হলিউডের চলচ্চিত্র ‘অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেইজ'৷ যাতে সহ অভিনেতাকে সঙ্গে নিয়ে হাসি-তামাশা-রোমাঞ্চে পৃথিবী ঘুরেছিলেন নায়ক জ্যাকি চ্যান৷ এবার বাস্তবে বাইসাইকেলে চড়ে পৃথিবী ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারের চাকরি ছেড়ে চার বছর আগে পৃথিবী ঘুরতে বের হন জ্যাকি চ্যান৷ দ্বিচক্রযানে এর মধ্যে অ্যামেরিকা, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের ৬৪টি দেশ ঘুরে শেষ করেছেন তিনি৷
৬৪ দেশ ঘুরে সম্প্রতি তিনি পৌঁছান ইসরায়েলের জেরুজালেমে৷ যেখানে তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি৷
‘‘এটি একটি রোমাঞ্চকর যাত্রা,'' পৃথিবী ঘুরতে বের হওয়ার উদ্দেশ্য হিসাবে বলেছেন চেন৷ এর মধ্যে তিনি পাড়ি দিয়েছেন ৫৪ হাজার কিলোমিটার৷
চেন বলছেন, আগামী তিন বছরে আরো ৩৬ দেশ ঘুরে একশ পূর্ণ করতে চান তিনি৷ এক্ষেত্রে তাঁর লক্ষ্য এক লাখ মাইল পাড়ি দেওয়ার৷
চলতি পথে রাত পার করা নিয়ে তেমন চিন্তা করেন না ৪০ বছর বয়সি চেন৷ ‘কাউচসার্ফিং'-এর মতো অ্যাপের মাধ্যমে থাকার ব্যবস্থা করে নেন তিনি, কিংবা সঙ্গে থাকা তাঁবু খাটিয়ে রাত পার করেন দেন৷
ঘোরার জায়গা ঠিক করতে আগে থেকে বেশি গবেষণাও করেন না চেন৷ তিনি মনে করেন, কোনো একটি জায়গা দেখার পরই সেটা নিয়ে মুগ্ধ হতে চান তিনি৷
‘‘এটা আমাকে আশ্চর্য করে দেয়,'' জেরুজালেম সম্পর্কে বলেছেন চেন৷ ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের কেন্দ্রস্থল হলেও খ্রিস্টান, মুসলিম ও ইহুদি উৎসভূমি হিসাবে এটাকে দেখতে চেয়েছেন তিনি৷
ভ্রমণের সময় কিছু কঠিন সময়ের বর্ণনাও এএফপির কাছে দেন চেন৷ বরফ আচ্ছাদিত পর্বতের চেয়ে পাশ দিয়ে যাওয়া ট্রাক কিংবা লরি তাঁকে বেশি ভীত করে বলে জানান তিনি৷
যুক্তরাষ্ট্রর আলাস্কা রাজ্য থেকে চার বছর আগে যাত্রা শুরু করেছেন চেন৷ এরপর পেরুর মাচু পিচু পর্বত এলাকা যেমন তিনি ঘুরেছেন, তেমনি ভ্রমণ করেছেন প্যারিসেও৷
জেরুজালেম থেকে মিশর হয়ে আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলভ্রমণে যাবেন তিনি৷ এরপর এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশ ঘুরে ক্ষান্ত দেওয়ার ইচ্ছা চেনের৷
কম সময়ে সাইকেল চালিয়ে পুরো পৃথিবী ঘোরার রেকর্ড স্কটল্যান্ডের মার্ক বিয়াউমাউন্টের৷ ২০১৭ সালে মাত্র ৭৯ দিনে পৃথিবী ভ্রমণ করেন তিনি৷
তবে ঘুরে রেকর্ডের চেয়ে পৃথিবীর সৌন্দর্য্য দেখে মুগ্ধ হওয়ার কথা বলছেন চেন৷ ‘‘যেসব মানুষের সঙ্গে আমি মিশি, তারাই আমাকে সবচেয়ে অভিভূত করে,'' এএফপিকে বলেছেন তিনি৷
বাংলাদেশের জনপ্রিয় ১৫টি পর্যটন কেন্দ্র
পৃথিবীর মানচিত্রে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে দক্ষিণ এশিয়ার ছোট্ট দেশ বাংলাদেশ৷ সমুদ্র-পাহাড়-নদী – সব পর্যটন আকর্ষণই আছে এই দেশটিতে৷ বাংলাদেশের ১৫টি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রের কথা তুলে ধরা হলো এখানে৷
ছবি: DW/M. Mamun
দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত
পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার৷ প্রায় ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্য৷ কক্সবাজারকে তাই বলা হয় বাংলাদেশের পর্যটন রাজধানী৷ কক্সবাজার শহরে গত কয়েক বছরে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন মানের হোটেল-রিসোর্ট৷
ছবি: DW/M. Mamun
একমাত্র প্রবাল দ্বীপ
বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন৷ টেকনাফ থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার সমুদ্র গর্ভে জেগে ওঠা এ দ্বীপটির আয়তন প্রায় ১৬ বর্গকিলোমিটার৷ এ দ্বীপের মূল আকর্ষণ সৈকত জুড়ে প্রবাল পাথরের মেলা, সারি সারি নারিকেল বৃক্ষ, দিগন্তে হারিয়ে যাওয়া সমুদ্রের নীল জলরাশি আর স্থানীয়দের বিচিত্র জীবনযাপন৷ প্রায় দশ হাজার লোকের বসবাস এই দ্বীপে৷ এ দ্বীপের আরেক নাম ‘নারিকেল জিঞ্জিরা’৷
ছবি: DW/M. Mamun
নির্জন সমুদ্র সৈকত
বাংলাদেশের সবচেয়ে নিরিবিলি ও পরিচ্ছন্ন সমুদ্র সৈকত টেকনাফ৷ নির্জনে যারা অবকাশ যাপন পছন্দ করেন, তাদের জন্য আদর্শ ভ্রমণ গন্তব্য এটি৷
ছবি: DW/M. Mamun
পাহাড় চূড়ায় নীলগিরি
বান্দরবান জেলাসদর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরের এ পর্যটন কেন্দ্রটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২২০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত৷ এখান থেকে মেঘ ছুঁতে পারেন পর্যটকরা৷ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত এ পর্যটন কেন্দ্রটিতে কয়েকটি রিসোর্টও আছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
মেঘে ঢাকা নীলাচল
বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে টাইগারপাড়ার পাহাড়চূড়ায় জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র নীলাচল৷ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৬০০ ফুট উচ্চতায় এ পর্যটন কেন্দ্রটিতে মেঘের লুকোচুরি দেখা যায়৷ নীলাচল থেকে পাখির চোখে দেখা যায় বান্দরবান শহরকেও৷
ছবি: DW/M. Mamun
পাহাড়ের বাঁকে কাপ্তাই লেক
পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে প্রায় ১৭৬০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের কাপ্তাই লেক রাঙ্গামাটির অন্যতম ভ্রমণ গন্তব্য৷ কাপ্তাই লেকের ঝুলন্ত সেতু পর্যটকদের কাছে বেশি জনপ্রিয়৷ এছাড়া কাপ্তাই লেকের অন্যতম আকর্ষণ নৌকা ভ্রমণ৷
ছবি: DW/M. Mamun
পাথর বিছানো বিছনাকান্দি
সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নের সীমান্ত ঘেঁষা বিছনাকান্দি পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়৷ পাথর বিছানো বিস্তীর্ণ প্রান্তরের উপরে বয়ে চলা মেঘালয়ের পাহাড়ী ঝরনাধারা বিছনাকান্দির মূল আকর্ষণ৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিশ্ব ঐতিহ্য স্থাপনা ষাট গম্বুজ
দক্ষিণাঞ্চলের জেলা শহর বাগেরহাটে অবস্থিত ষাট গম্বুজ মসজিদ৷ ১৯৮৩ সালে এটি বাংলাদেশের তিনটি বিশ্ব ঐতিহ্য স্থানের একটি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে৷ নাম ষাট গম্বুজ হলেও মসজিদটিতে মূলত একাশিটি গম্বুজ আছে৷ খান জাহানের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য কীর্তি এটি৷ ধারণা করা হয়, ষাট গম্বুজ মসজিদটি তিনি নির্মাণ করেছিলেন ১৪৫৯ খ্রিষ্টাব্দের কিুছুকাল আগে৷
ছবি: DW/M. Mamun
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শ্বাসমূলীয় বন
বাংলাদেশ ও ভারতজুড়ে প্রায় দশ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শ্বাসমূলীয় বন সুন্দরবন৷ এর বাংলাদেশ অংশের আয়তন প্রায় ছয় হাজার বর্গ কিলোমিটার৷ ১৯৯৭ সালে সুন্দরবন ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় ৭৯৮তম বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পায়৷ বিপন্ন বেঙ্গল টাইগারের নিরাপদ আবাসস্থল এটি৷ দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে যায়গাটি বেশ পছন্দের৷
ছবি: DW/M. Mamun
রাঙ্গামাটির ছাদ সাজেক ভ্যালি
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৮০০ ফুট উচ্চতায় সাজেক ভ্যালিকে বলা হয় ‘রাঙ্গামাটির ছাদ’৷ ভৌগোলিক অবস্থান রাঙামাটিতে হলেও যাতায়াতের সহজ পথ খাগড়াছড়ি হয়ে৷ সাজেকের আশপাশের গ্রামগুলোতে লুসাই,পাংখোয়া এবং ত্রিপুরা আদিবাসীদের বসবাস৷ কমলা চাষের জন্য বিখ্যাত সাজেকে কফিও চাষ করা হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
দক্ষিণের ভাসমান বাজার
দক্ষিণের জেলা শহর ঝালকাঠী থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে ভিমরুলি গ্রামের কৃত্তিপাশা খালের শতবর্ষের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী ভাসমান বাজার৷ প্রায় সারা বছরই এ হাট বসলেও পেয়ারা ও আমড়ার মৌসুমে প্রায় তিন মাস এ হাট জমজমাট থাকে৷ সপ্তাহের প্রতিদিনই বসে ভাসমান এ হাট৷ ঝালকাঠী থেকে ছোট ছোট খালে ঘুরে এ সব এলাকার মানুষের বিচিত্র জীবনযাত্রাও দেখা যায়৷
ছবি: DW/M. Mamun
সাগরকন্যা কুয়াকাটা
সাগরকন্যা খ্যাত কুয়াকাটা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলা পটুয়াখালীর শেষপ্রান্তে অবস্থিত৷ এটি বাংলাদেশের একমাত্র সমুদ্র সৈকত যেখানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য দেখা যায়৷ এছাড়া কুয়াকাটার পাশেই আছে ফাতরার বন, যেটি সুন্দরবনেরই একটি অংশ বিশেষ৷
ছবি: DW/M. Mamun
ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দির
পুরনো ঢাকার প্রাচীন স্থাপনাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঢাকেশ্বরী মন্দির৷ কিংবদন্তী আছে রাজা বল্লাল সেন বুড়িগঙ্গা নদীর তীরের জঙ্গলে দেবী দুর্গার একটি মূর্তি পেয়ে একটি মন্দির নির্মাণ করে সেটিকে সেখানে স্থাপন করেন৷ আর নাম দেন ঢাকেশ্বরী মন্দির৷ অনেক ঐতিহাসিকের মতে এই ঢাকেশ্বরী নাম থেকেই ‘ঢাকা’ নামের উৎপত্তি৷
ছবি: DW/M. Mamun
লালবাগ দুর্গ
পুরনো ঢাকার লালবাগে অবস্থিত এ দুর্গটি মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের ছেলে শাহজাদা আজাদ ১৬৭৮ সালে নির্মাণ শুরু করেছিলেন৷ পরে শায়েস্তা খান এসে ১৬৮৪ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ করেন৷ এ দুর্গের ভেতরে পরীবিবির সমাধি, দরবার হল ও তিন গম্বুজ বিশিষ্ট তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা আছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
প্রাচীন স্থাপনা সমৃদ্ধ সোনারগাঁও
প্রাচীন সুবর্ণগ্রাম থেকেই সোনারগাঁও নামের উদ্ভব৷ বঙ্গ অঞ্চলে মুসলমানদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হবার পর থেকে ১৬১০ সালে ঢাকা নগরের অভ্যুদয়ের আগ পর্যন্ত সোনারগাঁও ছিল দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গের প্রশাসনিক কেন্দ্র৷ সোনারগাঁও এলাকার প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শনগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো খাসনগর দীঘি, দুলালপুরের নীলকুঠি, গোয়ালদি শাহী মসজিদ, আমিনপুর মঠ, দামোদরদি মঠ, পানাম নগরের আবাসিক ভবন, বড় সরদার বাড়ি প্রভৃতি৷