চোরা শিকারিদের হাত থেকে বাঘ বাঁচানোর জন্য দেশ জুড়ে প্রকল্পের অভাব নেই৷ কিন্তু তাতে লাভ হচ্ছে কতটা? সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে ফের সেই প্রশ্ন উঠল৷
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি রিপোর্ট বলছে, ২০১৯ সালে গোটা দেশে ১১০টি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মৃত্যু হয়েছে৷ আর চিতাবাঘ মারা গিয়েছে ৪৯১টি৷ এর মধ্যে ৩৮টি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার চোরা শিকারিদের গুলিতে মারা গিয়েছে৷ তাদের মৃতদেহ উদ্ধারের পরে দেখা গিয়েছে দেহের বিভিন্ন অংশ নেই৷ চিতাবাঘের ক্ষেত্রে তথ্য আরও ভয়াবহ৷ চোরা শিকারিদের হাতে চিতার মৃত্যু তো হয়েছেই৷ পাশাপাশি রেল এবং সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে বহু বাঘের৷ লোকালয়ে চলে আসার পর পিটিয়ে মারা হয়েছে, এমন সংখ্যাও নেহাত কম নয়৷
ওয়াইল্ড লাইফ প্রোটেকশন সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া সম্প্রতি এই রিপোর্ট পেশ করেছে৷ এবং তাতে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, এ ভাবে চলতে থাকলে আগামী কিছু বছরের মধ্যে বাঘ বিলুপ্ত হয়ে যাবে৷
ওয়াইল্ড লাইফ প্রোটেকশন সোসাইটির এই রিপোর্ট অবশ্য মানতে রাজি নয় ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথোরিটি৷ সরকারি এই সংস্থাটির রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৯ সালে ৯২টি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মৃত্যু হয়েছে৷ ২০১৮ সালে যে সংখ্যাটি ছিল ১০২৷ তাদের দাবি, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের জঙ্গলগুলি থেকে চোরা শিকারিদের অনেকটাই তাড়ানো গিয়েছে৷
বনের চিতার মানুষ শিকার
06:49
চোরা শিকারিদের সংখ্যা যে কমেছে, এটা মেনে নিচ্ছে ওয়াইল্ড লাইফ প্রোটেকশন সোসাইটিও৷ কিন্তু তাদের বক্তব্য, এখনও মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রের জঙ্গলে যে পরিমাণ চোরা শিকারি আছে, তা যথেষ্ট চিন্তার৷ সত্য অস্বীকার করতে সরকারি সংস্থা বাঘের মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে দেখানোর চেষ্টা করে৷
সরকারি হিসেব অনুযায়ী দেশে মোট বাঘের সংখ্যা এখন দুই হাজার ৯৬৭৷ গত কয়েক বছরে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে বলেই সরকারের দাবি৷ কিন্তু বন এবং বাঘ সংরক্ষণ নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের বক্তব্য, যে ভাবে জঙ্গল কেটে রাস্তা তৈরি হচ্ছে তাতে সংখ্যাটা দ্রুত কমতে খুব বেশি সময় লাগবে না৷ একই সঙ্গে তাঁদের বক্তব্য, চোরা শিকারিরাও আর আগের মতো নেই৷ শিকারের নিত্য নতুন কায়দা আবিষ্কার হচ্ছে৷ সরকার যদি তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে না পারে, তাহলে সমূহ বিপদ৷
বনের চেয়ে খাঁচায় বাঘের সংখ্যা বেশি
বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে - স্কুলপড়ুয়া প্রায় সবাইকে এই ভাব সম্প্রসারণটি করতে হয়৷ তবে পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বে যত বাঘ বনে আছে, তার চেয়ে বেশি আছে খাঁচাবন্দি হয়ে৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/Stella
খাঁচাবন্দি বাঘই বেশি
প্রাণী অধিকার নিয়ে কাজ করা মার্কিন সংস্থা ‘দ্য হিউম্যান সোসাইটি’র ধারনা, দেশটিতে পাঁচ থেকে সাত হাজার বাঘ খাঁচাবন্দি হয়ে আছে৷ ‘টাইগার্স ইন অ্যামেরিকা’ নামের আরেক সংস্থা মনে করছে, এমন বাঘের সংখ্যা প্রায় সাত হাজার৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/Stella
বনে বাঘের সংখ্যা
বাঘেরা সাধারণত এশিয়ার বনগুলোতে থাকে৷ সেখানে বাঘের সংখ্যা দিন দিন কমছে৷ বনে থাকে এমন বাঘের সংখ্যা এখন চার হাজারের কিছু কম হবে বলে মনে করা হয়৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
যেন পোষা প্রাণী!
পোষা প্রাণী বলতে সাধারণত কুকুর, বিড়ালের কথা সবাই জানেন৷ কিন্তু অনেক মার্কিনির কাছে বাঘও একধরনের পোষা প্রাণী হয়ে উঠেছে৷ তাইতো খাঁচাবন্দি যত বাঘের কথা বলা হচ্ছে তার একটা অংশের দেখা পাওয়া যায় কারও বাড়ির পেছনের বাগানে৷ এছাড়া সরকারি-বেসরকারি চিড়িয়াখানা, সার্কাসের দলের কাছেও এমন বাঘ আছে৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/I. Schulz
সঙ্কর জাতের বাঘ
বাঘ বলতে বন্য বাঘের কথাই আমরা জানি৷ তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাঘগুলো সঙ্কর প্রজাতির৷ সে কারণে শুরুতে এসব বাঘ রক্ষায় মার্কিন সরকারের তেমন মনোযোগ ছিল না৷ পরে ২০১৪ সালে পোষা প্রাণী হিসেবে বাঘ রাখার বিষয়টি আইন করে কঠিন করা হয়েছে৷
মার্কিন সংস্থা ‘দ্য ফেলিন কনজারভেশন ফেডারেশন’ ২০১১ সালে একটি বাঘশুমারি করেছিল৷ পাঁচ বছর মেয়াদি ঐ শুমারি ২০১৬ সালে শেষ হয়৷ তাদের হিসেবে ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাঘের সংখ্যা ছিল ছয় হাজার ৫৬৩টি৷ ২০১৬ সালে তা কমে হয়েছে পাঁচ হাজার ১৪৪৷
ফেলিন কনজারভেশন ফেডারেশনের পামেলা বইচ মনে করছেন কঠোর আইন, প্রাণী কল্যাণ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়া, প্রাণী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলোর উদ্যোগ, এসব কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বাঘের সংখ্যা কমছে৷