বাচ্চাদের ক্ষতি করছে সামাজিক মাধ্যম, ক্ষমা চাইলেন সাকারবার্গ
১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
সামাজিক মাধ্যম নিয়ে মার্কিন সেনেটরদের কঠিন প্রশ্নের মুখে পড়লেন মার্ক সাকারবার্গ-সহ অন্যরা। ক্ষমা চাইলেন সাকারবার্গ।
বিজ্ঞাপন
বুধবার মার্কিন সেনেটে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়ার পর ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক সাকারবার্গ সেই সব বাবা-মা ও পরিবারের কাছে ক্ষমা চাইলেন, ফেসবুক ও অন্য সমাজিক মাধ্য়মে আসক্তির জন্য যাদের সন্তানদের ক্ষতি হয়েছে। একজন সেনেটর সরসরি অভিযোগ করেন, সাকারবার্গরা এমন একটি প্রোডাক্ট নিয়ে এসেছেন, যা মানুষের মৃত্যুর কারণ হচ্ছে।
শুনানির সময় সাকারবার্গ ওই সন্তানদের অভিভাবকদের বলেছেন, ''আপনাদের যে কষ্টের মধ্য়ে দিয়ে যেতে হয়েছে, তার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আপনাদের পরিবারের যে ক্ষতি হয়েছে, তা যেন অন্যদের না হয়।''
সেনেটের জুডিশিয়ারি কমিটি এই হাইটেক কর্তাদের ডেকেছিল এবং তাদের কঠিন প্রশ্ন করে। এর নাম দেয়া হয়েছিল, বিগ টেক অ্য়ান্ড অনলাইন চাইল্ড সেক্সুয়াল এক্সপ্লয়টেশন ক্রাইসিস।
সাকারবার্গ ছাড়াও টিকটকের সিইও শাও জি চিউ, স্ন্য়াপচ্যাটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইভান স্পিগেল, ডিসকর্ড সিইও জেসন সিট্রঁ এবং এক্স-এর অনলাইন প্ল্যাটফর্ম প্রধানও ছিলেন।
ভবিষ্যতে যা করতে চায় ফেসবুক
শুধু সামাজিক যোগাযোগের সাইট আর বার্তা আদানপ্রদানের অ্যাপে নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখতে চায় না ফেসবুক৷ পাশাপাশি কেনাকাটা, অর্থ লেনদেনসহ অনলাইনকেন্দ্রিক সব সেবাই নিয়ে আসতে চায় প্রতিষ্ঠানটি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Jose Sanchez
এক প্ল্যাটফর্মে সব কিছু
ফেসবুকের সব আ্যপ - মেসেঞ্জার, ইনস্টাগ্রাম, আর হোয়াটস অ্যাপকে একটি একক ব্যবস্থায় আনতে চান মার্ক সাকারবার্গ৷ এই ব্যবস্থায় ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় বাড়তি জোর দেয়া হবে৷ বার্তা আদানপ্রদান ছাড়াও এটিকে এমনভাবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা তাঁর, যা ‘কথা বলা, ভিডিও চ্যাট, গ্রুপ স্টোরি, ব্যবসা, লেনদেন, বাণিজ্য এবং সব ধরণের ব্যক্তিগত সেবার একটি প্লাটফর্ম হয়ে উঠবে৷’ সম্প্রতি এক ব্লগপোস্টে লিখেছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Jose Sanchez
পেমেন্ট সেবা
আগামী দিনে ফেসবুকের অ্যাপেই মিলবে পেমেন্ট সেবা৷ ধরুন প্রতিষ্ঠানটি পেপালের সাথে জোটবদ্ধ হলো৷ তখন চাইলে অনলাইনে কেনাকাটা, রেস্টুরেন্ট বিল, সরকারি সেবার বিল সবই পরিশোধ করা সম্ভব হবে মেসেজিং অ্যাপ দিয়েই৷ নেয়া যাবে রাইড শেয়ারিং সেবাও৷ অবশ্য এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে মেসেঞ্জারের মাধ্যমে লেনদেনের সুবিধা রয়েছে৷ হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে পরীক্ষামূলক লেনদেন ব্যবস্থা চালু হয়েছে ভারতেও৷
ছবি: Colourbox
নিজস্ব মুদ্রা
ব্যবহারকারীদের অর্থ লেনদেনের সুবিধার জন্য ফেসবুক নিজস্ব ডিজিটাল মুদ্রা তৈরি করছে বলে নিউইয়র্ক টাইমস তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে৷ এ বিষয়ে ফেসবুক বিস্তারিত কিছু প্রকাশ করেনি৷ তবে নতুন একটি দল বিটকয়েনসহ অন্য ক্রিপ্টোকারিন্সেগুলোর ব্যবহারের প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়৷ এটি বাস্তবায়ন হলে অর্থ লেনদেনের জন্য ব্যবহারকারীদের ব্যাংক বা পেপাল অ্যাকাউন্ট লাগবে না৷
ছবি: Imago/Reporters/Eureka
ওয়ান-স্টপ শপ
নিজস্ব ভার্চুয়াল মুদ্রা চালু হলে ফেসবুকের মাধ্যমে অনলাইন কেনাকাটা বা সেবা নেয়ার বড় একটি চ্যালেঞ্জ দূর হয়ে যাবে৷ মেসেজিং অ্যাপ প্লাটফর্মটি তখন পরিণত হবে ‘ওয়ান স্টপ শপে’৷ রেস্টুরেন্ট রিজার্ভেশন, পরিবহন সেবা নেয়া, কিংবা মার্কেটপ্লেস থেকে পণ্য কেনা, সম্ভব হবে সবই৷ এমনকি ভবিষ্যতে অ্যামাজনের মত ই-কমার্স ব্যবসাতেও নামতে পারে ফেসবুক, ধারণা বিশেষজ্ঞদের৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Matthews
আয়ের নতুন উৎস
নতুন এই প্ল্যাটফর্মের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বিজ্ঞাপনের বাইরে আয়ের নতুন নতুন দুয়ার খুলবে ফেসবুকের জন্য৷ কেনাকাটার ক্ষেত্রে তখন সেবাদাতা কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে কমিশন নিতে পারবে তারা৷ যেমনটি এখন অ্যাপল করে থাকে৷ অ্যাপভিত্তিক লেনদেনে তারা ৩০ ভাগ পর্যন্ত অর্থ কেটে রাখে৷
ছবি: Imago/Michael Weber
চ্যালেঞ্জও আছে
ফেসবুকের এই পরিকল্পনা কতটা বাস্তবায়ন সম্ভব, তা নির্ভর করবে ব্যবহারকারীদের আগ্রহের উপর৷ কেননা ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়ায় ফেসবুকের উপর আস্থার সংকট রয়েছে৷ তার উপর এই পরিবর্তনের পথে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশের আইনি বাধাও তাদের পেরুতে হবে৷
ছবি: Imago/Schöning
6 ছবি1 | 6
সেনেটরদের নিন্দা
সেনেটর ডিক ডুবিন ছিলেন এই কমিটির প্রধান। তিনি বলেন, ''এই কোম্পানিগুলি যে প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে, তা প্রচুর বাচ্চা র কাছে বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোম্পানিগুলি সুরক্ষার পিছনে যথেষ্ট অর্থ খরচ করেনি, প্রাথমিক সুরক্ষার থেকে লাভকেই বড় করে দেখেছে। এর ফলে বাচ্চারা বিপদের মধ্যে পড়েছে।''
সেনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেন, ''মিস্টার সাকারবার্গ, আপনি ও আপনার কোম্পানিগুলির কাজ আমাদের সামনে আছে। আমি জানি, আপনি কখনোই এরকম পরিস্থিতি চাইবেন না, তা সত্ত্বেও আপনার হাতে রক্ত লেগে আছে। আপনার প্রোডাক্ট মানুষকে মারছে।''
সাকারবার্গ সেনেটরদের বলেন, ''ইন্টারনেট শুরু হওয়ার পর থেকে বাচ্চাদের নিরাপদে রাখাটা প্রথম থেকে একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। অপরাধীরা তাদের কৌশল বদলেছে। আমাদেরও প্রোডাক্টের সুরক্ষা বদলাতে হয়েছে।''
তিনি স্বীকার করেন, ''সমীক্ষায় দেখা গেছে, সামাজিক মাধ্যম বাচ্চাদের মানসিক স্বাস্থ্য়ের পক্ষে খারাপ।''
মোড় ঘোরানো সোশ্যাল মিডিয়া
গণমাধ্যম, এমনকি রাষ্টীয় নীতি, বিচারব্যবস্থাকেও অনেকভাবে দারুণভাবে প্রভাবিত করছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম৷ অনেক ঘটনাকে যেমন ধামাচাপা পড়তে দেয়নি, আবার অনেক ক্ষেত্রে তৈরি হয়েছে বিচারের আগেই হয়রানি করার সংস্কৃতিও৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Gollnow
নুসরাত হত্যা
ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসা শিক্ষার্থী নুসরাতকে মাদ্রাসার ছাদেই পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয় ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল৷ ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে চারদিন পর তাঁর মৃত্যু হয়৷ অভিযোগের আঙ্গুল ওঠে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজউদ্দৌলা ও তার সহযোগীদের দিকে৷ এর আগে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠলেও প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে পার পেয়ে যান তিনি৷ তবে এবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম উত্তাল হলে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/m. Rashid
রিফাত হত্যাকাণ্ড ও মিন্নি
২০১৯ সালের ২৬শে জুন বরগুনায় রিফাত শরীফ নামে এক ব্যক্তিকে তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সামনেই কুপিয়ে হত্যা করে একদল লোক। ঘটনার ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়ালে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। অভিযুক্ত হামলাকারীদের একজন নয়ন বন্ড 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত হয়। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিন্নিকেও দায়ী করে আলোচনা ছড়ায়৷ পুলিশ মিন্নিকেও আটক করে৷ তাদের দাবি, মিন্নি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন৷
ছবি: bdnews24
শিশু রাজন হত্যা
একটি রিকশা ভ্যান চুরির অভিযোগ তুলে ২০১৫ সালের ৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁওয়ে ১৩ বছর বয়সী রাজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। মূল আসামি কামরুলের সহযোগী নূর মিয়া সেদিন রাজনকে পেটানোর দৃশ্য ভিডিও করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেন। ওই ঘটনায় সারা দেশে তৈরি হয় তীব্র ক্ষোভ। এ মামলায় চার আসামির ফাঁসি ও পাঁচজনের কারাদণ্ডের রায় দেয় আদালত৷
হজ ও লতিফ সিদ্দিকী
২০১৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর হজ, তাবলিগ জামাত, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও সাংবাদিকদের সম্পর্কে তৎকালীন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর একটি বক্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হয়৷ নিজেকে হজ আর তাবলিগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী বলায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তৈরি হয় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া৷ এর ফলে তাকে মন্ত্রীত্ব তো খোয়াতে হয়েছেই, বহিষ্কার করা হয় আওয়ামী লীগ থেকেও৷
ছবি: DW
অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ
সম্প্রতি আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের প্রবাসীদের নিয়ে দেয়া একটি বক্তব্যের খণ্ডাংশ ফেসবুকে ভাইরাল হয়৷ প্রবাসীদের কষ্টের কথা গল্পচ্ছলে স্বভাবসুলভ মজার ঢং-এ বর্ণনা করলেও তাকে প্রচার করা হয় প্রবাসীবিদ্বেষী বলে৷ অবশ্য অধ্যাপক আবু সাঈদ বা তার বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া না আসায় ধীরে ধীরে তা স্তিমিত হয়ে পড়ে৷
ছবি: DW
5 ছবি1 | 5
অনলাইন সুরক্ষায় অর্থ খরচ করবে কোম্পানিগুলি
টিকটক সিইও শাও জি চিউ বলেছেন, ''আমার তিনটি সন্তান আছে। আমি জানি, যে বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তা খুবই ভয়ের এবং প্রতিটি বাবা-মার কাছে দুঃস্বপ্নের মতো।''
তিনি জানিয়েছেন, ''নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও মানুষের আস্থা ফেরাতে তিনি দুইশ কোটি ডলার খরচ করবেন। চলতি বছরেই আমাদের ৪০ হাজার পেশাদার সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে কাজ করবেন।''
মেটাও জানিয়েছে, ''তাদের ৪০ হজার কর্মী অনলাইন সুরক্ষার বিষয়টা নিয়ে কাজ করছেন। ২০১৬ সালে থেকে তারা দুই হাজার কোটি ডলার এর জন্য খরচ করেছে।''
মেটার কাছেই ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মালিকানা আছে। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কিশোর ও সদ্য যুকদের কাছে অচেনা জায়গা থেকে কোনো বার্তা পাঠানো হলে, তা ব্লক করা হবে।
এছাড়া ইনস্টা ও ফেসবুকে কিশোরদের কনটেন্টের উপর আরো কড়াকড়ি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।