ওয়াশিংটনে সম্ভাব্য পালাবদলের মুখে নতুন পরিস্থিতি সত্ত্বেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে এখনো নমনীয়তা দেখাচ্ছে না ব্রিটেন৷ এই অবস্থায় চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের আশঙ্কা বাড়ছে৷
বিজ্ঞাপন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে অনিশ্চয়তার মাঝেও ব্রিটেন মজবুত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আশা প্রকাশ করেছে৷ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের এক মুখপাত্র বলেন, ভবিষ্যৎ মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গেও সুসম্পর্ক বজায় থাকবে৷ তবে জনসনের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ডনাল্ড ট্রাম্পের বদলে আইরিশ বংশোদ্ভূত জো বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হলে বাস্তবে দুই নেতার ব্যক্তিগত সম্পর্ক সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করছে অনেক মহল৷ অ্যামেরিকার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ভবিষ্যতও অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে৷ এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ব্রিটেনের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক বাড়তি গুরুত্ব পেতে পারে৷
এমন প্রেক্ষাপট সত্ত্বেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ব্রিটেনের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তির শেষ সুযোগ সম্পর্কে আশার সম্ভাবনা কমে চলেছে৷ সে ক্ষেত্রে ২০২১ সালের ১লা জানুয়ারি কোনো চুক্তি ছাড়াই পাকাপাকি ইইউ-র সঙ্গে ব্রিটেনের সম্পর্ক ছিন্ন হতে পারে৷ তখন বছরে প্রায় এক লাখ কোটি ডলার মূল্যের মুক্ত বাণিজ্যের পথে শুল্কসহ নানা বাধা সৃষ্টি হবে৷
ইইউ-র প্রধান মধ্যস্থতাকারী মিশেল বার্নিয়ে বুধবার বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে এখনো গুরুতর মতপার্থক্য রয়ে গেছে৷ ইইউ-র ২৭টি সদস্য দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তিনি আলোচনার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন৷ তাঁর মতে, নিজস্ব অবস্থান শিথিল করার বদলে ইইউ আট সপ্তাহ পর দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পথে বিঘ্ন মেনে নিতে প্রস্তুত৷ বার্নিয়ে জানান, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে জোরালো আলোচনার পরেও তেমন অগ্রগতি সম্ভব হয় নি৷ নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত যে মেয়াদ স্থির করা হয়েছে, তার মধ্যে কোনো রকম সাফল্যের আশ্বাস দিতে পারেন নি বার্নিয়ে৷ এই সময়কালের মধ্যে বোঝাপড়া সম্ভব না হলে চুক্তি অনুমোদের প্রক্রিয়া ঠিক সময়ে শেষ করা সম্ভব হবে না৷
ব্রিটেনের প্রধান মধ্যস্থতাকারী ডেভিড ফ্রস্টও দুই পক্ষের মধ্যে গুরুতর মতপার্থক্যের বিষয়টি স্বীকার করেছেন৷ তবে ব্রিটেনের সার্বভৌমত্ব বজায় রেখে এখনো কোনো সমাধানসূত্র পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি৷
এমন অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও দুই পক্ষ প্রথমে ভিডিও লিংক ও আগামী সপ্তাহে লন্ডনে মুখোমুখি আলোচনা চালাবে৷ এক ইইউ কর্মকর্তা ব্রিটেনের একগুঁয়েমিকে বর্তমান অচলাবস্থার জন্য দায়ী করেন৷ বিশেষ করে করোনা ভাইরাসের কারণে অর্থনৈতিক সংকটের জের ধরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির প্রয়োজনীয়তার গুরুত্ব তুলে ধরছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা৷ তাঁদের মতে, চুক্তি সম্ভব না হলে ব্রিটেনের অর্থনীতি বাড়তি সমস্যার মুখে পড়বে৷
এসবি/কেএম (রয়টার্স, এপি, এএফপি)
মার্কিন প্রেসিডেন্টের যেসব ক্ষমতা রয়েছে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে অনেক ক্ষমতাবান মনে হলেও আসলে কিন্তু তার ক্ষমতা সীমিত৷ ছবিঘরে জেনে নিন কি কি ক্ষমতা রয়েছে তাদের৷
ছবি: Klaus Aßmann
মার্কিন সংবিধান
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের মেয়াদ চার বছর। কোন প্রেসিডেন্ট দুইবারের বেশি নির্বাচিত হতে পারেন না। প্রেসিডেন্ট সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে কাজ করেন এবং ফেডারেল প্রশাসন নিয়োগ করতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস আইন প্রণয়ন করার পর সেই আইন প্রয়োগের দায়িত্বও প্রেসিডেন্টের।
ছবি: Klaus Aßmann
সরকারের প্রধান তিন শাখা
যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের তিনটি প্রধান শাখা রয়েছে: বিচারবিভাগ, আইনপ্রনয়ন বিভাগ ও প্রশাসনিক বিভাগ। প্রেসিডেন্ট কোন অপরাধীকে ক্ষমা করতে পারেন এবং ফেডারেল বিচারক মনোনীত করতে পারেন, কিন্তু তা সেনেট থেকে অনুমোদিত হতে হয়। প্রেসিডেন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য ও রাষ্ট্রদূতও নিয়োগ দিতে পারেন, কিন্তু এসব নিয়োগেও সেনেটের অনুমোদন লাগে। এভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আইনপ্রণয়ন বিভাগ প্রশাসনিক বিভাগের ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করে।
ছবি: Klaus Aßmann
স্টেট অফ ইউনিয়নের ক্ষমতা
প্রেসিডেন্টকে কিছুদিন পরপর কংগ্রেসের কাছে রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয়ে অবহিত করতে হয়। প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্যকে ‘স্টেট অফ ইউনিয়ন’ বলা হয়।
ছবি: Klaus Aßmann
‘না’ বলতে মানা
প্রেসিডেন্ট কোন আইনে ভিটো দিতে পারেন, বা 'না' বলতে পারেন। কিন্তু যদি কংগ্রেসের দুই কক্ষ, সেনেট ও হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভের দুই-তৃতীয়াংশ কোন আইন প্রণয়নের পক্ষে মত দেয় তাহলে প্রেসিডেন্টের ভিটো সত্ত্বেও আইন কার্যকর হতে পারে।
ছবি: Klaus Aßmann
পকেট ভিটো
কিন্তু মাঝেমাঝে প্রেসিডেন্ট কোন আইন প্রণয়নকে একটি কৌশলে আটকে রাখতে পারেন। এই কৌশলকে বলা হয় ‘পকেট ভিটো’। এর মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট কোন আইন নিজের কাছে আটকে রাখতে পারেন। এর ফলে কংগ্রেসে অনুমোদিত হলেও প্রেসিডেন্টের কাছে আটকে থাকার কারণে আইনটি কার্যকর হতে পারে না। এই আইনের মত অনেক বিষয়ে সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্ট প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাকে স্পষ্ট করে নির্ধারিত করেনি।
ছবি: Klaus Aßmann
নির্বাহী ক্ষমতা
প্রেসিডেন্টের আরেকটি বিখ্যাত ক্ষমতার নাম হচ্ছে ‘এক্সিকিউটিভ অর্ডার’ বা নির্বাহী ক্ষমতা। এর মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট সরকারি কর্মকর্তাদের কোন বিষয়ে নির্দেশ দিতে পারেন। কিন্তু তার মানে এই নয় প্রেসিডেন্ট যা খুশি তাই নির্দেশ দিতে পারেন। আদালত ইচ্ছে করলে এই নির্দেশ বাতিল করতে পারে অথবা কংগ্রেস এই নির্দেশের বিপরীতে আরেকটি আইন প্রণয়ন করতে পারে।
ছবি: Klaus Aßmann
চুক্তির ক্ষমতা
প্রেসিডেন্ট প্রয়োজন মনে করলে আরেকটি দেশের সাথে চুক্তি বাতিল করতে পারেন, কিন্তু সিনেটের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন লাগবে।
ছবি: Klaus Aßmann
সামরিক বাহিনীর প্রধান
প্রেসিডেন্ট কমান্ডার ইন চিফ বা সামরিক বাহিনীর প্রধান, কিন্তু যেকোন যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারে কংগ্রেস। তবে এই নিয়মটি পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। কারণ, কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াও কিছু সময় প্রেসিডেন্ট সামরিক সংঘর্ষে সৈন্যদের অংশ নেবার অনুমোদন দিতে পারেন।
ছবি: Klaus Aßmann
অভিশংসন
প্রেসিডেন্ট যদি ক্ষমতার অপব্যবহার করেন বা কোন অপরাধ করেন, তবে হাউজ অভ রিপ্রেজেন্টিটিভ তাকে সরানোর জন্য ইমপিচমেন্ট বা অভিশংসন শুরু করতে পারেন।