1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলিশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে টিকে থাকবে বাংলা ভাষা?

২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১

পৃথিবীর সব ভাষাই সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়৷ ভাষাবিদরা তাই একে তুলনা করেন বয়ে চলা নদীর চরিত্রের সঙ্গে৷ কিন্তু প্রশ্ন হল, বাংলা ভাষা কি আদৌ টিকে থাকতে পারবে ইংরেজির সঙ্গে যুদ্ধ করে? আর সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রেরই বা কী করণীয়?

পৃথিবীর সব ভাষাই সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়৷ ভাষাবিদরা তাই একে তুলনা করেন বয়ে চলা নদীর চরিত্রের সঙ্গে৷ কিন্তু প্রশ্ন হল, বাংলা ভাষা কি আদৌ টিকে থাকতে পারবে ইংরেজির সঙ্গে যুদ্ধ করে? আর সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রেরই বা কী করণীয়?
ফাইল ছবি৷ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman

বাংলা ভাষার জন্মকথা নিয়ে হুমায়ুন আজাদ তার বইয়ের নাম দিয়েছিলেন, ‘কতো নদী সরোবর’৷ শুরুটা করা যাক সেখান থেকে কিছুটা উদ্ধৃতি টেনে৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘এখন আমরা যে-বাঙলা ভাষা বলি এক হাজার বছর আগে তা ঠিক এমন ছিলো না৷ এক হাজার বছর পরও ঠিক এমন থাকবে না৷ বাঙলা ভাষার আগেও এ-দেশে ভাষা ছিলো৷ সে-ভাষায় এ-দেশের মানুষ কথা বলতো, গান গাইতো, কবিতা বানাতো৷ ভাষার ধর্মই বদলে যাওয়া৷ মানুষের মুখেমুখে বদলে ভাষা ধ্বনি৷ রূপ বদলে যায় শব্দের, বদল ঘটে অর্থের৷ অনেক দিন কেটে গেলে মনে হয় ভাষাটি একটি নতুন ভাষা হয়ে উঠেছে৷’’

আমরা যে প্রমিত বা মান বাংলার কথা বলি সেটিও যে গত এক শতকে বিস্তর বদলেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ বদলের এই পরিক্রমা চলছে এখনও৷ এ নিয়ে অনেকের আক্ষেপ আছে, অনেকে আবার বিষয়টিকে দেখেন ভাষা গঠনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবেই৷ কিন্তু স্বাভাবিক বিষয়টিও আসলে একেবারে স্বাভাবিক বা সরল নয়৷ কেননা এর পেছনের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক প্রভাব বা চালিকা শক্তিকেও অস্বীকার করা চলে না৷

বিশেষ করে গত দুই দশকের কথাই চিন্তা করা যাক৷ তরুণ প্রজন্ম আড্ডায়, যোগাযোগে যেভাবে কথা বলে সেটি পূর্ব প্রজন্মের কাছে অচেনা ঠেকতে পারে৷ এর শুরুটা বা প্রসারটা মোটামুটি দুই দশকের৷ গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত বিজ্ঞাপন, নাটকে ধীরে ধীরে শুরু হয় নতুন শব্দের সংযোজন৷ শুধু শব্দ সংযোজনই নয় আমাদের চেনাজানা শব্দের উচ্চারণও পালটে যায়৷ একটি মোবাইল ফোন কোম্পানির ডি-জুস নামের প্যাকেজের কথা নিশ্চয়ই সবার মনে আছে৷ তাদের বিজ্ঞাপনে কিছু শব্দের ব্যবহার তখন ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা জন্ম দিয়েছিল৷ এফএম রেডিওর জোয়ারে ‘আরজে' বা কথাবন্ধুদের মুখে আমরা আরেক ধরনের ‘বাংলার' প্রচলন ঘটল৷ নতুন প্রজন্মের নাট্যনির্মাতারাও ভাষার ব্যবহারে ‘বৈপ্লবিক' পরিবর্তন ঘটিয়ে চলছেন৷ ইন্টারনেটের প্রসারে ব্লগ থেকে শুরু করে সামাজিক মাধ্যমেও প্রতিনিয়ত শব্দের উত্থান বা ভাষার ভাংচুর চলছে৷

এই যে পরিবর্তনটা হচ্ছে তার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একটি বিষয়ে মিল আছে, তা হলো ব্যাপক হারে ইংরেজি শব্দের আত্তীকরণ কিংবা কোন কোন ক্ষেত্রে বাংলাকেই ইংরেজির মতো করে উচ্চারণ৷ এর পেছনে আমাদের অর্থনীতির পরিবর্তন বা নির্ভরশীলতাও হয়ত একটি কারণ৷ এক সময়ের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি এখন সেবা ও শিল্পখাত নির্ভর৷ সেই খাতে কর্পোরেটদের আধিপত্য বেড়েছে৷ মোবাইল কোম্পানি, ব্যাংক, বীমা থেকে শুরু করে বহুজাতিক ভোগ্য পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের প্রসার ঘটেছে৷ নতুন ভোক্তা শ্রেণি তৈরিতে তাদের আলাদা এক সংস্কৃতি নির্মাণের প্রয়োজন হল৷ দুর্ভাগ্যের বিষয় সেই সংস্কৃতিতে বাংলা বা বাঙালি নয় প্রাধান্য পেয়েছে ইংরেজি৷ চাকরির সাক্ষাৎকার থেকে শুরু করে এই জগতের প্রতিটি পরতে ইংরেজি না হলে চলে না, এমনকি যোগাযোগে অর্থবহ কোন প্রয়োজন ছাড়াই৷ বাংলাদেশের গত কয়েক বছর ধরেই সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে প্রচুর সভা-সেমিনার হচ্ছে৷ কোন বিদেশির উপস্থিতি না থাকলেও সেখানে ইংরেজির প্রতি সবারই দুর্বলতা লক্ষ্য করার মতো৷

অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, ইংরেজি না বললে ঠিক মান থাকে না, সমাজের একটি কাঙ্খিত শ্রেণিতে উত্তরণ ঘটে না৷ এই পরিস্থিতি আমাদের মধ্যে এক ধরনের হীনম্মন্যতার জন্মও দিয়েছে৷ মধ্যবিত্ত শ্রেণি যাদের হাতে মোটামুটি অর্থ রয়েছে তাদের খুব কম পরিবারই এখন নিজের সন্তানকে বাংলা মাধ্যমে পড়াতে চান৷ তাদের চাহিদা পূরণে মহানগরী ছাড়িয়ে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল এখন এমনকি জেলা বা থানা পর্যায়েও চোখে পড়ে৷

ফয়সাল শোভন, ডয়চে ভেলেছবি: Masum Billah

এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন জাগাটা স্বাভাবিক যে কয়েক প্রজন্ম পরে বাংলা ভাষা কি আদৌ টিকে থাকতে পারবে ইংরেজির সঙ্গে যুদ্ধ করে? আর সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রেরই বা কী করণীয়? সংবিধানের দিকে লক্ষ্য করা যাক৷ ৩ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা৷’’ অনুচ্ছেদ ২৩ বলছে,  ‘‘রাষ্ট্র জনগণের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার রক্ষণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন এবং জাতীয় ভাষা, সাহিত্য ও শিল্পকলাসমূহের এমন পরিপোষণ ও উন্নয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন, যাহাতে সর্বস্তরের জনগণ জাতীয় সংস্কৃতির সমৃদ্ধিতে অবদান রাখিবার ও অংশগ্রহণ করিবার সুযোগ লাভ করিতে পারেন৷’’ কিন্তু রাষ্ট্র কি সত্যিই সেই দায়িত্ব পালন করছে?

শেষটা করা যাক সবার জন্য শিক্ষা নিয়ে সরকারের সাম্প্রতিক একটি বিজ্ঞাপন দিয়ে৷ সেখানে দেখানো হয়েছে একজন বিদেশি একটি গ্রামে বেড়াতে এসেছেন৷ সেই গ্রামে শিশু থেকে শুরু করে প্রত্যেকেই চোস্ত ইংরেজিতে তার সঙ্গে কথা বলেন৷ বিষ্মিত সেই বিদেশিকে এক গৃহিনী শিক্ষা প্রসারে সরকারের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘‘রাইট নাও উই আর এডুকেটেড অ্যান্ড স্পিক ইংলিশ, আন্ডারস্ট্যান্ড!’’ (এখন আমরা শিক্ষিত এবং ইংরেজি বলতে জানি, বুঝেছ!)৷ অর্থাৎ আমাদের কাছে শিক্ষিত হওয়া মানেই ইংরেজি জানা৷ বাংলাদেশ টেলিভিশন তাদের ফেসবুক পেইজে তথ্য মন্ত্রণালয়ের এই ভিডিওটি প্রকাশ করেছে ভাষার মাসেই৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ