‘বাংলা বানানকে নতুন যুগের উপযোগী করে সংস্কার করার সময় এসেছে’
সমীর কুমার দে ঢাকা
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২
একুশে ফেব্রুয়ারি এলেই বাংলা ভাষা নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়৷ অথচ বছরজুড়ে এ নিয়ে আর কোন উচ্চবাচ্য নেই৷
বিজ্ঞাপন
ফলে সর্বস্তরে বাংলার প্রচলন কতটা হয়েছে? বিকৃত বা ভুল বাংলা শব্দ ব্যবহার করা থেকে মানুষকে নিবৃত্ত করতে কী করছে বাংলা একাডেমি? অনলাইনে কেন পুরো বাংলা অভিধান এখনও দেওয়া যায়নি? এসব বিষয় নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহাম্মদ নূরুল হুদা৷
ডয়চে ভেলে : সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন কতটা হয়েছে?
মুহাম্মদ নূরুল হুদা : কতটা হয়েছে তার কোন সমীক্ষা বাংলাদেশে হয়েছে বলে আমার জানা নেই৷ তবে এটা নিশ্চিতভাবে বলা যাবে, আমাদের সরকারি অফিস আদালতের নথিতে শতভাগ হয়েছে৷ কিন্তু বেসরকারি পর্যায়ে, যেখানে পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ হয় সেখানে বাংলার বাইরে সম্পূরক একটা ভাষা আছে, যেটাকে আমরা বলি কর্মের ভাষা ইংরেজি সেটাও ব্যবহার হচ্ছে এটাও ঠিক৷ আবার বিভিন্ন সাইবোর্ডে দেখা যাবে বাংলা আছে, কোথাও কোথাও ইংরেজি আছে৷ কিন্তু এটা খুব বেশি নয়৷ গত ৫০ বছরে ইংরেজি ব্যবহারের বিষয়টি খুবই কমে এসেছে৷ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমবার যে নির্দেশ দিয়েছিলেন সেটা এই-পরিভাষার জন্য অপেক্ষা করা যাবে না, বাংলা চালু করতে হবে৷ আমরা কিছু বানানে ভুল করব, লেখায় ভুল করব, এই ভুল করতে করতে আমাদের প্রমিত বাংলায় আসতে হবে৷ এই যাত্রায় আমরা বহুদুর এগিয়েছি৷
একুশে ফেব্রুয়ারি এলেই নানা ধরনের তৎপরতা দেখা যায়৷ এটা বছরব্যাপী করা যায় না?
এখন তো বছরব্যাপী হচ্ছে বলা যায়৷ আগে বরং শুধু একুশে ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রিক ছিল৷ এখন সারা বছরে হচ্ছে, তারপরও একুশে ফেব্রুয়ারি আসলে যে আলোচনাটা হয়, তার রেশ সারা বছরই থাকে৷ মঙ্গলবার মেলার উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যদি সম্ভব হয় সবগুলো জেলাতেই সহিত্য সম্মেলন করতে হবে৷ এর সঙ্গে আমরা বইমেলা জুড়ে দেব৷ এতে সৃষ্টিশীলতার বিষয়টা সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়বে৷ শুষ্ক মৌসুমের ছয় মাস যদি জেলাগুলোতে এটা করা যায় তাহলে মানুষের মনে বাংলা প্রচলনের বিষয়টি স্থায়ী রূপ পাবে৷
‘বাংলা অভিধানের সব শব্দ নিয়ে অনলাইনে ডিকশনারি করার মতো সফটওয়্যার এখনও দেশে নেই’
সিনেমা-নাটকে এখনও বিকৃত বাংলার ব্যবহার হচ্ছে৷ এগুলো বন্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় না?
বাংলা বিকৃত করা দুই ধরনের৷ একটি জেনে বিকৃত করা, আরেকটি না জেনে বিকৃত করা৷ আপনি তো শুধু নাটক-সিনেমার কথা বলছেন, কিন্তু রেডিওর যে জকি আছে তারা দ্রুততার সঙ্গে যে বাংলা বলে তাতে বিকৃত হচ্ছে৷ এটা বন্ধে অবশ্যই পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে৷ সব মানুষের মনোযোগ যদি শুদ্ধ বাংলার দিকে নিয়ে যাওয়া যায় তাহলে কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি হবে৷
বাংলা একাডেমি যে বইগুলো প্রকাশ করে, সেখানে কি অভিধান অনুযায়ী সব শব্দ ব্যবহার হয়?
অবশ্যই অভিধান অনুযায়ী সব শব্দ ব্যবহার করা হয়ে থাকে৷ তবে ডিকশনারির বাইরে কখনও কখনও নতুন শব্দ তৈরি হয়৷ এই শব্দ তৈরি করে কবি, ভাষাবিদ এবং পণ্ডিতেরা৷ তাদের কাছ থেকে কোন শব্দ পাওয়া গেলে সেগুলো ডিকশনারিতে আনা হয়৷ যেমন ধরা যাক, ঘেরাও৷ এই শব্দটি আগে বাংলাতে খুব একটা প্রচলিত ছিল না৷ আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় ঘেরাও যখন শুরু হল, মাওলানা ভাসানীর মুখ থেকে আমরা অনেকবার এই শব্দটি শুনেছি৷ পরে এটা ডিকশনারিতে চলে এসেছে৷ ফলে অভিধানের বাইরের কোন শব্দ সাধারণত মানুষ ব্যবহার করে না৷
অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ ডিকশনারির অনলাইন সংস্করণ আছে৷ বাংলা একাডেমির নেই কেন?
আমার মনে হয়, বাংলা অভিধানের সব শব্দ নিয়ে অনলাইনে ডিকশনারি করার মতো কোন সফটওয়্যার এখনও দেশে নেই৷ এর মূল কারণ হল, বাংলায় যে ৪৯টি অক্ষর আছে, এর সঙ্গে আকার-একার সব মিলিয়ে বিষয়টা একটু জটিল৷ তবে প্রচেষ্টা চলছে৷ আমাদের ডিকশনারিটা অনলাইনে আছে, তবে মুদ্রিত ডিকশনারির মত ততটা বিস্তৃত নয়৷ শব্দার্থ হিসেবে আছে৷ ফলে জটিলতাটা কাটেনি৷ আমার মনে হয়, দু'এক বছরের মধ্যে এই জটিলতাও কেটে যাবে৷
বাংলা একাডেমি কতটা ডিজিটাল
সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্পে বিভিন্ন খাতকে পর্যায়ক্রমে ডিজিটাল করছে। মুজিব জন্মশতবর্ষকে সামনে রেখে বাংলা একাডেমিকেও ডিজিটালাইজ করার প্রক্রিয়া এগিয়ে চলেছে বলে সংশ্লিষ্টদের দাবি। এ দাবি কতটা বাস্তবসম্মত? দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Mortuza Rashed/DW
অনলাইনে স্টলের লটারি
বাংলা একাডেমির বিক্রয়, বিপণন ও পুনর্মুদ্রন বিভাগের পরিচালক ডঃ জালাল আহমেদ জানান, অমর একুশে বইমেলার স্টল বন্টনের ক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইনে লটারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর ফলে অনিয়মের যে অভিযোগ ছিল, সেটি সম্পূর্ণ দূর হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
তথ্যকেন্দ্রের ডিজিটাল সহায়তা
বইমেলায় আগত দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে একটি এবং সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে দুইটি তথ্যকেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে দর্শনার্থীরা এসে স্টলের অবস্থান, বইয়ের প্রকাশক, লেখক এবং দাম সম্পর্কে অনলাইনে সহজেই তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন বলে জানিয়েছেন তথ্যকেন্দ্রের কর্মকর্তা রাজীব কুমার সাহা।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
অনলাইন বইয়ের তালিকা হাল-নাগাদ নয়
ওয়েবসাইটে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত বইয়ের তালিকায় দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধ, ফোকলোর, প্রাচীন ও মধ্যযুগের সাহিত্য, প্রাণিবিদ্যা, আইন শিক্ষা, সাংবাদিকতা ইত্যাদি বিষয়ে আলাদা শাখায় বইয়ের তালিকা থাকলেও ২৬ মে, ২০২১-এর পর থেকে সেটি আর হাল-নাগাদ করা হয়নি।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
বইমেলার পৃথক ওয়েবসাইট
প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসে অমর একুশে বইমেলাকে সামনে রেখে বাংলা একাডেমি একটি ওয়েবসাইট (ba21bookfair.com) চালু করেছে। এখানে বইমেলা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য প্রকাশ ও আর্কাইভ করা হচ্ছে। এই ওয়েবসাইটে ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের তালিকা, মেলার অনুষ্ঠানসূচি, ঘোষণা ইত্যাদি সন্নিবেশিত হয়েছে।
ছবি: www.ba21bookfair.com/Bangla Academy
‘আমাদের আধুনিকীকরণের কাজ এগিয়ে চলেছে’
বাংলা একাডেমির বিক্রয়, বিপণন ও পুনর্মুদ্রণ বিভাগের পরিচালক ডঃ জালাল আহমেদ বলেন, “বাংলা একাডেমি ডিজিটালাইজেশনের কাজ আমরা অনেকদিন ধরেই করছি। তবে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে এমনটা বলা যাবে না। অনলাইনে আমরা বই বিক্রির উদ্যোগ গ্রহণ করেছি, আমাদের লাইব্রেরি ডিজিটালকরণের কাজ এগিয়ে চলেছে। সাধারণ মানুষ ইতিমধ্যে এর সুফল ভোগ করছে। আশা করা যায়, খুব শীঘ্রই বাকি কাজগুলোও আমরা শেষ করতে পারবো।“
ছবি: Mortuza Rashed/DW
অনলাইন অভিধান নেই
১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলা একাডেমির বেশ কয়েকটি অভিধান বই আকারে থাকলেও এর কোনো অনলাইন সংস্করণ নেই। বাংলা একাডেমির সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান, বাংলা উচ্চারণ অভিধান, বাংলা-ইংরেজি, ইংরেজি-বাংলা অভিধানগুলোর ব্যাপক চাহিদা থাকলেও এর অনলাইন সংস্করণ এখনো ছাড়া হয়নি৷ তবে বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনাধীন আছে বলে জানান বাংলা একাডেমির একাধিক কর্মকর্তা।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
বাংলা একাডেমির নিজস্ব ওয়েবসাইট
বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত বাংলা একাডেমির রয়েছে একটি নিজস্ব ওয়েবসাইট (banglaacademy.gov.bd)৷ ওয়েবসাইটটিতে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও ফেলোশিপ, অফিস আদেশ ও বিজ্ঞপ্তি, কর্মকর্তাদের তালিকা ও ফোন নম্বর, প্রকাশনা, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ক বইয়ের পিডিএফ সংস্করণ ইত্যাদি সন্নিবেশিত আছে। এছাড়া অমর একুশে বইমেলার হালনাগাদ তথ্যও এখানে পাওয়া যাবে।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘অনলাইনে তথ্য থাকলে এতবার আসতে হতো না’
উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শোয়াইব আহমেদ জানান, তিনি বইমেলায় ৪ বছর ধরে আসছেন। বইমেলা কতটুকু ডিজিটাল- জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিবারই তিনি ৮-১০টি বই কিনেন, কিন্তু তথ্যের অভাবে একদিনে সব বই কিনতে পারেন না। এখন মানুষের হাতে হাতে ইন্টারনেট সুবিধা রয়েছে। সেক্ষেত্রে অনলাইনে যদি বইয়ের হাল-নাগাদ তথ্য দেওয়া থাকতো, তাহলে জ্যাম ঠেলে দূর থেকে বারবার এসে বই কিনতে হতো না।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
বইমেলায় ডিজিটাল কেনাকাটার সুবিধা
বইমেলা ২০২২-এ অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা সংস্থা বাংলা প্রকাশ-এর বিক্রয় প্রতিনিধি সাদাত সিফাত বলেন, ‘‘গত ৩-৪ বছর যাবত আমাদের ক্রেতারা ডিজিটাল পেমেন্টের মাধ্যমে বই কিনতে পারছেন। এখন যেহেতু মেলায় দর্শনার্থীদের প্রায় সবারই স্মার্ট ফোন আছে, তাই দেখা যায় বই কিনতে এসে টাকার সংকটে কাউকে পড়তে হয় না। এটি আমাদের ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়পক্ষের জন্যই সুবিধাজনক।’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘অনলাইন-অফলাইন দুটোরই দরকার আছে’
অমর একুশে বইমেলা ২০২২ এর মেলায় অংশ নেওয়া সজিব বুক কর্ণারের স্বত্বাধিকারী আহমেদ সোবহান বলেন, “বইমেলার বইসহ সব তথ্য ইন্টারনেটে পাওয়া গেলে অবশ্যই ভালো৷ তবে বইয়ের সাথে যেহেতু মানুষের সম্পর্কটা আত্মার, তাই সশরীরে এসে বই ঘেঁটে দেখার মধ্যে একটা আলাদা আনন্দ আছে বলে আমি মনে করি। বইমেলার স্টলে আসা, ঘোরাঘুরি, দোকানে ভিড়, আড্ডা এই বিষয়গুলো যথেষ্ট উপভোগ করার মতো বলেই বইমেলা প্রাণের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
অনলাইন টিকার সনদ
পাঞ্জেরি পাবলিকেশনের বিক্রয় প্রতিনিধি তানজিল আল-দ্বীন বলেন, ‘‘আমরা যারা স্টলে আছি, তাদের সবার কোভিড টিকা সনদের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আমরা সবাই আমাদের সনদের একটি কপি অফিস কর্তৃপক্ষকে জমা দিয়েছি, পাশাপাশি অনলাইন একটি কপিও আমরা সাথে রেখেছি যেন প্রশাসন চাইলে সাথে সাথে দেখাতে পারি।’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
11 ছবি1 | 11
আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলছি৷ সেখানে এত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় কেন ডিজিটাইজেশনের বাইরে থেকে গেল?
এর অনেকগুলো কারণ আছে৷ ডিজিটাইজেশন বলতে আমরা বুঝি টেলিফোনে কথা বলা, বাইরের সঙ্গে যোগাযোগ করা, ফেসবুকে লেখা এসব৷ পৃথিবীর বাইরের সঙ্গে যে যোগাযোগ সেটা তো ইংরেজিতে করলেই হয়৷ বাংলাদেশে এটা করতে হলে যে মনোযোগটা দরকার সেটা আমাদের সব মহলেই একটু কম আছে বলে আমার মনে হয়৷ এটা বাড়াতে হবে৷ পাশাপাশি অনুশীলনটাও বাড়াতে হবে৷ তার সঙ্গে বাংলা বানানকে নতুন যুগের উপযোগী করে আবার সংস্কার করার দিন আসছে৷ এর আগেও বারবার সংস্কার হয়েছে৷ এখন ডিজিটাল যুগে সহজে যাতে এটাকে ধারণ করা যায় সেই কাজটি করার সময় এসেছে৷
মাঝে মধ্যেই ডিকশনারিতে পরিবর্তন আসে, কিন্তু দেশের বাইরে থাকা বিপুল সংখ্যক বাংলা ভাষাভাষী মানুষ এটা জানতে পারেন না৷ তাদের পক্ষে সব সময় এটা কেনাও সম্ভব হয় না৷ ফলে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বিকৃত শব্দ চলে যাচ্ছে না?
আমি মনে করি, শব্দ কখনই বিকৃত হয় না, ভুল শব্দ হয়৷ বিকৃত হলেই এটা ভুল হয়ে যাবে? শব্দ বানান যদি আমি ‘স’ দিয়ে লিখি এটা ভুল হবে৷ এই ভুলটা ব্যক্তি চেতনার উপর নির্ভর করে৷ কে কতটা মনোযোগী সেটার উপর নির্ভর করে৷ আরেকটা বিষয় আমি দেখেছি, ফেসবুক যারা ব্যবহার করেন তারা মুখের ভাষা ব্যবহার করেন৷ অথবা ব্যকরণ অনুযায়ী একটা গ্রামার যেভাবে লিখতে হয়, তারা সেভাবে লেখেন না৷ তারা একটু মনোযোগী হলেই শুদ্ধ করে লিখতে পারেন৷ দেশের বাইরে যারা আছেন তারা কিন্তু অনলাইনে বাংলা একাডেমির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন৷ এখন অনলাইনে যে ডিকশনারিটা আছে সেটা ফলো করলেও ভুল হওয়ার কথা না৷ যেমন ধরেন এখন ‘বাড়ি’ বানান এটা, কিন্তু কেউ যদি ‘বাড়ী’ বানান এটা লেখে সেটাও ভুল না৷ এটা হল আগের প্রচলন, পরের প্রচলন৷ এটা বলা যেতে পারে প্রমিত বাংলা বানান না৷ ফলে শুদ্ধ একটা ব্যাপার, প্রমিত একটা ব্যাপার আর না জেনে লেখা আরেকটা ব্যাপার৷ আমি মনে করি, আমাদের যে বিশাল ডিকশনারি এটা অনলাইনে দিলে জটিলতা বাড়বে৷ বরং মুদ্রিত ডিকশনারি সঙ্গে রাখা দরকার৷ লন্ডন, জার্মানি, নিউইয়র্ক যেখানেই বলেন সেখানে বাংলা ডিকশনারি পাওয়া যায়৷ ফলে এটা সংগ্রহ করা খুব কঠিন কাজ না৷ হয়ত অনলাইনে আরো বিশুদ্ধভাবে করা যায়৷ সেটা এখন সময়ের ব্যাপার৷
সবাইকে বাংলা একাডেমির অভিধান অনুযায়ী বাংলা শব্দ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে কি উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে না?
সেটা তো আমরা বলেছি, অভিধান অনুযায়ী ভাষা ব্যবহার করতে গেলে দু'টি কাজ করতে হবে, একটা অর্থ জানা এবং আরেকটা হল বানানটা ঠিক রাখা৷ বানান ঠিক রাখা আর বানান প্রমিত রাখা কিন্তু এক কথা নয়৷ প্রথম যে ডিকশনারিটা ছিল এখন কিন্তু সেটার বানান অনেক পরিবর্তিত হয়েছে৷ সর্বশেষ যে অভিধানটা এসেছে এটা কিন্তু সব বানানই আগের বানান থেকে আলাদা৷ আমাদের উচিত হবে বাংলা একাডেমির অভিধান ফলো করা৷ কেউ যদি প্রমিত বানান না লিখে আগের কোন বানান লেখে এটাকে ভুল বলা যাবে না৷ এটা গ্রহণ করতেও কোন অসুবিধা নেই৷ সর্বশেষ বানান গ্রহণ করতে একটু সময়ের দরকার হয়৷
ভাষা নিয়ে সাত মজার তথ্য
ইউনেস্কোর হিসেবে পৃথিবীর মানুষ প্রায় ছয় হাজার ভাষায় কথা বলে৷ এর মধ্যে ৯০ শতাংশ ভাষায় কথা বলা মোট মানুষের সংখ্যা এক লাখেরও কম৷
মোট ভাষা
ইউনেস্কো বলছে, পৃথিবীর মানুষ প্রায় ছয় হাজার ভাষায় কথা বলে৷ এর মধ্যে কমপক্ষে ৪৩ শতাংশ ভাষা বিলুপ্তির আশঙ্কায় রয়েছে৷ আরেক হিসেব বলছে, ছয় হাজার ভাষার মধ্যে ৯০ শতাংশ ভাষায় কথা বলা মোট মানুষের সংখ্যা এক লাখেরও কম হতে পারে৷ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এসআইএল ইন্টারন্যাশনালের প্রকাশনা ‘এথনোলোগ’-এর হিসেবে, বিশ্বে বর্তমানে ভাষার সংখ্যা ৭,১৩৯৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Meissner
সবচেয়ে বেশি ভাষার দেশ
পাপুয়া নিউ গিনির জনসংখ্যা প্রায় আশি লাখ৷ এথনোলোগের হিসেবে, সে দেশের মানুষ ৮৪০ ভাষায় কথা বলে! তবে অফিসিয়াল ভাষা তিনটি- ইংরেজি, টক পিসিন ও হিরি মটু৷ এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইন্দোনেশিয়ায় ভাষার সংখ্যা ৭১২৷ এরপর ক্রমান্বয়ে আছে নাইজেরিয়া (৫২২), ভারত (৪৫৪) ও যুক্তরাষ্ট্র (৩২৬)৷
ছবি: picture- alliance/AP Photo/UN/S. Aupong
মহাকাশে ঘুরছে বাংলা
সৌরজগৎ নিয়ে গবেষণা করতে ১৯৭৭ সালে নাসা ভয়েজার ১ ও ২ মহাকাশযান প্রেরণ করে৷ প্রতিটিতে একটি করে সোনালি ডিস্ক রয়েছে৷ এতে পৃথিবীর বিভিন্ন শব্দ ছাড়াও আছে ৫৫ ভাষায় বলা শুভেচ্ছা বার্তা৷ এরমধ্যে বাংলাও আছে৷ সুব্রত মুখার্জি বলছেন, ‘‘নমস্কার, বিশ্বের শান্তি হোক৷’’ মহাকাশযান দুটি এখনও মহাকাশে সক্রিয় আছে৷
ছবি: picture alliance/Jet Propulsion Lab via AP/dpa
ইংরেজি ভাষায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত বর্ণ
২০১৮ সালে রিডার্স ডাইজেস্টের এক প্রতিবেদন জানায়, ‘কনসাইস অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি’তে থাকা প্রায় ২৪ হাজার শব্দে যত বর্ণ ব্যবহৃত হয়েছে তার মধ্যে ‘ই’ বর্ণের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, প্রায় ১১ শতাংশ৷ এরপরেই আছে ‘এ’৷ ‘ই’ এর চেয়ে প্রায় ছয় হাজার শব্দে পিছিয়ে আছে ‘এ’ বর্ণ৷ নরওয়েজিয়ান, ফিনিশ, ফ্রেঞ্চ ও ইটালিয়ান ভাষায়ও ‘ই’ এর অনেক ব্যবহার আছে৷
সবচেয়ে নতুন ভাষা লাইট ওয়ার্লপিরি
অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চলে ওয়ার্লপিরি আদিবাসী গোষ্ঠীর বাস৷ তারা ‘ওয়ার্লপিরি’ ভাষায় কথা বলে৷ তাদের সংখ্যা ৩-৪ হাজার৷ ৭০/৮০-র দশকে ওয়ার্লপিরি বাবা-মা সন্তানদের সঙ্গে কথা বলার সময় ইংরেজি ও ‘ক্রিয়ল’ ভাষার শব্দ ব্যবহার করতেন৷ এই তিন ভাষা শোনা বাচ্চারা নিজেদের মধ্যে কথা বলার সময় আলাদা এক ভাষার জন্ম হয়, যা ‘লাইট ওয়ার্লপিরি’ নাম পেয়েছে৷ ঐ বাচ্চারা এতদিনে বড় হয়েছে৷ এখন তাদের সন্তানরাও এই ভাষা ব্যবহার করছে৷
জার্মানির ‘লাইবনিৎস ইনস্টিটিউট ফর দ্য জার্মান ল্যাঙ্গুয়েজ’ জানিয়েছে, ২০২০ সালে প্রায় ১,২০০ নতুন জার্মান শব্দ তৈরি হয়েছে৷ সাধারণত গড়ে প্রতিবছর প্রায় ২০০ নতুন জার্মান শব্দ তৈরি হয়৷ কিন্তু করোনার কারণে গতবছর রেকর্ড সংখ্যক শব্দ পাওয়া গেছে৷ যেমন করোনাম্যুডে (করোনায় ক্লান্ত), করোনাফ্রিজুয়া (করোনা হেয়ারস্টাইল), ইম্ফনাইড (টিকা পাওয়া ব্যক্তিদের প্রতি ঈর্ষা) ইত্যাদি৷
ছবি: Jürgen Fromme/firo/picture alliance
বানানো ভাষা
গেম অফ থ্রোনসের যাযাবর গোষ্ঠী ডোথরাকির সদস্যরা ডোথরাকি ভাষায় কথা বলেন৷ এই টিভি সিরিজের জন্য ডোথরাকি ভাষাটি তৈরি করেন ল্যাঙ্গুয়েজ ক্রিয়েটর ডেভিড পিটারসন৷ এমন প্রায় দুশোর মতো ভাষার সন্ধান পাওয়া যায় যেগুলো বিভিন্ন বই, ফিল্ম ও টিভি সিরিজের প্রয়োজনে বানানো হয়েছে৷