1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লেখিকাদের সংগঠন ‘সই'

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা২৯ নভেম্বর ২০১৩

ভারতে বাংলা ভাষার লেখিকাদের সংগঠন ‘সই' ১৩ বছর পূর্ণ করল৷ ১৪ তম বছরে পা দেওয়ার উদযাপন সইয়ের সদস্যরা করলেন পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় আইসিসিআর সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সত্যজিৎ রায় প্রেক্ষাগৃহে৷

ছবি: DW/S. Bandopadhyay

সই মানে স্বাক্ষর৷ নিজের নাম সই করতে পারাটাকে স্বাক্ষরতার চিহ্ন ধরা হয়৷ আবার সই মানে বন্ধু৷ এক সময় মেয়েরা পরস্পরের সঙ্গে সই পাতাতো, বন্ধুত্বকে চিরস্থায়ী করার বাসনায়৷ আর সই মানে সহ্য করাও হয়৷ মুখ বুজে সহ্য করা নয়, বরং জানান দেওয়া যে, সহ্য করছি বটে, কিন্তু বেশিদিন নয়৷ বাংলা ভাষায় যাঁরা লেখালেখি করেন, তাঁদের নিজস্ব একটি জোটের নামকরণ করতে গিয়ে এই কথাগুলোই তখন প্রথম মনে এসেছিল৷ মহিলাদের লেখালেখি করার ক্ষেত্রে সাংসারিক, সামাজিক, পেশাগত নানা অসুবিধার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়৷ সেই অভিজ্ঞতাগুলো ভাগ করে নেওয়া, সম্ভব হলে তার প্রতিকারে সচেষ্ট হওয়ার তাগিদ থেকেই সই৷

উদ্যোগটা ছিল মূলত লেখিকা-অধ্যাপিকা নবনীতা দেবসেন-এর৷ প্রয়াত কবি মল্লিকা সেনগুপ্ত এবং কবি মন্দাক্রান্তা সেনের সঙ্গে কলকাতার বাইরে এক অনুষ্ঠান করতে গিয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলতে প্রথম এমন একটি সংগঠনের কথা মাথায় আসে৷ মল্লিকা বা মন্দাক্রান্তা পরবর্তীতে সইয়ের সঙ্গে যুক্ত না হলেও নবনীতা পরিকল্পনাটাকে বাস্তবায়িত করেন৷ কবি বুদ্ধদেব বসুর স্ত্রী, লেখিকা প্রতিভা বসু ছিলেন প্রথম সই৷ তার পরের বছরগুলোয় যাত্রাপথ সবসময় সহজ না থাকলেও সইরা হাল ছাড়েননি৷ এভাবেই পরের ১৩ বছর হাত ধরাধরি করে হাঁটতে হাঁটতে কেটেছে৷

১৪ তম বছরে পা দেওয়ার উদযাপন অনুষ্ঠান হয় ২৪ নভেম্বর৷ উপস্থিত ছিলেন প্রবীণ লেখিকা-সমাজকর্মী মহাশ্বেতা দেবী, যিনি বর্তমানে সই এর উপদেষ্টা৷ এবছর থেকেই চালু করা হলো সই সম্মান৷ এক লক্ষ টাকা অর্থমূল্যের এই সম্মান এবছর ভাগ করে দেওয়া হলো দুই বর্ষীয়ান লেখিকাকে৷ একজন মারাঠি ভাষার লেখিকা ঊর্মিলা পাওয়ারকে, যিনি মূলত দলিত মানুষের জীবন নিয়ে লেখেন৷ অন্যজন ইংরেজি ভাষার লেখিকা শশী দেশপান্ডে৷ এঁদের হাতে মানপত্র তুলে দিলেন মহাশ্বেতা দেবী৷

উদ্যোগটা ছিল মূলত লেখিকা-অধ্যাপিকা নবনীতা দেবসেনেরছবি: DW/S. Bandopadhyay

মোট ১১ জন ভারতীয় লেখিকাকে এবার আমন্ত্রণ জানানো হয় সইয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে৷ তিনদিন ধরে এঁদের নিয়ে হয়েছে নানা বিষয়ের আলোচনাচক্র৷ ‘আমি কেন লিখি'র মতো অন্তর্গত বিষয় থেকে শুরু করে ‘ভয়ের মধ্যে দিয়ে বড় হওয়া' অথবা ‘একলা মায়ের সমস্যা'র মতো স্পর্শকাতর কিন্তু অত্যন্ত জরুরি বিষয় নিয়ে খোলামনে কথাবার্তা হয়েছে৷ আলোচনা শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে দর্শকরাও নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চেয়েছেন সবার সঙ্গে৷ বসেছে কবিতা, গল্প ও নাটক পাঠের আসর৷ তবে সব কিছুকে টেক্কা দিয়েছে শেষদিনে আয়োজিত এক বিতর্কসভার বিষয় – ‘সই-এর কোনও প্রয়োজন নেই!'

২৪ তারিখ অনুষ্ঠানের উদ্বোধনের দিনই আইসিসিআর-এর যামিনী রায় প্রদর্শনশালায় মহিলাদের লেখা, সম্পাদনা করা এবং মহিলা প্রকাশকদের বইয়ের এক প্রদর্শনী ‘সই মেলা – বই মেলা'র সূচনা করেন অমলা শঙ্কর৷ এবং শুধু বই নয়, মহিলা শিল্পীদের আঁকা ছবি, ভাস্কর্য ও আলোকচিত্রেরও প্রদর্শনী ছিল এর সঙ্গে৷ এক কথায়, সৃজনশীল সব কিছু, যাকে নারীর স্পর্শ আরও মহত্তর করে তুলেছে, তারই উদযাপন হয়েছে এই প্রদর্শনীতে৷ প্রকাশিত হয়েছে সইয়ের নিজস্ব পত্রিকা ‘সই সাবুদ'-এর বিশেষ সংখ্যা৷

লেখিকারা ছাড়াও তিন দিনের উৎসবে এসেছেন, অংশ নিয়েছেন শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত অনেক বিশিষ্টজন৷ আলোচনাচক্রে জোরদার বিতর্কও কম হয়নি৷ এবারের সই সম্মানপ্রাপ্ত মারাঠি লেখিকা ঊর্মিলা পাওয়ার যেমন বললেন, লেখালেখির সঙ্গে যাঁরা যুক্ত রয়েছেন, তাঁদের সবারই সমাজের দলিত, অনুন্নত, অনগ্রসর সমাজের কথা আরও বেশি করে লেখা উচিত৷ তাঁর বক্তব্যের জোরদার বিরোধিতা করে সই সভাপতি নবনীতা দেবসেন বলেন, লেখকের কাজ লেখা, তাঁরা সমাজ আন্দোলনের কর্মী নন৷ কাজেই কোনও নির্দিষ্ট একটি আদর্শ তাঁদের লেখার পথনির্দেশ করবে, এমনটা না হওয়াই বাঞ্ছনীয়৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ