এখনো হার মানতে রাজি নন ডনাল্ড ট্রাম্প। রোববার একটি টুইটে বাইডেনকে জয়ী বলেও পরের টুইটে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি হার মানছেন না।
বিজ্ঞাপন
তিনি ভাঙলেন কিন্তু মচকালেন না। নির্বাচনে জো বাইডেন জিতেছেন, এ কথা মানলেন, কিন্তু নিজের হার স্বীকার করলেন না। বরং ফের প্রশ্ন তুললেন নির্বাচনের পদ্ধতি এবং কারচুপি নিয়ে। ডনাল্ড ট্রাম্প জানিয়ে দিলেন, এত সহজে তিনি ছাড়ছেন না। উচ্চ আদালতে লড়াই করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
মার্কিন সময়ে রোববার সকালে একটি টুইট করেন ট্রাম্প। যেখানে এই প্রথম জো বাইডেন জিতেছেন বলে মেনে নেন ট্রাম্প। ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে রেকর্ড ভোট পেয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কমলা হ্যারিস। ট্রাম্প পেয়েছেন ২৩২ টি ইলেকটোরাল কলেজের ভোট। বাইডেন পেয়েছেন ৩০৬টি। ২০১৬ সালে ঠিক এই সংখ্যক ভোটেই জয়ী হয়েছিলেন ট্রাম্প। নিজের জয়কে 'বিশাল জয়' বলে হোয়াইট হাউসে প্রথম বক্তৃতা করেছিলেন তিনি। কিন্তু বাইডেনের জয় তিনি মানতে পারছেন না।
ট্রাম্পের বক্তব্য, ভোটে কারচুপি হয়েছে। রিগিং হয়েছে। পোস্টাল ব্যালট নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। এ হেন অভিযোগ নিয়ে বেশ কয়েকটি রাজ্যের আদালতে গিয়েছিল ট্রাম্প বাহিনী। কিন্তু এখনো পর্যন্ত বিশেষ লাভ হয়নি। প্রায় প্রতিটি আদালতই ট্রাম্পের পারিষদদের বলেছে, যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ তাঁদের কাছে নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও হার স্বীকার করছেন না ট্রাম্প। রোববার বাইডেনকে জয়ী বললেও, পরমুহূর্তে জানিয়ে দিয়েছেন, রিগিং করে জিতেছেন বাইডেন। ফলে তিনি হার মেনে নিচ্ছেন না। এর শেষ দেখে ছাড়বেন।
ট্রাম্পের টুইট নিয়ে অবশ্য টুইটার বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করেছে। স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, টুইটের সত্যতা নিয়ে বিতর্ক আছে।
মার্কিন নির্বাচন: যে বিশ্বনেতারা এখনো বাইডেনকে শুভেচ্ছা জানাননি
ইউরোপ, এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন মিত্রদের অনেকেই দ্রুত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী জো বাইডেনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন৷ তবে, এখনো কিছু রাষ্ট্রনেতা আছেন যারা এই বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন৷
ছবি: Alexei Druzhinin/dpa/picture-alliance
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং
বেইজিং জানিয়েছে যে মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার সব আইনি প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া অবধি কাউকে অভিনন্দন জানাবে না দেশটি৷ চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন এই বিষয়ে বলেন, ‘‘আমরা লক্ষ্য করেছি বাইডেন নির্বাচনে বিজয় ঘোষণা করেছেন৷ আমরা যেটা বুঝতে পারছি তাহচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল দেশটির আইন এবং অন্যান্য প্রক্রিয়া অনুসরণের পর ঘোষণা করা হবে৷’’
ছবি: Ju Peng/Xinhua/picture-alliance
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন
পুটিনের মুখপাত্র দিমিত্রি প্যাস্কভ জানিয়েছেন যে মার্কিন নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট আইনি জটিলতার নিরসন না হওয়া পর্যন্ত বাইডেনের জয় নিয়ে কোন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকবে ক্রিমলিন৷ তিনি বলেন, ‘‘সেখানে নির্দিষ্ট কিছু আইনি প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে যার কথা বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট ইতোমধ্যে জানিয়েছেন৷ ফলে পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন, তাই আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণার আগ অবধি অপেক্ষা করাটা যৌক্তিক মনে করছি আমরা৷’’
ছবি: Alexei Druzhinin/dpa/picture-alliance
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারো
ডানপন্থি এই প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন যে তিনি বিশ্বের প্রথম নেতা হবেন যে ডনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানাবে৷ তবে, বাইডেনের বিষয়ে চুপ রয়েছেন বলসোনারো৷ দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যামিল্টন ম্যুরাও এই বিষয়ে বলেন, ‘‘আমি মনে করি ভোট জালিয়াতির অভিযোগ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন হওয়া অবধি অপেক্ষা করছেন প্রেসিডেন্ট৷’’ ‘‘সময়মত’’ বাইডেনকে অভিনন্দন জানানো হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷
ছবি: Marcos Corrêa/Presidência da República do Brasil
লোপেজ ওব্রাডোর জানিয়েছেন যে মার্কিন নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট আইনি জটিলতার নিরসন না হওয়া অবধি বিজয়ীকে অভিনন্দন না জানাতে তার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে৷ তিনি উল্টো প্রশ্ন করেছেন, ‘‘কীভাবে একজন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ঠিক করবে (মার্কিন নির্বাচনে) কোন প্রার্থী জয়লাভ করেছে?’’ তবে, তিনি তার বক্তব্যে বাইডেনকে ‘‘সম্ভাব্য বিজয়ী’’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন৷
ছবি: Reuters/H. Romero
উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উন
মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে কোন মন্তব্য করেননি কিম৷ উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমও এই বিষয়ে চুপ রয়েছে৷ ২০১৬ সালে ডনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার দু’দিন পর অবধিও চুপ ছিল পিয়ংইয়ং৷ অতীতে অবশ্য বাইডেনকে কিম ‘স্বল্প বুদ্ধির বোকা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন৷ জবাবে বাইডেন তাকে ‘গুণ্ডা’ বলেছিলেন৷
ছবি: Reuters/KCNA
স্লোভেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী জেনেজ জানিয়া
উগ্র ডানপন্থী ও অভিবাসনের বিরোধী হিসেবে পরিচিত স্লোভেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী জেনেজ জানিয়া মার্কিন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর দ্রুতই ডনাল্ড ট্রাম্পকে বিজয়ের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন৷ তবে ভোট গণনা প্রায় শেষ হওয়ার পর যখন বাইডেনকে বিজয়ী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, তখন চুপ হয়ে গেছেন তিনি৷ জানিয়া শুধু এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, ওয়াশিংটনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আশা করছে তার দেশ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Leskovsek
6 ছবি1 | 6
তবে অ্যামেরিকায় অন্য এক সমস্যা ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে। ট্রাম্প হার স্বীকার না করলে একটি সাংবিধানিক সমস্যা তৈরি হতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন। সংবাদমাধ্যম গুলি বাইডেনকে জয়ী ঘোষণা করে দিলেও অ্যামেরিকার জেনারেল সার্ভিসেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিএসএ) বাইডেনকে এখনো জয়ী বলে ঘোষণা করেনি। জানুয়ারি মাসে শপথ গ্রহণ করে হোয়াইট হাউসে যেতে হলে জিএসএ-কে সরকারি ভাবে জয়ী প্রেসিডেন্টের নাম ঘোষণা করতে হবে। এই জিএসএ-কেই আগামী দুই মাস ধরে হোয়াইট হাউসে বাইডেনের জন্য সমস্ত ব্যবস্থা করতে হবে। বাইডেনকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানাতে হবে। জানুয়ারি মাসে নতুন অফিসে বসে প্রেসিডেন্টের যাতে সব কিছু বুঝতে সময় না লাগে। কিন্তু জিএসএ তার কোনো কাজই এখনো পর্যন্ত করছে না। বাইডেন যে নতুন করোনা টাস্ক ফোর্স গঠন করেছেন, সেখানেও জিএসএ কোনো রকম সাহায্য করছে না।
জিএসএ-র প্রধান অফিসার এমিলি মারফি ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ। এর মধ্যে ট্রাম্প এমিলিকে ধন্যবাদ জানিয়ে টুইটও করেছেন। মুশকিল হলো, এমিলি যতদিন বাইডেনকে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট বলে সরকারি ভাবে ঘোষণা না করছেন, তত দিন একপ্রকার অচলাবস্থা তৈরি হয়ে থাকবে। অনেকেই মনে করছেন, এটাই ট্রাম্পের পরিকল্পনা। অচলাবস্থা তৈরি করা। রোববার অনেকেই মনে করেছিলেন, এ বার রণে ভঙ্গ দিলেন ট্রাম্প। হার স্বীকার করার প্রথম পদক্ষেপ নিলেন। কিন্তু ট্রাম্পের দ্বিতীয় টুইট বুঝিয়ে দিয়েছে, এত সহজে জমি ছাড়তে রাজি নন তিনি।