যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় জো বাইডেনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা৷ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ভাইস-প্রেসিডেন্ট হতে যাওয়া কমলা হ্যারিসকেও৷ সাফল্য কামনার পাশাপাশি বাইডেনের সাথে একত্রে কাজ করার প্রত্যাশা তাদের৷
প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচনে জেতায় জো বাইডেনকে দেওয়া অভিনন্দন বার্তায় জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেল বলেন, ‘‘অ্যামেরিকার ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন জো বাইডেন৷ আমি তার সৌভাগ্য ও সাফল্য কামনা করি৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী ভাইস-প্রেসিডেন্ট হতে যাওয়া কমলা হ্যারিসকেও অভিনন্দন জানাই৷’’
বাইডেনের সাথে একত্রে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে ম্যার্কেল আরো বলেন ‘‘বর্তমান সময়ের বড় চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় আমাদের ট্রান্স-আটলান্টিক বন্ধুত্ব গুরুত্বপূর্ণ৷’’
ঐতিহাসিক অর্জন: বরিস জনসন
জো বাইডেনকে অভিনন্দন জানিয়ে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্র হলো আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু৷’’ বাইডেনের সাথে জলবায়ু পরিবর্তন, নিরাপত্তা ও বাণিজ্য সম্প্রারণে একসাথে কাজ করার আগ্রহও প্রকাশ করেন তিনি৷
ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কমলা হ্যারিসের জয়কে তিনি ‘ঐতিহাসিক অর্জন' বলে মন্তব্য করেন৷
বিশ্বমঞ্চে আমাদের বন্ধুত্ব অনন্য: জাস্টিন ট্রুডো
নিজ দেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে ‘অনন্য' উল্লেখ করে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিসকে দেওয়া অভিনন্দন বার্তায় বলেন, ‘‘আমাদের দু'দেশ হলো পরস্পর বন্ধু, সহযোগী ও মিত্র৷ আমাদের এ সম্পর্ক বিশ্বমঞ্চে অনন্য৷ ভবিষ্যতে একসাথে কাজ করার অপেক্ষায় আছি’’
একসাথে অনেক কাজ করার আছে: এমানুয়েল মাক্রোঁ
নির্বাচনে জেতায় জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ৷ এ বিষয়ক এক টু্ইটে তিনি বলেন, ‘‘বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একসাথে অনেক কাজ করতে হবে৷ চলুন আমরা একসাথে কাজ করি৷’’
জো বাইডেনের জীবনের গল্প
২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের জীবনের গল্প দেখুন এই ছবিঘরে৷
ছবি: Kevin Lamarque/Reuters
জন্ম ও পরিবার
১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর স্ক্র্যানটন পেনসিলভ্যানিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন জোসেফ রবিনেট বাইডেন জুনিয়র বা আজকের ‘জো বাইডেন’৷ জীবনের প্রথমভাগ বাইডেন কাটান দাদা-দাদির সাথে৷ পরিবারে আর্থিক অনটন থাকলেও বাইডেন স্কুলজীবনে তুখোড় ফুটবল, বেসবল খেলোয়াড় ছিলেন, যা পরে বিশ্ববিদ্যালয়েও তাঁকে জনপ্রিয় করে তোলে৷ জানা যায়, ছোটবেলায় বাইডেন কথা বলতে গেলে তোতলাতেন, যা কবিতা আবৃত্তি করার মাধ্যমে পরে নিয়ন্ত্রণে আনেন তিনি৷
ছবি: Handout Joseph Biden/AFP
তারুণ্য
প্রথমে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক হবার পর আইনে স্নাতকোত্তর স্তরের পড়াশোনা করতে বাইডেন পাড়ি দেন নিউ ইয়র্কের সাইরাক্যুজ বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ সেখানেই তাঁর পরিচয় নেলিয়া হান্টারের সাথে৷ ১৯৬৬ সালে নেলিয়া ও বাইডেন বিয়ে করেন৷
ছবি: Keystone/dpa/picture-alliance
রাজনীতিতে পদার্পণ
১৯৭২ সালে মাত্র ২৯ বছর বয়েসে ডেলাওয়ারে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান সেনেটর কেলেব বগসের বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে লড়েন বাইডেন৷ অর্থাভাব, রাজনীতির ময়দানে অনভিজ্ঞতা সত্ত্বেও পারিবারিক সহায়তা ও মাঠপর্যায়ে প্রচার চালিয়ে গবসকে পরাজিত করেন বাইডেন৷ সেখান থেকেই ডেমোক্র্যাট হিসাবে তাঁর উত্থানের সূত্রপাত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Keystone
পারিবারিক বিপর্যয়
সেনেটর নির্বাচিত হবার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বাইডেনের জীবনে আসে বিপর্যয়৷ একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় তাঁর স্ত্রী নেলিয়া ও কন্যা নাওমির মৃত্যু হয়৷ মারাত্মকভাবে জখম হন তাঁর দুই পুত্রও৷ এই বিপর্যয়ের কারণে রাজনীতি ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন বাইডেন৷ কিন্তু দলের জোরাজুরিতে হাসপাতালেই সেনেটর পদে শপথগ্রহণ করেন বাইডেন৷ পরে ১৯৭৭ সালে জিল জেকবসকে বিয়ে করেন বাইডেন৷ তাঁদের একটি কন্যা রয়েছে, নাম অ্যাশলি৷
ছবি: Kevin Larkin/AFP/Getty Images
রাজনীতির চেয়ে পরিবারকে প্রাধান্য
বাইডেনের পারিবারিক জীবনে আবার বিপর্যয় আসে ২০১৫ সালে৷ ভাইস-প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ব্রেন টিউমারজনিত জটিলতায় তিনি তাঁর পুত্র জোসেফকে হারান৷ পরের বছর ২০১৬ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসাবে লড়ার পরিকল্পনা থাকলেও পরিবারকে সময় দিতে নির্বাচন থেকে সরে আসেন বাইডেন৷
ছবি: Kevin Lamarque/REUTERS
তবুও উত্তরণ
এর আগে ১৯৮৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রাথমিকভাবে অংশগ্রহণ করলেও প্রাইমারি নির্বাচনের আগেই নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন৷ কিন্তু সেনেটর হিসাবে কাজ করে যান তিনি৷ ২০০৮ সালেও প্রথমে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন তিনি৷ জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রতীক হিসাবে ২০১৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁকে ‘প্রেসিডেনশিয়াল মেডাল অফ ফ্রিডম’ প্রদান করেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Kamm
গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ
রাজনীতির শুরু থেকেই বাইডেন ক্রেতা সুরক্ষা ও পরিবেশবিষয়ক ইস্যু নিয়ে সোচ্চার থেকেছেন৷ ২০১০ সালের ‘পেশেন্ট প্রোটেকশান অ্যান্ড অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার’ আইনের বাস্তবায়নে তাঁর ভূমিকার কথা বারবার আলোচিত হয়েছে৷ শুধু তাই নয়, ১৯৯২ সাল থেকেই আইনি কড়াকড়ি বাড়ানো ও সাজার মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে তাঁর অবস্থান তিনি স্পষ্ট করেছেন, যা অনেক ক্ষেত্রেই তাঁর দলের নীতির সাথে পুরোপুরি খাপ খায়নি৷
ছবি: Jim Watson/AFP/Getty Images
বাইডেনকে ঘিরে বিতর্ক
১৯৮৮ সালের নির্বাচনি প্রচারের সময় বাইডেনের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ লেবার পার্টির নিল কিনকের বক্তব্য চুরির অভিযোগ ওঠে৷ এছাড়া অ্যামেরিকার দক্ষিণাঞ্চলের বর্ণভিত্তিক বিভেদপন্থিদের সাথে সুর মিলিয়ে আদালতের রায়ের বিরোধিতা করে সমালোচিত হন বাইডেন৷ ২০১২ সালেও সমকামী জুটিদের বিয়ের অধিকারের পক্ষে কথা বলে বাইডেন শিরোনামে উঠে আসেন৷
ছবি: Carolyn Kaster/AP/picture alliance
যৌন নির্যাতনের অভিযোগ
২০২০ সালের মার্চ মাসে টারা রিড অভিযোগ আনেন যে ১৯৯৩ সালে জো বাইডেন তাঁকে যৌন নির্যাতন করেছিলেন৷ সেনেটর থাকাকালীন বাইডেনের অফিসে সহযোগী হিসাবে কাজ করতেন রিড৷ ১৯৯৩ সালে বিষয়টি আলোচিত হবার পর নতুন করে এবছর আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রেক্ষিতে সেটি আলোচনায় উঠে আসে৷ এই অভিযোগ বাইডেন উড়িয়ে দিলেও আরো কয়েকজন নারী বাইডেনের বিরুদ্ধে অসঙ্গত আচরণের অভিযোগ এনেছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Locher
বাইডেনের যত নাম
গণমাধ্যমে বাইডেনের নামের সাথে জুড়েছে নানা ধরনের বিশেষণ৷ জীবনের গোড়ার দিকের অর্থনৈতিক বাস্তবতার কারণে কখনো তাঁর নাম হয়েছে ‘মিডল ক্লাস জো’৷ ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের সময় বয়সের কারণে ডনাল্ড ট্রাম্প তাঁকে তাচ্ছিল্য করে বলেন ‘স্লো জো’ ও ‘স্লিপি জো’৷
ছবি: Jim Watson/AFP/Getty Images
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ
২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসাবে অংশগ্রহণ করেন জো বাইডেন৷ তার পক্ষে ব্যাপকভাবে প্রচারে নামেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ টুইটার-ইন্সটাগ্রামে পাশে দাঁড়ান সেলেব্রেটিরাও৷ নির্বাচনে ডনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে বিজয়ী হন তিনি৷ বাইডেনের নির্বাচনসঙ্গী কমলা হ্যারিস দেশের প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত, প্রথম আফ্রিকান-অ্যামেরিকান ও প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়ে ইতিহাস গড়েন৷
ছবি: Carolyn Kaster/AP Photo/picture alliance
11 ছবি1 | 11
ইন্দো-অ্যামেরিকা সম্পর্ক দৃঢ় করার আহ্বান মোদির
জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিসকে নির্বাচনে জয়ের অভিনন্দন জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় তিনি ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন৷
শান্তি প্রতিষ্ঠায় একসাথে কাজ করার আশা ইমরান খানের
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিসকে দেওয়া অভিনন্দন বার্তায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি দমন ও আফগানিস্তানসহ এ অঞ্চলের শান্তি প্রতিষ্ঠায় একসাথে কাজ করার অপেক্ষায় আছেন৷
অভিনন্দন শেখ হাসিনার
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় জো বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে বিজয়ী কমলা হ্যারিসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷
তাছাড়াও জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইউশিহিদে সুগা, ইটালির প্রধানমন্ত্রী জুসেপে কন্টে, ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন, ন্যাটোর প্রধান ইয়েনস স্টল্টেনব্যার্গের জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ৷