1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাইরে করোনা, ঘরে ডেঙ্গু

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৬ আগস্ট ২০২১

দেশে করোনা রোগীর পাশাপাশি ডেঙ্গু রোগীও বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে৷ ডেঙ্গুতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুর হাত থেকে বাঁচতে হলে করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু পরীক্ষা করানোও জরুরি৷

চলতি মাসের প্রথম পাঁচ দিনেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৪৫৭ জন৷ছবি: Mortuza Rashed/DW

ঢাকা শিশু হাসপাতালে ঠাঁই নেই৷ ডেঙ্গু বেডের চেয়ে রোগী অনেক বেশি৷ পুরো হাসপাতালই এখন বলতে গেলে ডেঙ্গু রোতে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসায় নিয়োজিত ৷ তবে শিশু হাসপাতালের চিকিৎকরা বলছেন, তাদের প্রস্তুতির ঘাটতি নেই, কোনো শিশু রোগীকেই তারা ফিরিয়ে দিচ্ছেন না৷

ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক ডা. শফি আহমেদ জানান, ২৪ ঘণ্টায় শিশু হাসপাতালে ৫০ জন শিশু ভর্তি হয়েছে ডেঙ্গুর উপসর্গ নিয়ে৷ এটা এই বছরে সর্বোচ্চ৷ জুন মাস থেকে এ পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে ১৭৫ জন৷ তাদের মধ্যে জুন মাসে পাঁচ জন, জুলাই মসে ১০৪ জন আর আগস্টের প্রথম ছয় দিনেই ভর্তি হয়েছে ৬৬ জন৷ গত ২৪ ঘণ্টাতেই ভর্তি হয়েছে ৫০ জন৷ এ বছরে শিশু হাসপাতালে ভর্তিদের মধ্যে ৪টি শিশু মারা গেছে৷

ডা. কিংকর ঘোষ

This browser does not support the audio element.

শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. কিংকর ঘোষ বলেন, ‘‘হাসপাতালে ডেঙ্গুর জন্য মোট ১৫টি বেড নির্ধারণ করা আছে৷ সেখানে আমরা শুধু ডেঙ্গুর জটিল রোগীদেরই রাখছি৷ যাদের আইসিইউ প্রয়োজন হয়, তাদের আইসিইউতে পাঠাচ্ছি৷ বাকিদের আমরা অন্য বেডে ভর্তি নিচ্ছি৷ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত কোনো শিশুকেই আমরা ফিরিয়ে দিচ্ছি না৷ আমরা একটি র‌্যাপিড রেসপন্স টিম করেছি৷’’

হাসপাতালের পরিচালক ডা. শফি আহমেদ জানান, ‘‘তবে আইসিইউ নিয়ে আমরা হিমশিম খাচ্ছি৷ আমার ১৬টি আইসিইউ বেডের মধ্যে ১০টিতে এখন ডেঙ্গু রোগী৷ তাহলে বাকি যাদের আইসিইউ প্রয়োজন তাদের নিয়ে কী করবো৷ খুবই খারাপ অবস্থা৷ আর ডেঙ্গু রোগীর ম্যানেজমেন্টও কঠিন৷ ঘণ্টায় ঘণ্টায় তরল খাবার দিতে হয়৷ তারপরও কাউকে আমরা ফেরাচ্ছি না৷’’

জুলাই মাস থেকে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকে৷ শুরুতে সর্বোচচ পাঁচ বছর বয়সি শিশু রোগী বেশি পাওয়া গেছে৷ এখন যারা আসছে, তাদের বয়স পাঁচ থেকে আট বছরের মধ্যে বলে জানান চিকিৎসকরা৷ তবে শুধু শিশু হাসপাতালই নয়, ঢাকার আন্যান্য হাসপাতালেও শিশু রোগী বেশি বলে জানা গেছে৷ শিশু হাসপাতালে শুধু শিশুদেরই ভর্তি করা হয়৷

ডা. শফি আহমেদ

This browser does not support the audio element.

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা ও ঢাকার বাইরে মোট ২১৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন৷ তাদের মধ্যে শুধু ঢাকায়ই ২১১ জন৷ বর্তমানে সারাদেশে হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা এক হাজার ১০ জন৷ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত মোট ভর্তি রোগী চার হাজার ১১৫ জন৷ তাদের মধ্যে তিন হাজার ৯৫ জন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন৷

ডেঙ্গুর উপসর্গ নিয়ে এ বছর এ পর্যন্ত ১০ জন মারা গেছেন৷ তবে আইইডিসিআর এখনো তাদের মৃত্যু যে ডেঙ্গুতে হয়েছে তা নিশ্চিত করেনি বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর৷ আইইডিসিআর জানিয়েছে, মৃত্যুর কারণ পর্যালোচনা বেশ সময় সাপেক্ষ এবং লকডাউনের কারণে দেরি হচ্ছে৷

চলতি বছরের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে মে মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিন্ত্রণেই ছিল৷ ওই মাসে আক্রান্ত হন ২৭২ জন৷ কিন্তু জুলাই মাসে তা আট গুণেরও বেশি বেড়ে যায়৷ এই মাসে মোট আক্রান্ত দুই হাজার ২৮৬ জন৷ তবে এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি মাসের শেষে তা ১০ হাজার ছড়িয়ে যেতে পারে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷

আক্রান্তদের প্রায় অর্ধেকই শিশু৷ ডা. কিংকর ঘোষ বলেন, ‘‘এবার যে ডেঙ্গু তা ২০১৯ সালের টাইপ- থ্রি৷  ওই সময়ে ঢাকার প্রাপ্ত বয়স্করা এই ডেঙ্গুতে ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হয়েছেন৷ একই টাইপে একজন দুইবার আক্রান্ত হবেন না৷ তাই শিশুরা এখন আক্রান্ত হচেছ৷’’

ড. এ এস এম আলমগীর

This browser does not support the audio element.

ডা. শফি আহমেদ বলেন, ‘‘ডেঙ্গুর এই টাইপটি শিশুদের আক্রান্ত করে বেশি৷ শিশুরা এখন করোনার কারণে বাসায়৷ গরমের কারণে তাদের খালি গায়ে রাখা হয় বা হাফ শার্ট, হাফ প্যান্ট পরানো হচ্ছে৷ ফলে তাদের এডিস মশা কামড়াচ্ছে বেশি৷ এই মশা ডাইনিং টেবিল ও পড়ার টেবিলের নীচে বেশি থাকে৷ আর বাচ্চারা অনলাইন ক্লাস করতে গিয়ে টেবিলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকে এডিস মশার কামড় খাচ্ছে৷ এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে৷’’

চিকিৎসকরা বলছেন, এবারের ডেঙ্গু হেমোজেরিক৷ রক্ষক্ষরণ হয়৷ আইইডিসিআর-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর বলেন, ‘‘আমরা গবেষণা করে দেখছি ডেঙ্গু তার ধরন পরিবর্তন করেছে কিনা৷ তবে এখনো তার ফলাফল পাইনি৷ এবার লকডাউনে শিশুরা ঘরে আছে৷ ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশা বাড়ি-ঘরের জমানো স্বচ্ছ পানিতে জন্ম নেয়৷ তাই ঘরে থাকা শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘অনেকেই করোনার কারণে ডেঙ্গু বুঝতে পারছেন না৷ তাই করোনা টেস্টের সঙ্গে ডেঙ্গু টেস্ট করানোও জরুরি৷ তা না হলে চিকিৎসা শুরু করতে দেরি হয়৷ এবার তা হচেছ৷ ফলে রোগী, বিশেষ করে শিশুরা জটিল অবস্থায় হাসপাতালে যাচ্ছে৷ যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যায়, ততই ভালো৷’’

গত বছর ১২ মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৩৯২ জন৷ এবার সাত মাসেই চার হাজার ১১৫ জন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ