অভিধান কতটা জরুরি, সেটা চট করে হয়তো অনুধাবন করা যায় না৷ কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সম্পাদকের টেবিল বা বহুজাতিক কোম্পানি থেকে সরকারি দপ্তর- সর্বত্রই কাজ করতে গেলে টের পাওয়া যায় অভিধান কতটা প্রয়োজনীয়৷
বিজ্ঞাপন
কেবল শব্দের অর্থ দেখার জন্যই তো নয়, বানান এমনকি উচ্চারণ দেখতে হলেও অভিধানের দ্বারস্থ হতে হয়৷ বিদেশি ভাষা হলে তো কথাই নেই, মাতৃভাষার ক্ষেত্রেও যে অভিধানের সার্বক্ষণিক প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য, সেটা আমরা স্বীকার করি না বটে, কিন্তু ঠেকে শিখি৷ তবে এই শেখাটাকে মর্মে নিতে পারি না বলেই আমাদের ‘ব্যথা’ বানানে ব এবং য-ফলার পর একটি ব্যথিত আ-কার চলে আসে, বন্ধুর সঙ্গে তর্ক করে মরি- ‘চর্চা’ শব্দটির উচ্চারণ কী বানানের মতোই হবে নাকি ‘চোর্চা’ হবে৷ সুতরাং অভিধানের গুরুত্ব অনেকটা বাতাসের মতোই আমাদের ঘিরে রাখে; হাতের কাছে না থাকলে বুঝতে পারি কী ঠেকাটাই না ঠেকেছি৷
ইংরেজি ভাষার ক্ষেত্রে আমাদের এ অভাব অনেকটাই ইন্টারনেটের কল্যাণে দূর করা সম্ভব৷ তাছাড়া মাইক্রোসফট ওয়ার্ড কিংবা অন্য কোনো লেখার সফটওয়্যারে অটো-কারেকশন বা সিনোনেইম বলে কিছু অপশন থাকে, তা দিয়ে দিব্যি কাজ চালানো যায়৷ আমার একজন লেখক বন্ধু গ্রামারলি বলে একটি সফটওয়্যার ব্যবহার করেন৷ শুনেছি, তাতে ইংরেজি লেখার টুকটাক ভুলত্রুটি অনায়াসে সমাধান করা যায়৷ তাছাড়া ইংরেজি ভাষার ক্ষেত্রে যে কোনো শব্দের অর্থ, তার উৎসমূল ইত্যাদি গুগলে সার্চ করলেই চট করে চলে আসে৷ ফলে ততটা বেগ পেতে হয় না৷
আমি ভাষাতাত্ত্বিক নই, তাই অন্যান্য ভাষার ক্ষেত্রে এরকম সুবিধা কতটা কার্যকর, সেটা বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়৷ তবে বাংলা আমার মাতৃভাষা হলেও, এ ভাষায় লেখা বা পড়ার ক্ষেত্রে অভিধানের দ্বারস্থ আমাকে হতেই হয়- এ কথা স্বীকারে আমার কোনো লজ্জা নেই৷ এই অভিধানের প্রসঙ্গ এলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ঢাউস আকৃতির বই- তাও একটি নয়, কয়েকটি৷ ছোটোবেলায় আমরা ব্যবহার করেছি প্রণম্য হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রণীত বঙ্গীয় শব্দকোষ৷ দুই খণ্ডের এই শব্দকোষটি অভ্যাসের কারণে এখনও আমি ব্যবহার করে থাকি৷ তবে ভাষা তো পরিবর্তিত হয়, সেই সঙ্গে বানান পদ্ধতিও৷ ফলে বাংলা একাডেমি প্রণীত অভিধানের গুরুত্ব অপরিসীম৷ দু এক বছর পরপরই বইমেলা থেকে বাংলা একাডেমির কোনো না কোনো অভিধান কিনতেই হয়- বিশেষ করে বানান অভিধান, না হয় ব্যবহারিক অভিধান৷ কারণ আমার পেশা যেহেতু শিক্ষকতা, তাই কোনো বানানের কোনো পরিবর্তন হলো কি না, সেটা নজরে রাখতে হয়৷
বাংলা একাডেমি কতটা ডিজিটাল
সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্পে বিভিন্ন খাতকে পর্যায়ক্রমে ডিজিটাল করছে। মুজিব জন্মশতবর্ষকে সামনে রেখে বাংলা একাডেমিকেও ডিজিটালাইজ করার প্রক্রিয়া এগিয়ে চলেছে বলে সংশ্লিষ্টদের দাবি। এ দাবি কতটা বাস্তবসম্মত? দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Mortuza Rashed/DW
অনলাইনে স্টলের লটারি
বাংলা একাডেমির বিক্রয়, বিপণন ও পুনর্মুদ্রন বিভাগের পরিচালক ডঃ জালাল আহমেদ জানান, অমর একুশে বইমেলার স্টল বন্টনের ক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইনে লটারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর ফলে অনিয়মের যে অভিযোগ ছিল, সেটি সম্পূর্ণ দূর হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
তথ্যকেন্দ্রের ডিজিটাল সহায়তা
বইমেলায় আগত দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে একটি এবং সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে দুইটি তথ্যকেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে দর্শনার্থীরা এসে স্টলের অবস্থান, বইয়ের প্রকাশক, লেখক এবং দাম সম্পর্কে অনলাইনে সহজেই তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন বলে জানিয়েছেন তথ্যকেন্দ্রের কর্মকর্তা রাজীব কুমার সাহা।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
অনলাইন বইয়ের তালিকা হাল-নাগাদ নয়
ওয়েবসাইটে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত বইয়ের তালিকায় দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধ, ফোকলোর, প্রাচীন ও মধ্যযুগের সাহিত্য, প্রাণিবিদ্যা, আইন শিক্ষা, সাংবাদিকতা ইত্যাদি বিষয়ে আলাদা শাখায় বইয়ের তালিকা থাকলেও ২৬ মে, ২০২১-এর পর থেকে সেটি আর হাল-নাগাদ করা হয়নি।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
বইমেলার পৃথক ওয়েবসাইট
প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসে অমর একুশে বইমেলাকে সামনে রেখে বাংলা একাডেমি একটি ওয়েবসাইট (ba21bookfair.com) চালু করেছে। এখানে বইমেলা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য প্রকাশ ও আর্কাইভ করা হচ্ছে। এই ওয়েবসাইটে ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের তালিকা, মেলার অনুষ্ঠানসূচি, ঘোষণা ইত্যাদি সন্নিবেশিত হয়েছে।
ছবি: www.ba21bookfair.com/Bangla Academy
‘আমাদের আধুনিকীকরণের কাজ এগিয়ে চলেছে’
বাংলা একাডেমির বিক্রয়, বিপণন ও পুনর্মুদ্রণ বিভাগের পরিচালক ডঃ জালাল আহমেদ বলেন, “বাংলা একাডেমি ডিজিটালাইজেশনের কাজ আমরা অনেকদিন ধরেই করছি। তবে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে এমনটা বলা যাবে না। অনলাইনে আমরা বই বিক্রির উদ্যোগ গ্রহণ করেছি, আমাদের লাইব্রেরি ডিজিটালকরণের কাজ এগিয়ে চলেছে। সাধারণ মানুষ ইতিমধ্যে এর সুফল ভোগ করছে। আশা করা যায়, খুব শীঘ্রই বাকি কাজগুলোও আমরা শেষ করতে পারবো।“
ছবি: Mortuza Rashed/DW
অনলাইন অভিধান নেই
১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলা একাডেমির বেশ কয়েকটি অভিধান বই আকারে থাকলেও এর কোনো অনলাইন সংস্করণ নেই। বাংলা একাডেমির সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান, বাংলা উচ্চারণ অভিধান, বাংলা-ইংরেজি, ইংরেজি-বাংলা অভিধানগুলোর ব্যাপক চাহিদা থাকলেও এর অনলাইন সংস্করণ এখনো ছাড়া হয়নি৷ তবে বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনাধীন আছে বলে জানান বাংলা একাডেমির একাধিক কর্মকর্তা।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
বাংলা একাডেমির নিজস্ব ওয়েবসাইট
বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত বাংলা একাডেমির রয়েছে একটি নিজস্ব ওয়েবসাইট (banglaacademy.gov.bd)৷ ওয়েবসাইটটিতে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও ফেলোশিপ, অফিস আদেশ ও বিজ্ঞপ্তি, কর্মকর্তাদের তালিকা ও ফোন নম্বর, প্রকাশনা, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ক বইয়ের পিডিএফ সংস্করণ ইত্যাদি সন্নিবেশিত আছে। এছাড়া অমর একুশে বইমেলার হালনাগাদ তথ্যও এখানে পাওয়া যাবে।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘অনলাইনে তথ্য থাকলে এতবার আসতে হতো না’
উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শোয়াইব আহমেদ জানান, তিনি বইমেলায় ৪ বছর ধরে আসছেন। বইমেলা কতটুকু ডিজিটাল- জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিবারই তিনি ৮-১০টি বই কিনেন, কিন্তু তথ্যের অভাবে একদিনে সব বই কিনতে পারেন না। এখন মানুষের হাতে হাতে ইন্টারনেট সুবিধা রয়েছে। সেক্ষেত্রে অনলাইনে যদি বইয়ের হাল-নাগাদ তথ্য দেওয়া থাকতো, তাহলে জ্যাম ঠেলে দূর থেকে বারবার এসে বই কিনতে হতো না।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
বইমেলায় ডিজিটাল কেনাকাটার সুবিধা
বইমেলা ২০২২-এ অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা সংস্থা বাংলা প্রকাশ-এর বিক্রয় প্রতিনিধি সাদাত সিফাত বলেন, ‘‘গত ৩-৪ বছর যাবত আমাদের ক্রেতারা ডিজিটাল পেমেন্টের মাধ্যমে বই কিনতে পারছেন। এখন যেহেতু মেলায় দর্শনার্থীদের প্রায় সবারই স্মার্ট ফোন আছে, তাই দেখা যায় বই কিনতে এসে টাকার সংকটে কাউকে পড়তে হয় না। এটি আমাদের ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়পক্ষের জন্যই সুবিধাজনক।’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘অনলাইন-অফলাইন দুটোরই দরকার আছে’
অমর একুশে বইমেলা ২০২২ এর মেলায় অংশ নেওয়া সজিব বুক কর্ণারের স্বত্বাধিকারী আহমেদ সোবহান বলেন, “বইমেলার বইসহ সব তথ্য ইন্টারনেটে পাওয়া গেলে অবশ্যই ভালো৷ তবে বইয়ের সাথে যেহেতু মানুষের সম্পর্কটা আত্মার, তাই সশরীরে এসে বই ঘেঁটে দেখার মধ্যে একটা আলাদা আনন্দ আছে বলে আমি মনে করি। বইমেলার স্টলে আসা, ঘোরাঘুরি, দোকানে ভিড়, আড্ডা এই বিষয়গুলো যথেষ্ট উপভোগ করার মতো বলেই বইমেলা প্রাণের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
অনলাইন টিকার সনদ
পাঞ্জেরি পাবলিকেশনের বিক্রয় প্রতিনিধি তানজিল আল-দ্বীন বলেন, ‘‘আমরা যারা স্টলে আছি, তাদের সবার কোভিড টিকা সনদের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আমরা সবাই আমাদের সনদের একটি কপি অফিস কর্তৃপক্ষকে জমা দিয়েছি, পাশাপাশি অনলাইন একটি কপিও আমরা সাথে রেখেছি যেন প্রশাসন চাইলে সাথে সাথে দেখাতে পারি।’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
11 ছবি1 | 11
আমার মনে হয়, কোনো শব্দের ব্যুৎপত্তিগত বা ব্যবহারিক অর্থ, বা তার বানান কিংবা প্রয়োগ ইত্যাদি সম্পর্কে আমাদের শিক্ষার্থীদের বা যে কোনো মানুষের না জানাটা দোষের কিছু নয়, কারণ মানুষ তো সবকিছু আর জানতে পারবেন না, ভুল তার হতেই পারে৷ কিন্তু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যখন কথা বলি বা তাদের বানান কি উচ্চারণ নিয়ে যখন কথা বলি, তখন দেখি বেশ শক্তপোক্তভাবে তারা ভুলটা জেনে বসে আছেন৷ শুধু তাই নয়, কয়েকজন আমাকে তথ্যসূত্র দিয়ে বোঝানোরও চেষ্টা করেন কেনো তার জানাটি ভুল নয়, বরং একশভাগ সঠিক৷ গত বছর একটি একটি অনুষ্ঠানের জন্য সঙ্গীতশিল্পী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আমাকে অন্যতম নির্বাচকের ভূমিকা পালন করতে হয়েছিল৷ আমি যদিও সঙ্গীতশিল্পী নই, তবুও কেন আয়োজকরা আমায় নির্বাচকের ভূমিকায় রাখলেন, এর উত্তর হয়তো অভিধান ঘেঁটেও পাওয়া যাবে না৷ তো প্রতিযোগীদের অধিকাংশই ছিলেন শিক্ষার্থী৷ তাদেরই একজন গাইছিলেন ‘ওই ঝিনুকফোটা সাগরবেলায় আমার ইচ্ছে করে...’৷ গানটি পরিবেশনের ক্ষেত্রে সুর লয়ের যে কোনো সমস্যা ছিল না, সেটা সহ-নির্বাচকদের আলোচনা থেকেই বুঝেছিলাম৷ কিন্তু আমার কানে বাঁধছিল শিল্পীর ‘বেলা’ উচ্চারণটি৷ অর্থভেদে ‘বেলা'র দুটো উচ্চারণ৷ সময় বোঝালে অর্থাৎ দুপুরবেলা, বিকেলবেলা হলে এর উচ্চারণ হবে ‘ব্যালা' আর সমুদ্রের পাড় বোঝালে উচ্চারণ হবে ‘বেলা’৷ তাই ‘সাগরবেলা’ যতটা অর্থপূর্ণ ‘সাগরব্যালা' ঠিক ততটাই অর্থহীন৷ কিন্তু প্রতিযোগী আমার এই যুক্তি মানতে নারাজ৷ তার দৃঢ় বিশ্বাস উচ্চারণটি ঠিক আছে৷ শেষমেষ তিনি আমাকে ইউটিউব থেকে অন্তত তিনটি ভিডিও দেখালেন যেখানে বিভিন্ন শিল্পীরা এই গানটি গেয়েছেন এবং তাঁরাও নির্বিবাদে ‘সাগরব্যালাই’ উচ্চারণ করেছেন৷ তারপর তাকে মূলশিল্পী সামিনা চৌধুরীর গানটি শুনিয়ে আমার বোঝাতে হলো, গানটি যারা কভার করেছিলেন, তারাও উচ্চারণ ভুল করেছেন৷
ঘটনাটি উল্লেখ করলাম কারণ, আমাদের ইন্টারনেটের জগতে বাংলার ক্ষেত্রে বানান, অর্থ, উচ্চারণ এমনকি বাক্যে শব্দের ব্যবহার সংক্রান্ত নানা তথ্য ভেসে বেড়াচ্ছে৷ কিন্তু তথ্যের এই ডুবসাঁতার আমাদের কতটা ডোবায়, তার প্রমাণ মেলে গুগল ট্রান্সলেটরের ওপর যদি কষ্মিনকালেও কেউ ভরসা করে থাকেন৷ তাহলে উপায় কি? সঙ্গে করে অভিধান নিয়ে ঘোরা তো কোনো সমাধান হতে পারে না৷ একসময় বাজারে পকেট ডিকশনারি পাওয়া যেত, এখন তার প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়েছে৷ তাছাড়া প্রযুক্তি আমাদের নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা তৈরি করে দিয়েছে৷ প্রশ্ন হচ্ছে, সেই সুযোগটা আমরা কতখানি কাজে লাগাচ্ছি?
কোন ভাষায় কত অক্ষর
সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য ভাষা৷ কিন্তু আমরা কি জানি, কোন ভাষায় কতগুলি করে অক্ষর? একনজরে দেখে নেওয়া যাক আজকের গ্যালারিতে৷
ছবি: Getty Images
তামিল ২৪৭
তামিল ভাষায় মূল অক্ষর ৩১টি৷ তবে যুক্তাক্ষর ধরলে সেখানে আরো ২১৬টি অক্ষর যুক্ত হয়৷ অর্থাৎ, সব মিলিয়ে ২৪৭টি অক্ষর৷ বিশ্বের যে কোনো ভাষার চেয়ে বেশি অক্ষর তাই তামিলে৷
ছবি: Reuters/N. Bhalla
খামের ৭৪
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পুরনো দেশগুলির অন্যতম কম্বোডিয়া৷ খামের সংস্কৃতি বহু শতাব্দীর৷ খামের ভাষাও খুব সমৃদ্ধ৷ খামের ভাষায় ৭৪টি অক্ষর আছে, যার মধ্যে ৩৫টি ব্যাঞ্জনবর্ণ এবং ১৪টি স্বরবর্ণ৷ বাকি অক্ষরগুলি যুক্তবর্ণ৷ তবে ব্যাঞ্জনবর্ণের মধ্যে ৩৩টি এখন ব্যবহৃত হয়, ২টির কোনো ব্যবহার নেই৷
ছবি: Imago/blickwinkel
থাই ৭০
থাইল্যান্ডের ভাষা থাই৷ থাই ভাষায় সব মিলিয়ে ৭০টি অক্ষর, যার মধ্যে ৪৪টি ব্যাঞ্জনবর্ণ এবং ১৫টি স্বরবর্ণ৷ এই দুই অক্ষর মিলিয়ে বেশ কিছু যুক্তাক্ষরও তৈরি হয়৷
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
মালয়ালম ৫৮
দক্ষিণ ভারতের কেরলে মালয়ালম ভাষার প্রচলন আছে৷ এই ভাষায় মোট ৫৮টি অক্ষর, যার মধ্যে ১৩টি স্বরবর্ণ এবং ৩৬টি ব্যাঞ্জনবর্ণ৷ আর কিছু অন্তচিহ্ন আছে৷ ওই অঞ্চলের ছোট ছোট বেশ কয়েকটি ভাষাও মালয়ালম অক্ষরেই লেখা হয়৷
ছবি: UNI
তেলেগু ৫৬
ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে তেলেগু মুখ্যভাষা৷ তেলেঙ্গানা প্রদেশেও৷ কন্নড় ভাষার সঙ্গে তেলেগু লিপির বহু মিল আছে৷ কারণ, দু’টি ভাষারই সৃষ্টি একই জায়গা থেকে৷ সব মিলিয়ে ৫৬টি অক্ষর আছে এই ভাষায়৷
ছবি: UNI
সিংহলী ৫৪
শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রভাষা ভাষা সিংহলী৷ অসামান্য সুন্দর এই ভাষার অক্ষর বিন্যাস৷ সব মিলিয়ে অক্ষরের সংখ্যা ৫৪৷ এই ভাষাতেও সংযুক্ত অক্ষরের প্রচলন আছে৷
ছবি: Reuters/D. Liyanawatte
বাংলা ৫২
বাংলায় সব মিলিয়ে ৩২টি অক্ষর৷তবে যুক্তাক্ষর ধরলে ৫২টি অক্ষর৷ দেবনাগরী লিপি না হলেও তার সঙ্গে বাংলা বর্ণের প্রচুর মিল৷ মূলত এই লিপির জন্ম ব্রাহ্মী থেকে৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
কন্নড় ৪৯
দক্ষিণ ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৪টি ভাষার একটি কন্নড়৷ কর্ণাটকে মূলত এই ভাষা ব্যবহৃত হয়৷ কন্নড় ভাষায় ১৩টি স্বরবর্ণ আছে৷ তবে তার মধ্যে অনুস্বর এবং বিসর্গ নেই৷ কন্নড়ে ব্যাঞ্জনবর্ণের সংখ্যা ৩৬৷
ছবি: Jayalaxmi AgroTech
হিন্দি ৪৪
হিন্দিও স্বরবর্ণ এবং ব্যাঞ্জনবর্ণে বিভক্ত, যার মধ্যে ১১টি স্বরবর্ণ এবং ৩৩টি ব্যাঞ্জনবর্ণ৷ হিন্দি ভাষার উৎপত্তি দেবনাগরী থেকে৷ সংস্কৃতের প্রচুর প্রভাব আছে এই ভাষায়৷
ছবি: AP
হাঙ্গেরিয়ান ৪৪
লাতিন বর্ণমালা থেকেই হাঙ্গেরিয়ান বর্ণমালার উৎপত্তি৷ রোমান বর্ণমালার এ থেকে জেড ছাড়াও এই বর্ণমালায় আরো বেশ কিছু অক্ষর দেখতে পাওয়া যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Kisbenedek
অবখাজ ৪১
জর্জিয়ার কোনো কোনো অংশে এই ভাষায় কথা বলা হয়৷ অবখাজ ভাষায় ৪১টি অক্ষর৷ ১৮৮০ সালে এই ভাষার বর্ণমালা তৈরি করা হয়৷
ছবি: Filip Warwick
আর্মেনিয়ান ৩৯
আর্মেনিয়ার প্রধান ভাষা আর্মেনিয়ান৷ তাদের বর্ণমালায় মোট অক্ষরের সংখ্যা ৩৬৷ তবে কালে কালে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯৷
ছবি: Reuters/M. Sezer
রুশ ৩৩
আধুনিক রুশ বর্ণমালায় ৩৩টি অক্ষর৷ রুশ ভাষায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত অক্ষর ঔ, এ, আ এবং ন৷ রুশ ভাষার সাহিত্য সারা পৃথিবীতেই এক সময় অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল৷
ছবি: picture alliance/Russian Look
আজারবাইজানি ৩২
আজারবাইজানে বলা হয় আজারবাইজানি ভাষা৷এই ভাষার অক্ষরবিন্যাসও তৈরি হয়েছে লাতিন বর্ণমালার উপর ভিত্তি করে৷ তবে লাতিনের চেয়ে কিছু আলাদা অক্ষরও তাদের বর্ণমালায় ব্যবহার করা হয়৷
ছবি: picture alliance/AA /Stringer
ইংরেজি ২৬
ইংরেজিতে মোট ২৬টি অক্ষর আছে, যার মধ্যে ৫টি ভাওয়েল এবং ২১টি কনসোনেন্ট৷ সারা পৃথিবীতেই ইংরেজি ভাষার ব্যাপক ব্যবহার৷ মূলত রোমান স্ক্রিপ্ট থেকেই তৈরি হয়েছে ইংরেজির বর্ণমালা৷
ছবি: AP
গ্রিক ২৪
গ্রিক বর্ণমালায় মোট ২৪টি অক্ষর, যার প্রথম অক্ষর আলফা৷ আর শেষ হয় ওমেগা দিয়ে৷ বিজ্ঞান এবং গণিতের বহু ক্ষেত্রে এখনো গ্রিক অক্ষর ব্যবহার করা হয় সারা পৃথিবীতেই৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/P.Karadjias
হিব্রু ২২
আরবি, ফারসি কিংবা উর্দুর মতো হিব্রু ভাষাও বাঁ দিক থেকে ডানদিকে লেখা হয়৷ এই ভাষার বর্ণমালায় মোট ২২টি অক্ষর আছে৷ইজরায়েলের রাষ্ট্রভাষা হিব্রু৷ এই ভাষার ইতিহাসও কয়েক হাজার বছর প্রাচীন৷
ছবি: Getty Images
17 ছবি1 | 17
ইংরেজি ভাষাকেই যদি উদাহরণ হিসেবে ধরি, তাহলে আজ কে অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজ বা কলিন্স ডিকশনারি কেনেন? একে তো গুগল, বিং ইত্যাদি সার্চ ইঞ্জিনগুলো এই ডিকশনারিগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে, তার ওপর প্রত্যেকেরই রয়েছে অনলাইন সংস্করণ৷ এমনকি অ্যাপ্লিকেশন আকারেও এগুলো পাওয়া যায় গুগল কিংবা অ্যাপল প্লেস্টোরে৷ ছাপানো অভিধানের মতো এখানেও শব্দের মূল, ব্যুৎপত্তি, উচ্চারণ, সমার্থক শব্দ ও উদাহরণ পাওয়া যায়৷ অনলাইন সংস্করণগুলোতে উদাহরণ বরং আরও বেশি পাওয়া যায়৷ ফলে ছাপা অভিধানের গুরুত্ব লাইব্রেরি বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া তেমন আর উপলব্ধি হয় না৷ ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য এই অ্যাপ্লিকেশনগুলোই সই৷ তাছাড়া ওয়েবসাইট তো আছেই৷ ফলে পকেট ডিকশনারির প্রয়োজনীয়তাও আর রইলো না৷ প্রতিষ্ঠানগুলোও এখন নজর দিচ্ছে তাদের অনলাইন সংস্করণের ওপরই৷ অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসের প্রধান নির্বাহীর বক্তব্য অনুযায়ী, অক্সফোর্ড ডিকশনারির তৃতীয় সংস্করণ হবে মূলত অনলাইন সংস্করণ৷
এই উদাহরণগুলো সামনে রেখে আমরা যদি বাংলা অভিধানের দিকে তাকাই, তবে খানিকটা নয়, অনেকটাই হতাশ হতে হয়৷ এখনও অনলাইনে বাংলা অভিধানের ক্ষেত্রে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক দায়বদ্ধতা গড়ে ওঠেনি৷ কারণ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যারা অভিধান প্রণয়ন করেন, তারা এখনও এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি৷ এতে যে সমস্যাগুলো তৈরি হচ্ছে, তার একটি প্রাথমিক বিবরণ তো আমি লেখার শুরুর অংশে তুলে ধরেছি, কিন্তু সত্যিকার অর্থে এই সংকট আরও গভীরে৷ আগেই বলেছিলাম, না জানলে জেনে নেয়া যায়; কিন্তু ভুল জানলে সেটাকে শোধরানো খুব মুশকিল হয়ে পড়ে৷ অনলাইনে এখন বাংলা শব্দের ক্ষেত্রে মূল যে সমস্যাটি তৈরি হয়েছে, তা হলো ভুল বানান এবং ভুল অর্থ এমনকি ভুল প্রয়োগকেই সঠিক বলে চালানো হচ্ছে৷ কারা চালাচ্ছেন? যারা বাংলা অভিধানকে সামনে রেখে নানা নামে নানা ধরনের অ্যাপ্লিকেশন বা ওয়েবসাইট বানিয়েছেন, তারাই৷ যেহেতু অভিধানের প্রয়োজনীয়তা আছেই কিন্তু সঠিক অভিধান খুঁজে পাবার কোনো উপায় নেই, তাই অনেকে বাধ্য হয়েই বা না জেনেই এগুলো ব্যবহার করছেন৷ ফলে অনেক ভুল অর্থ যেমন জানছেন, তেমনি আবার প্রয়োজনীয় অনেক শব্দের অর্থ তারা খুঁজে পাচ্ছেন না৷ অর্থাৎ সংকটের কোনো সমাধান আদৌ হলো না৷
এক্ষেত্রে মূল উদ্যোগটি আসলে বাংলা একাডেমিকেই গ্রহণ করতে হবে৷ কারণ বাংলাদেশে অভিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে তারাই নির্ভরযোগ্য ও দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান৷ এক্ষেত্রে আরও একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন৷ বাংলা একাডেমি নানা ধরনের অভিধান প্রণয়ন করেছে৷ আলাদা আলাদাভাবে সেগুলো ক্রয় করা অনেকের সাধ্যের অতীত বা অনেকের প্রয়োজনও নেই৷ কিন্তু ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে এই অভিধানগুলোর একটি সমন্বয় করা সম্ভব৷ যেমন গবেষক গোলাম মুরশিদের সম্পাদনায় বাংলা একাডেমি প্রণীত বিবর্তনমূলক অভিধান তিন খণ্ডের৷ ব্যবহারিক অভিধানের সঙ্গে এর পার্থক্য রয়েছে৷ এখন এই তিন খণ্ডের অভিধান কেনা সকলের জন্য সম্ভবপর নাও হতে পারে৷ সেক্ষেত্রে এগুলো সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে, যেটা ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে সম্ভব৷
প্রশ্ন হতে পারে, বাংলা অভিধানের ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে ছাপার অভিধানকে পত্রপাঠ বিদায় জানানো হবে? একেবারেই নয়৷ কারণ, ছাপার অভিধানের প্রয়োজনীয়তা থাকবেই, হয়তো বৃহৎ আকারে না হলেও সুনির্দিষ্ট কিছু জায়গায় ছাপার অভিধানের গুরুত্ব কখনোই হারাবে না৷ কিন্তু মানুষের হাতে হাতে অভিধান পৌঁছে যাবে এবং মানুষ যা শিখছেন, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবেন৷ একই সঙ্গে এই ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে অনলাইনে বাংলা শব্দ, শব্দের অর্থ বা প্রয়োগ নিয়ে যত ভুলত্রুটি রয়েছে, সেগুলোরও সমাধান হবে৷ অনেকে মনে করতে পারেন, এতে ছাপার অভিধানের বিক্রি কমে যাবে, অর্থাৎ বাংলা একাডেমি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷ আমার তা মনে হয় না৷ এ কথা ঠিক বাংলা একাডেমির অভিধানের চাহিদা প্রচুর৷ কিন্তু সকলে কি সব ধরনের অভিধান কেনেন? নিশ্চয়ই না৷ অনেকে হয়তো কেননই না, কারণ বাংলা তো মাতৃভাষা, মাতৃভাষার অভিধান কিনে কী হবে- এমন মত অনেকেরই থাকতে পারে৷ আমার মনে হয়, অভিধানের ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে বাংলা একাডেমি চাইলে সেটা অনলাইনে বিক্রিও করতে পারেন৷ কেউ যদি সব ধরনের অভিধানের সমন্বিত রূপটি পেতে চান, তাহলে তিনি সেটা কিনে নিবেন৷ নয়তো ব্যবহারিক ও বানান অভিধান থেকেই নিজের প্রয়োজন মেটাবেন৷
সন্দেহ নেই, এটি একটি বড়ো কাজ৷ বর্তমান সরকার এক দশক আগে থেকেই ডিজিটাইজেশনের ওপর জোর দিয়ে আসছেন৷ সেক্ষেত্রে এতদিনেও আমরা একটি ডিজিটাল বাংলা অভিধান পেলাম না, এটা দুঃখজনক৷ গত ২৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ অধিবেশনে মহামান্য রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে মাননীয় ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান জানিয়েছেন, সরকার ৭৪ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে কোরান শরীফ ডিজিটাইজেশন করেছেন৷ অত্যন্ত প্রশংসনীয় একটি কাজ৷ প্রখ্যাত আলেম-ওলামাগণের সমন্বয়ে এই ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে নিঃসন্দেহে পবিত্র কোরানের মর্মবাণী সাধারণ মানুষ সহজে জানতে বুঝতে পারবেন, ফলে ধর্মান্ধদের মিথ্যাচার ও ধর্মব্যবসা বন্ধ হবে৷
খরচের অঙ্ক দেখে বোঝা যাচ্ছে, চলমান নানা মেগা প্রজেক্টের তুলনায় এই খরচ তেমন কিছুই নয়৷ প্রয়োজন সদিচ্ছা ও উদ্যোগ৷ প্রাথমিকভাবে বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে এই উদ্যোগটি গ্রহণ করে সম্পন্ন করতে পারলে পরবর্তীতে বাংলাদেশে বসবাসরত বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভাষা নিয়েও কাজ করা সম্ভব৷ ফলে ভাষাভিত্তিক জ্ঞানের আদান-প্রদানটিও সহজ হবে বলে আমি মনে করি৷ ভাষার মাসে ভাষার জন্যে এই ডিজিটাল অভিধানের উদ্যোগ গ্রহণ করার দাবি জানাই৷
ভাষা নিয়ে সাত মজার তথ্য
ইউনেস্কোর হিসেবে পৃথিবীর মানুষ প্রায় ছয় হাজার ভাষায় কথা বলে৷ এর মধ্যে ৯০ শতাংশ ভাষায় কথা বলা মোট মানুষের সংখ্যা এক লাখেরও কম৷
মোট ভাষা
ইউনেস্কো বলছে, পৃথিবীর মানুষ প্রায় ছয় হাজার ভাষায় কথা বলে৷ এর মধ্যে কমপক্ষে ৪৩ শতাংশ ভাষা বিলুপ্তির আশঙ্কায় রয়েছে৷ আরেক হিসেব বলছে, ছয় হাজার ভাষার মধ্যে ৯০ শতাংশ ভাষায় কথা বলা মোট মানুষের সংখ্যা এক লাখেরও কম হতে পারে৷ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এসআইএল ইন্টারন্যাশনালের প্রকাশনা ‘এথনোলোগ’-এর হিসেবে, বিশ্বে বর্তমানে ভাষার সংখ্যা ৭,১৩৯৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Meissner
সবচেয়ে বেশি ভাষার দেশ
পাপুয়া নিউ গিনির জনসংখ্যা প্রায় আশি লাখ৷ এথনোলোগের হিসেবে, সে দেশের মানুষ ৮৪০ ভাষায় কথা বলে! তবে অফিসিয়াল ভাষা তিনটি- ইংরেজি, টক পিসিন ও হিরি মটু৷ এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইন্দোনেশিয়ায় ভাষার সংখ্যা ৭১২৷ এরপর ক্রমান্বয়ে আছে নাইজেরিয়া (৫২২), ভারত (৪৫৪) ও যুক্তরাষ্ট্র (৩২৬)৷
ছবি: picture- alliance/AP Photo/UN/S. Aupong
মহাকাশে ঘুরছে বাংলা
সৌরজগৎ নিয়ে গবেষণা করতে ১৯৭৭ সালে নাসা ভয়েজার ১ ও ২ মহাকাশযান প্রেরণ করে৷ প্রতিটিতে একটি করে সোনালি ডিস্ক রয়েছে৷ এতে পৃথিবীর বিভিন্ন শব্দ ছাড়াও আছে ৫৫ ভাষায় বলা শুভেচ্ছা বার্তা৷ এরমধ্যে বাংলাও আছে৷ সুব্রত মুখার্জি বলছেন, ‘‘নমস্কার, বিশ্বের শান্তি হোক৷’’ মহাকাশযান দুটি এখনও মহাকাশে সক্রিয় আছে৷
ছবি: picture alliance/Jet Propulsion Lab via AP/dpa
ইংরেজি ভাষায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত বর্ণ
২০১৮ সালে রিডার্স ডাইজেস্টের এক প্রতিবেদন জানায়, ‘কনসাইস অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি’তে থাকা প্রায় ২৪ হাজার শব্দে যত বর্ণ ব্যবহৃত হয়েছে তার মধ্যে ‘ই’ বর্ণের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, প্রায় ১১ শতাংশ৷ এরপরেই আছে ‘এ’৷ ‘ই’ এর চেয়ে প্রায় ছয় হাজার শব্দে পিছিয়ে আছে ‘এ’ বর্ণ৷ নরওয়েজিয়ান, ফিনিশ, ফ্রেঞ্চ ও ইটালিয়ান ভাষায়ও ‘ই’ এর অনেক ব্যবহার আছে৷
সবচেয়ে নতুন ভাষা লাইট ওয়ার্লপিরি
অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চলে ওয়ার্লপিরি আদিবাসী গোষ্ঠীর বাস৷ তারা ‘ওয়ার্লপিরি’ ভাষায় কথা বলে৷ তাদের সংখ্যা ৩-৪ হাজার৷ ৭০/৮০-র দশকে ওয়ার্লপিরি বাবা-মা সন্তানদের সঙ্গে কথা বলার সময় ইংরেজি ও ‘ক্রিয়ল’ ভাষার শব্দ ব্যবহার করতেন৷ এই তিন ভাষা শোনা বাচ্চারা নিজেদের মধ্যে কথা বলার সময় আলাদা এক ভাষার জন্ম হয়, যা ‘লাইট ওয়ার্লপিরি’ নাম পেয়েছে৷ ঐ বাচ্চারা এতদিনে বড় হয়েছে৷ এখন তাদের সন্তানরাও এই ভাষা ব্যবহার করছে৷
জার্মানির ‘লাইবনিৎস ইনস্টিটিউট ফর দ্য জার্মান ল্যাঙ্গুয়েজ’ জানিয়েছে, ২০২০ সালে প্রায় ১,২০০ নতুন জার্মান শব্দ তৈরি হয়েছে৷ সাধারণত গড়ে প্রতিবছর প্রায় ২০০ নতুন জার্মান শব্দ তৈরি হয়৷ কিন্তু করোনার কারণে গতবছর রেকর্ড সংখ্যক শব্দ পাওয়া গেছে৷ যেমন করোনাম্যুডে (করোনায় ক্লান্ত), করোনাফ্রিজুয়া (করোনা হেয়ারস্টাইল), ইম্ফনাইড (টিকা পাওয়া ব্যক্তিদের প্রতি ঈর্ষা) ইত্যাদি৷
ছবি: Jürgen Fromme/firo/picture alliance
বানানো ভাষা
গেম অফ থ্রোনসের যাযাবর গোষ্ঠী ডোথরাকির সদস্যরা ডোথরাকি ভাষায় কথা বলেন৷ এই টিভি সিরিজের জন্য ডোথরাকি ভাষাটি তৈরি করেন ল্যাঙ্গুয়েজ ক্রিয়েটর ডেভিড পিটারসন৷ এমন প্রায় দুশোর মতো ভাষার সন্ধান পাওয়া যায় যেগুলো বিভিন্ন বই, ফিল্ম ও টিভি সিরিজের প্রয়োজনে বানানো হয়েছে৷