বাংলাদেশে কেউ কেউ ধর্মকে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে কিংবা বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেন৷ বিভিন্ন ঘটনায় এই অপচেষ্টার বড় প্রমাণ মিলেছে৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ও এদেশকে ‘হিন্দুরাষ্ট্র' বানিয়ে ফেলা হচ্ছে বলে ধুয়া উঠেছিল৷ এ দেশে শুধু নয়, ভারতীয় উপমহাদেশে রাজনৈতিক প্রয়োজনে ধর্মের ব্যবহার খুবই স্বাভাবিক বিষয়৷ ইতিহাসে যেমন বারবার এর বড় বড় প্রমাণ পাওয়া গেছে, আজও তা ঘটছে৷
কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম আমার কাছে এমন একটি ঐতিহাসিক ঘটনা, যেখানে ‘প্রচার' থাকলেও ধর্ম মুক্তির ডাকে বাধা হয়ে আসেনি৷ বরং ধর্ম শক্তি যুগিয়েছে৷
এখানকার মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান বা অন্য ধর্মের লোকেরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যেমন যুদ্ধ করেছিলেন, তেমনি ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা জায়নামাজ খুলে কিংবা হিন্দু ও অন্য ধর্মাবলম্বীরা আল্লাহ, ভগবান ও প্রভুর দিকে অকুতোভয় তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রার্থনার হাত তুলেছেন৷ তারা কিন্তু শুধু মুসলিম মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কিংবা হিন্দু মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রার্থনা করেননি৷ তাহলে যারা ধর্মের দোহাই দিচ্ছিলেন তারা কেন দিচ্ছিলেন?
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আদ্যপান্ত
বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরার জন্য সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে কয়েকজন মুক্তিপাগল মানুষের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে৷ সেই জাদুঘর নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
যাত্রা শুরু
১৯৯৬ সালের ২২ মার্চ ঢাকার সেগুনবাগিচার একটি পুরনো বাড়ি ভাড়া নিয়ে যাত্রা শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর৷ আটজন ট্রাস্টির উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের নানান স্মারক সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও উপস্থাপনের প্রয়াস নিয়েই যাত্রা হয় এই জাদুঘরের৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
নতুন ঠিকানায়
ভাড়া বাড়ির স্থান-স্বল্পতার কারণে সংগৃহীত স্মারকগুলো যথাযথভাবে প্রদর্শন করা সম্ভব না হওয়ায় ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আগারগাঁও এলাকায় জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়৷ ২০১১ সালের ৪ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন৷ প্রায় ১০২ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হয় জাদুঘরের নয়তলা ভবন৷ ২০১৭ সালের ১৬ এপ্রিল নতুন ভবনে যাত্রা শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বীরশ্রেষ্ঠদের প্রতীক
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সামনে সাত বীরশ্রেষ্ঠর প্রতীক হিসেবে প্রাচীন স্থাপত্যরীতির সাতটি স্তম্ভ রাখা হয়েছে৷ এই স্তম্ভগুলো নওগাঁ জেলার পত্নীতলায় দিবর দিঘিতে স্থাপিত একাদশ শতকের রাজা দিব্যকের স্তম্ভের অনুকৃতি৷ ঐতিহাসিকদের মতে, দিব্যকের সেই স্তম্ভই বাংলার প্রথম বিজয়স্তম্ভ৷ এ কারণেই মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশিদের অবিস্মরণীয় বিজয়ের স্মারক হিসেবে এই স্তম্ভগুলো স্থাপন করা হয়েছে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বিশাল সংগ্রহশালা
মুক্তিযুদ্ধের নানান স্মারক, মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদদের ব্যবহৃত সামগ্রী, অস্ত্র, দলিল, চিঠিপত্র ইত্যাদি মিলিয়ে ১৭ হাজারের বেশি নিদর্শন রয়েছে জাদুঘরের বিশাল সংগ্রহশালায়৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
শিখা অম্লান
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রথম তলায় রয়েছে শিখা অম্লান৷ কালো মার্বেল পাথরে পানির ভেতর থেকে জ্বলছে সেই শিখা৷ উদ্বোধনের আগে সেগুনবাগিচার পুরোনো ভবন থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও নতুন প্রজন্মের ৭১ জন মানুষ হেঁটে শিখা অম্লানটি নতুন জাদুঘরে নিয়ে আসেন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য
জাদুঘরের প্রথম তলায় শিখা অম্লানের পাশে স্থাপন করা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার ব্রোঞ্জ নির্মিত ভাস্কর্য৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত বিমান ও হেলিকপ্টার
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রথম তলার দুইপাশে ছাদের সঙ্গে আটকানো রয়েছে একটি যুদ্ধবিমান ও একটি হেলিকপ্টার৷ একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছিল বিমান ও হেলিকপ্টারটি৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের সংগ্রাম
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রথম গ্যালারির নাম ‘আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের সংগ্রাম’৷ প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, পাকিস্তান পর্ব, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন হয়ে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত দেশের ভূপ্রকৃতির বৈশিষ্ট্য, ইতিহাস ও সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়েছে এ গ্যালারিতে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
প্রথম গ্যালারিতে আর যা কিছু
‘আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের সংগ্রাম’ গ্যালারিতে আরও আছে ফসিল, প্রাচীন টেরাকোটা, মৃৎপাত্র, শিলাখণ্ডসহ নানা প্রকার নিদর্শনসহ ঐতিহাসিক ঘটনা ও ব্যক্তির আলোকচিত্র৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
দ্বিতীয় গ্যালারি
জাদুঘরের দ্বিতীয় গ্যালারির নাম ‘আমাদের অধিকার আমাদের ত্যাগ’৷ এই গ্যালারি থেকেই দর্শক সরাসরি ঢুকে পড়বেন মহান মুক্তিযুদ্ধের পর্বে৷ স্বাধীনতার দাবিতে রেসকোর্স ময়দানে ১৯৭০ সালের ৩ জানুয়ারির সমাবেশ, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণের ছবি৷ মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত রাইফেল আর গুলির বাক্সসহ আছে শহিদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত নানা সামগ্রী৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
অপারেশন সার্চলাইট
দ্বিতীয় গ্যালারির একটি অংশে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতের গণহত্যার চিত্র৷ অন্ধকার এই গ্যালারিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ইটের দেয়াল ভেঙে ভেতরে ঢুকছে হেডলাইট জ্বালানো একটি সামরিক যান৷ গাড়ির সেই আবছা আলোয় দেখা যাবে মেঝের চারপাশে পড়ে থাকা গুলিতে নিহত মৃতদেহ৷ আর দেয়ালে আছে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে চালানো গণহত্যার আলোকচিত্র৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
তৃতীয় গ্যালারি
জাদুঘরের তৃতীয় গ্যালারিটি চতুর্থ তলায়৷ এর নাম ‘আমাদের যুদ্ধ, আমাদের মিত্র’৷ এখানে আছে ভারতে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের জীবনযাত্রা, বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বড় আকারের ডিজিটাল প্রিন্ট৷ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, বিভিন্ন সেক্টরে ভাগ হওয়া, রাজাকারদের তৎপরতা, মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা যুদ্ধের আশ্রয়স্থল এসব৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
কনসার্ট ফর বাংলাদেশ
তৃতীয় গ্যালারিতে আরো আছে পণ্ডিত রবিশঙ্করের উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ এ বিটলসের বিখ্যাত শিল্পী জর্জ হ্যারিসনের গাওয়া ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ গানের জর্জের নিজ হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি ও সুরের স্টাফ নোটেশন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
চতুর্থ ও সবশেষ গ্যালারি
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সর্বশেষ গ্যালারিটির নাম ‘আমাদের জয়, আমাদের মূল্যবোধ’৷ এতে আছে নৌযুদ্ধের বিভিন্ন নিদর্শন৷ বিলোনিয়ার যুদ্ধের রেলস্টেশনের রেলিং, ট্রলি ইত্যাদি৷ এছাড়া আছে মিত্রবাহিনীর ছত্রীসেনাদের আক্রমণ, দগ্ধ বাড়িঘর৷ সবশেষে বিজয় অর্জন৷ শেষ হয়েছে ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানের অনুলিপিটি দিয়ে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
ভ্রাম্যমাণ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
বাংলাদেশের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় জেলায় ঘুরে প্রদর্শনী করা হয়৷ ২০০১ সাল থেকে দু’টি বড় বাসের মাধ্যমে এ ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর ইতিমধ্যেই ৬৪ জেলা ভ্রমণ করেছে, তুলে ধরেছে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
সময়সূচি ও অন্যান্য তথ্য
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের গ্রীষ্মকালীন (মার্চ-সেপ্টেম্বর) সময়সূচি সকাল ১০টা-বিকেল ৬টা৷ আর শীতকালীন (অক্টোবর-ফেব্রুয়ারি) সময়সূচি হলো সকাল ১০টা-বিকাল ৫টা৷ রোজার মাসে জাদুঘর খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত৷ জাদুঘরের সাপ্তাহিক বন্ধ রোববার৷ প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ২০ টাকা৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
16 ছবি1 | 16
মূলত তখন পাকিস্তানকে অখণ্ড রাখার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের রাজনৈতিক হাতিয়ার ছিল ইসলাম ধর্ম৷ কারণ, ধর্মের ভিত্তিতেই ৪৭-এর সময়ের হিন্দু-মুসলিম অধ্যুষিত ভূখন্ডের স্পষ্ট রাজনৈতিক বিভাজনেরই ধারাবাহিকতা রক্ষা না করা হলে পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিমের সঙ্গে থাকবে না৷ তাই তখন বাংলারও অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি সাধারণ বাঙালিদের দু'ভাগে ভাগ করতেন৷ উর্দু ভাষা বলতে পারেন এমন ‘সাচ্চা মুসলমান' ও যারা বলতে পারেন না তেমন নিম্নস্তরের বাঙালি৷
আরো একটা বিষয় হলো, বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থান যে সময়টায় তার কিছু আগেই উপমহাদেশে হিন্দু ও ইসলামি জাতীয়তাবাদের চরম উত্থান ও পারস্পরিক সংঘর্ষ হয়৷ সেই ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের উত্থানেই পাকিস্তানের জন্ম৷ তাই যারা এই ইসলামি জাতীয়তাবাদের ধারক ও বাহক ছিলেন, কিছুদিনের মধ্যেই এই পরিবর্তন তারা সহজে মেনে নিতে পারলেন না৷ তাই মতবাদ ও আদর্শিক জায়গা থেকেও বাধা এলো৷ কিন্তু তাদের এ রাজনীতি ধোপে টেকেনি, বৈষম্যের শিকার বাঙালিদের ওপর৷
কিন্তু সেই রাজনীতি কি চলে গেছে? না যায়নি৷ এই ধরনের মনোভাব সমাজের গভীরে প্রথিত৷ এখনও আমাদের চারপাশেই অনেককে দেখা যায়, বাঙালিপনাকে ‘বিধর্মীর কাজ' বলতে৷ এখনও দেখা যায়, যেসব গণসংগীত মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস জুগিয়েছে, শক্তি যুগিয়েছে, যেসবের সঙ্গে বাঙালির আত্মার যোগ, সেগুলোকে ধর্মের বিপরীতে দাঁড় করাতে৷ এখনো দেখা যায়, স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দিবসগুলো পালন নিয়েও অনেকেই দ্বিধাবিভক্তিতে ভোগেন৷
তাই তাদের সবার কাছে একটা বিষয় পরিষ্কার করে বলা দরকার তা হলো, স্বাধীনতা আন্দোলনের বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কখনো ধর্মবিরোধী নয়৷ পরিষ্কার করে এ-ও বলা দরকার, কিছু মানুষ মুক্তিযুদ্ধকে ধর্মের বিপরীতে দাঁড় করিয়ে দিতে চান, স্বার্থ হাসিলের জন্য৷
এখানে ধর্মপ্রাণ সাধারণ মুসলমানদের কথা বলা হচ্ছে না৷ তারা রাজনীতিটা বোঝেন না৷ তাদের ধর্মের প্রতি আনুগত্যকে ভিন্নভাবে ব্যবহার করেন কিছু মানুষ৷ উদাহরণ দেবার জন্য খুব বেশি দূর যেতে হবে না৷ ২০১৩ সাল অব্দি গেলেই হবে৷ সে সময় কিছু মানুষ ও একটি গণমাধ্যম খুবই সূক্ষ্মভাবে ইসলামকে মুক্তিযুদ্ধের বিপরীতে দাঁড় করিয়ে দিতে চেয়েছিল৷ মূল উদ্দেশ্য ছিল, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ভন্ডুল করা৷
তাই শাহবাগে যারা গিয়েছিলেন এবং শাপলা চত্বরে যারা গিয়েছিলেন তাদের আমরা মুখোমুখি অবস্থান দেখলাম৷ ব্লগার মানেই নাস্তিক, শাহবাগে যারা গেলেন তারা নাস্তিক, এমন প্রচারণা ব্যাপক আকার ধারণ করল৷ শাহবাগ নিয়ে অনেক রাজনীতি হয়েছে, সে আলোচনা ভিন্ন৷ কিন্তু শাহবাগে যারা গিয়েছিলেন তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাইতে গিয়েছিলেন, ধর্মের বিরোধিতা করতে নয়৷
অন্যদিকে, যারা শাপলা চত্বরে গেলেন, অনেকেই ভাবলেন এদের ব্যবহার করে সরকার নামিয়ে দেয়া যাবে৷ দেশে বড় কিছু একটা করে ফেলা যাবে৷ সেখানে গিয়ে হাজিরা দেয়া শুরু করলেন৷ আওয়ামী লীগকেও প্রথমে দেখা গেল উগ্রবাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে, এরপরই দেখা গেল অবস্থান বদলে দুই নৌকায় পা রাখতে৷ সবই রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য৷
রাজনীতি এতই পরিবর্তনশীল একটা বিষয় যে, এর লক্ষ্য আসলে কী তা নির্ধারণ করা আজ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি৷ কিন্তু সামাজিকভাবে ‘রাজনৈতিক' কিছু বিষয়ে পরিষ্কার থাকা খুব জরুরি৷ তা না হলে আমাদের সবসময় বিভ্রান্ত করা হবে৷ আমরা সবসময় বিভ্রান্ত হব৷ বাংলার মানুষ সাম্প্রদায়িক নন৷ বাংলার মানুষ আবেগী৷ সেই আবেগের জোরেই অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে ‘পাকিস্তানের শোষণ থেকে মুক্তি' এসেছে৷ কিন্তু ধর্মের অপব্যাখ্যা এই মুক্তির আবেগকে যেমন থামাতে পারেনি, ভবিষ্যতেও যেন এই মুক্তির চেতনার মাঝে যেন না আসতে পারে সেটা আমাদেরই খেয়াল রাখতে হবে৷
সারাবিশ্বে যেভাবে বর্ণবাদ ও উগ্রবাদকে পুঁজি করে ‘আদর্শিক ঘৃণা' ছড়ানো হচ্ছে, তার বিপরীতে সাধারণ মানুষকে দাঁড়াতে হবে৷ কারণ এটা বুঝতে হবে যে ধর্মের কারণে হোক, বর্ণের কারণে হোক ঘৃণা কোনো আদর্শ হতে পারে না৷ আর কোনো সরকার বা কোনো রাজনৈতিক দল তা করে দিতে পারবে না, আরো পরিষ্কার করে বলা ভালো যে, তারা করবে না৷
প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷