মানুষ এককালে বিশ্বাস করতো, বিশ্বব্রহ্মান্ডের কেন্দ্রে রয়েছে আমাদের মাটির পৃথিবী৷ আজ সে বিশ্বাস ঘুচেছে৷ যা ঘোচেনি, তা হলো বাঙালিদের বাঙালি – ও বাংলাকেন্দ্রিক বিশ্বদর্শন৷
বিজ্ঞাপন
কলকাতার প্রখ্যাত ইংরেজি পণ্ডিত সুকান্ত চৌধুরীর সঙ্গে একবার কোন সূত্রে জানি না, কথা হচ্ছিল শেক্সপিয়ার বড় না রবীন্দ্রনাথ বড়, সেই পুরনো প্রসঙ্গ নিয়ে৷ আমি বলছিলাম আমার পরলোকগত পিতৃদেবের কাছে শোনা একটি কাহিনির কথা৷ গ্রিক দার্শনিক প্লেটো নাকি একবার বলেছিলেন, ‘‘আমি যদি একটি জাতের গান লিখতে পারি, তাহলে কে সেই জাতের আইনকানুন তৈরি করে, তা জেনে আমার কী হবে?'' রবিঠাকুর কি ঠিক তাই করেননি?
অপরদিকে রবিঠাকুর নিজে বলে গিয়েছেন, শেক্সপিয়ারের যশসূর্য মধ্যগগনে উঠতে বেশ কয়েক শতাব্দী সময় লেগে গেছে৷ কবি কি পরোক্ষভাবে বলার চেষ্টা করছিলেন, কালে তাঁর যশসূর্যও অনুরূপভাবে মধ্যগগনে উঠবে? কিন্তু সুকান্ত স্মরণ করিয়ে দিলেন যে, বাংলা হাজার হলেও একটি ‘মার্জিনাল', অর্থাৎ প্রান্তিক ভাষা৷ কাজেই এক হিসেবে বাংলা যেমন কোনোদিনই ইংরেজির জায়গা নিতে পারবে না, সেইরকম রবীন্দ্রনাথের পরিচিতিও কোনোদিন শেক্সপিয়ারের খ্যাতিকে ছুঁতে পারবে না৷ না, সুকান্ত অবশ্যই সেরকম কিছু বলেননি, অন্তত অতটা খোলসা করে নয়৷ কিন্তু মানেটা তাই দাঁড়ায় বটে৷
বাঙালি মানে কী? এই ছবিগুলো দিচ্ছে উত্তর
ইংরেজিতে #গ্রোয়িংআপবেঙ্গলি৷ এই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে বাঙালির ঘরে বেড়ে ওঠা বাচ্চা-কাচ্চারা জানাচ্ছে তাদের অভিজ্ঞতা৷ তাদের ছবিগুলো আপনার মুখে হাসি ফোটাবে নিশ্চিত, অথবা ক্ষেপেও যেতে পারেন৷ দেখুন৷
ঝগড়া দেখা বাধ্যতামূলক!
বাংলাদেশের বড় দুই রাজনীতিবিদের মধ্যকার ‘ক্যাটস অ্যান্ড ডগস’ লড়াই দেখতে নাকি বাধ্য করা হয় বাঙালি ছেলে-মেয়েদের৷ এই টুইট সেই দাবিই করছে৷
বাঙালির অস্ত্র
সত্যিই কি তাই? বাঙালি পরিবারে মারপিটের উপকরণ কী এগুলো? পরের ছবিটি দেখুন৷
বাড়িতে যা দরকার
আহ, নাগা মরিচ৷ আমার নিজেরও পছন্দ৷ এই ঝাল মরিচ প্রথমবার খাওয়ার সময় শপথ নিয়েছিলাম, এখনও প্রত্যেকবার নিয়ে থাকি যে, পরেরবার আর খাবো না৷ কিন্তু টেবিলে এটা না থাকলে পরেরবার খাবার মুখে ওঠে না৷ মেয়েটা ভুল কিছু বলেনি৷ আর মোড়া ছাড়া আর কিছুতে বসে কি আরাম আছে বলুন?
এটা প্রবাসীদের জন্য
ইনি যাই বলুন, বাঙালি এলাচ ছাড়া রাঁধতে পারবে বলে মনে হয় না৷ বিশেষ করে মাংস, পোলাও রান্নায় এলাচের বিকল্প নেই৷ তা বাঙালির ছেলে যাই বলুক না কেন৷
বাঙালি আর পান
পান ছাড়া বাঙালির কথা ভাবা একটু কঠিন বৈকি৷ এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও উৎপন্ন হচ্ছে পান, শুধুমাত্র বাঙালির সুবিধার্থে৷
ইসলাম মানেই বাঙালি!
বাঙালি হলেই ইসলাম, মুসলমান সম্পর্কে সব জানবে এমনটা ভাবা ভুল তো বটেই বেশ একটু বাড়াবাড়িও৷ এই টুইটে সেদিকেই ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে৷
বাঙালির প্রসাধনী
আজকাল কি আর কেউ চুলে তেল মাখে? মা, খালাদের অভ্যাসের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে এই টুইট৷
এটা কী আইসক্রিম!
আইসক্রিমের বক্সে শুধু রসুন নয়, অনেকে কাঠালের বিচিও রাখেন৷
স্কাইপ বিয়ে
শুধু যুক্তরাজ্য নয়, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে থাকা বাঙালি পুরুষদের সঙ্গে বাংলাদেশে বসবাস করছে এমন নারীদের বিয়ে হচ্ছে এভাবে৷ তবো প্রযুক্তির কারণে এখন এসেছে ‘স্কাইপ’, আগে যেটা হতো ফোনে৷ টুইটারে #গ্রোয়িংআপবেঙ্গলি হ্যাশট্যাগ দিয়ে পাবেন এরকম আরো অনেক তথ্য৷
9 ছবি1 | 9
আসল কথা হলো, ঐ ‘প্রান্তিক' কথাটা তার পর থেকে আমার মাথায় আটকে রয়েছে, বিশেষ করে প্রবাসী জীবনে, তা কোলনে দুর্গোৎসবেই হোক আর টরন্টোয় বাংলাদেশি শাড়ির দোকানেই হোক৷ আমরা বাঙালিরা প্রান্তিক৷ জার্মানির পথেঘাটে বাঙালি খুব বেশি চোখে পড়ে না৷ কাজেই এখানে মানুষজন আমাকে কখনো শ্রীলঙ্কার তামিল, কখনো ভারতের বিহার বা উত্তর প্রদেশের মানুষ বলে ধরে নেন৷ বাঙালি যারা চেনেন, তারা চেনেন প্রধানত বাংলাদেশি বাঙালিদের৷ সাধারণভাবে আমার বাঙালি পরিচয়টাও মোটামুটি ঐ বাংলাদেশি পরিচয়টার সঙ্গেই মিশে গেছে, এক ধর্ম কিংবা পুজো-আচ্ছার সময়টা বাদে – আর আমি প্রান্তিক থেকে প্রান্তিকতর, এমনকি প্রান্তিকতম হয়ে পড়েছি বা পড়ছি৷
তাহলে দেশে – মানে এপার কিংবা ওপার বাংলায়, বিশেষ করে ওপারে – সংখ্যালঘু এমন একটা গুরুতর শব্দ, এমন একটা গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়ালো কেন? খেয়াল করে দেখলাম, জার্মানিতে আমরা বাঙালিরা – তা সে এপারেরই হোন আর ওপারেরই হোন – আমার সংখ্যায় লঘু না হয়ে যেন লঘিষ্ঠ! কাজেই এ দেশে বাঙালিদের নিয়ে আলাদা করে সমস্যা না বানিয়ে, তাদের আপামর বিদেশি-বহিরাগতদের পর্যায়ে ফেলে দেওয়া হয়৷ কোলন রেলওয়ে স্টেশনে হুলিগ্যান আর নব্য-নাৎসিরা যখন জুৎসই করে ঠেঙানোর মতো ‘উদ্বাস্তু' খোঁজে, তখন তাদের জালে মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ, উত্তর আফ্রিকার মানুষ, পাকিস্তানি না ভারতীয় না বাংলাদেশি ঠিক কি উঠল, সেটা বিচার করে দেখার মতো বিদ্যে বা বুদ্ধি, দু'টোর কোনোটাই তাদের মতো সরল মনিষ্যিদের নেই৷ ব্রিটেনে ‘পাকি ব্যাশিং'-এর সময়েও ছিল না৷ তাহলে হঠাৎ বাংলাদেশে বা পশ্চিমবঙ্গেই বা ব্যাপারটা এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে কেন?
বাঙালি নারীর দশ গুণ
গরবিনি, আবেগী এবং স্বাধীনচেতা – বাঙালি নারীর সঙ্গে এই তিনটি বিশেষণই মানানসই৷ নারীর গুণ সম্পর্কে জানিয়েছেন ডয়চে ভেলের পাঠকরা৷ তাঁদের মতামত এবং বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি বাঙালি নারীর দশগুণ নিয়ে ছবিঘর৷
ছবি: Zaman/AFP/GettyImages
আবেগী, স্বাধীনচেতা
গরবিনি, আবেগী এবং স্বাধীনচেতা – বাঙালি নারীর সঙ্গে এই তিনটি বিশেষণই মানানসই৷ আবেগ যেমন তাঁদের দ্রুত স্পর্শ করে, তেমনি স্বাধীনতার প্রশ্নে কিন্তু তাঁরা সত্যিকার অর্থে অনড়৷ নিজের সত্ত্বা নিয়ে অহংকার তাঁদের আছে বটে, তবে তার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের মধ্যে রয়েছে অসীম ধৈর্য্য৷
ছবি: Zaman/AFP/GettyImages
শাড়িতে সবচেয়ে সুন্দর
বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে শাড়ি৷ সেই শাড়ি বাঙালি নারীর সৌন্দর্য্য ফুটিয়ে তোলে চমৎকারভাবে৷ বিভিন্নভাবে শাড়ি পরতে জানেনও তাঁরা৷ আর ‘উপহার হিসেবে শাড়ি’? – কোন বাঙালি মেয়ে না চায় বলুন?
ছবি: DW/A. Islam
উৎসব প্রেমী
বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বন৷ নববর্ষ, ঈদ কিংবা দুর্গা পূজা – সব উৎসবই যেন বাঙালি নারীর জন্য তৈরি৷ প্রতিটি উৎসবের সঙ্গে মানানসই পোশাক পরতে এবং সেই উৎসবের উপযুক্ত রান্নায় পারদর্শী তাঁরা৷ ডয়চে ভেলের পাঠক সুজন খানের কথায়, ‘‘বঙ্গের নারী লাজুক প্রকৃতির, কিন্তু যে কোনো উপলক্ষ্যেই প্রাণ খোলা হাসি উপচে পড়ে তাঁদের৷’’
ছবি: Zaman/AFP/GettyImages
‘নো ডায়েট’
বাঙালি নারী ‘ডায়েট’ করছেন, এমনটা বেশ বিরল৷ তাই খাওয়ার ব্যাপারে তাঁরা বেশ উদার৷ কথায় বলে না, মাছে-ভাতে বাঙালি? অবশ্য মাছ-ভাতের পাশাপাশি ফুসকা কিংবা চটপটি পেলে তো আর কথাই নেই৷ আসলে টক, ঝাল, নোনতা, মিষ্টি, এমনকি তেতোও পছন্দ এই নারীদের৷
ছবি: Debarati Mukherji
রান্নার শখ
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথাই ধরুন৷ দেশ সামলানোর কঠিন দায়িত্ব পালনের মাঝেও রান্না ঘরে যেতে ভোলেন না তিনি৷ গত বছর ছেলের জন্য রান্না করার সময় তোলা তাঁর এই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোড়ন তুলেছিল৷ বাঙালি মেয়েরা রাঁধতে যে ভীষণ ভালোবাসেন!
ছবি: Sajeeb Wazed
অল্পতেই সন্তুষ্ট
বাঙালি মেয়েদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলা কি খুব কঠিন? না৷ সকলেই জানেন যে, কাজটা সহজই৷ একটি লাল গোলাপ পেলে কিংবা প্রিয় রেস্তোরাঁয় নিয়ে গেলেই তাঁরা সন্তুষ্ট৷ ডয়চে ভেলের পাঠক রন্জু খালেদের মতে, বাঙালি নারীর মধ্যে ‘একইসাথে দৃঢ়তা ও নমনীয়তা এবং প্রজাপতির চপলতা’ রয়েছে৷
ছবি: DW/A. Islam
কাজল কালো চোখ
জীবনানন্দ দাসের ‘বনলতা সেন’ কিংবা রবি ঠাকুরের ‘কৃষ্ণকলি’ – বাঙালি নারীর কাজল কালো চোখের প্রশংসা পাবেন অনেক কবির কবিতাতেই৷ সত্যি বলতে কি, বাঙালি নারীর চোখ পুরুষকে টানে সবচেয়ে বেশি৷
ছবি: N.Seelam/AFP/GettyImages
বাকপটু
বাংলাদেশের কিংবা ভারতের মেয়েরা চুপ করে বসে আছেন – এমন দৃশ্য কল্পনা করাও কঠিন৷ তাঁরা কথা বলতে ভালোবাসেন৷ রান্না থেকে রাজনীতি – সব বিষয়েই একটা মতামত আছে তাঁদের৷ ডয়চে ভেলের পাঠক জিএনএস নয়নের কথায়, ‘‘নারী পুরুষের যে কোনো কষ্ট অতি সহজে ভুলিয়ে দিতে পারে৷ এই গুণই আমাকে মুগ্ধ করে, আবার সাথে অবাকও করে৷’’
ছবি: DW/A. Islam
নারীবাদী
বাঙালি মেয়েরা নারীবাদী৷ বিতর্কিত বাঙালি লেখিকা তসলিমা নাসরিন তাঁদের অনেকেরই প্রিয়৷ নাসরিনের ‘আমার মেয়েবেলা’ পড়েনি এমন নারী পাওয়া মুশকিল৷
ছবি: AFP/Getty Images
ভ্রমণপ্রিয়
বাংলাদেশি কিংবা ভারতীয় বাঙালি নারীর গুণ কি আর অল্পতে জানানো যায়, বলুন? কিছু গুণ না হয় অজানাই থাক৷ তবে একটির কথা বলে শেষ করি, বাঙালি মেয়েরা কিন্তু ঘুরতে খুব ভালোবাসেন৷ তথ্য সহায়তা: ডয়চে ভেলে ফেসবুক পাতা, ইন্ডিয়াওপাইন্স, স্কুপহুপ
ছবি: DW/A. Islam
10 ছবি1 | 10
হয়ে দাঁড়ানোর পিছনে দু'টি কারণ আছে, যেমন চিরকালই থাকে: ইতিহাস ও সত্তা৷ বঙ্গদেশের ইতিহাস প্রথমে মুসলিম আধিপত্য ও পরে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ইতিহাস৷ হিন্দু বাঙালিরা যে প্রথমটির তুলনায় দ্বিতীয়টিকেই পছন্দ করেছেন, তা-ও বোধগম্য৷ যা বোধগম্য নয়, তা হলো টেকচাঁদ ঠাকুর, কালীপ্রসন্ন সিংহ থেকে শুরু করে বঙ্কিমচন্দ্র, গিরীশচন্দ্র অবধি মুসলমানদের সম্পর্কে নানা তাচ্ছিল্যপূর্ণ মন্তব্য৷ হিন্দু জমিদার, মুসলমান প্রজা৷ বাঙালি বাবু, মুসলমান বাবুর্চি – কারা যেন যুগ যুগ ধরে দু'ধরনের, দু'টি ধর্মের বাঙালিদের মধ্যে ঘৃণা, অবজ্ঞা, ভয়-ভীতির বীজ বপন করে গেছে৷ আজ যখন শুনি নজরুল বনাম রবীন্দ্রনাথের মোহড়া চলেছে, তখন মনে পড়ে, আমার পিতৃদেব ছিলেন রবীন্দ্রভক্ত, আর তাঁর হোস্টেলে এসে অগ্নিবীণা বাজাতেন তাঁরই এক – হিন্দু – বন্ধু৷ সে বোধহয় অন্য এক বঙ্গ, অন্য এক বাংলা, অন্য এক বাংলাদেশ৷
ইতিহাস অথবা জাতিসত্তার বৃহৎ প্রেক্ষাপটে আমাদের ক্ষুদ্র বাঙালিত্বের ওজন এতটাই হালকা, যেন হাতির পিঠে মশা বসেছে৷ আমরা প্রান্তিক হয়ে পড়ি৷ আরেকভাবে বলি: ১৯১১ সাল; কলকাতা আর ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রাজধানী, বিশ্বব্যাপী ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার দ্বিতীয় শহর রইল না৷ কলকাতা প্রান্তিক হয়ে পড়ল৷ ঢাকার কথা আপাতত থাক৷
আমরা বাঙালিদের বুঝতে হবে, আমাদের প্রান্তিকতাই আমাদের বৈশিষ্ট্য, সেটাই আমাদের পরিচয়৷ উদাহরণ দিই: লন্ডনে একটি ছোট ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টে খেতে ঢুকেছি গিন্নিকে নিয়ে৷ গিন্নি শ্বেতাঙ্গিনী, কথাবার্তা হচ্ছে জার্মানে৷ তারই মধ্যে রেস্টুরেন্টের মালিক একবার এসে টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে হেঁড়ে গলায় বললেন: ‘‘বাঙালি?'' কি করে বুঝলেন, তিনিই জানেন৷
আমার ঘাড়ে কটা মাথা যে ‘না' বলি?
আপনার কী কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷