1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নাগরিকপঞ্জি নিয়ে বাংলায় ধুন্ধুমার বিতর্ক

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৯ আগস্ট ২০১৮

অসমের নাগরিকপঞ্জিকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গ বা বাংলায় ধুন্ধুমার বিতর্ক শুরু হয়েছে৷ বিজেপি রাজ্য সভাপতি হুংকার দিয়েছেন, ক্ষমতায় এলে তাঁরা এখানেও নাগরিকপঞ্জি তৈরি করবেন৷ বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হয়েছে একাধিক নাগরিক সংগঠন৷

ছবি: DW/P. Samanta

অসমের নাগরিক পঞ্জীকরণের প্রক্রিয়ায় ৪০ লক্ষ মানুষকে অ-ভারতীয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ তথাকথিত এই অনুপ্রবেশকারীদের ভবিষ্যৎ কী হবে জানা নেই৷ তারপরও বিষয়টি ভারতীয় রাজনীতিকে আলোড়িত করে তুলেছে৷ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই সংক্রান্ত রাজনৈতিক গতিবিধির নেতৃত্বে রয়েছেন৷ অসমের মতো বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে৷ এখানেও বাংলাদেশ থেকে বহু ঢুকে পড়েছেন, এই অভিযোগ নতুন নয়৷ কিন্তু অসমের পঞ্জীকরণের পরিপ্রেক্ষিতে তা নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে৷ এই বিতর্কেরই সুযোগ নিতে চাইছে বিজেপি৷

৩১ জুলাই অসমের নাগরিকপঞ্জি প্রকাশিত হওয়ার পর বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে তাঁদের দলের সরকার ক্ষমতায় এলে একইভাবে অবৈধ ভাবে বসবাসকারীদের চিহ্নিত করা হবে৷ তাঁর এই মন্তব্য নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক৷ পালটা হুংকার ছেড়েছে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস৷ তাদের কটাক্ষ, বিজেপি এ রাজ্যে ক্ষমতায় আসবেই না৷ তাই এটা দিলীপ ঘোষের দিবাস্বপ্ন ছাড়া কিছু নয়৷

রাজনৈতিক বাস্তবতার দিক থেকে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির ক্ষমতায় আসার এখনই কোনো সম্ভাবনা নেই, এমনটা বিরোধীরা বলতেই পারে৷ কিন্তু যদি ধরেও নেওয়া যায় যে বিজেপি ক্ষমতায় এলো, তাহলে কি পশ্চিমবঙ্গেও এনআরসি হবে? এই প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘নাগরিকপঞ্জি করা হয়েছে বহুবছর আগের একটা চুক্তির পরিণতিতে৷ প্রাক্তন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী যে চুক্তি করেছিলেন অসমের সঙ্গে, তারই ফলশ্রুতিতে আজকের এই নাগরিকপঞ্জি৷ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ তাকে ত্বরাণ্বিত করেছে৷''

উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়

This browser does not support the audio element.

এ কারণেই দিলীপ ঘোষের বক্তব্যে বা হুংকারে সারবত্তা পাচ্ছেন না রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা৷ অধ্যাপক বলেন, ‘‘চুক্তি বা আদালতের নির্দেশ ছাড়া নাগরিকপঞ্জি করতে গেলে তো দলীয় স্তরে সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ বিজেপি সর্বভারতীয় দল, তাই রাজ্য নেতৃত্ব একতরফাভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না৷ সিদ্ধান্ত হবে কেন্দ্রীয় স্তরে৷ সেক্ষেত্রে শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, নাগরিকপঞ্জি অন্য রাজ্যেও করতে হবে৷''

তাহলে কি দিলীপ ঘোষের স্লোগান একেবারেই রাজনৈতিক? এমনটাই মনে করছেন বাংলা পক্ষ নামক সংগঠনের নেতা, অধ্যাপক গর্গ চট্টোপাধ্যায়৷ পশ্চিমবঙ্গে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি ঢুকে পড়েছে, বিজেপির এই দাবিকে পালটা যুক্তি হাজির করে উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি৷ তাঁর বক্তব্য, ‘‘ভারতে ১০ বছর অন্তর যে জনগণনা হয়, তার পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যাবে, সাম্প্রতিক অতীতে বাংলাভাষীদের সংখ্যা সেভাবে বাড়েনি৷ বরং বাংলাভাষীদের সংখ্যা কমেছে৷ তাহলে অনুপ্রবেশের কথা বলা হচ্ছে কেন?''

এর পেছনে অর্থনৈতিক কারণটাও ব্যাখা করেছেন বাংলা পক্ষের এই নেতা৷ গর্গের কথায়, ‘‘বাংলাদেশ থেকে হিন্দুরা চলে এলে তার পছেন রাজনৈতির কারণ থাকে৷ কিন্তু মুসলিমরা এলে ধরে নিতে হবে আর্থিক প্রয়োজনে এই অনুপ্রবেশ৷ অথচ পরিসংখ্যান বলছে, অসম বা বাংলার থেকে বাংলাদেশে মাথা পিছু আয় বেশি৷ সে জন্যই রুটিরুজির টানে বাংলাদেশিরা এখানে আসছে, এটা ঠিক নয়৷''

বিজেপি নেতৃত্ব বরাবরই অভিযোগ করেছেন, অসমের মতো বাংলাতেও দলে দলে বাংলাদেশি এ রাজ্যে ঢুকে পড়েছে৷ প্রয়াত বিজেপি নেতা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তপন শিকদার অনেক বছর আগে এ ধরনের মত ব্যক্ত করেছিলেন, যখন বিজেপি এখানে উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক শক্তি হয়ে ওঠেনি৷ রাজনীতির বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নাগরিকপঞ্জি বিজেপির কাছে শাঁখের করাত হয়ে উঠতে পারে৷ অসমে যে ৪০ লক্ষ মানু্য অ-ভারতীয় বলে চিহ্নিত হয়েছে, তার একাংশ হিন্দু৷ তাঁদেরও কি বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে? এ ব্যাপারে বিজেপির অবস্থানেও বিরোধাভাস রয়েছে৷ বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাহুল সিনহা বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দুরা শরণার্থী৷ কিন্তু মুসলিমরা অনুপ্রবেশকারী৷

গর্গ চট্টোপাধ্যায়

This browser does not support the audio element.

শীর্য বিজেপি নেতার এই বক্তব্যে তাঁদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয়েছে বলে মত গর্গ চট্টোপাধ্যায়ের৷ তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিজেপি হিন্দি সাম্রাজ্যবাদী দল, হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তি৷ হিন্দু-হিন্দি-হিন্দুস্তান বিজেপির অ্যাজেন্ডা৷ তারা বাঙালিবিরোধী একটি দল৷ সে কারণেই বাংলাদেশি ছাপ্পা মেরে ভারত থেকে বাঙালিদের তাড়াতে চাইছে৷''

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘অ-ভারতীয় বাছতে গিয়ে হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে বিভাজন করতে চাওয়া সাম্প্রদায়িক ভাবনা৷ এর একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে৷ কিন্তু আদতে অভিবাসন দক্ষিণ এশিয়ারই সমস্যা৷ এখানে অসম বা বাংলাকে আলাদা করে দেখলে হবে না৷ এটা ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির রাজনৈতিক স্লোগান হয়ে উঠতে পারে৷''

এই স্লোগান কি বাংলার সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়কে স্পর্শ করবে, করলেও কতটা তার ব্যাপ্তি হবে, এই প্রশ্নেই অনেকটাই নির্ভর করছে আগামী লোকসভা ভোটের ফলাফল৷ তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবচেয়ে বেশি সরব হয়েছেন এই ইস্যুতে৷ পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল নাগরিকপঞ্জির বিরুদ্ধে জোরদার প্রচার শুরু করেছে৷ রাজনৈতিক হোর্ডিং দেখা যাচ্ছে কলকাতার রাস্তায়, হচ্ছে মিছিল৷ রাজনীতির বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বাংলা তথা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে বাম-ডানের মধ্যে তুমুল লড়াই, হিংসার ছবি দেখা গেলেও তাতে কোনো ধর্মীয় রং থাকত না৷ সেই পরিপ্রেক্ষিতে এ রাজ্যের রাজনীতিতে কোনো পরিবর্তন ঘটবে কিনা, তার জবাব মিলবে লোকসভা নির্বাচনে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ