প্রতিনিয়তই হারিয়ে যাচ্ছে পরিচিত পাখিদের ডাক৷ পাখির কলতানে ঘুম ভাঙা যেন হয়ে উঠছে রূপকথার গল্প৷ উষ্ণায়নের প্রভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে চেনা-জানা বহু পাখি৷ কিন্তু তারই মধ্যে কেউ কেউ হয়ে উঠছে পরিবেশ সচেতন, জন্মের আগেই৷
বিজ্ঞাপন
‘গানে ভুবন ভরিয়ে দেবে ভেবেছিল একটি পাখি...৷' না, ভুবন ভরিয়ে দেয়া নয়, বরং ভুবন, মানে বিশ্বকে গানের মধ্যে দিয়ে রক্ষা করছে একদল পাখি৷ হ্যাঁ, ডিম ফুটে বের হওয়ার আগেই বাচ্চাকে সাবধান করে দিচ্ছে মা৷ গান গেয়ে পেটের বাচ্চাকে সাহস দিচ্ছে৷ বলছে, বাইরে কেমন গরম, এর জন্য তাকে কী করতে হবে, এমন অনেক কিছু৷
শুধু তাই নয়, তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পেরিয়ে গেলে গান গেয়ে গেয়ে বাচ্চার জন্মের সময়ও পিছিয়ে দিচ্ছে মা-পাখি৷ জন্ম দিচ্ছে কম ওজনের বাচ্চাকে, যাতে তার কষ্ট কম হয়, যাতে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচতে পারে একটা গোটা প্রজাতি!
সম্প্রতি ‘বার্ড লাইফ ইন্টারন্যাশনাল'- এর জরিপে বেরিয়ে আসে খুবই উদ্বেগজনক তথ্য৷ জরিপ বলছে, ইউরোপে অতি সাধারণ প্রজাতির যেসব পাখি রয়েছে, তাদের ৪৫ শতাংশের অস্তিত্বই এখন হুমকির মুখে৷ দ্রুত কমে যাচ্ছে তাদের সংখ্যা৷ অস্ট্রেলিয়ায় পাখিদের অবস্থা আরো ভয়াবহ৷
সেখানে জলচর পাখিদের ৮০ শতাংশেরও বেশি এখন বিলুপ্তির পথে৷ আফ্রিকায় সংরক্ষিত এলাকার বাইরে ব্যাপক হারে কমে যাচ্ছে শিকারি পাখি৷ আর এশিয়ায় বিপন্ন অতিথি পাখিরা৷ মহাদেশটির জলচর অতিথি পাখিদের ৬২ শতাংশই বিলুপ্ত হয়ে গেছে কিংবা বিলুপ্ত হতে চলেছে৷
ডিম থেকে বাচ্চা বের হওয়ার অবিশ্বাস্য কাহিনি
বৃহৎ পাখি থেকে শুরু করে সরীসৃপ-এদের ডিম থেকে বাচ্চা বের হওয়ার প্রক্রিয়া বিস্ময়কর৷ এমনই কিছু আশ্চর্যকাহিনি তুলে ধরছে ডয়চে ভেলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/PA Peter Byrne
উট পাখি
পাখিদের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রজাতি অস্ট্রিচ বা উট পাখি, মাটিতে সবচেয়ে দ্রুতগতির পাখিও এটি৷ একটি মেয়ে পাখি কেবল একটি পুরুষ পাখির সঙ্গে মিলিত হয়, তবে একটি পুরুষ পাখি বহুগামী৷ মা পাখিটি আরও অন্তত চার জন মা পাখির সঙ্গে একটি বাসা বানিয়ে সেখানে ডিম পাড়ে৷ প্রত্যেকে সাধারণত ১৫টি করে ডিম পাড়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Wittek
কিউই পাখি
নিউজিল্যান্ডেই বেশি দেখা যায় এই ধরণের পাখি৷তাই কিউই পাখির কথা প্রসঙ্গ এলেই চলে আসে নিউজিল্যান্ডের নাম৷ কিউইর ডিম সব পাখির মধ্যেই দেহের অনুপাতে সর্ববৃহৎ৷ তাই তার কদরও বেশি৷ এক একটি ডিমের ওজন প্রায় ৫০০ গ্রাম৷ মা পাখি ডিম পাড়ার আগে দেখে মনে হয় তার শরীরের প্রায় পুরো অংশই যেন ডিম৷ আর ডিম থেকে বাচ্চা বের হওয়ার সাথে সাথেই তারা বেশ স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে৷
অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের পেঙ্গুইনদের মতো কষ্টসাধ্য কাজ হয়ত আমাদের বাবা-মা’ও করতে পারবেন না৷ পেঙ্গুইনদের একটি প্রজনন কলোনি আছে৷ নিজের বাসা থেকে সেখানে যেতে তাদের ৫০ থেকে ১২০ কিলোমিটার পথ হাঁটতে হয়৷ প্রতি বছর মাত্র একটি ডিমে তা দিতে পারে মা পেঙ্গুইন৷ তাই ডিম থেকে যখন বাচ্চা বের হয়, সেটা খুবই মূল্যবান মুহূর্ত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হাতি পাখি
পাখি প্রজাতির মধ্যে একসময় সর্ববৃহৎ ছিল এলিফেন্ট বার্ড বা হাতি পাখি, যেটি চার শতক আগে বিলুপ্ত হয়ে গেছে৷ ২০১৫ সালে এর একটি ডিমের খোঁজ পান বিজ্ঞানীরা৷ একটি মুরগীর ডিমের চেয়ে তা প্রায় ২০০ গুণ বড়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
সাপ
মুরগি আগে না ডিম আগে- এ নিয়ে প্রচুর বিবাদ আছে৷ আমরা ভুলে যাই যে সরীসৃপরাও ডিম পাড়ে, যেমন সাপ৷ বেশিরভাগ সাপ ডিম পাড়ার পর ডিম ফোটা পর্যন্ত তাদের জায়গা থেকে নড়ে না, একনাগাড়ে তা দিয়ে যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সামুদ্রিক কচ্ছপ
সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তন, অবৈধ বাণিজ্য ও পর্যটনের কারণে সমুদ্রের মা কচ্ছপদের ডিম পাড়াটা খুব কঠিন হয়ে গেছে৷ তাই ডিম পাড়ার জন্য দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে তারা নিরাপদ আশ্রয় বেছে নেয়৷ বালিতে ডিম পাড়ে তারা৷ কিন্তু যদি মানুষ, শব্দ বা অন্য কোনো কারণে বিরক্ত হয়, তাহলে ডিমে তা না দিয়ে তারা সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়ে৷
ছবি: Turtle SOS Cabo Verde
ব্যাঙ
প্রথমে ছবিটি দেখলে মনে হতে পারে, ব্যাঙটি বিষন্ন৷ ব্যাপারটা তা না, একটু লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে ডিমের ওপরে বসে আছে ব্যাঙটি৷ প্রাণীজগতে অন্যান্য প্রাণীদের চেয়ে এরা ভিন্ন৷ বাবা ব্যাঙটি যাকে, মিড ওয়াইফ বলা হয়, সে স্থলে মা ব্যাঙটির সঙ্গে মিলিত হয়৷ তারপর এই ডিমগুলোকে বাবা ব্যাঙটি ৩০ দিন পর্যন্ত বহন করে এবং তা দেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ L. Webbink
কমোডো ড্রাগন
সরীসৃপদের মধ্যে সর্ববৃহৎ প্রজাতি এরা৷ এদের মিলনে অভিনবত্ব আছে, কেননা, পুরো একটি সন্ধ্যা ব্যাপী পুরুষ ও নারী কমোডো ড্রাগন মিলিত হয়৷ তাদের এই রোমান্টিক মিলনের ফলে ডিম থেকে বাচ্চাও বের হয় খুব সুন্দরভাবে, ধীরে সুস্থে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/PA Peter Byrne
8 ছবি1 | 8
এ অবস্থায় যেন আশার আলো নিয়ে এসেছে এই ‘গানওয়ালা' পাখিরা৷ অস্ট্রেলিয়ার ডেকন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ৬১টি ‘জেব্রা ফিঞ্চ'কে প্রায় দু'বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন, কীভাবে মা-পাখিরা গান গেয়ে, কথা বলে বাচ্চার জন্মের ওপর প্রভাব ফেলছে৷
বিজ্ঞনীদের কথায়, ওজন কম হলে গরম কম লাগে এবং ‘অক্সিডেটিভ ড্যামেজ'ও কম হয়৷ তাছাড়া মায়ের গানের প্রভাবে যাদের দেরিতে জন্ম হয়েছিল, তারা নাকি পরবর্তীতে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি বাচ্চার জন্ম দেয়৷ আর এভাবেই বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পায় একটা প্রজাতি৷
চড়ুইয়ের কিচিরমিচির কে না শুনেছে? চড়ুইয়ের ওই কিচিরমিচিরই কিন্তু গান৷ হ্যাঁ, চড়ুই আসলে এক ধরণের গানের পাখি৷ মন দিয়ে শুনলে বোঝা যায়, ওই কিচিরমিচিরেও আছে ছন্দোবদ্ধ সুর৷ এই গানের পাখিগুলো কি চেনেন আপনি?
ছবি: picture-alliance / OKAPIA KG
চড়ুই
এই পাখিটি বিশ্বের প্রায় সব দেশেই আছে৷ লোকালয়েই থাকতে পছন্দ করে ছোট্ট এই পাখি৷ মানুষের ঘরের ছাদের কোনো কোণেই খড়কুটো দিয়ে ঘর বানিয়ে দিব্যি সংসার পেতে বসে চড়ুই৷ তারপর সারা দিনমান চলে কিচিরমিচির, কিচিরমিচির গান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleul
কোকিল
এই ধরণের কোকিল পূর্ব অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং নিউ গিনিতে বেশি পাওয়া যায়৷ বসন্ত এলে এরা গানে গানে মুখর করে তোলে পরিবেশ৷ এশিয়ার কোকিল দেখতে একটু অন্যরকম৷ তবে তারাও ‘কুহু কুহু’ গান গায় আর অন্য পাখির বাসায় ডিম পাড়ে৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/R. Lammers
ক্যানারি
স্পেনের ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে বেশি পাওয়া যায় বলে এই পাখির নামই হয়ে গেছে ক্যানারি৷ মিষ্টি সুরে গান গায় বলে ১৭ শতক থেকেই এরা অনেক দেশের জনপ্রিয় পোষাপাখি৷
ছবি: picture-alliance / OKAPIA KG
নাইটিঙ্গেল
এই পাখি নাকি ২৫০ রকম গান গাইতে পারে৷ এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা এবং ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে পাওয়া যায় এই ধরণের পাখি৷ সাধারণত সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় ইঞ্চি বড় হয় নাইটিঙ্গেল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
টিয়া পাখি
বাংলাদেশসহ এশিয়ার সব দেশেই এ ধরণের পাখি খুব পরিচিত৷ পোষাও হয় এই পাখি৷ এ ধরণের টিয়া গান তো গায়ই, মানুষকে অনুকরণ করে কথাও বলে৷