কী ভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ সাধারণ মানুষের সাহায্যে ব্যবহার করা হবে, তার রূপরেখা দিলেন পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
বিজ্ঞাপন
হাতে আর এক সপ্তাহও নেই। ২০ জানুয়ারি পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথগ্রহণ করবেন জো বাইডেন। তার আগে এক দশমিক নয় ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের কোভিড রিলিফ প্যাকেজের পরিকল্পনা ঘোষণা করলেন বাইডেন। জানালেন, কী ভাবে ওই টাকায় কার্যত ভেঙে পড়া মার্কিন অর্থনীতি এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে পুনরুদ্ধারের কথা ভাবছেন তিনি।
২০২০ সালের শেষ পর্বেই এক দশমিক নয় ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজেটে সম্মতি জানিয়েছিল অ্যামেরিকার কংগ্রেস। ট্রাম্প প্রাথমিক ভাবে সেই বিলে সই করতে রাজি না হলেও পরে তা করে দেন। ট্রাম্প সই করলেও এই ফান্ডের পরিকল্পনা করেছেন বাইডেন এবং পরবর্তী ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। নির্বাচনে জেতার পরেই তাঁরা প্রথম বৈঠক করেছিলেন কোভিড পরিস্থিতি কী ভাবে সামাল দেওয়া যায়, তা নিয়ে। সেই বৈঠকে এক ধাপ দুই ধাপ করে কী ভাবে কোভিড মোকাবিলার কথা তাঁরা ভাবছেন, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছিল। তারপরেই এক দশমিক নয় ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্যাকেজের কথা বলেছিলেন প্রেসিডেন্ট।
অ্যামেরিকায় করোনা টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি তুঙ্গে
মঙ্গলবার থেকে করোনা টিকা দেওয়া হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে৷ কেমন চলছে প্রস্তুতি, দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Morry Gash/AFP
যে টিকা দেওয়া হবে
মার্কিন-জার্মান যৌথ গবেষণার ফসল ফাইজার-বায়োনটেকের করোনা টিকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের দেওয়া শুরু হচ্ছে মঙ্গলবার থেকে৷ জরুরি ভিত্তিতে এই টিকা দেওয়া শুরু হবে দেশের ৬৩৬টি টিকাপ্রদান কেন্দ্রের ১৪৫টিতে৷ এই ধাপে টিকা পাবেন স্বাস্থ্যকর্মী ও বয়স্ক নাগরিকরা৷ শেষ পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী, এই টিকাটি ৯৫ শতাংশ কার্যকর হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে৷
ছবি: H. Pennink/AP Photo/picture-alliance
যেভাবে পৌঁছাচ্ছে টিকা
ফাইজারের টিকাসংরক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে মিশিগানের কালামাজু শহরে৷ সেখান থেকে বিশেষ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত ট্রাকে করে টিকাগুলি পৌঁছাবে লানসিং ও গ্র্যান্ড র্যাপিডসের বিমানবন্দরে৷ কুরিয়ার সংস্থা ইউপিএস ও ফেডএক্সের বিশেষ বিমানে করে তা যাবে লুইসিয়ানা ও মেমফিসের কার্গো কেন্দ্রে৷ সেখান থেকে টিকাগুলি পৌঁছে যাবে দেশের নানা জায়গায়৷ এরপর, মঙ্গলবার ও বুধবার দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফার টিকা যাবে এই একই পথে৷
ছবি: Jeff Kowaslky/AFP via Getty Images
কেন ফেডএক্স ও ইউপিএস?
ইউএস মার্শালের কড়া প্রহরায় এই টিকাগুলি সারা দেশে পৌঁছাবার দায়িত্বে রয়েছে অ্যামেরিকার শীর্ষ দুই কুরিয়ার সংস্থা ইউপিএস ও ফেডএক্স৷ এই দুই সংস্থা অন্য আরো কয়েকটি সংস্থার সাথে মিলে এর আগেও সফলভাবে কেমোথেরাপি ও অন্যান্য ওষুধ সরবারহ করে আসছে বহুদিন ধরে৷ প্রচুর পরিমাণে ড্রাই আইস ও বিশেষ ফ্রিজারে -৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এই টিকাগুলি সারা দেশে পৌঁছাতে সক্ষম হবে এই দুই সংস্থা বলে জানাচ্ছে কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: Jeff Kowaslky/AFP via Getty Images
কর্মীরা যা বলছেন
ইউপিএসের সহকারী সংস্থা বয়েল ট্রান্সপোর্টেশনের প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু বয়েল বলেন, ‘‘আজ আমরা সাধারণ কুরিয়ার নয়, জীবনের আশা পৌঁছাচ্ছি৷ এই অনুভূতি অতুলনীয়৷’’ ক্রিসমাসের ছুটির মধ্যেও উপহারের কুরিয়ার ছাড়া সারা দেশে টিকা পৌঁছানোর কাজ করে যাচ্ছেন ইউপিএস ও ফেডএক্সের কর্মীরা৷
ছবি: Morry Gash/AFP
কবে কত টিকা
ড. মনসেফ স্লাওউই, যিনি টিকাপ্রদান কর্মসূচির মুখ্য উপদেষ্টা, জানান যে মার্চ মাসের মধ্যে দশ কোটি মানুষ টিকা পাবেন৷ ডিসেম্বর শেষ হবার আগেই মডার্না ও ফাইজারের টিকা মিলিয়ে মোট ৪ কোটি করোনা টিকার ডোজ পাওয়া যাবে, যা দুই কোটি মানুষের জন্য পর্যাপ্ত৷
ছবি: Morry Gash/Getty Images
টিকা হারানোর সম্ভাবনা
দেশজুড়ে এই বিশাল আকারে টিকা পোঁছানোর কাজ বেশ অনেকটাই জটিল৷ তাই মাঝপথে টিকা হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রুখতে প্রতিটি টিকাবাহী বাক্স, ট্রাক ও বিমানে বসানো আছে ট্র্যাকার, যার সাহায্যে কর্তৃপক্ষের নজরে সবসময়েই থাকবে বহু প্রতিক্ষিত এই করোনা টিকা৷ একটি টিকাও হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তাই নেই বললেই চলে, দাবি দু’টি সংস্থারই৷
ছবি: Morry Gash/AFP
6 ছবি1 | 6
এই মুহূর্তে অ্যামেরিকায় প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার ৩০০ মানুষ হাসপাতালে কোভিড আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন। কোভিডের আক্রান্তের সংখ্যা প্রচুর। একই সঙ্গে গত প্রায় এক বছরে ধীরে ধীরে বিপর্যস্ত হয়েছে মার্কিন অর্থনীতি। মানুষ কাজ হারিয়েছেন। বেতন কমে গিয়েছে। বাড়ি থেকে বের হতে না পেরে বহু মানুষের ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে। বাইডেন বৃহস্পতিবার বলেছেন, এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যা গত বেশ কয়েকটি প্রজন্ম কোনো দিন দেখেনি, কোনো দিন এমন সময়ের কথা ভাবতেও পারেনি।
এই পরিস্থিতিতে এক দশমিক নয় ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনৈতিক প্যাকেজ কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা ব্যাখ্যা করেছেন বাইডেন। তিনি বলেছেন, দুইটি স্টেপে এই প্যাকেজ মানুষের উপকার করবে। এক অর্থনৈতিক ভাবে মানুষকে আবার চাঙ্গা করবে। এবং দুই, কোভিডের সঙ্গে লড়াইয়ে সাহায্য করবে। বাইডেন স্পষ্টই জানিয়েছেন, আর্থিকভাবে সাহায্য না করলে মানুষকে এই অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে উদ্ধার করা যাবে না। সে কারণেই এই প্যাকেজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এর আগে ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দা দেখেছে অ্যামেরিকা। কিন্তু বাইডেনের বক্তব্য, বর্তমানে যে পরিস্থিতি চলছে, তা কোনো কিছুর সঙ্গেই তুলনীয় নয়। সে কথা মাথায় রেখেই খুব সাবধানে এবং সচেতন ভাবে নতুন প্যাকেজ সকলের মধ্যে ভাগ করে দিতে হবে। সেখানে গুরুত্ব দেওয়া হবে সমস্ত ধরনের মানুষকে। জাতি-ধর্ম-বর্ণের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। নতুন করে ঐক্যবদ্ধ অ্যামেরিকা গড়ে তোলাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি কাজ।