1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাকস্বাধীনতার জন্য লড়ছেন বাদাউয়ি

মার্টিন মুনো/এসবি/ডিজি২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

এ সপ্তাহের ৫০টি বেত্রাঘাত হয়ত মকুব হয়েছে তাঁর৷ কিন্তু সৌদি আরবে আটক ব্লগার রাইফ বাদাউয়ির স্ত্রী এনসাফ হায়দার জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই তাঁর স্বামী ‘হাইপারটেনশন’ ভুগছেন৷ তাই আরো এক প্রস্থ বেত্রাঘাত তাঁকে সত্যিই দুর্বল করবে৷

Kanada Saudi-Arabien Demonstration für Blogger Raif Badawi
ছবি: picture-alliance/empics

‘‘ওকে নিয়ে আমি অত্যন্ত শঙ্কিত,'' ক্যানাডা থেকে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন এনসাফ হায়দার৷ তবে শুধু তিনিই নন, রাইফ বাদাউয়ির জন্য গোটা বিশ্ব আজ আকুল৷ জানুয়ারির ৯ তারিখ বাদাউয়িকে যখন প্রথম পঞ্চাশ ঘা বেত মারা হয়েছিল, তখন থেকেই পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমে তাঁর বিষয়টি স্থান পেয়েছে৷ হয়েছে গণবিক্ষোভ, চলেছে গণপ্রতিবাদের ঢল৷ কিন্তু এতকিছুর পরেও মুক্তি পাননি উদারপন্থি এই ব্লগার৷

এ বছর প্রথমবারের মতো ডিডাব্লিউ-র ‘ফ্রিডম ও স্পিচ অ্যাওয়ার্ড' দেওয়া হচ্ছে৷ আর এই পুরস্কার পাচ্ছেন রাইফ বাদাউয়ি৷ এ সম্পর্কে জানতে পেরে স্ত্রী এনসাফ হায়দার ডয়চে ভেলের বলেন, ‘‘রাইফ যে এখনো কারাগারে রয়েছেন, এটা খুবই লজ্জার বিষয়৷ তাও আবার এমন এক সময়ে, যখন সৌদি আরব ‘ইসলামিক স্টেট'-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে, যারা মানবাধিকারের পরোয়া করে না৷ ‘‘ডিডাব্লিউ-র ফ্রিডম অফ স্পিচ অ্যাওয়ার্ড সৌদি প্রশাসনকে অত্যন্ত স্পষ্ট এক বার্তা পাঠাচ্ছে৷ তাই এ সাহায্যের জন্য আমি ডয়চে ভেলের প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ৷''

বার্লিনে বাদাউয়িকে নিয়ে গণবিক্ষোভ...ছবি: Tobias Schwarz/AFP/Getty Images

জন্ম ও বড় হওয়া

১৩ই জানুয়ারি ১৯৮৪ সালে সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলে আল খোবার নামের একটা ছোট্ট শহরে জন্মগ্রহণ করেন ব্লগার রাইফ বাদাউয়ি৷ তিনি এবং বড় বোন সমর – দু'জনেই মাত্র সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করতে পেরেছিলেন৷ কিন্তু এই অপারগতা প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায়নি৷ সৌদি আরবে নারী স্বাধীনতা নিয়ে দীর্ঘ একটা সময় কাজ করেছেন সমর৷ ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে ‘আন্তর্জাতিক সাহসী নারী'-র খেতাবও জয় করেন তিনি৷ বাদাউয়ির জীবনে তাই সমরেরও একটি প্রভাব রয়েছে, প্রতিবাদের ভাষা তিনি শিখেছেন নিজ পরিবার থেকেই৷

মত প্রকাশের অধিকারের পক্ষে অবস্থান

রাইফ বাদাউয়ি বেশ কয়েক বছর ধরে নিজের দেশে মত প্রকাশের অধিকারের সপক্ষে সংগ্রাম চালাচ্ছেন৷ ‘ফ্রি সৌদি লিবারালস' বা ‘মুক্ত সৌদি উদারপন্থি' নামের এক ওয়েবসাইটে তিনি সৌদি আরবে রাজনৈতিক ও সামাজিক ত্রুটিগুলি তুলে ধরছেন৷ তিনি ধর্মীয় পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে শ্লেষাত্মক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন, দেশের এক বড় বিশ্ববিদ্যালয়কে সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটি হিসেবে বর্ণনা করেছেন – এমনকি ভ্যালেন্টাইনস ডে বা ভালোবাসা দিবস সম্পর্কেও লিখেছেন৷ বলা বাহুল্য, সৌদি আরবে এই উৎসব পালন নিষিদ্ধ৷

বারংবার গ্রেপ্তার, নানা অভিযোগ

ইসলামের অবমাননাকারী এক ‘ইলেকট্রনিক পাতা' তৈরির অভিযোগে ২০০৮ সালে বাদাউয়িকে প্রথমবার গ্রেপ্তার করা হয়৷ তারপর তিনি কয়েক মাসের জন্য দেশত্যাগ করেন৷ কর্তৃপক্ষ অভিযোগ প্রত্যাহার করার পর তিনি আবার দেশে ফেরেন৷ ২০০৯ সালে সৌদি সরকার তাঁর দেশ ছাড়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে৷ ২০১২ সালের ১৭ই জুন কর্তৃপক্ষ তাঁকে গ্রেপ্তার করে এবং ডিসেম্বর মাসে আদালতে পেশ করে৷ বাদাউয়ির বিরুদ্ধে অভিযোগ – তিনি তাঁর ওয়েবসাইটে ইসলামি ধর্মীয় নেতাদের অবমাননা করেছেন৷

মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টিও আছে ব্লগার বাদাউয়ির পাশে...ছবি: DW/A.-S. Philippi

‘কিস্তিতে হত্যা'

এর পর এক উচ্চতর আদালত বাদাউয়ির বিরুদ্ধে স্বধর্ম ত্যাগের অভিযোগ এনেছিল, সৌদি আরবে যার শাস্তি মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে৷ তাঁরই একটি উক্তিকে এই অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে, যাতে তিনি নাকি মুসলিম, ইহুদি, খ্রিষ্টান ও নাস্তিকদের সমান হিসেবে বর্ণনা করেছেন৷ তবে পরে এই অভিযোগ আবার প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়৷ ২০১৩ সালে বাদাউয়ির স্ত্রী এনসাফ হায়দার তাঁদের তিন সন্তান সহ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান এবং ক্যানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় পান৷

১০ বছরের কারাদণ্ড, ১,০০০ বেত্রাঘাত

২০১৪ সালের মে মাসে এক সৌদি আদালত ৩১ বছর বয়স্ক ব্লগার রাইফ বাদাউয়ির বিরুদ্ধে রায় দায়৷ তাঁর শাস্তির তালিকায় রয়েছে ১,০০০ বেত্রাঘাত, ১০ বছরের কারাদণ্ড ও প্রায় ২ লক্ষ ইউরো জরিমানা৷ গত ৯ই জানুয়ারি তাঁকে ‘প্রথম কিস্তিতে' প্রকাশ্যে ৫০ বার বেত্রাঘাত করা হয়৷ তার পর থেকে অবশ্য স্বাস্থ্যের কারণ দেখিয়ে শাস্তির দিনক্ষণ বার বার পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷

বাদাউয়ি মৃত্যুদণ্ড থেকে বেঁচে গেলেও মানবাধিকার কর্মীরা মনে করেন, ২০ সপ্তাহ ধরে ৫০টি করে বেত্রাঘাত তাঁকে ধাপে ধাপে কষ্টকর মৃত্যুর দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে৷ জার্মানির সবুজ দলের রাজনৈতিক নেতা টম ক্যোনিশ একে ‘কিস্তিতে হত্যা' হিসেবে বর্ণনা করেছেন৷ জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাংক ভাল্টার স্টাইনমায়ার বাদাউয়ির বিরুদ্ধে শাস্তিকে ‘নৃশংস, ভুল, অন্যায় ও সম্পূর্ণ অসামঞ্জস্যপূর্ণ' হিসেবে মনে করেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ