চার ঘণ্টা ধরে কথা বললেন জো বাইডেন ও শি জিনপিং। ঠিক হয়েছে, দুই দেশের সামরিক পর্যায়ে আলোচনা শুরু হবে।
বিজ্ঞাপন
বাইডেন জানিয়েছিলেন, এই বৈঠকের আসল উদ্দেশ্য হলো, একে অপরকে ভালো করে জানা ও বোঝা। আর তার জন্য মুখোমুখি বৈঠকের কোনো বিকল্প নেই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এটাও জানিয়েছেন, অতীতে তিনি ও শি সবসময় যে সহমত হয়েছেন এমন নয়। এই বৈঠকের পরেও তাইওয়ান নিয়ে মতভেদ থেকে গেছে। তবে দুই দেশ সামরিক পর্যায়ে আলোচনা শুরুতে সম্মতি দিয়েছে।
সান ফ্রান্সিসকোর ঠিক বাইরে এই বৈঠক হয়। বৈঠকের শেষে বাইডেন বলেছেন, তাদের মধ্যে আলোচনা অনেকটাই এগিয়েছে। এক্স-এ বাইডেন লিখেছেন, ''শি-র সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে, তাকে আমি সত্যিকারের মূল্য দিই। আলোচনা অনেকখানি এগিয়েছে।''
বাইডেনকে সাংবাদিক সম্মেলনে প্রশ্ন করা হয়ছিল, শি কি একজন ডিক্টেটর? বাইডেনের জবাব ছিল, ''আসলে তিনি তাই। মানে আমি বলতে চাইছি, তিনি এই অর্থে ডিক্টেটর যে, তিনি যে দেশ চালান, সেটা কমিউনিস্ট দেশ। সেখানে সরকারের ধরণ আমাদের থেকে একেবারেই আলাদা।''
এর আগেও বাইডেন এই ধরনের মন্তব্য করেছেন এবং বেজিং তার তীব্র প্রতিবাদও করেছে।
ইসরায়েল নিয়ে আলোচনা
এক মার্কিন কর্মকর্তা সংবাদিকদের বলেছেন, বাইডেন ও শি-র মধ্যে আলোচনায় ইসরায়েল-হামাস প্রসঙ্গও উঠেছিল। বাইডেন শি-কে অনুরোধ করেছেন, ইরান যেন কোনোরকম উসকানিমূলক কাজ না করে তা যেন চীন নিশ্চিত করে।
চীনের সরকারি কর্মকর্তারা অ্যামেরিকার সরকারি কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, তারা ইরানের সঙ্গে আলোচনা করছেন। গাজায় যা হচ্ছে, তা যদি মধ্যপ্রাচ্যে আরো ছড়ায়, তাহলে তার ফল ভালো হবে না বলেও তারা ইরানকে জানিয়েছেন।
সামরিক পর্যায়ে যোগাযোগ বাড়বে
দুই দেশের মধ্যে সামরিক পর্যায়ে যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য বাইডেন ও শি একমত হয়েছেন।
শি জানিয়েছেন, তিনি ও বাইডেন উচ্চপর্যায়ে সামরিক আলোচনা শুরু করতে একমত হয়েছেন। এই আলোচনা হবে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সমতার ভিত্তিতে।
বাইডেন জমানায় প্রথম অ্যামেরিকা-চীন বৈঠক
জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর আলাস্কায় প্রথমবার মুখোমুখি আলোচনায় অ্যামেরিকা ও চীন। সেই বৈঠক ছিল রীতিমতো উত্তপ্ত।
ছবি: Frederic J. Brown/AFP/Getty Images
অভিযোগের বন্যা
সাধারণত দুই দেশের মধ্যে বৈঠকে কূটনৈতিক সৌজন্যের আবহ থাকে। কিন্তু অ্যামেরিকা ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে দুই পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে গেছে। ফলে সাধারণ কূটনীতির ব্যকরণ মেনে বৈঠক হয়নি।
ছবি: Frederic J. Brown/AFP/Getty Images
অ্যামেরিকার অভিযোগ
মার্কিন সেক্রেটারি অফ স্টেট অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন, শিনজিয়াং, হংকং, তাইওয়ান নিয়ে চীনের নীতিতে অ্যামেরিকা খুবই উদ্বিগ্ন। অ্যামেরিকা কিছুতেই চীনের নীতি মানতে পারছে না।
ছবি: Frederic J. Brown/AFP/Getty Images
উইগুর প্রসঙ্গ
ব্লিংকেন উইগুরদের দুরবস্থার কথাও তোলেন। তিনি জানিয়েছেন, চীন উইগুর মুসলিমদের প্রতি যে ব্যবহার করছে, তাতে অ্যামেরিকা উদ্বিগ্ন। জাতিসংঘের মতে, ১০ লাখ উইগুরকে শিবিরে রেখেছে চীন। তাদের বিরুদ্ধে অত্যাচারের অভিযোগ রয়েছে। উপরের ছবিটি চীনে উইগুর শিবিরের।
ছবি: AFP/G. Baker
দক্ষিণ চীন সাগর
দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে চীনের অবস্থানেও অ্যামেরিকা খুশি নয়, সেটাও জানিয়ে দিয়েছেন ব্লিংকেন।
ছবি: Getty Images/AFP
চীনের অভিযোগ
চীনের সেন্ট্রাল ফরেন অফিস কমিশনের ডিরেক্টর ইয়াং জিয়েছির অভিযোগ, অ্যামেরিকা ঠান্ডা যুদ্ধের মানসিকতা নিয়ে চলছে। তারা জাতীয় সুরক্ষার নামে এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যার প্রভাব দুই দেশের বাণিজ্যে পড়ছে। চীনকে আক্রমণ করার জন্য তারা কিছু দেশকে উসকানি দিচ্ছে।
ছবি: Frederic J. Brown/AFP/Getty Images
হস্তক্ষেপ নয়
চীন জানিয়ে দিয়েছে, তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কোনো হস্তক্ষেপ তারা মানবে না। শিনজিয়াং, হংকং বা তাইওয়ান নিয়ে অ্যামেরিকার হস্তক্ষেপের চেষ্টা তাই মানা হবে না। উপরের ছবিটা হংকংয়ের। গণতন্ত্রপন্থি নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ।
ছবি: Tyrone Siu/REUTERS
6 ছবি1 | 6
এআই বা কৃত্রিম মেধা নিয়েও একটি যৌথ সরকারি ব্যবস্থাপনা এবং ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়েছে।
শি যা বলেছেন
চীনের প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে বলেছেন, ''এই বিশ্বটা অনেক বড়। এখানে অ্যামেরিকা ও চীন দুজনেই সফল হতে পারে।''
তিনি বলেছেন, ''চীন অ্যামেরিকাকে ছাপিয়ে যেতে বা তাদের আসন ছিনিয়ে নিতে চায় না। অ্যামেরিকারও চীনকে দমিয়ে রাখা বা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা উচিত নয়।''
তাইওয়ান নিয়ে
যুক্তরাষ্ট্রের এক কূটনীতিক সাংবাদিকদের বলেছেন, দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো তাইওয়ান। তিনি জানিয়েছেন, শি বলেছেন, চীন চায়, তাইওয়ান শান্তিপূর্ণভাবে তাদের সঙ্গে মিশে যাক। আর যদি জোর করতে হয়, তবে তার শর্ত নিয়ে চীন আলোচনা করতে রাজি।
চীন, অ্যামেরিকা, তাইওয়ানের দীর্ঘ জটিল সম্পর্ক
পেলোসির সফর ঘিরে চীন, তাইওয়ান এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এখন উত্তেজনা তুঙ্গে। এই তিন দেশের দীর্ঘ সম্পর্কের ইতিহাস যথেষ্ট জটিল।
ছবি: Rod Lamkey/CNP/picture alliance--Shen Hong/picture alliance/Xinhua
দুই দেশের জন্ম
১৯৪৯ সালে চীনের সিভিল ওয়ারের পর দুইটি স্বঘোষিত চীনা রাষ্ট্রের জন্ম হলো। পিপলস রিপাবলিক অফ চায়না(পিআরসি) বা গণপ্রজাতন্ত্রী চীন এবং তাইওয়ান ভিত্তিক রিপাবলিক অফ চায়না(আরওসি)। পিআরসি-র ঘোষণা হলো বেজিংয়ে, করলেন মাও জেদং। উপরের ছবিটি মাওয়ের।
ছবি: AP
দীর্ঘদিনের স্থিতাবস্থা
পিআরসি-র নিয়ন্ত্রক হলো চীনা কমিউনিস্ট পার্টি। কিন্তু তাইওয়ানের ক্ষেত্রে তাদের কোনো নির্দেশ চলে না। তাইওয়ানের শাসকরা ১৯৯০ থেকে গণতান্ত্রিক পথে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। তাদেরও পিআরসি-র উপর কোনো প্রভাব নেই। বহুদিন ধরে এই স্থিতাবস্থা চলেছিল। উপরের ছবিটি তাইওয়ান খাঁড়িতে তাদের নৌবহরের।
ছবি: AP
অবস্থার পরিবর্তন
২০০৫ সালে অবস্থার পরিবর্তন হলো। চীন বিচ্ছিন্নতা-বিরোধী আইন পাস করলো। সেখানে বলা হলো, তাইওয়ান যদি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করে, তাহলে চীনের সেনার সেখানে গিয়ে হস্তক্ষেপ করার অধিকার আছে। এরপর চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে উত্তেজনা আরো বাড়লো।
ছবি: Roman Pilipey/AP/picture alliance
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
১৯৭০-এর প্রথমভাগ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক স্তরে তাইওয়ানের পরিচিতি ছিল রিপাবলিক অফ চায়না হিসাবে। কিন্তু ১৯৭১ সালে জাতিসংঘে ভোটাভুটি হলো এই নিয়ে যে, পিআরসি বা গণপ্রজাতন্ত্রী চীনই একমাত্র সেখানে থাকবে। এরপর ভ্যাটিকান-সহ মাত্র ১৪টি দেশ তাইওয়ানকে স্বীকৃতি দেয়। উপরের ছবিটি তাইওয়ানের পার্লামেন্টের।
ছবি: Daniel Ceng Shou-Yi/ZUMA Wire/picture alliance
অ্যামেরিকার সিদ্ধান্ত
১৯৭৯ সালে অ্যামেরিকা জানায়, তারা একমাত্র গণপ্রজাতন্ত্রী চীনকেই স্বীকৃতি দিচ্ছে। কিন্তু মার্কিন কংগ্রেসে তাইওয়ান রিলেশনস আইন পাস হয়। সেখানে বলা হয়েছে, তাইওয়ানকে অস্ত্র বিক্রি করে যাবে অ্যামেরিকা। ওই অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখতে অ্যামেরিকা দায়বদ্ধ থাকবে। উপরের ছবিটি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর।
ছবি: TAIWAN PRESIDENTIAL OFFICE/REUTERS
মার্কিন পার্লামেন্ট সদস্যদের মত
দলমত নির্বিশেষে মার্কিন পার্লামেন্ট সদস্যরা মনে করেন, তাইওয়ান যেন বেজিংয়ের কাছে আত্মসমর্পন না করে। ঠান্ডা যুদ্ধের সময়, অ্যামেরিকা ও তাইওয়ান হাত মিলিয়ে কমিউনিস্ট চীনের বিরোধিতা করেছে। চীনের যত উত্থান হয়েছে, অ্যামেরিকা ততই তাইওয়ানের পাশে থেকেছে।
ছবি: Artur Gabdrahmanov/Sputnik/dpa/picture alliance
পেলোসির সফর
মার্কিন হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ানে গিয়ে বলেছেন, ''আমাদের প্রতিনিধিদল তাইওয়ান এসে একটা কথা স্পষ্ট করে দিতে চায়, তা হলো, আমরা কখনোই তাইওয়ানকে পরিত্যাগ করব না। আমাদের দীর্ঘ সম্পর্ক নিয়ে আমরা গর্বিত।''
ছবি: Ann Wang/REUTERS
চীনের দাবি
চীন দাবি করে, তাইওয়ান তাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই তারা বারবার 'ওয়ান চায়না' বা 'এক চীন' নীতির কথা বলে। যেভাবে হংকং এখন চীনের অংশ, সেইভাবেই তাইওয়ানকেও নিজেদের অংশ করতে চায় চীন। কিন্তু তাইওয়ানের বক্তব্য, হংকংয়ের ক্ষেত্রে দুই তরফই তাতে রাজি ছিল। কিন্তু তাইওয়ান কখনোই চীনের সঙ্গে মিশে যেতে রাজি নয়। তারা আলাদা অস্তিত্ব বজায় রাখতে চায়। উপরের ছবিটি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের।
ছবি: Selim Chtayti/REUTERS
জনগণ বিভক্ত
চীনের সঙ্গে মিশে যাওয়া নাকি স্বাধীনতা ঘোষণা, কোনটা করা উচিত, তানিয়ে তাইওয়ানের সাধারণ মানুষ বিভক্ত।
ছবি: Ann Wang/REUTERS
অনড় চীন
তাইওয়ান সরকার এখন নিজেদের আইল্যান্ড অফ তাইওয়ান বলে। এতে চীনের প্রবল আপত্তি। তাদের দাবি, আগের মতো রিপাবলিক অফ চীন বলা উচিত। বেজিং তাইওয়ানের আলাদা জাতীয় সংগীত ও পতাকাও মানে না। উপরের ছবিতে তাইওয়ানের পতাকা।
ছবি: Chiang Ying-ying/AP Photo/picture alliance
10 ছবি1 | 10
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে জানিয়েছে, ''শি বাইডেনকে বলেছেন, অ্যামেরিকা যেন তাইওয়ানের হাতে আর অস্ত্র তুলে না দেয়। তারা যেন তাইওয়ানের শান্তিপূর্ণভাবে চীনের সঙ্গে মিশে যাওয়াকে সমর্থন করে।''
মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ''শি বলেছেন, তারা তাইওয়ানের উপর ব্যাপক কোনো অভিযান করছেন না। কিন্তু তারপরেও অ্যামেরিকা এই বিষয়ে তাদের মনোভাব বদল করেনি।''
আর কী নিয়ে আলোচনা?
হোয়াইট হাউসের জাতীয় সুরক্ষা উপদেষ্টা জন কিরবি জানিয়েছিলেন, ''তাইওয়ান প্রণালীতে উত্তেজনা নিয়ে কথা হবে। তাছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও আলোচনা হবে।''
কিন্তু বৈঠকের আগে বাইডেন জানিয়ে দেন, ''চীনের সঙ্গে আমরা সম্পর্ক ভালো করার চেষ্টা করছি। চীন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার চেষ্টা করছি না।''