ইউক্রেনকে সাহায্য করা নিয়ে বাইডেনের সঙ্গে রিপাবলিকানদের সংঘাত চলছে। হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। সেখানে তারা ইউক্রেন ও ইসরায়েলকে দেয়ার জন্য বাইডেনের ১০ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের প্যাকেজ এখনো অনুমোদন করেনি। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, কংগ্রেসে এই প্যাকেজ অনুমোদিত না হলে, অ্যামেরিকা আর ইউক্রেনকে কোনো সাহায্য করতে পারবে না। এর ফলে রাশিয়ার সুবিধা হবে।
এই পরিস্থিতিতে জেলেনস্কি অ্য়ামেরিকায় আসছেন এবং বাইডেনের সঙ্গে তিনি ইউক্রেনকে সামরিক ও অর্থসাহায্যের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন।
জেলেনস্কি প্রথমে আর্জেন্টিনা গেছেন, সেখানে নতুন প্রেসিডেন্টের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। তারপর তিনি অ্যামেরিকা যাবেন। সূত্র উদ্ধৃত করে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, মঙ্গলবার জেলেনস্কি সেনেটরদের কাছে ভাষণ দেবেন।
ইউক্রেনে আতঙ্কের নগরীতে সুরের মূর্ছনা
যুদ্ধ চলছে একদিকে, অন্যদিকে রাতের আঁধারে মোমবাতি জ্বালিয়েও ধ্রুপদী সংগীতের সুরে বাঁচার আনন্দ নিচ্ছেন অসংখ্য মানুষ৷ লভিভে প্রায় প্রতিদিনের এমন এক আয়োজনের কথা জানুন ছবিঘরে...
ছবি: Alina Smutko/REUTERS
আকাশে যুদ্ধবিমান, নীচে কনসার্ট
ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লভিভের আকাশে যখন যুদ্ধবিমান আতঙ্ক ছড়ায়, তখনো অর্গান হলে থাকে সুরপাগল মানুষদের ভিড়৷ মগ্ন হয়ে লুহানস্ক ফিলহার্মোনিক অর্কেস্ট্রার পারফর্ম্যান্স উপভোগ করেন তারা৷ অনেক সময় মোমের আলোয় চলে কনসার্ট৷ শ্রোতারা মোমের আলোয় এতটাই অভ্যস্ত যে মাঝে মাঝে যুদ্ধবিমান ফিরে গেলে, কিংবা বিদ্যুৎ ফিরে এলেও আলো জ্বালাতে চান না তারা৷
ছবি: Alina Smutko/REUTERS
কম আয়, অনেক বেশি আনন্দ
যুদ্ধপরিস্থিতিতে কনসার্ট আয়োজনে প্রতিকূলতা অনেক৷ মৃত্যুঝুঁকি তো থাকেই, কনসার্ট আয়োজনের জন্য পর্যাপ্ত টাকাও জোটে না৷ অথচ ঝুঁকি নিয়ে সংগীত উপভোগ করতে আসা অনেকেই চান দীর্ঘক্ষণ চলুক কনসার্ট, আবার কবে আসা হবে, আদৌ সে সুযোগ আর হবে কিনা তার তো ঠিক নেই!
ছবি: Alina Smutko/REUTERS
আনন্দটাই বড় বিষয়
লুহানস্ক ফিলহার্মোনিক অর্কেস্ট্রার কো-ডিরেক্টর টারাস ডেমকো মনে করেন যুদ্ধের সময় মানুষকে সামান্য আনন্দে রাখাও অনেক বড় ব্যাপার৷ রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘‘রাশিয়া একটানা সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে যাচ্ছে৷ এ অবস্থায় মানুষকে তো আমাদের সহায়তা করতে হবে৷ প্রতিদিন কয়েক মিনিটের জন্যও যদি তাদের মনে একটু শান্তি দেয়া যায় তা-ও তো অনেক!’’
ছবি: Alina Smutko/REUTERS
যুদ্ধের পর যুদ্ধ
১৯১৫ সাল পর্যন্ত লুহানস্কে পারফর্ম করেছে লুহানস্ক ফিলহার্মোনিক৷ রুশ-সমর্থিত ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীরা’ লুহানস্ক দখল করে নেয়ার পর ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের ছোট্ট শহর সিভিয়েদনেৎস্কে চলে যায় তারা৷ গত বছর রুশ হামলায় সিভিয়েরদনেৎস্কও বিদ্ধস্ত হয়৷ তখন বাধ্য হয়েই লভিভে চলে আসে লুহান্স্ক ফিলহার্মোনিক৷
ছবি: Alina Smutko/REUTERS
‘সংগীত আত্মবিশ্বাস জোগায়’
লভিভে কনসার্ট করতে পেরে লুহানস্ক ফিলহার্মোনিক অর্কেস্ট্রার পরিচালক ইগর শাপোভালভ খুব খুশি৷তিনি মনে করেন কনসার্ট আয়োজন করে যুদ্ধের কারণে বিপর্যস্ত অনেক মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারছেন, কারণ, ‘‘প্রাচীন কাল থেকে সংগীত মানুষকে নানাভাবে শক্তি জুগিয়ে আসছে৷ সংগীত অনেক মানুষকে আত্মবিশ্বাস জোগায়, অনেকের কাছে আবার সংগীত মানসিক দুরবস্থা কাটিয়ে ওঠার উপায়৷’’
ছবি: Alina Smutko/REUTERS
হামলা হলে কনসার্ট বন্ধ
লভিভে রাশিয়ার বড় ধরনের হামলা খুব কম হয়েছে৷ তাই এখন কনসার্ট হচ্ছে প্রায় নিয়মিত৷ জুলাই মাসে রাশিয়ার এক হামলায় ১০ জন মারা যায়৷ ওই সময় বাধ্য হয়ে কনসার্ট বন্ধ রেখেছিল লুহানস্ক ফিলহার্মোনিক৷
ছবি: Alina Smutko/REUTERS
6 ছবি1 | 6
জেলেনেস্কির সফর নিয়ে য়া জানা গেছে
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি রোববার বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, জেলেনস্কি ও বাইডেনের মধ্যে বৈঠক হবে। তারা এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য করা নিয়ে আলোচনা করবেন। এই বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের অফিস জানিয়েছে, এই সফরে জেলেনস্কি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবেন ইউক্রেন ও অ্যামেরিকার মধ্যে সামরিক সহযোগিতা নিয়ে। বিশেষ করে অস্ত্র তৈরির যৌথ প্রকল্প ও এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম নিয়ে আলোচনা হবে। আগামী দিনে দুই দেশ কী ভাবে একে অপরকে সহয়োগিতা করবে, সেই বিষয় নিয়েও কথা হবে।
রিপাবলিকান সেনেটাররা বাইডেনের ১০ হাজার ছয়শ কোটি ডলারের প্যাকেজ অনুমোদন করেননি। তারা এর সঙ্গে অভিবাসী-নীতির বদল ও অভিবাসীদের সাহায্য করার বিষয়টিও জুড়তে চাইছেন।
ইউক্রেন: যুদ্ধের মাঝে বিদ্যালয়ে ফেরা
ইউক্রেনে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়েছে৷ তবে সব শিক্ষার্থীর পক্ষে সাধারণ বিদ্যালয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না৷ নিরাপত্তার কারণে কোথাও কোথাও বিদ্যালয় সরিয়ে নেয়া হয়েছে বাঙ্কার ও সাবওয়ে স্টেশনে৷
ইউক্রেনে গ্রীষ্মের ছুটি শেষ হয়েছে এবং শিশুরা বিদ্যালয়ে ফিরেছে৷ দেশটির কিছু অঞ্চলে যুদ্ধের কারণে সাধারণত অনলাইনে বা হাইব্রিড সেশনে ক্লাস নেয়া হচ্ছে৷ খারকিভ শহরে মাটির নিচের সাবওয়ে স্টেশনে বিদ্যালয় সরিয়ে নেয়া হয়েছে৷ শিশুরা সেখানে সুরক্ষিত পরিবেশে ক্লাস করতে পারছে৷
ইউক্রেনে চলতি বছর ৩৭ লাখের মতো শিশু ও কিশোর বিদ্যালয়ে যাচ্ছে৷ দেশটির প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি সব শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের নতুন শিক্ষাবর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন৷
শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে স্বাগত জানাচ্ছেন এক শিক্ষক৷ যুদ্ধের গুমোট পরিবেশের মধ্যে শ্রেণিকক্ষগুলোকে উজ্জ্বল ও উৎসবমুখর রাখতে কঠোর পরিশ্রম করছেন শিক্ষকেরা৷ তারা তাদের শিক্ষার্থীদের যতটা সম্ভব রঙিন সময় উপহার দিতে চান৷
খারকিভের মেয়র ইহর তারাখাভ তার শহরের মাটির নিচে ট্রেন স্টেশনে সরিয়ে নেয়া একটি বিদ্যালয় পরিদর্শন করছেন৷ এরকম ৬০টি শ্রেণিকক্ষ তৈরি করা হয়েছে যেখানে এক হাজারের মতো শিক্ষার্থী ক্লাস করছেন৷
ক্লাসরুমে একসঙ্গে পড়াশোনা এবং সরাসরি শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷ কিন্তু যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের অধিকাংশ বড় শহরে বেশিরভাগ সময় অনলাইনে ক্লাস নেয়া হচ্ছে৷ খারকিভের এই বিদ্যালয়ের মতো কিছু স্কুলে সরাসরি ক্লাস করার সুযোগ মেলে৷
ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভের এক স্কুলশিক্ষার্থীর মা জানান যে ট্রেন স্টেশনে চালু করা বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা একে অপরের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাতের ও কথোপকথনের সুযোগ পাচ্ছে৷ তিনি এটা পুরোপুরি সমর্থন করেন বলেও জানান৷
বাইডেন সেনেটরদের এই তহবিল অনুমোদন করার আবেদন জানিয়েছেন। তিনি এটাও বলেছেন, আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ ইউক্রেনকে সাহায্য করা যাবে। তার মধ্যে নতুন প্যাকেজ অনুমোদিত না হলে ইউক্রেনকে আর সাহায্য করা সম্ভব হবে না।
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা
রোববার জেলেনস্কি আর্জেন্টিনায় হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরব্যানের সঙ্গে দেখা করেন। রয়টার্স জানাচ্ছে, হাভাসি মেল মারফৎ তাদের জানিয়েছেন, অরব্যান জেলেনস্কিকে বলেছেন, ইইউ-তে ইউক্রেনকে সামিল করা নিয়ে সমানে আলোচনা হচ্ছে। ইঅক্রেনকে ইইউ-তে সামিল করতে গেলে সবকটি দেশকে একমত হতে হবে। হাভাসি হলেন অরব্য়ানের প্রেস সংক্রান্ত প্রধান।