বাইসাইকেলের হাতল চেপে ধরে মেয়েগুলো যখন হাওয়ার বেগে পাহাড়ি পথ বেয়ে নামে, কোনো পুরুষের তীর্যক দৃষ্টি, কোনো কটূক্তিই তাঁদের যেন ছুঁতে পারে না৷ অথচ মাত্র এক প্রজন্ম আগেও আফগানিস্তানে এমন দৃশ্য ছিল কল্পনাতীত৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্বের অধিকাংশ দেশে মেয়েদের বাইসাইকেলে চড়া একটি স্বাভাবিক ঘটনা৷ তবে আফগানিস্তানের কঠোর ধর্মীয় ও সামাজিক অনুশাসনে মেয়েদের খেলাধুলায় নিরুৎসাহিত করা হয়৷ যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের দশ সদস্যের উইমেন সাইক্লিস্ট দল প্রচলিত সেই ধারণাকেই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে৷
এ দলের সদস্যরা জানে, তাঁদের সামনে ঝুঁকি অনেক৷ কিন্তু তাঁদের নজর বহু দূরে৷ কেবল ২০২০ সালের অলিম্পিকে অংশ নেয়াই তাদের স্বপ্ন নয়, তাঁরা চায়, আরো আফগান মেয়ে চড়ে বসুক সাইকেলে৷
২৬ বছর বয়সি মার্জান সিদ্দিকী এই দলের সদস্য এবং সহকারী প্রশিক্ষক৷ তাঁর কাছে বাইসাইকেল যেন মুক্তির প্রতীক৷
‘‘কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য জানাতে আমরা বাইক চালাই না৷ আমরা সাইকেলে চড়ি কারণ আমরা এটা ভালোবাসি৷ কারণ আমাদের ভাইয়েরা যেটা পারে, আমরাও সেটা করতে পারি৷''
কোনো এক সুন্দর ভোরে ট্র্যাকস্যুট আর জার্সি পরে, হেলমেট মাথায় দিয়ে মার্জান আর তাঁর দলের সদস্যরা প্রশিক্ষণের জন্য কাবুল থেকে পাগমানের পাহাড়ি পথে বের হলো৷ ১৭ থেকে ২১ বছর বয়সি এই তরুণীদের দেখে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে গেল সালোয়ার কামিজ পরিহিত এক আফগান বালক৷ তাঁর চোখে নগ্ন বিষ্ময়৷
কিছুদূর পর টয়োটা ভ্যান চালিয়ে সাইকেলগুলো পাশ কাটালেন মলিন দাড়িওয়ালা এক প্রৌঢ়৷ বিষ্ময় ছাপিয়ে তার দৃষ্টিতে প্রকাশ পেল উষ্মা৷ তবে তাতে সাইকেলের গতি কমলো না৷
এ ধরনের প্রতিক্রিয়ায় সাইকেল আরোহী এই আফগান মেয়েরা অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে৷ কখনো কখনো তাঁদের পড়তে হয়েছে আরো বাজে অভিজ্ঞার মুখে৷ তাঁরা যখন প্যাডেল মেরে এগিয়ে গেছে, কানের পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেছে একের পর এক খিস্তি –
আমস্টারডামের সাইকেল ‘‘খোয়াড়’’
নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডামে মানুষের চেয়ে সাইকেলের সংখ্যা বেশি৷ অবস্থা এমন যে, সাইকেলের কারণে রাস্তাঘাটে চলাই দায়৷ ফলে শহর কর্তৃপক্ষ অবৈধভাবে পার্ক করা সাইকেলগুলো তুলে নিয়ে রেখে দেয় এক বিশেষ জায়গায়৷
ছবি: DW/C. Nasman
সাইকেল অনেক, জায়গা কম
আমস্টারডাম শহরে মানুষের চেয়ে সাইকেলের সংখ্যা বেশি৷ নেদারল্যান্ডসের রাজধানীর জনসংখ্যা সাত লাখের মতো৷ আর সাইকেলের সংখ্যা আনুমানিক দশ লাখ৷ সাইকেল পার্ক করার নির্দিষ্ট জায়গা আছে শহরে৷ কিন্তু সেগুলো ভরা থাকে অধিকাংশ সময়৷ তাই অনেকে রাস্তার পাশে অবৈধভাবে রাখেন সাইকেল৷ সেখানে সাইকেল চুরিও এক নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার৷
ছবি: DW/C. Nasman
সাইকেল যখন মাথাব্যাথার কারণ!
আমস্টারডামে সাইকেল পার্ক করা এক জটিল ব্যাপার৷ রাস্তাগুলো সরু আর সাইকেল পার্ক করার নির্দিষ্ট জায়গাও কম৷ এই সাইকেল আরোহী আমস্টারডাম ট্রেন স্টেশনের বাইরে সাইকেলটি রাখার জায়গা খুঁজছেন৷
ছবি: DW/C. Nasman
আগে আসলে, আগে পাবেন
আমস্টারডাম ট্রেন স্টেশনের বাইরে একটি খালের উপর গড়ে তোলা সাইকেল রাখার জায়গার ছবি এটি৷ তিন তলা এই পার্কিংয়ে আড়াই হাজারের বেশি সাইকেল বিনা খরচায় রাখা যায়৷ তবে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সাইকেল সরিয়ে নিতে হয়৷ আগে আসলে, আগে পাবেন ভিত্তিতে সাইকেল রাখার জায়গা পাওয়া যায় এখানে৷
ছবি: DW/C. Nasman
সাইকেল বন্যার ঝুঁকি
পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত জায়গার বাইরে রাখা সাইকেলগুলো শহর কর্তৃপক্ষ তুলে নিয়ে যায়৷ এরপর সেগুলোকে রাখা হয় সাইকেলের খোয়াড়ে, নেদারল্যান্ডসের ভাষার যাকে বলে ‘‘ফিয়েটসডিপো৷’’ আমস্টারডামের সাইকেলের খোয়াড়ের ম্যানেজার পিটার বের্কহ্যুট এই বিষয়ে বলেন, ‘‘সাইকেলগুলো না সরানো হলে গোটা শহর সাইকেলে ঢেকে যাবে৷ তখন হাঁটাচলা অসম্ভব হয়ে যাবে৷’’ ২০১২ সালে খোয়াড়ে জমা হয়েছিল ৬৫,০০০ সাইকেল৷
ছবি: DW/C. Nasman
নতুন আগত
আমস্টারডাম ট্রেন স্টেশনের কাছ থেকে তুলে আনা সাইকেলগুলো গাড়ি থেকে নামাচ্ছেন খোয়াড় কর্মীরা৷ হঠাৎ একদিন শহর কর্তৃপক্ষ অবৈধভাবে পার্ক করা সাইকেলের সন্ধানে বের হন৷ এরপর সেসব সাইকেলের লক কেটে গাড়িতে তুলে খোয়াড়ে নিয়ে আসেন৷ সেখানে একসঙ্গে ১২ থেকে ১৭ হাজার সাইকেল রাখা যায়৷
ছবি: DW/C. Nasman
রেকর্ড রাখা
এই সাইকেলগুলোকে খোয়াড়ে জমা করার জন্য রাখা হয়েছে৷ একটু লক্ষ্য করে দেখা যাবে প্রতিটি সাইকেলে কমলা রংয়ের ট্যাগ জুড়ে দেওয়া হয়েছে৷ এভাবে সাইকেলের রং, নকশা, সিরিয়াল নম্বর, তুলে নেয়ার স্থানসহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহে রাখা হয়৷ কোনো সাইকেল আগে চুরি হয়েছিল কিনা সেটাও পরীক্ষা করে দেখা যায় এই পদ্ধতিতে৷
ছবি: DW/C. Nasman
হ্যালো, পুরনো বন্ধু!
রাস্তায় সাইকেল পার্ক করার কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে যদি দেখেন সেটি হাওয়া হয়ে গেছে, তখন কেমন লাগবে? নিঃসন্দেহে কষ্ট পাবেন আপনি৷ ২৭ বছর বয়সি ইমকা লিগ্টহার্ট একবার এমন পরিস্থিতিতে পরেছিলেন৷ তবে তিনি দ্রুতই ফোন করেন সাইকেলের খোয়াড়ে৷ পরেরদিন খোয়াড়ে গিয়ে সাইকেলটিও খুঁজে পান৷ তবে সেটি ফেরত পেতে দশ ইউরো জরিমানা গুনতে হয়েছিল তাঁকে৷
ছবি: DW/C. Nasman
প্রমাণ করুন
ফিলিপ বঙ্কের (২৬) জন্য সেদিনটা এমনিতেই খারাপ যাচ্ছিল৷ তার উপর টের পেলেন সাইকেলটাও হাওয়া৷ তবে তিনি মনে করেন, অবৈধভাবে পার্ক করে রাখা সাইকেল তুলে নেয়া ভালো, কেননা এতে করে অন্যরা পার্কিংয়ের জায়গা পায়৷ খোয়াড় থেকে নিজের সাইকেল ফিরে পেতে অবশ্য পরীক্ষা দিতে হয়েছিল ফিলিপকে৷ সাইকেলের লকে ঠিকঠাক চাবি ঢুকিয়ে পরীক্ষায় পাশ করেন তিনি৷
ছবি: DW/C. Nasman
ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষা
‘‘আমরা এগুলো মালিকের কাছে ফিরিয়ে দিতে চাই৷ এটাই আমারদের মূল উদ্দেশ্য’’, বলেন খোয়াড়ের ম্যানেজার বের্কহ্যুট৷ মালিকদের ফিরিয়ে দিতে সাইকেলগুলো তিন মাসের মতো খোয়াড়ে রাখা হয়৷ এই সময়ের মধ্যে মালিকরা সাইকেল নিতে না আসলে সেগুলো নিলামে তুলে বিক্রি করা হয়৷ বের্কহ্যুটের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, অনেক মালিকই হারিয়ে যাওয়া সাইকেলের খোঁজে খোয়াড়ে আসেন না৷ তাঁরা মনে করেন সাইকেল চুরি হয়ে গেছে৷
ছবি: DW/C. Nasman
9 ছবি1 | 9
‘‘বেশ্যা''
‘‘ছিনাল''
‘‘এ সব করে তোদের পরিবারের ইজ্জত বাড়ছে?''
‘‘রাস্তা ছেড়ে বাড়ি যা...''
এ সব খিস্তি-খেউড় উইমেন সাইক্লিস্ট দলকে হতোদ্যম করতে পারেনি, কারণ কিছু জায়গা থেকে তাঁরা এমন উৎসাহ পেয়েছে, যা তাঁরা আশাও করেনি৷
স্বপ্নের যাত্রা
পাগমানের পথে এই মেয়েদের স্বাগত জানালেন আপাদমস্তক কালো বোরখায় ঢাকা এক নারী৷ হাত-পা নেড়ে উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে তিনি তাঁদের উৎসাহ দিলেন৷ তাঁর মেয়ে ফিরোজাও এই সাইক্লিস্ট দলের সদস্য৷
ফিরোজার মা মারিয়া রাসুলি বলেন, ‘‘আমার বাবা-মা আমাকে কখনো সাইকেলে চড়তে দেননি৷ আমি চাইনি আমার মেয়ের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটুক৷''
তিনি জানান, ২০ বছর বয়সি ফিরোজা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেও তাঁর সাইকেল চালানোর বিষয়টি পরিবারের অনেকে পছন্দ করে না৷ সে যে মেয়েদের সাইক্লিস্ট দলে সুযোগ পেয়েছে, সে খবর প্রতিবেশীদের কাছেও তাঁরা গোপন রেখেছেন৷
গরিবের বাহন সাইকেল?
সাইকেল চালানোর অনেক উপকারিতা আছে৷ এটা যেমন একটা ব্যায়াম, তেমনি সহজে যে কোনো জায়গায় যেতে সাইকেল উত্তম মাধ্যম৷ কিন্তু ব্রাজিলের অনেকে মনে করেন এটা গরিবের বাহন৷ আপনি কি মনে করেন?
ছবি: picture-alliance/dpa
ব্রাজিলের সাংসদদের সাইকেল প্রিয়তা
ব্রাজিলের অনেক সাংসদ এখন শহর এলাকায় সাইকেলের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর পক্ষে৷ এ লক্ষ্যে শহরের রাস্তাগুলোতে সাইকেলের জন্য আলাদা পথ তৈরি করছে ব্রাজিল৷ ছবিতে দক্ষিণাঞ্চলীয় পর্যটন শহর বালনেরিও’র একটি সাইকেল পথ দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Greta Hamann
২২ কিলোমিটার
বালনেরিও শহরের এক লক্ষ মানুষের জন্য ইতিমধ্যে ২২ কিলোমিটার সাইকেল-পথ নির্মিত হয়েছে৷ এ বছরের মধ্যে সেটা দ্বিগুন হতে পারে৷ যদিও শহরের বাসিন্দারা এখনো সাইকেল ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারছেন না৷
ছবি: Greta Hamann
গাড়ির সঙ্গে প্রতিযোগিতা
অনেক ব্রাজিলিয়ান মনে করেন সাইকেল হলো গরিব মানুষের বাহন৷ তাই সেখানকার মধ্যবিত্তরাও ‘স্ট্যাটাস’ বজায় রাখতে গাড়ি কিনছেন৷
ছবি: Greta Hamann
লক্ষ্য শরীর ঠিক রাখা
অ্যাভেনিডা আটলান্টিকাকে দেখা যাচ্ছে বালনেরিও বিচের ধারে সাইকেল চালাতে৷ শরীর ঠিক রাখতে প্রায়ই তিনি এভাবে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন৷ এর ফলে শারীরিক পরিশ্রম হওয়ার পাশাপাশি পাওয়া যায় সাগরের সতেজ হাওয়া৷
ছবি: Greta Hamann
সাইকেল স্ট্যান্ড নেই
বালনেরিও শহরে সাইকেল আরোহীর সংখ্যা বাড়ছে৷ তবে বিচগুলোতে সাইকেল রাখার এখনো কোনো ব্যবস্থা চালু হয়নি৷ তবে শিগগিরই সেটা হবে বলে জানা গেছে৷
ছবি: Greta Hamann
সাইকেল-বান্ধব সংস্কৃতি
এই সংস্কৃতি গড়ে তুলতে চেষ্টা করে যাচ্ছে ব্রাজিল৷ যেমন ফার্নান্ডো রোজেনবাউম সাইকেলে চড়ার প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন আগ্রহীদের৷
ছবি: Greta Hamann
মাত্র চার শতাংশ
ব্রাজিলের বড় শহরগুলোর মাত্র চার শতাংশ জনগণ এখন সাইকেলে চড়ছেন৷ তবে সরকার আশা করছে, বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়ার কারণে হয়তো ধীরে ধীরে সেটা বাড়বে৷
ছবি: Greta Hamann
বাংলাদেশের জন্যও কি প্রয়োজন?
ঢাকার যানজটে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকে এখন সাইকেল বেছে নিচ্ছেন৷ ফলে এই তিন চাকার বাহনে করে অফিসগামী লোকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে৷ কিন্তু সাইকেলের জন্য আলাদা পথ না থাকায় কিছুটা ঝুঁকি নিয়েই তাদের সাইকেল চালাতে হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
8 ছবি1 | 8
যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর অভিযানে তালেবান সরকারের পতন হওয়ার পর গত ১৩ বছরে অনেক পথ পাড়ি দিয়েছেন আফগান নারীরা৷ শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় তাঁদের সম্পৃক্ততা বেড়েছে৷ আফগান নারীরা অংশ নিচ্ছেন আইন প্রণয়নেও৷ আফগানরা সাম্প্রতিক নির্বাচনে প্রথমবারের মতো একজন নারীকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেখেছে৷
সেই যুগ তাঁরা পার হয়ে এসেছেন, যখন আফগান নারীরা পুরুষ সঙ্গী ছাড়া বাইরে যেতে পারতেন না৷ তবে নারী-পুরুষ সমান অধিকার এখনো তাঁদের কাছে বহু দূরের স্বপ্ন৷ কাবুলের এক ক্যাফের দেয়ালে এই বিষয়টিই ফুটিয়ে তুলেছেন গ্র্যাফিটি বা গ্রাফিতি শিল্পী শামসিয়া হাসানি৷ তাঁর ছবিতে বোরখায় ঢাকা এক আফগান নারী যেন আটকা পড়ে আছে জলমগ্ন এক পৃথিবীতে৷
কিছুদিন আগে এক প্রশিক্ষণের সময় তিন যুবক মোটর সাইকেলে চড়ে এসে মেয়েদের সাইকেলের বহরে হামলে পড়ে৷ তাঁদের ধাক্কায় ১৮ বছর বয়সি সাদাফ নাজারির সাইকেল উল্টে পড়ে মার্জানের গায়ের ওপর৷ পিঠে বড় ধরনের আঘাত পান মার্জান৷
খবর পেয়েই গাড়ি চালিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান আফগান সাইক্লিং ফেডারেশনের প্রধান মোহাম্মদ সাদিক৷ হামলাকারীদের পিছু ধাওয়া করে একজনকে তিনি আটকও করেন৷ তাঁকে পুলিশে দিয়ে মেয়েদের কাবুলে পৌঁছে দেন নিরাপদে৷
সাইক্লিং নিয়ে নিজের মেয়ের আগ্রহ দেখে ২০০৩ সালে মেয়েদের এই দলটি গঠন করেছিলেন সাদিক৷ তবে ২০১৬ সালের মধ্যে পশ্চিমা বাহিনীর আফগানিস্থান থেকে চলে যাওয়ার পরিকল্পনায় তাঁর মনে এখন শঙ্কা জাগছে৷
ব্যতিক্রমী কিছু সাইকেলের দোকান
বার্লিনের অলিগলিতে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য সাইকেলের দোকান৷ ডয়চে ভেলের স্টুয়ার্ট ব্রাউন নিজের সাইকেলে চড়ে খুঁজে বের করেছেন ব্যতিক্রমী সেই সব সাইকেলের দোকান৷ এসব দোকানে এই দ্বিচক্রযান মেরামত, বিক্রি এবং সাজিয়ে রাখা হয়৷
ছবি: DW/S. Braun
সাইকেলের প্রতি আসক্তি
বার্লিনের অলিগলিতে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য সাইকেলের দোকান৷ ডয়চে ভেলের স্টুয়ার্ট ব্রাউন নিজের সাইকেলে চড়ে খুঁজে বের করেছেন ব্যতিক্রমী সেই সমস্ত সাইকেলের দোকান৷ এসব দোকানে এই সব দ্বিচক্রযান মেরামত, বিক্রি এবং সাজিয়ে রাখা হয়৷ ছবির এই দোকানটির নাম ‘রাডল্যুস্ট’৷ সেই ১৯৮১ থেকে সাইকেল বিক্রি করছে দোকানটি৷
ছবি: DW/S. Braun
শুরুর দিকের কথা
রাডল্যুস্ট-এর প্রতিষ্ঠাতা জোহান সি. ভাটেনব্যার্গ নিজের পছন্দের সাইকেলে বসে আছেন৷ গত শতকের আশির দশকে বার্লিনের ক্রয়েটসব্যার্গ জেলায় ছবিটি তোলা হয়৷
ছবি: Radlust
নিজেই করুন
ক্রয়েৎসব্যার্গে অবস্থিত ‘প্যাডেলক্রাফ্ট’ নামক এই দোকানে সাইকেল সারানোর যন্ত্রপাতি ধার হিসেবে পাওয়া যায়৷ যে কোনো সাইকেল আরোহী এখানে নিজের সাইকেল নিজেই ঠিক করতে পারেন কিংবা দোকান থেকে কেনা যন্ত্রাংশ নিজেই সাইকেলে জুড়ে নিতে পারেন৷
ছবি: DW/S. Braun
ব্যাঙের চাকা!
‘ফ্রশরাড’ বা ব্যাঙের চাকা নামে এই সাইকেলের দোকানটির যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৭ সালে৷ বার্লিনের রাস্তার উপযোগী বৈচিত্রময় এবং মজবুত সাইকেল তৈরি করেন দোকানটির মালিক৷
ছবি: DW/S. Braun
‘ফিট্সভিঙ্কেল’
বার্লিনের পুরনো টেম্পেলহোফ বিমানবন্দরের পেছনে ফিট্সভিঙ্কেল নামক সাইকেলের দোকানের অবস্থান৷ প্রায়শই খুব অল্প খরচে আমার সাইকেল ঠিক করে দেন এই দোকানের বহুভাষী কর্মীরা৷ দোকানের মালিক ভল্ফগাং শুধুমাত্র পুরনো সাইকেল বিক্রি করেন৷
ছবি: DW/S. Braun
বেজমেন্টে দোকান
বেসমেন্ট থেকে সাইকেলের ওয়ার্কশপে রূপ নেয়া এই ফারাডসেলুনটি সম্ভাব্য সব ধরনের সাইকেলের আদলে তৈরি সাজসজ্জায় পরিপূর্ণ৷
ছবি: DW/S. Braun
অতীতের নিদর্শন
বার্লিনের নয়ক্যোলন জেলায় অবস্থিত গ্ল্যুক্সভেলো সাইকেলের দোকানে এসব অতীত নিদর্শন চোখে পড়ে৷ এগুলো সেই ষাটের দশকের ক্লাসিক রেসিং বাইক৷
ছবি: DW/S. Braun
ব্যতিক্রমী সম্পদ
গ্ল্যুক্সভেলোতে সাইকেলের ব্যতিক্রমী এবং দুর্লভ যন্ত্রাংশও পাওয়া যায়৷
পাঁচ বছর আগে এই দোকানটি প্রতিষ্ঠা করেন এক ব্রাজেলীয়৷ দোকানটি বার্লিনবাসী এবং পর্যটকদের পরিবেশবান্ধব উপায়ে ঘোরাঘুরিতে সহায়তা করে৷
ছবি: DW/S. Braun
‘ভিভা ইটালিয়া’
মানবদেহের শক্তিতে চালিত সাইকেলের বিবেচনায় এক চুমুক জাভা ক্ষতিকর কিছু নয়৷ কাইরিন নামক এই দোকানটিতে ইটালিয়ান ক্লাসিক বাইক এবং এসপ্রেসো একসঙ্গে মেলে৷
ছবি: DW/S. Braun
প্রদর্শনী
কাইরিনের শো-রুম দেখতে আসলে ঠিক সাইকেলের দোকান নয় বরং মিউজিয়ামের মতো৷ এখানে রয়েছেন সাইকেল বিশেষজ্ঞরা৷ ২০০৪ সাল থেকে বার্লিনবাসীকে সেবা দিচ্ছেন তারা৷
ছবি: DW/S. Braun
12 ছবি1 | 12
তাঁর ভাষায়, তালেবান জঙ্গিরা যদি ফেরে, আফগানিস্তানে সবার আগে খুন হবে নারী স্বাধীনতা৷ সাদিক যখন কথা বলছিলেন, কাবুল থেকে সাইকেল চালিয়ে আসা মেয়েরা তখন কোচ শ্যানন গালপিনের কাছ থেকে খাদ্য ও পুষ্টির পাঠ নিচ্ছে৷ শ্যাননই এই মেয়েদের আসন্ন এশিয়ান গেমসের জন্য তালিম দিচ্ছেন৷
প্রশিক্ষণ শেষে পাগমানে গোসল সেরে ক্লান্ত সাইক্লিস্টরা খিদে মেটালো নান রুটি আর পনির দিয়ে৷ রাস্তার পাশে এক ফলের দোকানে অপরিচিত এক আফগান মার্জানের কাছে জানতে চাইলেন – ‘‘যারা সাইকেল চালিয়ে এলো, তুমি কি তাদেরই একজন?''
এমন প্রশ্নে হতচকিত মার্জানের চোখ প্রথমে আশেপাশে বিপদ খুঁজলো৷ বলবে না ভেবেও মাথা নেড়ে সে বলে ফেললো – ‘হ্যাঁ'৷
এরপর লোকটি জানতে চাইলেন – ‘‘আচ্ছা, ওরা ছেলে না মেয়ে?''