বাঙালির আবিষ্কারের বছর ২০১০
২৯ ডিসেম্বর ২০১০এবছরটা বাঙালির বিজ্ঞান চর্চার জন্য অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে৷ কারণ যেসব আবিষ্কারের কথা এতদিন আমরা শুনেছি উন্নত বিশ্বের বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে৷ এবার সেটা করে দেখিয়েছেন এক বাঙালি৷ তাঁর নাম মাকসুদুল আলম৷ আর তাঁর আবিষ্কারের বিষয় পাটের জিনোম সিকোয়েন্স৷
জিনোম হচ্ছে জীবনের নীল নকশা৷ এই নকশার আলাদা আলাদা গঠনের কারণেই কেউ বাঘ, কেউ ভাল্লুক আর কেউ বা আম গাছ হয়ে জন্মায়৷
মাকসুদুল আলম পাটের নকশা আবিষ্কার করায় বেশ কিছু উপকার পাওয়া যাবে৷ প্রথমত, পাটের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে৷ এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সামলে বেঁচে থাকতে পারবে, এমন পাটও উৎপাদন করা যাবে৷ শীতকালেও পাট চাষ সম্ভব হবে৷ তেমনিভাবে সম্ভব হবে নোনাজলে পাট গাছকে বাঁচিয়ে রাখা৷ আরও উপকার পাওয়া যাবে৷ যেমন পাট পচানোর সমস্যাসঙ্কুল প্রক্রিয়াকে সহজ করা যাবে৷
তবে মাকসুদুল আলম বলছেন, এখনো আসল কাজ বাকি রয়ে গেছে৷ সেটা হচ্ছে, সিকোয়েন্সে পরিবর্তন আনা৷ তিনি বলছেন, এর জন্য পাঁচ বছরের মতো সময় লাগতে পারে৷
লিভিং সেল
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা ‘সিনথেটিক লিভিং সেল' অর্থাৎ প্রাণ আছে এমন সেল তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন৷ এজন্য তাঁরা গবেষণা করেছেন প্রায় ১৫ বছর৷ মেরিল্যান্ডের জে ক্রেইগ ভেন্টার ইনস্টিটিউটের একদল বিজ্ঞানী গবেষণাটি করেন৷ আর গবেষণা দলের নেতৃত্ব দেন ড. ক্রেইগ ভেন্টার৷ অনেকেই একে ‘যুগান্তকারী' ঘটনা বলছেন৷ কিন্তু কেন?
কারণ, গবেষকরা আশা করছেন, এই লিভিং সেল থেকে ভবিষ্যতে এমন ব্যাকটিরিয়া তৈরি সম্ভব হবে যেটা দিয়ে জীবন রক্ষাকারী ভ্যাকসিন সহ বায়োফুয়েল তৈরি করা যাবে, যা পরিবেশের জন্য বেশ উপকারি৷ এছাড়া এই সিনথেটিক ব্যাকটিরিয়া দিয়ে এক ধরণের শেওলা তৈরি করাও সম্ভব, যা গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমিয়ে পরিবেশ রক্ষায় সহায়তা করবে৷ অর্থাৎ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে বিশ্ববাসীর চিন্তা অনেকটা কমাতে সাহায্য করবে এই ব্যাকটিরিয়া৷
তবে শুধু প্রশংসাই নয়, বেশ কিছু বিজ্ঞানী এই আবিষ্কারের সমালোচনাও করেছেন৷ তাঁরা বলছেন, এই সিনথেটিক ব্যাকটিরিয়া বিপজ্জনক হতে পারে৷ এই দলের একজন হলেন জেনেটিক প্রযুক্তির উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ করে এমন একটি সংস্থা জেনেওয়াচ ইউকে'র ড. হেলেন ওয়ালেস৷ তিনি বলছেন, পরিবেশ দূষণ কমাতে এই ব্যাকটিরিয়া ছাড়ার অর্থ হলো নতুন আরেক ধরণের দূষণ ছড়ানো৷ এছাড়া এই সিনথেটিক ব্যাকটেরিয়া দিয়ে ‘বায়োউইপন' অর্থাৎ বায়ো-অস্ত্র তৈরির আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জুলিয়ান সাভুলেস্কু৷ তবে গবেষক দলের প্রধান ড. ভেন্টার এ ধরণের আশঙ্কার কথা উড়িয়ে দিয়েছেন৷
আইপ্যাড
২০১০ সালে বাজারে আসা সেরা প্রযুক্তিটির নাম আইপ্যাড৷ বছরের শুরুতেই যেটা বাজারে আনে মার্কিন কোম্পানি অ্যাপল৷ এরপর সারা বছর ধরেই আলোচনায় থাকে আইপ্যাড৷ এই ট্যাবলেট কম্পিউটারকে ঘিরে মানুষের প্রত্যাশা সম্পর্কে সেসময় যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত পত্রিকা ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল লিখেছিল, ‘‘একটি ট্যাবলেট কম্পিউটারকে ঘিরে এমন উত্তেজনা আর দেখা যায়নি, এতে যেন কোনো ওহী লেখা আছে৷'' ওয়াল স্ট্রিটের কথার প্রমাণ মেলে পরবর্তীতে যখন প্রথমবারের মত বাজারে আসে আইপ্যাড৷ একটি আইপ্যাড পেতে কোনো কোনো ক্রেতা নাকি দুদিন পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল, এমন খবরও বেরিয়েছে সেসময়! আইপ্যাড নিয়ে এতো মাতামাতি দেখে অন্যান্য কোম্পানিগুলোও পরবর্তীতে উঠে পড়ে লাগে তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ডের আইপ্যাড বাজারে আনতে৷ আশা করা হচ্ছে, আগামী বছরে অনেকগুলো কোম্পানির আইপ্যাডে বাজার ছেয়ে যাবে৷
প্রতিবেদন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: ফাহমিদা সুলতানা