বর্ষবরণ
১৪ এপ্রিল ২০১২সবমিলিয়ে বাঙালি তার প্রতিদিনের টানাপোড়েন, সামাজিক বিভেদ, আর আর্থসামাজিক সঙ্কটকে ভুলে গিয়ে গাইছে বাংলার গান৷ বরণ করে নিচ্ছে ১৪১৯ বাংলা নতুন বছরকে৷
ছায়ানটের বর্ষবরণ আমাদের ঐতিহ্যের অংশ৷ আর তাই রমনা বটমূলে ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় ভৈরবী সুর৷ সেই সুর ছড়িয়ে পড়ে রমনা বটমূল থেকে সবখানে৷ ভোরের হাওয়ায় সুর সঞ্চারিত হয় সব প্রাণে, সব মনে৷ তারপর বৈশাখ বন্দনা৷ বৈশাখের শক্তি আর সৌন্দর্যের কথা বলা হয় গানে গানে৷ জানান হয় মনের সব পাপ, জরা আর ঘৃণা দূর করে মঙ্গল আর শুভ কামনার কথা৷ কিন্তু তবুও মনে ঘৃনা থাকে অসুরের জন্য, বললেন ছায়ানটের প্রধান অধ্যাপক ড. সানজিদা খাতুন৷
সকাল থেকেই রমনা বটমূলে জড়ো হন সব শ্রেণির সব বয়সের মানুষ৷ তারা বলেন পহেলা বৈশাখের এই আয়োজনের সঙ্গে আছে আমাদের প্রাণের টান৷ আমাদের জাতীয় পরিচয়ের সম্পর্ক৷ তবে এই বোধ যেন সারাবছর থাকে৷ দেশপ্রেম যেন হয় সবসময়ের৷ এমন কথা বললেন তরুণেরা৷ শিশুরা যারা বাবা-মায়ের হাত ধরে এসেছে বর্ষবরণের উৎসবে তাদের মধ্যে যেন বাঁধভাঙ্গা আনন্দ৷
চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা এবার যেন আরো নতুন মাত্রা পেয়েছে৷ বাঙালির অর্জন সমুদ্র বিজয় আর যুদ্ধাপরাধের বিচার শোভাযাত্রার মূল ভাব৷ আর সেই ভাবকেই তুলে ধরা হয় সাম্পান নৌকার মাধ্যমে৷ শান্তি ও সম্প্রীতির জন্য পাখি এবং অশুভের জন্য দানবের প্রতিকৃতি৷ বর্ণিল এই শোভাযাত্রায় ছিল ঢোল বাঁশি আর করতালের বাজনা৷ আর ঢাকার মনিক মিয়া অ্যাভিনিউতে এক কিলোমিটার দীর্ঘ আলপনা এবারের নববর্ষে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে৷ মোট ৩০০ শিল্পী তিন লাখ বর্গফুটের এই আলপনা এঁকেছেন৷
বিদেশীরাও বরাবরের মত এবারও যোগ দিয়েছেন বাংলা বর্ষবরণে৷ আন্তর্জাতিক দুই খ্যাতিমান সাংবাদিক, বাংলাদেশের বন্ধু মার্কটালি এবং সায়মন ড্রিং এবারের পহেলা বৈশাখে সকাল থেকেই বেবিয়ে পড়েন ঢাকায় বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে৷
ঢাকা ছাড়াও বিভাগীয় ও জেলা শহর এবং প্রত্যন্ত গ্রামে আছে বর্ষবরণে নানা আয়োজন৷ আছে বৈশাখী মেলা, লাঠি খেলা, নাগর দোলা৷ আছে দেশীয় পোশাকের প্রদর্শনী৷ সব মিলিয়ে পহেলা বৈশাখে বাঙালি নতুন করে তাকে চিনে নিচ্ছে৷ নিচ্ছে শানিত করে৷
প্রতিবেদন: হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা
সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম