1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
ব্যবসা-বাণিজ্যবাংলাদেশ

বাড়ছে ভর্তুকি, উচ্চ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা সংকটেও

২১ ডিসেম্বর ২০২২

অর্থনীতি যখন দেশীয় ও বৈশ্বিক সংকটের মুখে এবং রাজস্ব আয় বৃদ্ধির তেমন কোনো উপায়ই বের হয়নি, ঠিক তখন সরকার আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্যও উচ্চ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রাই ধরছে৷

ছবি: Stephan Jansen dpa/picture alliance

জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ধরা হচ্ছে আগের মতোই, ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।বাজেটের আকার বাড়ছে ৬২ হাজার কোটি টাকা৷ 

  • ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য সাড়ে ৭ শতাংশ৷
  • মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ৫.৬ শতাংশ থেকে বেড়ে হবে ৭.৫ শতাংশ৷
  • ভর্তুকিই দিতে হতে পারে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি৷ 

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ৷ আগামী অর্থবছরের জন্যও একই হার ধরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ তবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির বর্তমান অবস্থাকে প্রায় মেনে নিয়েছে সরকার৷ চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ৷ আগামী অর্থবছরের জন্য তা ২ শতাংশ বাড়িয়ে করা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ৷

গতকাল মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে জুম প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রাবিনিময় হারসংক্রান্ত সমন্বয় কাউন্সিলের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে৷

৭ দশমিক ৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রাকে যৌক্তিক বলেই মনে হচ্ছে৷ তবে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হারের লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ অবাস্তব, যেখানে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির তেমন কোনো আয়োজন নেই৷

মো. আজিজুল ইসলাম, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা

বৈঠকে চলতি ও আগামী অর্থবছরের বাজেটের নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয়৷ বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ প্রমুখ এতে অংশ নেন৷ সূত্রগুলো জানায়, এক বছর পর আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন৷ আগামী বাজেট প্রণয়নে তাই জনপ্রিয় কিছু কর্মসূচি হাতে নেওয়ার কথাও ভাবা হয়েছে৷

অর্থনীতিবিদেরা অবশ্য প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির হারের লক্ষ্যমাত্রার হার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন৷ তাঁরা বলছেন, সরকারের প্রাক্কলনের সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতির তেমন মিল নেই৷

সূত্র জানায়, বৈঠকে আলোচনা উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে থাকা সাধারণ মানুষের অবস্থা নিয়েও আলোচনা হয়েছে৷ আলোচনা হয়েছে ডলার-সংকট ও ডলারের অস্বাভাবিক দাম নিয়ে৷ জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার কয়েক দফায় আমদানি কমানোর পদক্ষেপ নিয়েছে৷ এতে রাজস্ব আয় কমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে৷ এ ছাড়া প্রবাসী আয়ে (রেমিট্যান্স) একই জায়গায় আটকে আছে দেশ৷ রপ্তানি প্রবৃদ্ধিও আশানুরূপ নয়৷ আবার নতুন করে যুক্ত হচ্ছে ভর্তুকির বাড়তি চাপ৷ সার, বিদ্যুতের ভর্তুকির পাশাপাশি ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে বছরব্যাপী তেল, চিনি বিক্রিতেও ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে৷ আগামী অর্থবছরে ভর্তুকিই দিতে হতে পারে এক লাখ কোটি টাকার বেশি৷

জানা গেছে, আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার বাজেট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা থেকে তা ৭২ হাজার কোটি টাকা বেশি৷ সূত্র জানায়, যেসব প্রক্ষেপণ করা হয়েছে, তা চূড়ান্ত নয়৷

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রাবিনিময় হারসংক্রান্ত সমন্বয় কাউন্সিলের প্রথম বৈঠক এটি৷ বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২ অনুযায়ী, প্রতি অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে৷ গতকালের বৈঠকের আলোচ্যসূচি ছিল দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের অগ্রগতি এবং বিশ্ব ও জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিমধ্যে সূচিত পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামো (এমটিএমএফ) পর্যালোচনা এবং চলতি অর্থবছরসহ ২০২৩-২৪ থেকে ২০১৫-২৬ অর্থবছর পর্যন্ত এমটিএমএফের সূচকগুলোর প্রক্ষেপণের ওপর আলোচনা৷ সূত্রগুলো জানায়, বেশি আলোচনা হয় মূল্যস্ফীতি ও প্রবৃদ্ধির হার নিয়েই৷

প্রবৃদ্ধি একই, মূল্যস্ফীতি ২% বেশি

চলতি অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ৷ বৈঠক সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, আগামী অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হারও একই অর্থাৎ ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷

তবে গত অক্টোবরে বিশ্বব্যাংক বলেছে, চলতি অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ১ শতাংশ৷ তার আগে সংস্থাটি পূর্বাভাস দিয়েছিল, এ প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ৷ বিশ্বব্যাংক আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির হারের প্রাক্কলন করেছে গত অক্টোবরে ৬ দশমিক ২ শতাংশ৷

বিশ্বব্যাংকের মতে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে করোনা মহামারির অভিঘাত থেকে বাংলাদেশের পুনরুদ্ধার ব্যাহত হবে। প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার এটাই হবে অন্যতম কারণ৷

বিশ্বব্যাংকের চেয়ে আরেক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রাক্কলন একটু বেশি হয় সব সময়, যা সরকারি লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি থাকে৷ এডিবি বলেছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার হবে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ৷

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয় চলতি পঞ্জিকা বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে৷ আর চলতি অর্থবছরের বাজেট করা হয় জুনে৷ বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৫ দশমিক ৬ শতাংশ৷ দুই মাসের মাথায় এ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গত আগস্টে মূল্যস্ফীতি ওঠে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে৷ সেপ্টেম্বরে তা ৯ দশমিক ১০ শতাংশে নেমে আসে এবং অক্টোবরে নেমে আসে ৮ দশমিক ৯১ শতাংশে৷ প্রবণতা নিম্নমুখী৷ সে বিবেচনায় আগামী অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ, যা চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় ২ শতাংশ বেশি৷

বৈঠক সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যগুলো বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেনকে জানালে তিনি বলেন, খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের নিচে নামলেও ওষুধ, কাপড়সহ খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি এখনো ১০ শতাংশের কাছাকাছি৷ কৃচ্ছ্রের কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু কৃচ্ছ্রতাটা কোথায়? আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য কমছে ভালো৷মূল্যস্ফীতি কমানোর অভ্যন্তরীণ কৌশলও তো থাকতে হবে৷ কিন্তু দেখছি সরকার এ ফাঁকে ব্যাংক খাত থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে, যা মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দেওয়ার কারণ হবে৷ সুতরাং আগামী বাজেটে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরার বিবেচনাটা বোধগম্য নয়৷

রাজস্ব আয় বাড়বে না, আবার প্রবৃদ্ধি ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ৷ এ হারকে বেশি বলেই মনে করছেন জাহিদ হোসেন৷ তিনি বলেন, ‘৭ দশমিক ৫ তো শক্তিশালী অর্থনীতির নির্দেশক৷ ছয় মাসে কী দেখলাম? এখন বলা হচ্ছে, ব্যবসায়ীরা টাকা ফেরত দিতে পারছেন না৷ সরকারের প্রাক্কলনের সঙ্গে বাস্তব অঙ্ক কিছুতেই মিলছে না৷'

রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে না

চলতি অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা৷ এর মধ্যে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা৷ আর এনবিআর-বহির্ভূত করব্যবস্থা থেকে রয়েছে ৬৩ হাজার কোটি টাকা৷ বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা মেটানো হবে ব্যাংকঋণ, বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের অর্থে৷

সূত্র জানায়, গতকালের বৈঠক থেকে সিদ্ধান্ত এসেছে যে আগামী অর্থবছরের জন্য রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হবে না৷ ২০২০-২১ অর্থবছরে এনবিআরের অর্জন লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছিল৷ পরেরবার অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছরেও এ লক্ষ্যমাত্রা একই ধরা হয়েছিল৷

সূত্রগুলো জানায়, আগামী অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি ধরা হবে ৬ শতাংশ৷ চলতি অর্থবছরের জন্য বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছিল ৫ দশমিক ৫ শতাংশ৷ এ ছাড়া আগামী অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ধরা হচ্ছে তিন লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি৷

দুটি বাজেট উপস্থাপন করা সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম এসব নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ৭ দশমিক ৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রাকে যৌক্তিক বলেই মনে হচ্ছে৷ তবে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হারের লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ অবাস্তব, যেখানে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির তেমন কোনো আয়োজন নেই৷

প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা একটু বেশি থাকলে অসুবিধা কোথায়—এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জ্জা আজিজ বলেন, ‘অর্থনীতির তথ্য-উপাত্তেরবিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে তখন প্রশ্ন ওঠে৷ যেমন প্রবৃদ্ধির সঙ্গে কর্মসংস্থান সম্পর্কিত৷ দেখা গেল প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে দেখালাম, কিন্তু মানুষ কাজের অভাবে ভুগছে৷ উচ্চ প্রবৃদ্ধির কথা বলে অহেতুক আশার সঞ্চার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার কোনো মানে নেই৷'

এনএস/কেএম (প্রথম আলো)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ