হয় শুভেচ্ছা স্মারক, জার্মান জাতীয় দলের পতাকা, জার্সি ও একটি ফুটবল৷
অন্যদিকে আমজাদ হোসেন জার্মান ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের হাতে কুলা, বাঁশি, ডালাসহ কিছু উপহার সামগ্রী তুলে দেন৷ এ সময় মাগুরা জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জার্মান উন্নয়ন ব্যাংক বাংলাদেশের সেক্টর বিশেষজ্ঞ মেহেদী হাসান উপস্থিত ছিলেন৷
রাষ্ট্রদূত পরে ঘোড়ামারা গ্রামে আমজাদ হোসেনের বাড়িতেও যান৷জার্মানির প্রতি আমজাদের ভালোবাসায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘‘আমি অভিভূত৷ ভালোবেসে জার্মানির এত বড় পতাকা এর আগে কেউ তৈরি করেছে বলে আমার জানা নেই৷ বাংলাদেশের একজন কৃষক ওই পতাকা তৈরি করায় তাঁর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ৷’’
মাগুরার ঘোড়ামারা গ্রামের আমজাদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘কোনো লাভের আশায় আমি জার্মানির সুবিশাল এ পতাকা তৈরি করিনি৷ জার্মানির প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং জার্মান ফুটবল দলের প্রতি ভালবাসা থেকেই এ কাজ করেছি৷’’ জার্মানির ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমজাদ বলেন সামনের বিশ্বকাপে তিনি আরো বড় পতাকা তৈরি করবেন৷ এর আগে শনিবার দুপুরে ঘোড়ামারা গ্রাম থেকে আমজাদ মোটর সাইকেল শোভাযাত্রা নিয়ে মাগুরা শহরে আসেন৷ তাঁর সঙ্গে গ্রামবাসীই বহন করে আনে লাল-কালো-হলুদের দীর্ঘ জার্মান পতাকা৷
গ্রামের লোকজন জানান, তারা আমজাদের এই কাজকে প্রথম প্রথম 'পাগলামী' মনে করলেও পরে তার দৃঢ়তা এবং ভালবাসায় তাঁরা মুগ্ধ হন৷ তাঁরা পতাকা প্রদর্শনীতে সহায়তাও করেন৷ গ্রামবাসী জানান, আমজাদের কারণে তাদের ঘোড়ামারা গ্রামে জার্মান ফুটবল দলের ভক্ত অনেক বেড়েছে৷