বাঘ রক্ষায় সরকারের সহায়তায় বর্তমানে একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে৷ এবার শুরু হচ্ছে হাতি সংরক্ষণ প্রকল্প৷ এ লক্ষ্যে একটি ‘অ্যাকশন প্ল্যান' তৈরির কাজ চলছে৷
বিজ্ঞাপন
‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার' আইইউসিএন-এর উদ্যোগে এই পরিকল্পনা তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত আশরাফুল হক৷ তিনি আশা করছেন এ বছরের মধ্যেই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা যাবে৷ দশ বছর মেয়াদি এই প্রকল্প শেষ হবে ২০২৫ সালে৷
আইইউসিএন বাংলাদেশের কর্মকর্তা আশরাফুল হক জানান, মানুষের সংখ্যা বাড়ায় দিন দিন বনের পরিমাণ কমে যাচ্ছে৷ আর এটাই হাতির জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি৷ কারণ এর ফলে বাসস্থানের পাশাপাশি খাবার সংকটেও পড়ছে হাতিরা৷
তিনি বলেন, জনসংখ্যা বাড়ার কারণে এখন অনেক মানুষ বনের খুব কাছে বসতি স্থাপন করছে৷ ফলে প্রায়ই দেখা যায় বণ্য হাতিরা মানুষের বসতি এলাকায় ঢুকে পড়ছে৷ এতে করে হাতির সঙ্গে স্থানীয়দের একটি সংঘাত তৈরি হচ্ছে৷ ফলে মারা যাচ্ছে মানুষ, কখনও কখনও প্রাণ হারাচ্ছে হাতিও৷ বন বিভাগের হিসেবে, গত ১৩ বছরে বণ্য হাতির হামলায় কমপক্ষে ৯৩ জন প্রাণ হারিয়েছে৷
হুমকির মুখে যেসব প্রাণী
হুমকির মুখে থাকা কিছু প্রজাতির প্রাণী লাল তালিকাভুক্ত করা হয়েছে৷ এদের মধ্যে আফ্রিকার ওকাপিসহ আরো ২০০ পাখি রয়েছে৷ তবে অন্যান্য প্রাণীর ক্ষেত্রে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে৷
ছবি: Reuters
ওকাপি’র সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে
জিরাফের মতো দেখতে এই ওকাপি’র বাস কঙ্গোতে৷ আফ্রিকার ঐ অঞ্চলে কত প্রাণীর বাস তার হিসাব রাখে ওয়ার্ল্ড কনজারভেশন ইউনিয়ন (আইইউসিএন)৷ সংস্থাটি সম্প্রতি হুমকির তালিকায় থাকা প্রাণীদের নাম প্রকাশ করেছে৷ সেখানে দেখা যাচ্ছে, কঙ্গোর উত্তর-পূর্বাঞ্চলে থাকা এই ওকাপির সংখ্যা নব্বইয়ের দশকে ছিল ৪,৪০০৷ দশ বছর পর এই সংখ্যা দাঁড়ায় ২,৫০০ তে৷ কঙ্গোর সহিংসতা এবং খনি ব্যবসাকে এ জন্য দায়ী করা হচ্ছে৷
ছবি: cc-by-sa-3.0/Raul654
বিলুপ্তির পথে
আইইউসিএন জানিয়েছে, ওকাপি এখন হুমকির মুখে৷ তাদের তৈরি তালিকার একেবারে তলানিতে আছে ওকাপির নাম৷ অর্থাৎ এরাই সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে রয়েছে৷ এমন অনেক প্রাণী আছে, আজ থেকে ২০০ বছর আগেও যাদের অস্তিত্ব ছিল, কিন্তু এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে, যেমন বালি টাইগার৷ বাঘের প্রায় সব প্রজাতিই আজ হুমকির মুখে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দুইশ প্রজাতির পাখি হুমকির মুখে
নতুন রেড লিস্টে দুইশ প্রজাতির পাখিও রয়েছে৷ এদের মধ্যে অনেক শকুন আছে, যাদের বাস ভারত ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায়৷ আইইউসিএন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছে, চীন ও মালয়েশিয়ার অনেক শকুন এরই মধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে৷ ইথিওপিয়া, জিম্বাবুয়ে এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকা অনেক শকুন এখন হুমকির মুখে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এশিয়ার হাতি দ্রুত কমছে
বিশ্বে এখনও এশিয়ান এলিফেন্টের সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০ হাজার৷ কিন্তু এরাও হুমকির মুখে রয়েছে৷ গত তিন প্রজন্ম ধরে এই প্রজাতির হাতির সংখ্যা কমছে৷ আইইউসিএন বলছে, তিন প্রজন্মে হাতির সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে৷ বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, চীন ও ইন্দোনেশিয়ায় এশিয়ান হাতি দেখতে পাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/Horst Galuschka
পাচার ও দাঁত বিক্রির কারণে বিপদ
কেবল এশিয়া নয়, আফ্রিকার হাতিরাও হুমকির মুখে৷ বন উজাড় এবং দাঁতের জন্য শিকারীদের উৎপাতও হাতিদের সংখ্যা কমানোর জন্য দায়ী৷ সেইসাথে অবৈধভাবে শিকার এবং চুরি করে পাচার করাও দিন দিন বাড়ছে৷ হাতি পাচার রোধে এ মাসের ২ থেকে ৪ ডিসেম্বর বতসোয়ানায় ‘আফ্রিকান এলিফেন্ট সম্মেলন’-এর আয়োজন করে আইইউসিএন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিলুপ্তির পথে মাছ
ডলফিনের মত দেখতে এই পরপয়েসদের সচরাচর দেখা যায় ক্যালিফোর্নিয়ায়৷ মাছ ধরার জালে আটকে প্রায়ই মারা যায় এরা৷ কখনো কখনো জেলেরা এদের ধরে নিয়ে যায়৷ ফলে হুমকির মুখে রয়েছে এই প্রজাতিটি৷ বিশ্বে এখন মাত্র ৫০০ থেকে ৬০০ পরপয়েস রয়েছে৷
ছবি: WDC
কিছু প্রাণীর ক্ষেত্রে আশার আলো
কিছু কিছু প্রজাতির ক্ষেত্রে অবশ্য উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যেমন লেদারব্যাক কচ্ছপ৷ অথচ এক দশক আগে এই প্রজাতির কচ্ছপটি ছিল রেড লিস্টে, অর্থাৎ হুমকির মুখে৷ দুই মিটার লম্বা এবং আধা টন ওজনের এই কচ্ছপগুলো আকারে সবচেয়ে বড় হয়৷ এদের হুমকির মুখে পড়ার কারণ সাগরের দূষণ৷
ছবি: gemeinfrei
প্রাণী কল্যাণ সংস্থার অবস্থা
এছাড়া ব্ল্যাকব্রোও অ্যালবাট্রসের সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে৷ নতুন লাল তালিকায় এই প্রজাতির পাখির আশানুরূপ উন্নতি হয়েছে৷ আইইউসিএন এর পরিচালক ইয়ান স্মার্ট জানান, অনেক প্রজাতির উন্নতি হলেও এখনও ২১,০০০ প্রাণী হুমকির মুখে রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শেষবার দেখার সুযোগ: পান্ডা, গন্ডার, লিঙ্কস
হুমকির মুখে থাকা প্রাণীগুলোর মধ্যে অন্যতম জায়ান্ট পান্ডা৷ বিশ্বে এদের সংখ্যা মাত্র ১০০০ থেকে ২০০০৷ আর আছে সুমাত্রার গন্ডার, যাদের মোট সংখ্যা মাত্র ২২০৷ এছাড়া লাইবেরিয়ার লিঙ্কসও আছে এই তালিকায়৷ এদের সংখ্যা মাত্র ৮০ থেকে ১৫০টি৷ ১৯৬৩ সাল থেকে এই রেড লিস্ট প্রকাশ করে আসছে আইইউসিএন৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
মানুষ ও হাতির মধ্যে এই সংঘাত কমাতে স্থানীয়দের নিয়ে ‘এলিফেন্ট রেসপন্স টিম' গঠন করা হবে বলে জানালেন আশরাফুল হক৷ হঠাৎ করে হাতি লোকালয়ে চলে এলে কীভাবে তাকে পোষ মানিয়ে আবার বনে ফেরত পাঠানো যায় সে বিষয়ে রেসপন্স টিমের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে৷ হাতি-মানুষের সংঘাত বেশি ঘটে এমন ২৬টি এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে৷ ঐসব জায়গায় এমন টিম গঠন করা হবে বলে জানান আইইউসিএন কর্মকর্তা৷
হাতির সংখ্যা
বাংলাদেশে হাতির সংখ্যা নিয়ে সবশেষ ২০০৪ সালে একটি সমীক্ষা হয়েছিল৷ আইইউসিএন সেটা করেছিল৷ ঐ হিসেবে বাংলাদেশে হাতির সংখ্যা ছিল ২২৭ থেকে ২৪০ এর মধ্যে৷ প্রকল্পের আওতায় নতুন করে হাতি গণনার কাজ চলছে৷ এ বছরই সেটা প্রকাশ করা হবে৷
চট্টগ্রামের লোহাগড়ার চুনতি অভয়ারণ্য, বাঁশখালী; কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া, ডুলহাজরা; বান্দরবনের লামা, আলিকদম; রাঙ্গামাটির কাপ্তাই, পাবলাখালী এসব এলাকায় বেশি হাতি বাস করে৷ এছাড়া নেত্রকোনা, শেরপুরের ভারতীয় সীমান্ত সংলগ্ন কামালপুর, দুর্গাপুর, বক্সীগঞ্জ, নলিতাবাড়ি এবং মৌলভীবাজারের জুরি রেঞ্জ এলাকায়ও হাতি দেখতে পাওয়া যায়৷