1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
ব্যবসা-বাণিজ্য

বাঙালি বরাবরই ‘পাট রসিক'

১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

এই বাংলার পাটের রস চেপে চেপে ইউরোপ-এশিয়ার কত লোক ধনী হয়ে গেল! ঘাড়ের ওপর চড়ে বসা ঔপনিবেশিকরা যখন একে একে বিদায় নিল, তখনই কেবল রস আস্বাদনের সুযোগ পেল রসিক বাঙালি৷ তখন কী করল তারা?

Bangladesch Faridpur Juteproduction
ছবি: DW/Muhammad Mostafigur Rahman

বন্ধ করলো পাটের কপাট৷ সত্তরের দশকেই কিছুটা রুগ্ন হয়ে আসা পাট রুগ্নতর হয় আশির দশকে৷ স্বাধীনতা পরবর্তী মুজিব সরকার পাকিস্তান থেকে পাওয়া জুটমিল সরকারিকরণ করে৷ তখনও দেশের ৯০ শতাংশ রপ্তানি আয় হতো পাট থেকে৷ কিন্তু এই সরকার পাটের রুগ্নাবস্থা কাটাতে পারেনি৷ অবস্থা আরো বেগতিক হয় জিয়া সরকারের আমলে৷ আর এরশাদ তো ষোলকলা পূর্ণ করলেন৷ ৬২টি পাটকলের ৩৩টিই ছেড়ে দেয়া হয় বেসরকারি খাতে৷ অভিজ্ঞতার অভাবে এসব পাটকল চালাতে ব্যর্থ হলেন ব্যবসায়ীরা৷ একে একে বন্ধ হতে লাগল পাটকল৷ সবশেষ ২০০২ সালে বন্ধ করে দেয়া হলো এশিয়ার বৃহত্তম পাটকল আদমজী৷

এবার আসুন একটু চোখ বুলিয়ে আসি বাংলার পাটের ইতিহাসের দিকে৷

মোঘল আমলেও ভারতীয় জনপদে পাট ব্যবহারের অস্তিত্ব পাওয়া যায়৷ আকবরের সময়ে গ্রামীণ প্রান্তিক জনগোষ্ঠী পাটের তৈরি কাপড় পরতেন৷ এছাড়া হাতে তৈরি দড়িসহ কিছু পণ্য হতো পাট থেকে৷

তবে আঠারো শতকে স্কটল্যান্ডের ডান্ডি হয়ে ওঠে ব্যবসার অন্যতম কেন্দ্র৷ কিন্তু রাশিয়ার সঙ্গে দ্বন্দ্বের জের ধরে সুতোর কাঁচামাল সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়৷ এ সময় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সুযোগ বুঝে বেঙ্গল থেকে পাট রপ্তানি করে৷ প্রথমে সেই পাট প্রক্রিয়াজাতকরণে কিছুটা সমস্যায় পড়লেও পরে এর প্রতিকার বেরিয়ে যায়৷ ১৮২২ সালে ডান্ডিতে প্রথম জুট মিল তৈরি হয়৷ আস্তে আস্তে এখান থেকে পাটের রপ্তানি বাড়তে থাকে জ্যামিতিক হারে৷ যেমন, ১৮২৮ সালে যেখানে ভারত থেকে ১৮ টন পাট রপ্তানি হতো, সাত বছর পর ১৮৩৫ সালে পাট রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ২শ' ২২ টন৷ আর ১৮৫০ সালে তার পরিমাণ দাঁড়ায় ১৫ হাজার টনে৷ এই রপ্তানির একটা বড় অংশ আসত বাংলাদেশের অংশ থেকে৷

বাংলার পাট দিয়ে ইউরোপে তৈরি হয় এক ধনিক শ্রেণি৷ তাদের বলা হতো জুট ব্যারন৷ এই জুট ব্যারনরা হিসেব করে দেখলেন উৎপাদন খরচ আরো কমিয়ে ফেলা যাবে যদি বাংলায় জুটমিল স্থাপন করা যায়৷ ১৮৫৫ সালে কলকাতায় প্রথম জুটমিল স্থাপন করা হয়৷ নাম দেয়া হয় ওয়েলিংটন জুট মিলস৷ এরপর আরো পাটকল তৈরি হয়৷ বাংলা হয়ে ওঠে ডান্ডির প্রতিদ্বন্দ্বী৷

ভারত স্বাধীন হবার পর ভারতীয় মাড়োয়ারিরা দখল করে নেয় জুটের ব্যবসা৷ কিন্তু ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বে পশ্চিম পাকিস্তানিরা এসে পূর্বে স্থাপন করা শুরু করেন পাটকল৷ আদমজী, বাওয়ানি, ইস্পাহানী ও দাউদরা এসে পূর্ব পাকিস্তানের পাটের ব্যবসা দখল করে নেন৷ দক্ষিণ এশিয়ার আজকের অনেক ধনী ব্যবসায়ীই এই পাটের অর্থেই নিজেদের অর্থ সাম্রাজ্যের ভিত মজবুত করেন৷

যুবায়ের আহমেদ, ডয়চে ভেলেছবি: Zobaer Ahmed

১৯৬০ সালের পর জুটের ব্যবসা এর শিখরে পৌঁছায়৷ তখন বৈশ্বিক বাজারে এর চাহিদা এতটাই বেশি ছিল যে তা মেটানো সম্ভব ছিল না৷ তখন বাজারে আসে পলিথিন ও নাইলন৷ এরা আস্তে আস্তে বিকল্প হয়ে ওঠে পাটের৷ পাট হারাতে থাকে তার জৌলুস৷ সেই জৌলুস একেবারেই নিভু নিভু হয়ে যায় ১৯৮০-র পরে৷

পঞ্চাশের দশকে নারায়ণগঞ্জের পাশাপাশি খুলনার খালিশপুর ও দৌলতপুর হয়ে উঠেছিল পাট শিল্পের অন্যতম কেন্দ্র৷ কিন্তু সেই খুলনাই আজ ঊষর প্রান্তর৷ তবে অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদার জন্য টিকে ছিল বাংলাদেশের পাট৷ আদমজী বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত কতটা ভুল ছিল তার প্রমাণ, ২০০৪ থেকে ২০১০ সালে পাটের চাহিদা আবার বেড়ে গেল৷ কাঁচা পাটের দাম বাড়ল ৫০০ শতাংশ পর্যন্ত৷ এর কারণ, পেপার মিল, সেলুলয়েড পণ্য, নন-ওভেন টেক্সটাইল, কম্পোজিট ও জিওটেক্সটাইলে এর চাহিদা বৃদ্ধি৷

বৈশ্বিক বাজারে এখনো বাংলাদেশই সর্বাগ্রে৷ হিসেব বলছে, বৈশ্বিক রপ্তানি আয়ের ৬৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে বাংলাদেশ৷ আর ভারত ২৫ ভাগ৷ বাকি অংশ চীন, নেপাল ও পাকিস্তানসহ অন্যরা৷

২০১৬-১৭ অর্থবছরে পাটপণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশের আয় ছিল ৭৯ কোটি ডলার৷ আর ভারতের ৩২ কোটি ডলার৷ এই যখন অবস্থা, তখন বাঙালিকে রসিক বলার কারণ কী? ভারত ২০০৫ সালে পাটনীতি ঘোষণা করে বলে যে, পাট থেকে আয় ১ হাজার রুপি থেকে ৫ হাজার রুপিতে নেবে পাঁচ বছরে৷ সেজন্য পাটচাষিদের ৫০০ কোটি রুপির ঋণই শুধু মওকুফ করে না, আরো কয়েকশ' কোটি ভর্তুকি দেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়৷ অথচ বাংলাদেশ লোকসান গুনছে৷ পাটকলগুলোতে যান, দেখবেন শ্রমিক নিয়োগ নিয়ে কত রকমের হুজ্জতি৷ বিজেএমসির স্থানীয় অফিসগুলো কীভাবে কাজ করছে কিছুক্ষণ ঘুরলেই বুঝবেন৷

সে যা-ই হোক, বর্তমান সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে পাট বহুমুখীকরণের৷ সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে পাটকে আবারো আয়ের বড় উৎস করার উদ্যোগ চলছে৷ কিন্তু পাট নিয়ে যে ছেলেখেলা হয়েছে, রসিকতা হয়েছে, বা হচ্ছে এখনো, তা বন্ধ করতে হবে৷ তা না হলে পাটের জৌলুস ফিরবে না৷

বাংলাদেশের পাটশিল্পের করুণ পরিণতি কেন হয়েছিল বলে মনে করেন? লিখুন নীচের ঘরে৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ