দুই কৃষক খেতে কাজ করছিলেন৷ হঠাৎ বাঘটি ছুটে আসে তাদের দিকে৷ অদূরে দাঁড়ানো একটি গাড়িও রেহাই পায়নি সাইবেরিয়ান বাঘের হামলা থেকে৷
বিজ্ঞাপন
চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় হাইলংজিয়াং শহরের ছোট্ট গ্রাম লিনহু-তে আমুর বাঘটি গত শুক্রবার রীতিমতো আতঙ্ক ছড়ায়৷ রাশিয়া সীমান্তের কাছের গ্রামের মাঠে কাজ করছিলেন দুই কৃষক৷ বাঘটিকে তাদের দিকে ছুটে যেতে দেখে ওয়াং হু চিৎকার করে কৃষকদের সতর্ক করেন৷ এক আত্মীয়কে আনতে গাড়ি নিয়ে সেই গ্রামে যাওয়া ওয়াং জু বেইজিং নিউজকে জানান, তার চিৎকার শুনে বাঘটি এক কৃষককে থাবা দিয়েই সোজা তার দিকে ছুটতে শুরু করে৷ কৃষককে সামান্য আহত করে দুই-তিন সেকেন্ডের মধ্যে দৌড়ে এসে গাড়িতে থাবা দেয় বিশালদেহী পুরুষ বাঘটি৷ তার উপর্যুপরি আঘাতে গাড়ির কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ভেতরের দুই যাত্রীর কিছু হয়নি৷
সাতক্ষীরার ‘বাঘ বিধবা’দের কথা
সুন্দরবনের বাঘের হামলায় প্রাণ হারানো ব্যক্তিদের স্ত্রীকে ডাইনি অপবাদ দেয়া হয়৷ এমন অনেক ‘বাঘ বিধবা’র সঙ্গে মিশতে চান না গ্রামবাসীরা৷
ছবি: AFP/M. Uz Zaman
ডাইনি অপবাদ
স্বামীর ছবির সঙ্গে মোসাম্মৎ রশিদা৷ সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে বাঘের হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন তাঁর স্বামী৷ এই মৃত্যুর জন্য রশিদাকে দায়ী করেন গ্রামবাসীরা৷ এছাড়া তাঁকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন না অনেকে৷ এমনকি তাঁর দুই ছেলেও তাঁকে ছেড়ে গেছেন৷
ছবি: AFP/M. Uz Zaman
রশিদা আশ্চর্য নন
‘‘আমার ছেলেরা আমাকে বলেছে, আমি এক হতভাগী ডাইনি,’’ এএফপিকে বলছিলেন রশিদা৷ অবশ্য এতে তিনি আশ্চর্য হননি৷ কারণ, ‘‘তারাতো এই সমাজেরই অংশ,’’ চোখের পানি মুছতে মুছতে বলছিলেন তিনি৷ রশিদা থাকেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা গ্রামে৷ সুন্দরবন লাগোয়া এই গ্রামে অনেক মধু সংগ্রাহকের বাস৷
ছবি: AFP/M. Uz Zaman
মাথায় ছাদও নেই
এটি রশিদার বাড়ি৷ বাড়ির ঘূর্ণিঝড়ে উড়ে যাওয়া ছাদ এখনও ঠিক করা সম্ভব হয়নি৷ রশিদার অভিযোগ, কোনো প্রতিবেশী, কিংবা সরকারের কেউ তাঁর সাহায্যে এগিয়ে আসেননি৷ অথচ অন্যদের ঠিকই সাহায্য করা হয়েছে বলে দাবি তাঁর৷ তবে সরকারি কর্মকর্তারা রশিদার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন৷
ছবি: AFP/M. Uz Zaman
কথা বলা বারণ
এএফপি যখন রশিদার বাড়িতে যায় তখন তার পাশেই নিজের বাড়ির ছাদ ঠিক করছিলেন মোহাম্মদ হোসেন৷ পরিবারের কল্যাণের কথা চিন্তা করে তাঁর স্ত্রী তাঁকে রশিদার সঙ্গে কথা বলতে মানা করেছেন বলে এএফপির কাছে স্বীকার করেন হোসেন৷
ছবি: AFP/M. Uz Zaman
নিহতের সংখ্যা
রশিদার মতো ‘বাঘ বিধবা’দের কল্যাণে কাজ করে লেডার্স বাংলাদেশ৷ তাদের এক হিসেব বলছে, ২০০১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ৫০টি গ্রামে বাঘের হামলায় অন্তত ৫১৯ জন পুরুষ প্রাণ হারিয়েছেন৷
ছবি: AFP/M. Uz Zaman
দক্ষিণপশ্চিমে বেশি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঘ বিশেষজ্ঞ মনিরুল খান জানান, মধু সংগ্রাহকরা সুন্দরবনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মধু সংগ্রহ করতে বেশি পছন্দ করেন৷ অথচ সেখানেই বাঘের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি৷
ছবি: AFP/M. Uz Zaman
পরিবর্তন আসছে, তবে...
লেডার্স বাংলাদেশের প্রধান মোহন কুমার মন্ডল জানান, তাঁরা রশিদার মতো বাঘ বিধবাদের কল্যাণে কাজ করছেন৷ তিনি বলেন, এই বিধবাদের প্রতি মানুষের মনোভাবে পরিবর্তন আসছে, তবে খুব ধীরে৷ তরুণ আর শিক্ষিত গ্রামবাসীরা বিধবাদের নিয়ে কম আশঙ্কিত বলেও জানান তিনি৷
ছবি: AFP/M. Uz Zaman
আরেক বিধবা
তাঁর নাম রিজিয়া খাতুন৷ ১৫ বছর আগে তাঁর স্বামীও মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে বাঘের হামলায় প্রাণ হারান৷ গ্রামবাসীদের সহায়তা না পেলেও তাঁর এক আত্মীয় তাঁকে গোপনে সাহায্য-সহযোগিতা করে বলে জানান তিনি৷
ছবি: AFP/M. Uz Zaman
8 ছবি1 | 8
খবর পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসে পুলিশ৷ ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় খুঁজে বের করে ট্রাঙ্কুলাইজার দিয়ে অজ্ঞান করা হয় বিরল প্রজাতির বাঘটিকে৷ হাইলংজিয়াং বন বিভাগ জানায়, বাঘটিকে আপাতত ৪৫ দিন পর্যবেক্ষণ করা হবে৷
বিলুপ্তপ্রায় আমুর বাঘ মূলত রাশিয়া এবং চীনের কিছু অঞ্চলে দেখা যায়৷ রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদ মাধ্যম গ্লোবাল টাইমসের খবর অনুযায়ী, চীনে এখন ৩০টিরও কম আমুর বাঘ বেঁচে আছে৷