বাচ্চা দুটো যার কাছে থাকতে চাইবে তার কাছেই রাখা উচিত
২৪ আগস্ট ২০২১
বাংলাদেশের আইনে কী আছে বা জাপানি আইনে কী আছে তা নয়, বড় কথা শিশুদের মতামত নেওয়া উচিত৷ শিশুদের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন অনেক পাঠক তবে ভিন্নমতও রয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
সন্তানেরা যার সাথে থাকতে চায় তার সাথে থাকতে দেওয়া হোক৷ এখন বিদেশি মা বলে বেশি সহানুভূতি না দেখিয়ে বাবা এবং মা দুইজনকে সন্তানের অধিকার দিতে হবে কাউকে বঞ্চিত করা যাবেনা বলে ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় মত প্রকাশ করেছেন পাঠক জুবায়ের আনসারী৷
এক বাংলাদেশি বাবা তার দুই সন্তানকে নিয়ে জাপান থেকে বাংলাদেশে চলে এসেছেন৷ সেই সন্তানদের নিতে ছুটে এসেছেন তাদের জাপানি মা৷ ঢাকা পুলিশ শিশু দু'টোকে নিয়ে গেছে নিজেদের কাছে৷
ইকতারুল ইসলাম সাগর মনে করেন পুলিশ অতি উৎসাহী হয়ে কাজটি করেছে যা সংবিধান বিরোধী৷
অভিষেক ইসলাম অভির মতে এটা বাড়াবাড়ি ছাড়া আর কিছুই নয়! তিনি লিখেছেন, যেখানে বিষয়টা আদালতে বিচারাধীন সেখানে প্রশাসনের অতি মাতবরির দরকার নাই৷৩১ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত ছিলো, এটা আদালত অবমাননার সামিল৷ ৩১ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত বলে মনে করেন পাঠক আবু ইমরান সোহাগও৷ বাচ্চা দুটো যার কাছে থাকতে চাইবে তার কাছেই রাখা উচিত বলে মনে করেন জহিরুল ইসলাম৷
বাংলাদেশের আইনে কী আছে বা জাপানি আইনে কী আছে তা নয়, বড় কথা শিশুদের মতমত নেওয়া উচিত৷ সন্তানেরা যার সাথে থাকতে চায় তার সাথে থাকতে দেওয়া হোক- এমনই মনে করেন আহমেদ মামুন জীবন৷
পাঠক তানভীর আহমেদ লিখেছেন, এই বিষয়টি সবার নজরে এসেছে৷ বাংলাদেশে একজন মা দুধের শিশু বুকে নিয়ে দিনের পর দিন সাবেক এটর্নি জেনারেল টি এস হাসান আরিফের বাসার সামনে তার তিন বছরের মেয়েকে দেখার জন্য কাকুতি মিনতি করছে, কোর্টের নির্দেশ থাকার পরেও মেয়েকে দেখার সুযোগ পায়নি, পুলিশ তাড়িয়ে দিয়েছে৷
ছাড়াছাড়ি মা-বাবার, ভোগান্তি সন্তানের
প্রযুক্তির সুবিধা বাড়ার সাথে বাড়ছে ডিভোর্স বা বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা৷ বাড়ছে স্বামী-স্ত্রীর আলাদা থাকার প্রবণতাও৷ বিশেষজ্ঞদের মতে এসবের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সন্তানের মনোজগতে৷ ওর স্বাভাবিক বিকাশ হচ্ছে বাধাগ্রস্ত৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Beck
শিশুদের ভয় আর আতঙ্ক
সন্তানের কাছে মা-বাবার ছাড়াছাড়ি মেনে নেয়া অনেক কষ্টকর৷ বিশেষ করে সন্তানের বয়স যদি কম থাকে৷ এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, হঠাৎ করে একজনের সাথে, অর্থাৎ মা বা বাবার সাথে থাকতে হয় বলে শতকরা ৩৭ থেকে ৪৮ ভাগ শিশু-কিশোরের মনেই অন্যজনকে হারানোর ভয় থাকে৷
ছবি: goodluz - Fotolia
যে কষ্ট তারা বোঝাতে পারে না
যে কোনো সন্তানের কাছে মা-বাবাই তার সবচেয়ে কাছের, ভালোবাসার মানুষ৷ আর তাদের মধ্যেই যখন বোঝাপড়া না হয়, তখন শিশুরা হয়ে পড়ে অসহায়৷ যা থেকে অনেক শিশু বা কিশোর-কিশোরী প্রচণ্ড আঘাত পায় আর সেই আঘাতের ক্ষত হয়তো তাকে সারা জীবনই কষ্ট দেয়৷ এমনটাই মনে করেন মিউনিখের মনোচিকিৎসক বেনেডিক্ট ক্লাউকে৷
ছবি: Fotolia/Kitty
‘আমাকে কেউ ভালোবাসে না, আমি মূল্যহীন’
মা-বাবার ছাড়াছাড়ির মনোকষ্টের কথা শিশুরা সহজে বোঝাতে পারে না৷ তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাথা ব্যথা, পেট ব্যথা, পড়াশোনায় মনোযোগ না থাকা বা অকারণে হঠাৎ করে রেগে যাওয়া – এ সবের মধ্য দিয়েই শিশুদের কষ্টের প্রকাশ ঘটে৷ ওদের তখন মনে হয়, ‘‘আমার কেউ নেই৷ আমাকে কেউ ভালোবাসে না৷ আমি মূল্যহীন৷’’ ওরা ভাবে, ওদের যদি কেউ ভালোবাসে, তাহলে ভালোবাসার দু’জন মানুষের মধ্যে একজন তাকে ছেড়ে যাবে কেন?
ছবি: picture-alliance/dpa
দীর্ঘস্থায়ী বিষণ্ণতা
ডিভোর্স বা ছাড়াছাড়ি যেমন মা-বাবার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ, তেমনি সন্তানের জন্যও৷ সমীক্ষায় জানা গেছে, পরিবারকে নতুন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে মা এবং বাবাকেই বড় ভূমিকা নিতে হবে৷ সন্তানের সাথে কথা বলার জন্য যে কোনো পরিস্থিতেই পিতা-মাতাকে প্রস্তুত থাকতে হবে৷ তাছাড়া সন্তানের কাছে একে অপরকে দোষারোপ করাও উচিত নয়, কারণ, এই জটিল ব্যাপারে বাবা বা মায়ের পক্ষ নিতে গিয়ে সন্তানকে যেন বিচারকের ভূমিকা না নিতে হয়৷
মা-বাবা যা করবেন
যেসব দম্পতির ছাড়াছাড়ি হয়েছে তাঁদের প্রতি বেনেডিক্ট ক্লাউকের পরামর্শ, ‘‘সন্তান যার কাছেই থাকুক না কেন, ওকে এমন একটা অনুভূতি বা ধারণা দিন যেন ও মনে করে, আপনারা আলাদা থাকলেও ওকে দু’জনই সমান ভালোবাসেন, কারণ, শিশুর জন্য মানবিক সম্পর্কের জায়গাগুলো বেশ জটিল৷ তাই যতটা সম্ভব ওর সাথে সময় কাটান৷ ‘তোমাকে ভালোবাসি’ বলতে ভুলবেন না৷ জানিয়ে দিন, ওর যে কোনো সমস্যায় আপনারা ওর সাথে আছেন এবং থাকবেন৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa
5 ছবি1 | 5
গাজী সাহাবুদ্দিনের মতে, আদালতের রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিৎ ছিল৷তবে বাংলাদেশের আইনের শাসন নিয়ে সন্দিহান পাঠক রাইসুল৷
এদিকে পাঠক ওমর ফারুক তার ব্যক্তিগত মতামত জানিয়েছেন এভাবে, মেয়েগুলো বাবার কাছেই থাকবে বলে বক্তব্য দিয়েছে৷ সুতরাং পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ১৯৮৫ অনুযায়ী শিশুদের মতামতকে আদালতের প্রাধান্য দিতে হবে,এটাই আইনি বিধান৷
আমরা খুব আবেগি জাতি, একজন নারী কান্নাকাটি করছে এতেই আমরা ধরে নিয়েছি সব দোষ তার স্বামীর৷ আর পুলিশ আরও একধাপ এগিয়ে ...... ৷এই মন্তব্যটি সাইফুল ইসলাম শুভ করেছেন৷
মায়ের যেমন অধিকার আছে সন্তানের প্রতি এবং একই অধিকার বাবারও৷ মা বিদেশি বলে বেশি সহানুভূতি না দেখিয়ে বা কাউকে বঞ্চিত না করে দুইজনকে সন্তানের অধিকার দিতে হবে বলে মনে করেন ডয়চে ভেলের পাঠক মো.ইকবাল হোসেন৷
পাঠক ইকবাল হোসেনের মতো একই মত পোষণ করেন পাঠক মিজানুর রহমানও ৷ তিনি লিখেছেন, বিষয়টি গভীর তদন্ত হোক এবং আইন তার নিজস্ব গতিতে মানবিকতার পথে চলুক৷
প্রায় একই মত মনিরুজ্জামান মনিরের৷ তবে তার মতে,বাংলাদেশের দেশের অনেক পুলিশের মানবিক ও পেশাদারত্বের প্রকট অভাব রয়েছে ৷
ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় এ বিষয়ে পাঠক রুবেল মাহমুদ লিখেছেন,
বাচ্চারা ১৮ না হওয়া পর্যন্ত মায়ের কাছেই থাকবে ৷পরে তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিবে কার সাথে থাকবে ৷
সন্তানেরা যার কাছে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে তার কাছে থাকলে ভালো হয় বলে মনে করেন মোশারফ হোসেন তৈয়ব ৷
এদিকে পুলিশের প্রশিক্ষণের সময় মানবাধিকার এবং আইন প্রয়োগের নীতিমালা অধিক যত্ন সহকারে শেখানো উচিত বলে মনে করেন মো. রানা খন্দকার ৷ এ বিষয়ে প্রায় একই মত মো.ফয়জুল হাসান কবিরের ৷ পুলিশের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা যুগোপযোগী নয় বলে তিনি মনে করেন তিনি৷
সুস্থ পরিবেশেই গড়ে ওঠে সুস্থ জীবন
শিশুর প্রথম নিঃশ্বাস থেকে স্কুল জীবন শেষ করা এবং তারও পরে সন্তানের ভালো-মন্দের সাথে থাকেন তার বাবা-মা৷ কিভাবে ছোট্ট শিশুকে একজন সুস্থ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব, তারই গল্প এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মায়ের গর্ভ
মায়ের গর্ভে থাকার সময় থেকেই শিশুর ভালোর জন্য সব কিছু করেন বাবা-মা৷ সত্যিকার অর্থে সুস্থ পরিবেশই শিশুকে সুস্থ, সুন্দর ভবিষ্যৎ দিতে পারে৷ তবে সুস্থ পরিবেশ বলতে কী বোঝায়, সেটা খুব বুঝে-শুনে ঠিক করতে হয় মা-বাবাকে৷ আর এর জন্য সন্তান কী চায়, অর্থাৎ তার মন এবং শরীরকে বোঝা অত্যন্ত জরুরি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মায়ের দুধ দিয়ে শুরু
শিশুকে জন্মের সাথে সাথেই মায়ের দুধ পান করানো উচিত বলে মনে করেন বার্লিনের শিশু ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ডা. ফ্রাংক ইয়োখুম৷ তাঁর কথায়, ‘‘মায়ের দুধে আছে শিশুদের প্রয়োজনীয় সব পুষ্টিগুণ৷ শিশু মায়ের দুধ পানের মাধ্যমে মায়ের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাটিও পায়৷ এর ফলে শিশুরা নানা রকম রোগের সংক্রমণ থেকে যেমন রেহাই পায়, তেমনই বড় বয়সে ডায়বেটিস বা অতিরিক্ত ওজন সমস্যার মতো অসুখ থেকেও কিছুটা দূরে থাকে৷’’
ছবি: Fotolia/evgenyatamanenko
মায়ের খাবার
মা যতদিন শিশুকে দুধ পান করাবেন, ততদিন অবশ্যই তাঁর খাবার তালিকায় সব ধরনের খাবার থাকতে হবে৷ বিশেষ করে চর্বিযুক্ত মাছ, তাজা ফল ও সবজি৷ কারণ মাছের তেল শিশুদের মস্তিস্ক গঠনে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ মা সব কিছু খেতে পারলেও, লক্ষ্য রাখতে হয় যে শিশুর শরীর সে খাবার কিভাবে গ্রহণ করছে৷ এছাড়া মায়ের দুধ পান করার মাধ্যমেই কিন্তু শিশুরা বিভিন্ন খাবারের স্বাদও পেতে থাকে৷
ছবি: Fotolia/WavebreakmediaMicro
শক্ত খাবার
বাচ্চাদের চার মাস বয়স থেকে প্রথম শক্ত খাবার দেয়া যায়৷ তবে শিশুদের জন্য তৈরি বিশেষ ‘বেবিফুড’ বা ঘরে রান্না করা খাবার অবশ্যই দিতে হয় ছয় মাস বয়স থেকে৷ এর কারণ, তখন আর শুধু মায়ের দুধ যথেষ্ট নয়৷ তবে সে সময় ‘‘লক্ষ্য রাখতে হবে যে শিশুর খাবারে বড়দের তুলনায় যেন মসলা এবং লবণ কম থাকে’’৷ এমনই পরামর্শ দেন ডা. ইয়োখুম৷
ছবি: Fotolia/victoria p
শাক-সবজি
অনেক সময় বাচ্চারা সবুজ-সবজি বা ফলমূল খেতে চায় না৷ তখন অনেক মা-বাবা গল্প করে, আদর করে সেগুলো তাদের খেতে বলেন, অনেকে আবার জোরও করেন৷ অথবা সালাদ বা পাতে দেয়া সবজিটুকু খেয়ে নিলে সে একটা চকলেট বা আইসক্রিম পাবে – এমন লোভও দেখিয়ে থাকেন তাঁরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাচ্চারা নকল করে
ডা. ইয়োখুম জানান, ‘‘মা-বাবা নিজেরা যদি নিয়মিত শাক-সবজি এবং ফলমূল খেতে অভ্যস্ত হন অথবা পছন্দ করেন, তবে সেটা খুব ছোট বয়স থেকেই সন্তানদের সামনে করা বা দেখানো যেতে পারে৷ কারণ শিশুরা বাবা-মাকে যা করতে দেখে সেটা নিজেরাও নকল করে, যা পরবর্তীতে অভ্যাসে পরিণত হয়৷’’
ছবি: Fotolia/Tatyana Gladskih
পুষ্টিগুণই যথেষ্ট
শিশুরা কোনো একটা সবজি বা ফল না খেলে জোর করার তেমন কোনো প্রয়োজন নেই, বলেন ডা. ইয়োখুম৷ বরং বাচ্চারা যেসব খাবার পছন্দ করে, সেসব খাবার সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ আছে কিনা – সেদিকে লক্ষ্য রাখলেই যথেষ্ট৷
ছবি: Fotolia/Subbotina Anna
লোভনীয় মিষ্টি খাবার
বাজারে শিশুদের জন্য নানা রকম লোভনীয় মিষ্টি খাবার সাজানো থাকে, যা থেকে দূরে থাকাই ভালো৷ কারণ শিশুকাল থেকে সেসব খাবারে অভ্যস্ত হয়ে গেলে বড় বয়সেও শরীর তা পেতে চায়৷ বলা বাহুল্য, ‘লো ফ্যাট’ দুধেও রয়েছে যথেষ্ট ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস, যা শিশুদের হাড় শক্ত করতে সাহায্য করে৷ তাই বেশি মিষ্টি বা ফ্যাটের কোনো প্রয়োজনই নেই!
ছবি: picture-alliance/dpa
স্বাস্থ্যকর পানীয়
বড়দের শরীরের তুলনায় বাচ্চাদের শরীরে বেশি পানি প্রয়োজন৷ তবে তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো ট্যাপ ওয়াটার অথবা মিনারেল ওয়াটার৷ জার্মানিতে ট্যাপের পানি পান করা নিরাপদ৷ তাছাড়া ঘরে করা ফলের জুস, চা ইত্যাদি পান করা যেতে পারে৷ তবে বাজারের কেনা ‘আইস টি’, ফান্টা বা জুস নয়৷ কারণ সে সবে দেয়া থাকে প্রচুর চিনি৷ অবশ্য মাঝে মধ্যে যে এক, আধ গ্লাস পান করা যাবে না – তা কিন্তু নয়!
ছবি: Fotolia/Elenathewise
সাধারণভাবে বড় হওয়া
সারাদিন ঘরে বসে কম্পিউটারে খেলা বা টিভি দেখা নয়৷ যতটা সম্ভব বাইরে খেলাধুলা করার সুযোগ করে দেওয়া প্রয়োজন বাচ্চাদের৷ তার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন হবি বা খেলাধুলার জন্য ক্লাবে ভর্তি করে দিলে শিশুরা অন্য বাচ্চাদের সাথে মিলে-মিশে, হেসে-খেলে স্বাভাবিকভাবে বড় হয়ে উঠতে পারবে৷
ছবি: SerrNovik - Fotolia
বয়ঃসন্ধিকাল
এই বয়সে কেউ যেমন আর বাচ্চা নয়, আবার সবকিছু বোঝার মতো যথেষ্ট বড়ও নয়৷ কিশোর-কিশোরীরা এ বয়সে অন্য রকম কিছু করতে চায়, দেখতে চায় বা নানা কারণে মানসিক সমস্যাও হতে পারে তাদের৷ তাই বাবা-মায়ের উচিত সন্তানদের মনের অবস্থা বুঝে সেভাবে বাধা না দিয়ে শারীরিক ও মানসিক সমস্যাগুলি সুন্দভাবে বুঝিয়ে দেয়া এবং অবশ্যই একজন বন্ধুর মতো আচরণ করা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নার্ভ শক্ত রাখতে হবে
ডা. ইয়োখুমের মতে, বয়ঃসন্ধিকাল অর্থাৎ শিশুর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে নানা ধরণের পরিস্থিতির জন্য বাবা-মাকে নার্ভ শক্ত রাখতে হবে এবং কিছু কিছু ব্যাপারে তাদের ‘সাপোর্ট’-ও করতে হবে৷ একমাত্র তবেই সন্তানরা বয়ঃসন্ধিকাল সহজভাবে পার করে আস্তে আস্তে দায়িত্বশীল হয়ে উঠতে পারবে৷
ছবি: DW/Li Fern Ong
বন্ধুর মতো সহজ সম্পর্ক
সন্তান এবং বাবা-মায়ের ভেতরের সম্পর্ক যদি বন্ধুর মতো হয়, তাহলে অনেককিছুই অনেক সহজ হয়ে যায়৷ এই সম্পর্কে তৈরি করতে অবশ্য বেশ খানিকটা সময় একসাথে কাটানো খুব দরকার৷ আজকের এই যান্ত্রিক জীবনে সময় পাওয়া কঠিন হলেও সময় বের করে নেওয়াটা কিন্তু খুবই জরুরি৷ কারণ শিশুর সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে ‘সময়’ মহা মূল্যবান!
ছবি: picture-alliance/dpa
13 ছবি1 | 13
অন্যদিকে বিবাহ বিচ্ছেদ অপরাধ না হলেও অসংখ্য সন্তানের জীবন নষ্টের কারণ বলে মনে করেন পাঠক রহমত টিটো ৷
আর জাহান ইমতিয়াজ তার মতামত জানাতে গিয়ে লিখেছেন, মেয়েদের বাবার বিষয়টা সবার কাছেই উপেক্ষিত ছিল ৷ আমিও চেয়েছিলাম মায়ের কাছে মেয়েদের দিয়ে দেয়া হোক ৷ বিশেষ করে জাপানি মা বলে সবাই অবচেতন মনে মায়ের পক্ষ নিয়েছে৷ কিন্তু বাবারও যে অধিকার আছে তার সন্তানকে কাছে পাবার!
যুক্তরাজ্যের একজন শিশু কাস্টডি বিষয়ক আইনজীবী তারেক চৌধুরী ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, শিশু বিষয়ে যুক্তরাজ্যে সোশ্যাল ওয়ার্ক ডিপার্টমেন্ট বাচ্চাদের নিরাপত্তা ব্যাপারে অনেক ক্ষমতাবান৷ যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে৷ তারা কোন সিদ্ধান্ত নিলে আদালতকে ব্যাখ্যা দিতে হয় ৷ পুলিশের ও এই ব্যাপারে ব্যাপক ক্ষমতা থাকে ৷ বাংলাদেশে যেহেতু এই ধরনের সিস্টেম নাই সেইজন্য পুলিশের কাজ নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে ৷ কোন পারেন্টের কাছে রিস্ক না হলে কোর্ট বাচ্চাকে সময় শেয়ার করে কাস্টডি দিতে পারে ৷ টেলিফোন বা ভিডিও কনটাক্ট দিতে পারে৷ স্কুল কলেজে গার্ডিয়ান হিসাবে এক্সেস দিতে পারে৷
আর পাঠক সাত্তার হোসেনের প্রশ্ন , বাবা কিন্তু সন্তানদের জোর করে আনেনি, তাহলে পুলিশ কেন?
রিট হয়েছে, নিষ্পত্তি হবে, কিন্তু অতিউৎসাহীরা ওয়ারেন্টভুক্ত আসামীর মত যেভাবে গভীর রাতে বাচ্চাদের টেনে হিচড়ে নিয়ে গেলো তা সবদিক থেকে অন্যায়, অমানবিক৷ মন্তব্য আনামুল হকের৷
পাঠক মুরাদ বালুচি লিখেছেন, কোন ব্যক্তিকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা গ্রেফতারের পর অপরাধ প্রমাণের আগেই অপরাধী বানিয়ে দেয় দেশের কিছু সংবাদ মাধ্যম ৷
লেখাটা গুরুত্বপূর্ণ তবে দেশে বর্তমানে পুলিশি বাড়াবাড়ি একেবারে চরম সীমা অতিক্রম করেছে বিষয়টা পরিমনি ইস্যু দেখলেই টের পাওয়া যায়৷ লিখেছেন পাঠক শুভ৷
পাঠক এমএ জলিলের কাছে বিষয়টি অতিরঞ্জিত বলে মনে হয়েছে৷ বাংলাদেশি বাবা ন্যায় বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবেন বলে তিনি আশঙ্কা করছেন৷
আর আসিফ হোসেন বলছেন, বাংলাদেশের পুলিশ খুবই অপেশাদার তা বার বার প্রমাণ করেছে ৷
বর্তমানে বাংলাদেশের পুলিশের কর্মকাণ্ড অনেকটাই বিতর্কিত! মন্তব্যটি পাঠক হুমায়ূন কবিরের৷
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: খালেদ মুহিউদ্দীন
শিশুদের বিষণ্ণতার ৬টি কারণ
বিষণ্ণতা কিশোর-কিশোরীদের আত্মহননের পথেও ঠেলে দেয়৷ তাই সন্তানকে শুধু ভালোবাসলেই চলবে না, খেয়াল রাখতে হবে বিষণ্ণতায় ডুবে যাওয়ার মতো কারণ থেকেও তাদের যাতে দূরে রাখা যায়৷ ছবিঘরে থাকছে শিশুদের বিষণ্ণতার কিছু কারণ৷
ছবি: Fotolia/Nicole Effinger
অতিরিক্ত প্রত্যাশার চাপ
বাংলাদেশে পরীক্ষায় ভালো না করায় কিশোর-কিশোরীর আত্মহত্যার ঘটনা প্রতি বছরই ঘটে৷ বাবা-মা, পরিবার, সমাজ অনেকক্ষেত্রেই বোঝে যে ছোটদের খুব চাপে ফেলা মানে বিপদ বাড়ানো৷ লেখাপড়া, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড – সব জায়গাতেই তীব্র প্রতিযোগিতা৷ অনেক সময় প্রত্যাশার চাপে শিশুরা দিশেহারা হয়ে পড়ে৷ বিষণ্ণতা গ্রাস করে তাদের৷ বয়ঃসন্ধিকালে এ অবস্থায় অনেকে এমন চাপ থেকে মুক্তির পথ খোঁজে আত্মহত্যায়৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel
ভাঙা পরিবার
বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ সন্তানের জন্য খুব বড় আঘাত৷ এই আঘাত তাদের জীবনযাপন, আচার-আচরণ সবকিছুতেই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলে৷ ‘ম্যারিজ অ্যান্ড ফ্যামিলি’ জার্নালে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক নিবন্ধ বলছে, ডিভোর্সি বাবা-মায়ের সন্তানদের অবসাদগ্রস্থ হওয়া এবং আত্মহত্যার ঝুঁকি অনেক বেশি৷
ছবি: goodluz - Fotolia
কম খেলাধুলা
শিশুদের সুস্থ জীবনের জন্য খেলাধুলা খুবই দরকার৷ খেলাধুলা বেড়ে ওঠা, মেধার বিকাশ, শেখার আগ্রহ এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বাড়ানো – বলতে গেলে স্বাভাবিক জীবনের জন্য অপরিহার্য অনেক গুণ তৈরিতেই বড় ভূমিকা রাখে৷ শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ পেটার গ্রে জানিয়েছেন, যেসব শিশু খেলাধুলা কম করে তারা দৈনন্দিন জীবনের ছোটখাটো সমস্যা সমাধানেও বহুক্ষেত্রে কম দক্ষ হয়৷ বিষয়টি তাদের একসময় হতাশাগ্রস্ত করে আর হতাশা ডেকে আনে বিষাদ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Schlesinger
ইলেক্ট্রনিক গেমের নেশা
আপনার সন্তান খুব বেশি কম্পিউটার গেম খেলে? কম্পিউটার, স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট হাতে পেলেই গেম খেলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে? তাহলে সন্তানকে একটু সময় দিন৷ অ্যামেরিকান জার্নাল অফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেডিসিন-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, যেসব শিশু দিনে পাঁচ ঘণ্টা বা তার বেশি গেম খেলে, তারা অবসাদগ্রস্তও হয় বেশি৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, দীর্ঘদিন সপ্তাহে ২০ ঘণ্টার বেশি গেম খেললে শিশুদের মস্তিষ্কের কোষ সংকুচিত হতে শুরু করে৷
ছবি: dpa
বেশি চিনি খাওয়া
ব্রিটিশ মনস্তত্ত্ববিদ ম্যালকম পিট গবেষণা করে দেখেছেন, বেশি চিনি, কেক, মিষ্টি জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া এবং কার্বোনেটেড পানীয় বেশি পান করার অভ্যাসও অনেক সময় শিশুদের অবসাদগ্রস্ত করে৷ চিনি বেশি খেলে মস্তিষ্কে বৃ্দ্ধি হরমোনের কার্যক্রমেও সমস্যা তৈরি করে৷
ছবি: Colourbox
বেশি অ্যান্টিবায়োটিক
বেশি অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো অনেক কারণেই খারাপ৷ বেশি অ্যান্টিবায়োটিকও শিশুদের মনস্তত্ত্বে কুপ্রভাব ফেলে৷ ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা কিছু ইঁদুরের দেহে দীর্ঘদিন অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে এ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন৷