1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌বাংলা থিয়েটারে ‘‌মি টু'‌

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
২৯ অক্টোবর ২০১৮

সবাই চুপ৷ বাংলা সিনেমা, সিরিয়াল, থিয়েটারে যেন কোনো যৌন হেনস্থার ঘটনা নেই৷ তবুও একাই চেষ্টা করলেন শ্রাবস্তী ঘোষ৷

Indien Kalkutta - MeToo in Bengali Theater
ছবি: DW/S. Bandopadhyay

ভারতে, হিন্দি সিনেমায় যৌন হেনস্থার ঘটনা নিয়ে প্রথম যিনি সরাসরি, নাম করে মুখ খুললেন, তিনি এক বাঙালি৷ অভিনেত্রী তনুশ্রী দত্ত৷ তারপর যেন ধৈর্য আর নীরবতার বাঁধ ভেঙে গেল!‌ অভিযোগের জোয়ার৷ শ্রদ্ধেয় অভিনেতা, বিখ্যাত পরিচালক, জনপ্রিয় সুরকার— এক ধারসে সবাই অভিযুক্ত৷ গোটা ফিল্মি দুনিয়া জুড়ে শোরগোল৷ তার ঠিক বিপরীতে বাংলার অভিনয় জগৎ৷ এক বিস্ময়কর নীরবতা সেখানে৷ কারো কিছু বলার নেই৷ ধরেই নিতে হয় যে, বাংলা সিনেমা, সিরিয়াল, থিয়েটার, যাত্রার অন্দরমহলে কোথাও কোনো মালিন্য নেই, কলুষ নেই৷ কারো দেরাজে লুকনো নেই কোনো পুরনো অপরাধের কংকাল৷ সেই অস্বস্তিকর নীরবতা ভাঙার প্রথম চেষ্টা করলেন থিয়েটারের ছাত্রী, ৭ বছর বয়স থেকে থিয়েটার কর্মী শ্রাবস্তী ঘোষ৷ প্রথম তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোষণা করলেন, বাংলা নাটকে, মঞ্চের কালো ব্যাক-ড্রপের পিছনে যে অন্ধকার, সেখানে আলো ফেলা দরকার৷ বাংলা থিয়েটারের অভিনেত্রীরা কেন এটা নিয়ে কিছু বলছেন না, সেই প্রশ্ন তুললেন শ্রাবস্তী৷ জানিয়ে দিলেন, নির্দিষ্ট এক বিকেলে কলকাতার অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস-এর সামনে তিনি নিজে থাকবেন, তাঁর মানসিকতার শরিক যাঁরা, সেই থিয়েটারকর্মীরা থাকবেন৷ যদি কেউ এগিয়ে এসে কিছু বলতে চান, নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান, তা হলে তাঁরা স্বাগত, জানিয়েছিলেন শ্রাবস্তী৷

‘এক হচ্ছে কাজ না পাওয়ার ভয় এবং দ্বিতীয় হচ্ছে...’

This browser does not support the audio element.

কিন্তু বাস্তবে যেটা ঘটল, বাংলা থিয়েটারের অপেক্ষাকৃত পুরনো কর্মী যাঁরা, যাঁদের এ ধরনের অভিজ্ঞতা থাকার কথা, নিজেরা ভুক্তভোগী না হলেও সহ-নাট্যকর্মীদেরযৌন লাঞ্ছনা হয়তো দেখে থাকার কথা, তাঁরা কিন্তু কেউই এগিয়ে এলেন না৷ ডয়চে ভেলেকে জানালেন শ্রাবস্তী৷ কিন্তু কেন এই নীরবতা?‌ কীসের সঙ্কোচ?‌ বা কীসের ভয়? শ্রাবস্তী বলছেন, এই নীরবতার কারণ, ‘‌‘‌এক হচ্ছে কাজ না পাওয়ার ভয়৷‌ এবং দ্বিতীয় হচ্ছে, এখন যেহেতু বাংলা গ্রুপ থিয়েটারগুলো চলে ফ্যামিলি থিয়েটার হিসেবে, মূলত যাঁদের গ্রুপ, তাঁরা পুরুষ এবং তাঁদের মা, স্ত্রী, তাঁদের ছেলে, সেই গ্রুপে থাকতে গেলে তাঁদের প্রেমিকা হতে হয়!‌'‌'‌

আরেকটা ব্যাপার হয় বাংলা থিয়েটারে৷ পাওয়ার পলিটিক্স৷ ক্ষমতার রাজনীতি৷ এটা শুধু বাংলা থিয়েটার নয়, দেশের সব ভাষার থিয়েটারেই এটা হয়৷ তবে বাংলা থিয়েটারে সেটা অনেক বেশি হয় যে, একটা ক্ষমতার জায়গায় চলে গেলে, তাঁরা যদি মহিলাও হন, তাঁরা মুখ খোলেন না৷ কাজেই বাংলা থিয়েটারের মেয়ে হিসেবে অপমানিত হওয়ার ঘটনা জানাতে একটু বড় যাঁরা, একটু জনপ্রিয় যাঁরা, তাঁরা কেউই আসেননি, সাড়া দেননি বলছেন শ্রাবস্তী৷ আর নিজের এগিয়ে আসা সম্পর্কে শ্রাবস্তীর বক্তব্য, ‘‘‌‌আমার মনে হয়েছিল, আমি যেহেতু শুধু বাংলা নয়, দিল্লিতেও কাজকর্ম করি এবং আমার পড়াশোনাও থিয়েটার এবং পারফরম্যান্স স্টাডিজ নিয়ে, আমার মনে হয়েছিল যে, আমার নিজের থেকে একটা কোনো.‌.‌ যখন সারা ভারত জুড়ে ঘটনাটা ঘটছে, নানা ক্ষেত্র থেকে নাম উঠে আসছে, সেখানে থিয়েটারে এই যে নীরবতা, এটা ভাঙা উচিত৷ কেন সেই নীরবতা, সেই কারণগুলো চিহ্নিত করে মানুষকে বলা উচিত যে, আপনারা এগিয়ে আসুন৷ প্রথমত, আমি কাউকে জোর করতে পারি না বলুন বলে, কিন্তু এই সংলাপটা অন্তত শুরু করতে পারি, যে কেন বলছেন না?‌'‌'‌

যতটা সাড়া পাওয়া দরকার ছিল, ততটা সাড়া পাননি থিয়েটার কর্মী শ্রাবস্তী ঘোষ৷ কিন্তু কে বলতে পারে, তাঁর এই এগিয়ে আসা দেখেই হয়ত দ্বিতীয় কেউ উৎসাহিত হবেন৷ বিখ্যাত মুখেরাও হয়ত একদিন এগিয়ে এসে বলবেন নিজেদের কথা৷ দাবানল শুরু হতে অনেক সময় একটা স্ফূলিঙ্গই যথেষ্ট৷ কে বলতে পারে, শ্রাবস্তীর এই একার চেষ্টা সেই স্ফূলিঙ্গ হয়ে উঠবে একদিন!‌

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ