1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফ্রিবুয়র চলচ্চিত্র উৎসব

২৮ মার্চ ২০১২

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের সার্বিক উন্নয়নে সরকারের সহযোগিতার অভাব ক্রমশ প্রকট হয়ে উঠছে৷ সুইজারল্যান্ডের ফ্রিবুয়র শহরে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এই মতই প্রকাশ করেন৷

ছবি: DW

ফ্রিবুয়র শহরে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের একটি বিশেষ বিভাগ হচ্ছে ‘অজানা দিগন্ত'৷ এই বিভাগে প্রদর্শিত হচ্ছে আটটি বাংলা ছবি৷ বাংলা ছবির সমৃদ্ধ জগতটি বিশ্বের অনেক মানুষের কাছে এখনো অজানা৷ তাই সেই অজানা দিগন্তকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে ফ্রিবুয়র উৎসবের মাধ্যমে৷ বলাবাহুল্য এতে সাড়াও ব্যাপক৷ এই উৎসবের আয়োজকদের একজন বারবারা৷ তিনি বলেই দিলেন, রানওয়ে ছবির দ্বিতীয় প্রদর্শনী ছিল হাউসফুল৷

আবেগাপ্লুত দর্শক

বাঙালি আবেগতাড়িত জাতি৷ বাংলা ছবিতে সেই আবেগ থাকবেনা, তা হতেই পারে না৷ কিন্তু বাঙালির আবেগ যে ভিনদেশিদের চোখে জল এনে দেবে, এমনটা বোধহয় অনেকের ভাবনায় ছিল না৷ ‘মনপুরা' দেখতে গিয়ে কাঁদলেন সুইস তন্বী জুলি৷ তাঁর সেই আবেগাপ্লুত কান্নায় বিস্মিত ‍কেউ কেউ৷ সিনেমা হল থেকে বেরিয়ে একজন আবার টিপ্পনি কাটলেন, ‘রাতে কিন্তু ঘুমিও৷ আর কান্নাকাটি করো না৷' বেচারি মাথা নাড়িয়ে তাতে সায় দিলেন৷

স্পটলাইট বাংলাদেশ

ফ্রিবুয়র চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলা ছবির এই আবেগময় প্রদর্শনীর পাশাপাশি ছিল গুরুগম্ভীর আলোচনা৷ সোমবার দুপুরে, উৎসবের অংশ হিসেবেই চারঘণ্টা বিস্তর আলোচনা চললো বাংলা চলচ্চিত্রের হালহকিকত নিয়ে৷ আলোচনায় ছিল ছবির কাহিনী, কলাকুশলী থেকে শুরু করে বিনিয়োগ, কারিগরি নানা বিষয়৷ বাংলাদেশের তিন পরিচালক এনামুল করিম নির্ঝর, গিয়াসউদ্দিন সেলিম, গোলাম রাব্বানি বিপ্লবের সঙ্গে আলাপচারিতায় ছিলেন প্রযোজক ইবনে হাসান খান এবং চিত্রনাট্যকার এবাদুর রহমান৷ ‘স্পটলাইট বাংলাদেশ' নামক এই লম্বা আলোচনার সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করেন মার্সি গোল্ডব্যার্গ৷

ফ্রিবুয়র চলচ্চিত্র উৎসবে ডয়চে ভেলের আরাফাতুল ইসলামছবি: DW

কারিগরি সহায়তা

বাংলা চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে কারিগরি সহায়তা এখনো বড় এক সমস্যা৷ বাংলাদেশে বড় ফিল্ম স্টুডিও এখনো গড়ে ওঠেনি৷ ফলে আধুনিক শব্দ সম্পাদনা কিংবা ভিডিও সম্পাদনার জন্য বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের অন্য দেশের সহায়তা নিতে হচ্ছে৷ এতে করে চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে৷ অপচয় হচ্ছে সময়ও ৷ ফ্রিবুয়র'এর আলোচনায় এই বিষয়টির দিকে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন ‘আহা!' ছবির পরিচালক এনামুল করিম নির্ঝর৷ তাঁর মতে, ‘‘বাংলা চলচ্চিত্র এখন ‘কোমায়' আছে৷ এই শিল্পকে আবারো বাঁচিয়ে তুলতে হলে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে৷''

ব্যতিক্রম মনপুরা

বাংলা ছবি দর্শক হারাচ্ছে কিংবা ব্যবসা সফল হচ্ছে না, এরকম কথা প্রায়ই শোনা যায়৷ তবে এই পরিস্থিতির একটি ভিন্ন চিত্র তুলে ধরেন পরিচালক গিয়াসউদ্দিন সেলিম৷ তাঁর নির্মিত ‘মনপুরা' ছবিটি ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে এবং তার ব্যবসাও সফল হয়েছে৷ সেলিম মনে করেন, ভালো ছবি নির্মাণ করলে সেটি দর্শক অবশ্যই দেখবে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা ষাট এবং সত্তরের দশকে অনেক ভালো ছবি তৈরি করেছি৷ মাঝে কিছুদিন একটু খারাপ অবস্থা গেছে অবশ্য৷ কিন্তু আমি আশা করি, আমরা আবারো অনেক উন্নতি করবো এবং বাংলা ছবির সোনালি দিন ফিরে আসবে৷''

চলচ্চিত্র শিক্ষার সুযোগের অভাব

বাংলাদেশে চলচ্চিত্র বিষয়ক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের উপযুক্ত ব্যবস্থা এখনো গড়ে ওঠেনি বলে আলোচনায় মত প্রকাশ করেন বক্তারা৷ বেসরকারি কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সংক্রান্ত শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ থাকলেও, তার পরিধি এখনো সীমিত৷ এই ঘাটতি কাটাতে আরো উদ্যোগ জরুরি বলে মনে করেন চিত্রনাট্যকার এবাদুর রহমান৷ তিনি বলেন, ‘‘চলচ্চিত্র শিক্ষার ব্যাপারটাতো আসলে বিস্মৃত৷ আমাদের ক্রাফট শেখার জন্য, টেকনিক্যাল স্কিল আয়ত্ত্বে আনার জন্য ট্রেনিং দরকার৷ আরেকটি বিষয় হচ্ছে চলচ্চিত্র কিভাবে পড়তে হবে, থিওরেটিক্যাল ট্রেনিংটাও দরকার৷''

চলচ্চিত্র নির্মাতা গোলাম রাব্বানি বিপ্লব মনে করেন, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে আবারো জাগিয়ে তুলতে গেলে সরকারের সহায়তা অনেক জরুরি৷ সরকারের উচিত এই শিল্পকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া৷ একইসঙ্গে এই শিল্পের উপর যেসব কর এবং বিধিনিষেধ আছে, সেগুলোও তুলে নেওয়া উচিত সরকারের৷

উল্লেখ্য, ফ্রিবুয়র চলচ্চিত্র উৎসব চলবে ৩১শে মার্চ পর্যন্ত৷ এই উৎসবে আটটি বাংলা ছবি প্রদর্শন করা হলেও প্রতিযোগিতা বিভাগে কোন বাংলা ছবি নেই৷

প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম, ফ্রিবুয়র, সুইজারল্যান্ড
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ