বনসাই গাছ বললে টবের মধ্যে কোনো বড় গাছের ক্ষুদ্র সংস্করণের কথাই মনে হয়৷ জাপানের এই আশ্চর্য বিদ্যা আজ গোটা বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়েছে৷ জার্মানির এক বিশেষজ্ঞ বড় আকারের বনসাই নিয়ে দারুণ ব্যবসা করছেন৷
ছবি: Roslan Rahman/AFP/Getty Images
বিজ্ঞাপন
জার্মানির উত্তরে একটি নার্সারির গাছগুলো দেখলে বোঝা যাবে, বহু বছর ধরে গাছগুলো কেটে-ছেঁটে এই আকারে আনা হয়েছে৷ এগুলো সবই ‘ইউনিক', এমন দ্বিতীয়টি পাওয়া যাবে না৷ দামও সেই অনুপাতে৷
গাছের দালালি
রিয়েল এস্টেট এজেন্টরা যেমন বাড়ির দালালি করেন, কাটারিনা ফন এয়ারেন তেমন গাছের দালালি করেন৷ নার্সারিতে এসে গাছ বাছেন, তাঁর খদ্দেররা ঠিক যেমনটি চান: হয়তো কোনো ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেক্ট, যিনি এক বড়লোকের বাগানের জন্য গাছ খুঁজছেন৷ ধরা যাক একটি লার্জ বনসাই পাইনগাছ, ত্রিশ বছরের পুরনো; দাম: পনেরো হাজার ইউরো৷ তাঁর খদ্দেরদের জন্য গাছ খুঁজতে কাটারিনা গোটা ইউরোপের নার্সারিগুলো চষে বেড়ান৷
গাছের দালালির ব্যাপারটা এসেছে মার্কিন মুলুক থেকে৷ কাটারিনা ফন এয়ারেন-ই সেটাকে জার্মানিতে আনেন৷ তাঁর খদ্দেররা সব খুঁটিনাটি জানতে চান৷ তিনি বলেন, ‘‘খদ্দেরকে ছবিগুলো মেল করে পাঠানো হবে, ঠিক আমরা যা বেছেছি৷ সেজন্য বিভিন্ন দিক থেকে ছবি তোলা হচ্ছে৷ খদ্দেরের ‘ওকে' পাবার পর আমরা গাছটা খুঁড়ে বার করার নির্দেশ দিই আর লরি আনাই, যাতে গাছটা তোলা হবে৷''
জার্মানির বাগানে বাংলাদেশের গাছ
১৯৮০ সালে ‘ফ্রিডেন্সভাল্ড’ বা শান্তির বাগানটি তৈরি করা হয়েছে, যেখানে বিশ্বের ১৪২টি দেশের গাছ লাগানো হয়েছে বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে৷ এখানে এতগুলো দেশের গাছ পাশাপাশি থাকবে, বেড়ে উঠবে, সহাবস্থান করবে৷
ছবি: imago/Photoshot/Balance
লাল সবুজ পতাকা
জার্মানির কোলন শহরের অভিজাত এলাকা রোডেনকির্শেন৷ সেই এলাকারই এক কোণে তৈরি করা হয়েছে ২৬ হেক্টর জমি জুড়ে সুন্দর একটি বাগান৷ এই বাগানে আছে বাংলাদেশের একটি গাছ৷
ছবি: Mohammad Zahidul Haque
শান্তির বাগানে সহাবস্থান
১৯৮০ সালে ‘ফ্রিডেন্সভাল্ড’ বা শান্তির বাগানটি তৈরি করা হয়েছে, যেখানে বিশ্বের ১৪২টি দেশের গাছ লাগানো হয়েছে বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে৷ এখানে এতগুলো দেশের গাছ পাশাপাশি থাকবে, বেড়ে উঠবে, সহাবস্থান করবে৷ গাছ লাগানোর মধ্য দিয়ে জার্মানির সাথে এই দেশগুলোর কূটনৈতিক সম্পর্ক গাঢ় হবে – এমন ভাবনা থেকেই কিন্তু এই উদ্যোগ৷
ছবি: DW/N. Sattar
সারা বছরই মানুষের ভিড়
যে কোনো ঋতুতেই এখানে প্রচুর লোকজন আসেন বেড়াতে, হাঁটতে বা জগিং করতে৷ গাছগুলো এমনভাবে সাড়ি বেঁধে লাগানো যেন ভেতর দিয়ে হেঁটে যাওয়া যায়৷ বাংলাদেশ, ভারত, অ্যামেরিকা, আফ্রিকা যে কোনো দেশের গাছেই সে দেশের পতাকা লাগানো আছে৷ কোনো কোনো দেশের আবার একটি নয়, অনেকগুলো গাছ রয়েছে শান্তির প্রতীক হিসেবে৷
ছবি: DW/N. Sattar
বসন্ত
বসন্ত যে এসে গেছে, সেটা বাগানের গাছটিই বলে দিচ্ছে৷ ভাবতে এখন হয়ত অবাকই লাগবে যে গাছটি শীতকালে একেবারেই ন্যাড়া ছিল৷ আসলে জার্মানিতে কখন কোন ঋতু চলে তা গাছের দিকে তাকালেই বোঝা যায়৷ যদিও এখন জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তা অনেকটাই বদলে গেছে৷
ছবি: DW/N. Sattar
মুক্ত হাওয়া
গ্রীষ্মের মিষ্টি সকালে এমনি করেই শান্তির বাগানে এসে মুক্ত হাওয়া সেবন করে নেয় মেয়েটি৷ এতে তার মনে হয়, সে যেন সারাদিন শান্তিতে থাকতে পারে৷ আজকের এই যান্ত্রিক জীবনে এটা খুবই প্রয়োজন, তাই নয় কী?
ছবি: Fotolia/Fotowerk
ভালোবাসার ফুল
শান্তির বাগানে এসে সুন্দর একটি জায়গা খুঁজে নিয়ে প্রেমিকাকে ফুল উপহার দিচ্ছেন, যেন তাকে সারা জীবন শান্তিতে রাখার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে৷
ছবি: Fotolia/TeresaYehPhotography
সাদা বালির লেক
শান্তির বাগানে ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে সবই পরিবর্তন হয়৷ তবে এই সাদা বালির অংশটুকুর কোনো পরিবর্তন হয় না, সব সময় সাদাই থাকে৷ এখানে বাচ্চারা খেলতে খুবই ভালোবাসে৷ বছরের যে কোনো সময়ই তাই দেখা যায় তাদের৷
ছবি: DW/N. Sattar
মিনি পাহাড়
বালির লেকের একটু ওপরেই খানিকটা জায়গা পাহাড়ের মতো উঁচু-নীচু৷ যেখানে শীতকালে বাচ্চারা বরফ দিয়ে খেলতে ভালোবাসে৷ মাঝে মধ্যে বড়রাও কিন্তু সঙ্গ দেন এই অপার আনন্দে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
একটুখানি বিশ্রাম
বাগানের শুরুতেই ১৪২টি দেশের গাছ লাগানো হয়েছে আর ভেতরে দিকে করা হয়েছে একটি বোটানিক্যাল গার্ডেন৷ পুরো গার্ডেন হেঁটে ক্লান্ত? তাহলে তো চাই একটুখানি বিশ্রাম! তবে হঠাৎ যদি বৃষ্টি আসে তাহলে ছাতাটি কিন্তু বড় কাজে দেয়৷
ছবি: DW/N. Sattar
রডোডেনড্রন
শান্তির বাগানের একটা বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে নানা রং-এর রডোডেনড্রন ফুলের গাছ৷ এ বছর অবশ্য এখনো সব গাছে ফুল ফোটেনি৷
ছবি: DW/N. Sattar
বেড়ানোর মধ্যেই কাজ
অনেকক্ষণ খোঁজার পর ছাত্রীরা পেয়ে গেছে শিক্ষকের নাম বলে দেওয়া গাছটি, যে গাছ সম্পর্কে গত সপ্তাহেই ক্লাসে আলোচনা করা হয়েছে৷ স্বাভাবিকভাবেই, এখন তারা মহা খুশি৷
ছবি: DW / Gaby Reucher
অসুস্থ গাছ
গাছটা কি সত্যি অসুস্থ? পরীক্ষা করে দেখছে৷ এভাবেই কিন্তু নিয়মিত পরীক্ষা করে দেখা হয় বিশাল বাগানের প্রতিটি গাছ৷
ছবি: picture alliance/empics
পুরো পরিবার
সপ্তাহান্তেই কেবল পুরো পরিবারের একসাথে হওয়ার সুযোগ৷ তাই সবাই মিলে শান্তির বাগানে এসেছে৷ উদ্দেশ্য ছোটবেলা থেকেই যেন বাচ্চাদের সাথে প্রকৃতির সম্পর্ক গড়ে উঠে৷ এই বাগানে এই একই লক্ষ্য নিয়ে ছোট্ট একটি কিন্ডারগার্টেনও করা হয়েছে৷
ছবি: Bilderbox
গাছ কাটা
গাছের যত্নের কোনো ত্রুটি নেই৷ অসুস্থ গাছকে সময় মতো কেটে ফেলা হয়৷ তবে একটা গাছ কাটা মানেই কিন্তু আর একটা গাছ লাগানো৷ বলা যায় একেবারে সঙ্গে সঙ্গেই!
ছবি: imago/Photoshot/Balance
14 ছবি1 | 14
স্থাপত্যের অঙ্গ বনসাই
হামবুর্গের কাছে এই প্রাইভেট বাগানটির জন্য কাটারিনা গাছগুলো বেছেছেন৷ অর্ডার দিয়েছেন কিন্তু এক ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেক্ট ক্লাউডিয়া শাফ৷ কাটারিনা ফন এয়ারেন-এর গাছ চেনার ক্ষমতার উপর বিশ্বাস রাখেন ক্লাউডিয়া৷ গাছের দালালি করে কাটারিনা প্রথম বছরেই দশ লাখ ইউরোর ব্যবসা করেছেন৷ ক্লাউডিয়া বলেন, ‘‘সত্যি কথা বলতে কি, বহুবারই আমার অবস্থা ছিল যে, মাথায় একটা দারুণ আইডিয়া এসেছে, কিন্তু সেটাকে কীভাবে বাস্তবে রূপায়ন করতে হবে, তা আমার জানা নেই৷''
চাইনিজ ডগউড গাছ কাটারিনার খুব প্রিয়৷ তাঁর কাছে এখন এতো অর্ডার আছে যে, তিনি নতুন লোক রাখার কথা ভাবছেন৷ কেননা বিত্তশালীরা ক্রমেই একটা সুন্দর বাগান সৃষ্টি করাটাকে পুঁজি বিনিয়োগের নতুন পন্থা হিসেবে দেখছেন৷ কাটারিনা বলেন, ‘‘গাড়ি বা বাড়ি, একবার তৈরি হয়ে যাওয়ার পর তার দাম কমে৷ কিন্তু বাগানের ক্ষেত্রে ঘটে তার ঠিক উল্টো৷ ঠিকমতো দেখাশোনা করলে বাগানটা সত্যিই ধীরে ধীরে আরো বেশি অভিব্যক্তপূর্ণ, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য-যুক্ত হয়ে ওঠে৷''
সাইপ্রেস গাছগুলো হল ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলের গাছ৷ নার্সারিতে সাইপ্রেসের আকারের গাছ তৈরি করা হয় উত্তরের ঠাণ্ডা দেশগুলোর মানুষদের জন্য৷
বাগানটা সাজাচ্ছেন ক্লাউডিয়া শাফ৷ গাছগুলো বেছেছেন কাটারিনা ফন এয়ারেন: একটি পাইন ও একটি জুনিপার, দুটোই লার্জ বনসাই৷ তিনি বলেন, ‘‘এ গাছের দাম আছে বৈকি৷ গাছটা প্রায় পঞ্চাশ বছরের পুরনো; গাছটাকে বার বার ছেঁটে, নতুন করে লাগিয়ে, তার গুঁড়িতে তেল মাখিয়ে, যত্ন করতে হয়েছে৷ কাজেই ও গাছের দাম এখন বিশ হাজার ইউরো৷''
হেমন্তের শুরু পর্যন্ত কাটারিনা ফন এয়ারেন নার্সারিগুলোতে সুন্দর সুন্দর গাছের খোঁজে থাকবেন৷ তারপর গাছগুলোকে তাদের নতুন মালিকের নতুন বাগানে লাগানো হবে৷