বাইরে বিপুল জনপ্রিয়, দেশে সমালোচনার মুখে ম্যার্কেল
২৭ এপ্রিল ২০২০
করোনা সংকট সামলাতে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিয়ে গোটা বিশ্বে প্রশংসা আদায় করছেন জার্মান চ্যান্সেলর ম্যার্কেল৷ তবে জার্মানিতে, এমনকি নিজের দলের মধ্যেও তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনা বাড়ছে৷
বিজ্ঞাপন
করোনা সংকটের সময় জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সংযত, শান্ত, যুক্তিপূর্ণ আচরণ এবং ঐকমত্যের ভিত্তিতে সরকারি নীতি পরিচালনার দৃষ্টান্ত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে প্রশংসা কুড়াচ্ছে৷ দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে সরকার-প্রধান থাকা সত্ত্বেও এই সংকটের সময়ে জার্মানিতেও তাঁর জনপ্রিয়তা বেড়েছে৷ কিন্তু এতদিন দলমতনির্বিশেষে ম্যার্কেল যথেষ্ট সমীহ আদায় করলেও এবার সেই ভাবমূর্তিতে কিছুটা চিড় ধরছে৷
কড়াকড়ি শিথিল করা এবং করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কড়াকড়ি চালিয়ে যাবার প্রবক্তাদের মধ্যে সংঘাতে ম্যার্কেল দ্বিতীয় দলের প্রতি খোলামেলা সমর্থন দেখাচ্ছেন৷ পরিস্থিতির উন্নতি সত্ত্বেও তিনি বারবার সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে দিচ্ছেন৷ বিধিনিয়ম যেটুকু শিথিল করা হচ্ছে, আপাতত তার বেশি কোনো ছাড়ের প্রত্যাশা উড়িয়ে দিচ্ছেন ম্যার্কেল৷ যারা এই প্রশ্নে আরো ‘উদার' নীতির দাবি করছে, তাদের পরোক্ষভাবে ভর্ৎসনা করছেন তিনি৷
বিরোধীরা তা সত্ত্বেও মুখ বন্ধ রাখছে না৷ জার্মান সংসদের নিম্ন কক্ষ বুন্ডেসটাগের স্পিকার এবং ম্যার্কেলের সিডিইউ দলের গুরুত্বপূর্ণ ও অভিজ্ঞ নেতা ভল্ফগাং শয়েবলে এক সংবাদপত্রের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলেন, কড়াকড়ির মেয়াদ আরো বাড়ালে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার খর্ব হবে৷ ডেয়ার টাগেসস্পিগেল সংবাদপত্রকে শয়েবলে বলেন, ‘‘যখন শুনি জীবন বাঁচানোর বিষয়টিকে সবার উপরে রাখতে হবে, আমার মনে হয় সেটা মোটেই পুরোপুরি ঠিক নয়৷''
বিধিনিষেধ শিথিল করার প্রশ্নে ম্যার্কেলের সঙ্গে কয়েকটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সংঘাতও বাড়ছে৷ জার্মানির সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়ার মুখ্যমন্ত্রী এবং ম্যার্কেলের দলের নেতা আরমিন লাশেট রবিবার এক সাক্ষাৎকারে বলেন, করোনা সংকট এখনো জীবন-মরণের বিষয় হলেও কীভাবে বিধিনিয়ম শিথিল করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনায় কোনো ক্ষতি নেই৷ এ ক্ষেত্রে লকডাউনের নেতিবাচক প্রভাবও বিবেচনা করা উচিত৷ বিশেষ করে স্কুল বন্ধ থাকায় শিশুরা যেভাবে প্রায় ছয় সপ্তাহ ধরে বাসায় থাকতে বাধ্য হচ্ছে, সে বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি৷ লাশেট এমনকি অনেক বিশেষজ্ঞের পূর্বাভাষ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন৷ তিনি মনে করিয়ে দেন যে, এই মুহূর্তে তাঁর রাজ্যে হাসপাতালের আইসিইউ-তে প্রায় ৪০ শতাংশ খালি রয়েছে৷ লাশেটের এই মন্তব্যের ভিত্তিতে জার্মানির সহচেয়ে জনপ্রিয় ট্যাবলয়েড সংবাদপত্র ‘বিল্ড' ম্যার্কেল-কে বেশ নেতিবাচক আলোকে তুলে ধরেছে৷
জার্মানির বিরোধী দলগুলি সংকটের মাঝে এতকাল সরকারের প্রতি সমর্থন দেখিয়ে এলেও এবার প্রকাশ্যে ম্যার্কেলের সমালোচনা শুরু করেছে৷ জনপ্রিয় সবুজ দল বিধিনিয়ম শিথিল করার প্রশ্নে আরো সতর্কতার ডাক দিয়েছে৷ দলের সহ-সভানেত্রী আনালেনা বেয়ারবক দর্শক ছাড়াই বুন্ডেসলিগা ম্যাচের অনুমতির তীব্র বিরোধিতা করেছেন৷ উদাররন্থি দলের নেতা ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনার বলেন, করোনা সংকট মোকাবিলায় সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে ঐকমত্য ভেঙে যাচ্ছে৷ তাঁর মতে, জাতীয় ঐক্যের দিন শেষ৷ সোমবার তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, কোনো রাষ্ট্র স্বাধীনতা খর্ব করলে তার সপক্ষে যথেষ্ট যুক্তি পেশ করতে হবে৷ গত কয়েক সপ্তাহান্ত ধরে বার্লিনে চরম বামপন্থি ও চরম দক্ষিণপন্থি গোষ্ঠী বিক্ষোভ দেখিয়ে চলেছে৷ করোনা সংকটের কারণ দেখিয়ে ‘স্বৈরাচারী ও অসাংবিধানিক' পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ‘গণতান্ত্রিক প্রতিরোধ' গড়ে তুলতেই তারা এমনটা করছে বলে জানিয়েছে৷
চ্যান্সেলর হিসেবে আঙ্গেলা ম্যার্কেল অবশ্য সমালোচনা সত্ত্বেও অবিচলিত রয়েছেন৷ চলতি সপ্তাহেই তিনি পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সম্ভবত আগামী পদক্ষেপ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন৷
এসবি/এসিবি (এএফপি, ডিপিএ)
অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলাতে কোন দেশ কী করছে
করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে৷ প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হওয়াসহ আছে সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থান হারানোর শঙ্কা৷ তবে উন্নত দেশগুলো এই পরিস্থিতি সামলাতে বিভিন্ন আর্থিক ব্যবস্থাও নিচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Jordan
জার্মানি
সব ধরনের কোম্পানি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ১১০ কোটি ডলারের ঋণ দিচ্ছে জার্মান সরকার৷ দুর্যোগকালীন এই পরিস্থিতি সামাল দিতে মোট ৮০ হাজার কোটি ডলারের তহবিল রয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷ কোম্পানিগুলোর আর্থিক স্বচ্ছলতা বজায় রাখতে দেয়া হচ্ছে কর-ছাড়৷ দেরিতে ঋণ পরিশোধে গুণতে হবে না জরিমানা৷ প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটকে দেয়া হবে সাড়ে ১৪ কোটি ইউরো৷
অর্থনৈতিক ধাক্কা সামাল দিতে ২১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের তহবিল ঘোষণা করেছে স্পেন৷ ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানি, কর্মী আর আর্থিক অস্বচ্ছলদের সুরক্ষায় এই অর্থ ব্যয় করা হবে৷ এর মধ্যে শুধু সামাজিক নিরাপত্তায় খরচ করা হবে প্রায় ৬৪ কোটি ডলার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AAB. Akbulut
পর্তুগাল
১৮ মার্চ থেকে ১৫ দিনের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে পর্তুগাল৷ এখন পর্যন্ত এক হাজার কোটি ডলারের প্রণোদনা ‘প্যাকেজ’ ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার৷ এরমধ্যে ৩২২ কোটি ডলার পর্যটন, বস্ত্র, কাঠসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ঋণ সহায়তা হিসেবে দেয়া হবে৷ ৫৩৬ কোটি ডলার আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে কর সুবিধা ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে৷
ছবি: Reuters/M. F. Lopes
ফ্রান্স
প্রায় পাঁচ হাজার কোটি ডলার সহায়তা তহবিলের প্রকল্প হাতে নিয়েছে ফ্রান্স সরকার৷ এর বড় একটি অংশ দেয়া হবে ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে৷ রেস্টুরেন্ট, দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং কোয়ারান্টিনের কারণে যেসব কর্মী কাজে যোগ দিতে পারছেন না, তাদের জন্য কয়কশ’ কোটি ডলার ব্যয়ের ঘোষণা দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Marin
যুক্তরাজ্য
করোনা ভাইরাসের কারণে ১৪৫০ কোটি ডলারের জরুরি আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছে যুক্তরাজ্য৷ জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা এবং সমস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লোকসান মেটাতে এই টাকা দেয়া হবে৷ পাশাপাশি খুচরা ব্যবসা এবং পর্যটন শিল্পের জন্য ৪০ হাজার কোটি ডলারের ঋণ তহবিলও রাখা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/empics/PA Video
যুক্তরাষ্ট্র
সম্প্রতি ১০ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের একটি সহায়তা প্যাকেজের অনুমোদন দিয়েছে সেনেট৷ স্বাস্থ্য বিমা ছাড়াই করোনার পরীক্ষা করানো, স্কুলগামী শিশুদের জন্য খাবার সরবরাহ, কর্মীদের ১০ দিনের অসুস্থতাজনিত এবং কিছু ক্ষেত্রে ১২ সপ্তাহের বেতনসহ ছুটির পেছনে এই টাকা ব্যয় হবে৷ পাশাপাশি এক ট্রিলিয়ন ডলারের আরেকটি প্রণোদনা প্যকেজের জন্য আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছে ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন৷
ছবি: Reuters/L. Millis
ক্যানাডা
ক্যানাডার জন্য পাঁচ হাজার ৬৪০ কোটি ডলারের সহায়তা দেয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো৷ এই অর্থ দেশটির জিডিপির তিন শতাংশ ৷ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর-ছাড়, কর্মীদের বেতন, সমাজে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ব্যয় হবে এই অর্থ৷
ছবি: picture-alliance/empics/M. Sudoma
অস্ট্রেলিয়া
১১০০ কোটি ডলারের আর্থিক প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া সরকার৷ ৬৫ লাখ নিম্ন আয়ের মানুষকে এককালীন ৪৫১ ডলার করে দেয়া হবে এই তহবিল থেকে৷ পাশাপাশি এক লাখ ২০ হাজার শিক্ষানবিশ চাকুরিজীবী এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে টিকিয়ে রাখতেও খরচ করা হবে এখান থেকে৷ অন্যদিকে অর্থনীতিকে সচল রাখতে ঋণের সুদহার কমিয়ে দিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Carrett
তুরস্ক
করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ১৫৪০ কোটি ডলারের ব্যয় পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে তুরস্ক৷ ‘অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা’ শিরোনামের এই প্যাকেজটির আওতায় মোট ২১ টি খাতে খরচ করা হবে৷ এর মধ্যে অবসরকালীন ভাতা বৃদ্ধি, ব্যবসা সহযোগিতা, মূল্য সংযোজন কর হ্রাসসহ খুচরা, ইস্পাত, গাড়ি ও পর্যটন শিল্পে আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে৷