ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই প্রথম বাখমুতে গেলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।
বিজ্ঞাপন
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পূর্ব ইউক্রেনের বাখমুতে রাশিয়ার সেনা এবং রাশিয়ার প্রাইভেট আর্মির সঙ্গে প্রবল লড়াই হচ্ছে ইউক্রেনের সেনার।
ইউক্রেন দাবি করেছিল, বাখমুত এখন তাদের দখলে। যদিও রাশিয়া তা মানতে চায়নি। এই পরিস্থিতিতে এই প্রথম বাখমুতে ফ্রন্ট লাইনে গেলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। সেনাদের সঙ্গে শুধু হাত মেলালেন তাই নয়, ফ্রন্ট লাইনেই তাদের পদক দিলেন।
দনেৎস্ক এলাকার এই শহর কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে ইউক্রেনের সেনা। বস্তুত, গত কয়েকমাস এই শিল্প এলাকা কার্যত অবরোধ করে রেখেছিল তার। অভিযোগ, রাশিয়ার ওয়্যাগনার আর্মি এই এলাকা দখল করে রেখেছিল। ইউক্রেন তাদের হাত থেকে এই জায়গা উদ্ধার করেছে বলে দাবি।
বাখমুতে ৮০ হাজার মানুষ বাস করতেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তা দশ হাজারে নেমে এসেছে বলে ইউক্রেনের দাবি।
বোমা বর্ষণের মাঝেই যে হাসপাতালে চলে চিকিৎসা
বাখমুত শহরের এ হাসপাতালে দূর-দূরান্ত থেকে এত রোগী আসবে কোনোদিন ভাবেনি কেউ৷ এখন সেখানে নিত্য রোগীর আসা-যাওয়া৷ পুরোনো অ্যম্বুলেন্স, স্ট্রেচারের বদলে কাঠের দরজা নিয়েই চলছে যুদ্ধাহত সৈনিকদের চিকি’সা৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Jorge Silva/REUTERS
দরজায় চড়ে ‘নরক’ থেকে হাসপাতালে
যুদ্ধাহত সৈনিক ইগর বলছিলেন, ‘‘আমরা নরক থেকে এখানে এসেছি৷’’ বাখমুতের এই হাসপাতালে তিনি এসেছেন বাঁচার আশায়৷ হাতে গোনা কয়েকজন ডাক্তার এবং প্যারামেডিক্স প্রাণপণ লড়ছেন তাদের বাঁচাতে৷ হাসপাতালে আধুনিক যন্ত্রপাতি বলতে গেলে কিছুই নেই৷ পর্যাপ্ত স্ট্রেচারও না থাকায় ওপরের ছবির মতো কাঠের দরজায় তুলে আনতে হচ্ছে আহত সৈন্যদের৷
ছবি: Jorge Silva/REUTERS
সেকেন্ড-হ্যান্ড অ্যাম্বুলেন্স
এমনকি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আহত সৈন্যদের নিয়ে আসার জন্য ভালো কোনো অ্যাম্বুলেন্সও নেই৷ জার্মানি এবং পোল্যান্ডের তৈরি কয়েকটি সেকেন্ড-হ্যান্ড অ্যাম্বুলেন্সই ভরসা বাখমুতের এই হাসপাতালের৷
ছবি: JORGE SILVA/REUTERS
ক্যানাডা থেকে ইউক্রেনে
ছবির এই নারীর নাম এলেনা বুলাখতিনা৷ রুশ বংশোদ্ভূত এই ক্যানাডিয়ান কাজ করছেন পিরোগভ ফার্স্ট ভলান্টিয়ার মোবাইল হসপিট্যালে৷ ভ্রাম্যমাণ হাসপাতালটির মূল কাজ লুহানস্ক অঞ্চলের পোপসানা শহরের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আহত সৈনিকদের বাখমুতের হাসপাতালে নিয়ে আসা৷ আহতদের সব চিকিৎসা হয় না এখানে৷ প্রাথমিক চিকিৎসায় রক্তপাত বন্ধ করে, কিছুটা সুস্থ করে সব রোগীকে পাঠিয়ে দেয়া হয় ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলের বড় কোনো হাসপাতালে৷
ছবি: Jorge Silva/REUTERS
‘এত রোগী আসবে ভাবিনি’
বুলাখতিনার ‘বস’ সভেতলানা ড্রুজেনকো জানালেন এত আহত সৈনিকের চিকিৎসা দিতে গিয়ে তারা হিমশিম খাচ্ছেন, ‘‘যুদ্ধ শুরুর পর আমরা যখন কাজ শুরু করি, তখনও ভাবিনি এত লোক আহত হয়ে আসবে৷ এখন যে হারে আসছে, সংখ্যাটা সত্যিই বিশাল৷ অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে, সব শহরেই মারা যাচ্ছে মানুষ৷’’
ছবি: Jorge Silva/REUTERS
‘পোপাসনা এখন ধ্বংসস্তূপ‘
আহত সৈন্য ইগরের যুদ্ধক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা খুব ভয়াবহ৷ বলছিলেন, ‘‘ওরা (রুশ বাহিনী) ভূমি থেকে এবং বিমান থেকে হামলা চালিয়েছে, সব জায়গায় বোমা ফেলছে, দিনে-রাতে হামলা চালাচ্ছে৷ পোপাসনা একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে৷’’
ছবি: Alexander Ermochenko/REUTERS
আহত আলেসান্দ্রোর স্বস্তি
যুদ্ধাহত সৈনিক আলেসান্দ্রোর পরিবার যুদ্ধ শুরুর পরই ইউক্রেন ছেড়ে চলে গেছে পোল্যান্ডে৷ সেখানে তারা নিরাপদে আছেন৷ হাসপাতালে নিজের শরীরের ব্যথা ভুলে সন্তানের সঙ্গে কথা বলছেন আলেসান্দ্রো৷
ছবি: JORGE SILVA/REUTERS
6 ছবি1 | 6
আইএমএফ-এর ফান্ড
এদিকে গত মঙ্গলবার ইউক্রেনের জন্য ১৫ দশমিক ছয় বিলিয়ন ডলারের ফান্ড ঘোষণা করেছে আইএমএফ। যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউক্রেনের সামাজিক সংস্কারের জন্য এই ফান্ড ব্যবহার করা হবে। গত ৭৭ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড (আইএমএফ) প্রথম কোনো যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের জন্য ফান্ড ঘোষণা করল।
সুইডেনের পার্লামেন্টে ন্যাটো
বুধবার ইউক্রেনের পার্লামেন্টে ন্যাটোয় যেগ দেওয়া নিয়ে দীর্ঘ বিতর্ক হয়েছে। সুইডেনের আদৌ ন্যাটোয় যেগ দেওয়া উচিত কি না, তা নিয়ে আলোচনা করেছেন সাংসদরা। ভোট্ভুটিতে অধিকাংশ সাংসদ ন্যাটোয় যোগ দেয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন।
২৬৯-৩৭ ভোটে প্রস্তাব জয়লাভ করেছে। বাংপন্থিরা এবং গেরিন পারেটির সদস্যরা প্রস্তাব সমর্থন করেননি।
সুইডেনের পার্লামেন্ট প্রস্তাবের পক্ষে সওয়াল করলেও ন্যাটোর অন্যতম সদস্য তুরস্ক এখনো সুইডেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ দিতে নারাজ। তাদের বক্তব্য, সুইডেন তুরস্কের জঙ্গিগেষ্ঠীগুলিকে সমর্থন করে। তারা কুর্দ বিদ্রোহীদের সমর্থন করে। সম্প্রতি কোরআন-বিতর্কের পরেও তুরস্ক সুইডেনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এই পরিস্থিতিতে সুইডেনের পার্লামেন্টের এই অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।