1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাইসাইকেল: যেন মুক্তির আনন্দ

১ জুলাই ২০১৪

বাইসাইকেলের হাতল চেপে ধরে মেয়েগুলো যখন হাওয়ার বেগে পাহাড়ি পথ বেয়ে নামে, কোনো পুরুষের তীর্যক দৃষ্টি, কোনো কটূক্তিই তাঁদের যেন ছুঁতে পারে না৷ অথচ মাত্র এক প্রজন্ম আগেও আফগানিস্তানে এমন দৃশ্য ছিল কল্পনাতীত৷

আফগান নারীরা সাইকেল চালাচ্ছেছবি: Shah Marai/AFP/Getty Images

বিশ্বের অধিকাংশ দেশে মেয়েদের বাইসাইকেলে চড়া একটি স্বাভাবিক ঘটনা৷ তবে আফগানিস্তানের কঠোর ধর্মীয় ও সামাজিক অনুশাসনে মেয়েদের খেলাধুলায় নিরুৎসাহিত করা হয়৷ যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের দশ সদস্যের উইমেন সাইক্লিস্ট দল প্রচলিত সেই ধারণাকেই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে৷

এ দলের সদস্যরা জানে, তাঁদের সামনে ঝুঁকি অনেক৷ কিন্তু তাঁদের নজর বহু দূরে৷ কেবল ২০২০ সালের অলিম্পিকে অংশ নেয়াই তাদের স্বপ্ন নয়, তাঁরা চায়, আরো আফগান মেয়ে চড়ে বসুক সাইকেলে৷

ছবি: Shah Marai/AFP/Getty Images

২৬ বছর বয়সি মার্জান সিদ্দিকী এই দলের সদস্য এবং সহকারী প্রশিক্ষক৷ তাঁর কাছে বাইসাইকেল যেন মুক্তির প্রতীক৷

‘‘কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য জানাতে আমরা বাইক চালাই না৷ আমরা সাইকেলে চড়ি কারণ আমরা এটা ভালোবাসি৷ কারণ আমাদের ভাইয়েরা যেটা পারে, আমরাও সেটা করতে পারি৷''

কোনো এক সুন্দর ভোরে ট্র্যাকস্যুট আর জার্সি পরে, হেলমেট মাথায় দিয়ে মার্জান আর তাঁর দলের সদস্যরা প্রশিক্ষণের জন্য কাবুল থেকে পাগমানের পাহাড়ি পথে বের হলো৷ ১৭ থেকে ২১ বছর বয়সি এই তরুণীদের দেখে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে গেল সালোয়ার কামিজ পরিহিত এক আফগান বালক৷ তাঁর চোখে নগ্ন বিষ্ময়৷

কিছুদূর পর টয়োটা ভ্যান চালিয়ে সাইকেলগুলো পাশ কাটালেন মলিন দাড়িওয়ালা এক প্রৌঢ়৷ বিষ্ময় ছাপিয়ে তার দৃষ্টিতে প্রকাশ পেল উষ্মা৷ তবে তাতে সাইকেলের গতি কমলো না৷

এ ধরনের প্রতিক্রিয়ায় সাইকেল আরোহী এই আফগান মেয়েরা অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে৷ কখনো কখনো তাঁদের পড়তে হয়েছে আরো বাজে অভিজ্ঞার মুখে৷ তাঁরা যখন প্যাডেল মেরে এগিয়ে গেছে, কানের পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেছে একের পর এক খিস্তি –

‘‘বেশ্যা''

‘‘ছিনাল''

‘‘এ সব করে তোদের পরিবারের ইজ্জত বাড়ছে?''

‘‘রাস্তা ছেড়ে বাড়ি যা...''

এ সব খিস্তি-খেউড় উইমেন সাইক্লিস্ট দলকে হতোদ্যম করতে পারেনি, কারণ কিছু জায়গা থেকে তাঁরা এমন উৎসাহ পেয়েছে, যা তাঁরা আশাও করেনি৷

স্বপ্নের যাত্রা

পাগমানের পথে এই মেয়েদের স্বাগত জানালেন আপাদমস্তক কালো বোরখায় ঢাকা এক নারী৷ হাত-পা নেড়ে উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে তিনি তাঁদের উৎসাহ দিলেন৷ তাঁর মেয়ে ফিরোজাও এই সাইক্লিস্ট দলের সদস্য৷

ফিরোজার মা মারিয়া রাসুলি বলেন, ‘‘আমার বাবা-মা আমাকে কখনো সাইকেলে চড়তে দেননি৷ আমি চাইনি আমার মেয়ের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটুক৷''

তিনি জানান, ২০ বছর বয়সি ফিরোজা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেও তাঁর সাইকেল চালানোর বিষয়টি পরিবারের অনেকে পছন্দ করে না৷ সে যে মেয়েদের সাইক্লিস্ট দলে সুযোগ পেয়েছে, সে খবর প্রতিবেশীদের কাছেও তাঁরা গোপন রেখেছেন৷

যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর অভিযানে তালেবান সরকারের পতন হওয়ার পর গত ১৩ বছরে অনেক পথ পাড়ি দিয়েছেন আফগান নারীরা৷ শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় তাঁদের সম্পৃক্ততা বেড়েছে৷ আফগান নারীরা অংশ নিচ্ছেন আইন প্রণয়নেও৷ আফগানরা সাম্প্রতিক নির্বাচনে প্রথমবারের মতো একজন নারীকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেখেছে৷

সেই যুগ তাঁরা পার হয়ে এসেছেন, যখন আফগান নারীরা পুরুষ সঙ্গী ছাড়া বাইরে যেতে পারতেন না৷ তবে নারী-পুরুষ সমান অধিকার এখনো তাঁদের কাছে বহু দূরের স্বপ্ন৷ কাবুলের এক ক্যাফের দেয়ালে এই বিষয়টিই ফুটিয়ে তুলেছেন গ্র্যাফিটি বা গ্রাফিতি শিল্পী শামসিয়া হাসানি৷ তাঁর ছবিতে বোরখায় ঢাকা এক আফগান নারী যেন আটকা পড়ে আছে জলমগ্ন এক পৃথিবীতে৷

কিছুদিন আগে এক প্রশিক্ষণের সময় তিন যুবক মোটর সাইকেলে চড়ে এসে মেয়েদের সাইকেলের বহরে হামলে পড়ে৷ তাঁদের ধাক্কায় ১৮ বছর বয়সি সাদাফ নাজারির সাইকেল উল্টে পড়ে মার্জানের গায়ের ওপর৷ পিঠে বড় ধরনের আঘাত পান মার্জান৷

খবর পেয়েই গাড়ি চালিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান আফগান সাইক্লিং ফেডারেশনের প্রধান মোহাম্মদ সাদিক৷ হামলাকারীদের পিছু ধাওয়া করে একজনকে তিনি আটকও করেন৷ তাঁকে পুলিশে দিয়ে মেয়েদের কাবুলে পৌঁছে দেন নিরাপদে৷

সাইক্লিং নিয়ে নিজের মেয়ের আগ্রহ দেখে ২০০৩ সালে মেয়েদের এই দলটি গঠন করেছিলেন সাদিক৷ তবে ২০১৬ সালের মধ্যে পশ্চিমা বাহিনীর আফগানিস্থান থেকে চলে যাওয়ার পরিকল্পনায় তাঁর মনে এখন শঙ্কা জাগছে৷

তাঁর ভাষায়, তালেবান জঙ্গিরা যদি ফেরে, আফগানিস্তানে সবার আগে খুন হবে নারী স্বাধীনতা৷ সাদিক যখন কথা বলছিলেন, কাবুল থেকে সাইকেল চালিয়ে আসা মেয়েরা তখন কোচ শ্যানন গালপিনের কাছ থেকে খাদ্য ও পুষ্টির পাঠ নিচ্ছে৷ শ্যাননই এই মেয়েদের আসন্ন এশিয়ান গেমসের জন্য তালিম দিচ্ছেন৷

প্রশিক্ষণ শেষে পাগমানে গোসল সেরে ক্লান্ত সাইক্লিস্টরা খিদে মেটালো নান রুটি আর পনির দিয়ে৷ রাস্তার পাশে এক ফলের দোকানে অপরিচিত এক আফগান মার্জানের কাছে জানতে চাইলেন – ‘‘যারা সাইকেল চালিয়ে এলো, তুমি কি তাদেরই একজন?''

এমন প্রশ্নে হতচকিত মার্জানের চোখ প্রথমে আশেপাশে বিপদ খুঁজলো৷ বলবে না ভেবেও মাথা নেড়ে সে বলে ফেললো – ‘হ্যাঁ'৷

এরপর লোকটি জানতে চাইলেন – ‘‘আচ্ছা, ওরা ছেলে না মেয়ে?''

এবার হাসিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো মার্জানের মুখ৷

গর্বিত কণ্ঠে তার ছোট্ট উত্তর – ‘‘আমরা মেয়ে৷''

জেকে/ডিজি (এএফপি, এপি)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ