1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাজেটে ঋণের উপর অতি নির্ভরতায় যেসব সংকট হতে পারে

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৩ জুন ২০২৩

বাজেটের ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের উপর অতি নির্ভরতা ভালো চোখে দেখছেন না অর্থনীতিবিদরা। তারা মনে করছেন রাজস্ব আদায়ে অদক্ষতার কারণেই এই ঋণের উপর নির্ভরতা বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে বাংলাদেশে বৈদেশিক ঋণ গত সাত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে বাংলাদেশে বৈদেশিক ঋণ গত সাত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছেছবি: Mortuza Rashed/DW

এই ঋণ নির্ভরতা অর্থনীতিতে নানা সংকট তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন তারা। এরমধ্যে প্রধান উদ্বেগ হলো মূল্যস্ফীতি আরো বাড়ার আশঙ্কা। বেসরকারি বিনিয়োগে ঋণের সংকট এবং দেশি-বিদেশি ঋণ ও ঋণের সুদ পরিশোধের চাপ।

প্রস্তাবিতবাজেটের আকার এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড়সাত লাখ ৬১ হাজার, ৭৮৫  কোটি টাকা। কিন্তু বাজটে অনুদান ছাড়া ঘাটতি ধরা হয়েছে  দুই লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড রাজস্ব আদায় করবে চার লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।

বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ ধরা হয়েছে দুইলাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫.৩ শতাংশ।

ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মোট এক লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। বৈদেশিক উৎস (অনুদানসহ) থেকে আসবে এক লাখ ছয় হাজার ৩৯০ কোটি টাকা।

অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে এক লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও ব্যাংকগুলো নিজেরাই এখন তারল্য সংকটে ভুগছে। এ অবস্থায় সরকারের ঋণ চাহিদা পূরণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে টাকা ছাপাতে হচ্ছে। সর্বশেষ চলতি অর্থবছরেও সরকারকে ঋণ দিতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে ৭০ হাজার কোটি টাকা ছাপাতে হয়েছে।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড.  সেলিম  রায়হান বলেন," সরকার যদি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নেয় তার প্রতিক্রিয়া একরকম। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে তার প্রতিক্রিয়া আলাদা। সরকার যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেয় তাহলে সেটা কেন্দ্রীয় ব্যাংক ছাপিয়ে দেবে।  এতে মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব পড়তে পারে, এটা আরো বেড়ে যেতে পারে। গত বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৭০ হাজার কোটি টাকা সরকারকে ঋণ দিয়েছে। এটা নিয়ে বিতর্ক আছে যে এখন যে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাচ্ছে তাতে কোনো না কোনোভাবে এর  প্রভাব আছে কী না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আবার ডলার বিক্রি করে টাকা তুলে নিয়েছে। সেই কারণে হয়তো টাকার সার্কুলেশন সার্বিকভাবে কম আছে।”

'রিজার্ভ বৈদেশিক ঋণের অনুপাত দেখলে ভাল অবস্থায় নেই'

This browser does not support the audio element.

তার কথায়," অন্যদিকে সরকার যদি কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে ঋণ নেয় তাহলে ব্যক্তি উদ্যোক্তারা বঞ্চিত হতে পারেন। এবার বাজেটে ব্যক্তি উদ্যোক্তাদের বড় ধরনের বিনিয়োগের আশা করা হয়েছে। তাহলে তারা বিনিয়োগের অর্থ কোথায় পাবে? তারা তো ব্যাংকের কাছেই যাবে। কারণ আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেট খুব দুর্বল। এখন সরকারকে বড় অংকের ঋণ দেয়া আবার ব্যক্তিখাতেও ঋণ দেয়ার মতো এত টাকা আমাদের ব্যাংকের কাছে নাই।”

তিনি বলেন," আমাদের  বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি(এডিপি) এবং বাজেটের ঘাটতির পরিমাণ প্রায় সমান। তার মানে হলো ঋণ করে এডিপি বাস্তবায়ন করা হবে। কিন্তু যখন এর সুদ এবং আসল ফেরত দিতে হবে তখন কিন্তু এর আকার বেড়ে যাবে। চাপ আরো বাড়বে।”

আর বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন,"  যদি অভ্যন্তরীণ ঋণের অনুপাত জিডিপির শতকরা পাঁচভাগের কম হয় তাহলে সমস্যা হয়না। কিন্তু এর বেশি হলে সমস্যা। রাজস্ব আদায়ে অদক্ষতার কারণে সরকারকে এই ঋণ করতে হয়। আগামী বাজেটে বিদেশি ঋণের বোঝা হবে চার বিলিয়ন ডলারের।”  তিনিও মনে করেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ছাপিয়ে সরকার ঋণ নিলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে।

প্রস্তাবিত বজেটে (২০২৩-২৪) ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে সুদ পরিশোধে। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ আছে ৮০ হাজার ৩৯৪ কোটি টাক। এ সুদ ব্যয় অনুন্নয়ন বাজেটের একক খাত হিসাবে সর্বোচ্চ ১৯.৫ শতাংশ।

সেলিম রায়হান বলেন," গত কয়েক বছর ধরে আমাদের বাজেটে বৈদেশিক ঋণ নির্ভরতা বাড়ছে। আবার সুদসহ ঋণ ফেরত দেয়ার চাপও বাড়ছে। আশঙ্কার কথা আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে এই চাপ দুই গুণ হয়ে যেতে পারে। কারণ আমরা বেশ বড় কিছু ঋণ নিয়েছি। আরেকটি কথা হলো এই ঋণ কিন্তু আমাদের ডলারে শোধ করতে হবে।  এখন যদি আমরা বৈদেশিক আয়ে (ডলার) সাফল্য দেখাতে না পারি তাহলে কিন্তু  আমাদের বিদেশি ঋণের বোঝা বেশ বড় হয়ে আসবে।”

'আগামী বাজেটে বিদেশি ঋণের বোঝা হবে চার বিলিয়ন ডলারের'

This browser does not support the audio element.

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে বাংলাদেশে বৈদেশিক ঋণ গত সাত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে। গত অর্থবছরে(২০২১-২২) দেশের মোট বৈদেশিক ঋণ ছিল ৯৫.২৩ বিলিয়ন ডলার, যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল ৪১.১৭ বিলিয়ন ডলার। এখন মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণ  ৫৫৮ ডলার। তবে জিডিপির অনুপাতে এই ঋণ এখনো সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে, ২০.৬ শতাংশ।

কিন্তু অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন," আপনি জানেন এটা আসলে হিসাবের মারপ্যাঁচ। আমাদের দেখতে হবে রিজার্ভ বৈদেশিক ঋণের অনুপাত। সেদিক দিয়ে আমরা এখন ভালো অবস্থায় নেই। কারণ ঋণ তো আমাদের ডলারে শোধ করতে হয়। আর লংটার্ম বিদেশি ঋণে সুবিধা আছে। অনেক সময় পাওয়া যায়। কিন্তু এই সময়ে আমরা বেশ কিছু শর্ট টার্ম লোন নিয়েছি।”

ড. মইনুল ইসলাম বলেন," জিডিপির অনুপাতে বৈদেশি ঋণ এখনো সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও  কিছু মেগা প্রকল্পে যে বিশাল ঋণ নেয়া হয়েছে তা আমাদের তেমন কাজে আসবেনা। তাই বিদেশি ঋণ নেয়ার ব্যাপারে সতর্কতা প্রয়োজন।”

তার কথায়, "আর ব্যাংক থেকে  বিনিয়োগের নামে ঋণ নিয়ে দেশের বাইরে পাচার করা হচ্ছে। এটা ঠেকাতে না  পারলে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাবে।”

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ