1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাজারে অসময়ের ইলিশ

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

অসময়ে বাংলার বাজারে ইলিশ! বাংলাদেশের মত পশ্চিমবঙ্গেও মৎস্যজীবীদের জালে ইলিশ ধরা পড়ছে৷ এ কি প্রকৃতির খামখেয়ালিপনা, না উষ্ণায়নের ফল?

Hilsa Fischmarkt Kalkutta Indien West Bengal
ছবি: DW/P. Samanta

সাধারণভাবে বর্ষাকালই ইলিশের সময়৷ মেঘলা আকাশ, ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি জলের রূপোলি ফসলের আগমনবার্তা নিয়ে আসে৷ এই সময়ের দিকে তাকিয়ে থাকে বাঙালি৷ বছরের অন্য সময় অনেক বেশি দাম দিয়ে ইলিশ পাওয়া গেলেও তা হিমঘর থেকে আসে৷ অর্থাৎ এই ইলিশ টাটকা নয়৷ স্বাদে, গন্ধেও অনেকটা ফারাক হয়ে যায়৷ বর্ষাকালে যে ইলিশ বাজারে আসে, তা টাটকা হওয়ায় এই সময়ের অপেক্ষায় থাকে দুই বাংলা৷ এই ফেব্রুয়ারি মাস চেনা হিসেব বদলে দিল৷ কলকাতার বাজারে চলে এল তাজা ইলিশ৷ মানিকতলা বা গড়িয়াহাটের বাজারে ছোট থেকে বড় নানা আকারের ইলিশ মিলছে যা সদ্য মৎস্যজীবীদের জালে ধরা পড়ছে৷

বাজারের মাছ বিক্রেতা থেকে দিঘা মোহনার আড়তদার, সকলেই এক বাক্যে বলছেন, মাঘের শীতে এত পরিমাণ ইলিশ ওঠার নজির বিরল৷ শেষ কবে এমনটা হয়েছে, মনে করা যাচ্ছে না৷ সবচেয়ে অবাক করার মতো বিষয়, ছোট আকারের শুধু নয়, বেশ বড় আকারের ইলিশও মিলছে৷ গোড়ায় সকলেই ভেবেছেন, এ নির্ঘাৎ হিমঘর থেকে বেরোনো মাছ৷ ধাঁধাঁ আরো বাড়িয়েছে সরস্বতী পুজো৷ বাগদেবীর আরাধনার সময় জোড়া ইলিশ খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে অনেক পরিবারে৷ তাই শ্রীপঞ্চমী তিথি উপলক্ষে বাজারে ইলিশ আসে প্রতি বছরই৷ এটা কার্যত ইলিশ মওসুমের আগে ভূমিকা পর্ব৷ কিন্তু, ইলিশ কড়াইয়ে দিতে ধারণা বদলে গিয়েছে৷ তার তেল, স্বাদের বহর দেখে বোঝা গিয়েছে, এ হিমঘরে থাকা মাছ নয়৷ তাজা ইলিশ ছাড়া এমন সুস্বাদু হওয়ার কথাও নয়৷

প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী ইলিশ বর্ষাকালে গভীর সমুদ্র থেকে নদীতে ঢোকে৷ মিষ্টি জলে ডিম পাড়ে৷ ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ যখন আসে নদীতে, তখন ধরা পড়ে মাছ শিকারীদের জালে৷ তাহলে কি প্রকৃতির নিয়ম পাল্টে গেল? এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা৷ তাঁর ব্যাখা, ‘‘যে সময়ে ইলিশের সমুদ্র থেকে নদীতে ঢোকার কথা, সেই সময়ে আবহাওয়াজনিত কারণে সব ইলিশ নদীতে ঢোকেনি৷ তারা সমুদ্র উপকূলেই থেকে গিয়েছিল৷ বর্ষা চলে যাওয়ার পরে এদের সমুদ্রে ফিরে যাওয়ার কথা৷ কিন্তু তারা ফিরে যায়নি৷ সমুদ্র উপকূলে থেকে যাওয়া সেই ইলিশ ধরা পড়ছে৷''  

শিবকিঙ্কর দাস

This browser does not support the audio element.

ইলিশের হঠাৎ আগমনের খবর কারো কাছেই ছিল না৷ ট্রলার নিয়ে গভীর সমুদ্রে যাওয়া মৎস্যজীবীরা হঠাৎই জালে মাছ উঠতে দেখেন৷ তাঁরাও খুব অবাক হয়ে যান৷ স্বাভাবিকভাবেই মন্ত্রীর কাছেও খবর ছিল না৷ যদিও এই ইলিশের ঝাঁক সীমিত৷ তাই অল্প কয়েকদিন তা জালে উঠেছে৷ একই ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও৷

মৎস্য বিশেষজ্ঞ, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শিবকিঙ্কর দাস ইলিশের এই অস্বাভাবিক আগমনে বিস্মিত নন৷ তিনিও মন্ত্রীর কথার রেশ ধরে বলেন, ‘‘বর্ষার যে ইলিশের ঝাঁক এসেছিল ডিম পাড়তে, সেগুলি ফিরে যাওয়ার পথে ধরা পড়ছে৷ এর মধ্যে ছোট ইলিশ যেমন আছে, তেমন আছে বড় ইলিশও৷ গত বর্ষায় যে মা ইলিশ এসেছে, তাদের ছানাপোনারা বড় হয়েছে৷’’

ইলিশের এই তাৎক্ষণিক অকাল ফলনে বর্ষায় তাদের স্বাভাবিক চলাচলে প্রভাব পড়বে না বলেই বিশেষজ্ঞদের মত৷ এর সঙ্গে বিশ্ব উষ্ণায়ন বা জল দূষণের সম্পর্ক নেই বলেই মনে করা হচ্ছে৷ দিক হারিয়ে যে ইলিশের ঝাঁক দলছুট হয়ে পড়েছিল, তারাই অসময়ের অতিথি হয়ে এসেছে৷ এমনিতেই পশ্চিমবঙ্গে সামান্য ইলিশ ধরা পড়ে৷ তাই এমন আগন্তুকের মত আগমনে আহলাদিত এই বাংলার মানুষ৷        

তবে বিশ্ব উষ্ণায়নের নেতিবাচক দিক হিসেবে ইলিশের অকালবৃদ্ধির কথা জানালেন অধ্যাপক দাস৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দূষণ এবং গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে ইলিশের মধ্যে অকালবৃ্দ্ধি দেখা যাচ্ছে৷ তাই ২০০-২৫০ গ্রামের ইলিশের পেটেও ডিম পাওয়া যাচ্ছে৷’’ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ