সেনা অভ্যুত্থানের পর তাকে গ্রেপ্তার করে অজানা জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। মঙ্গলবার বাড়ি ফিরলেন আব্দাল্লা হ্যামডক।
বিজ্ঞাপন
সুদানের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, মঙ্গলবার সেনাই আব্দাল্লা হ্যামডককে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে। কিন্তু তার বাড়ি ঘিরে রেখেছে নিরাপত্তারক্ষীরা। কাউকে ভিতরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। আব্দাল্লার সঙ্গে বাড়ি ফিরেছেন তার স্ত্রীও। জাতিসংঘ-সহ একাধিক দেশ আব্দাল্লার দ্রুত মুক্তির দাবি করেছিল। শেষপর্যন্ত চাপের মুখে প্রধানমন্ত্রীকে ছাড়তে বাধ্য হলো সেনা।
গত সোমবার সকালে আচমকাই সেনা অভ্যুত্থান হয় সুদানে। প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতাচ্যূত করে ক্ষমতা দখল করেন সুদান পরিচালনাকারী সভরেন কাউন্সিলের প্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান। প্রধানমন্ত্রী-সহ একাধিক মন্ত্রী এবং নাগরিক সমাজের নেতাকে গ্রেপ্তার করে অজানা জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। বস্তুত, তারপর থেকেই সুদানের রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন। বিক্ষোভকারীদের একাংশ সেনাশাসনের পক্ষে, অন্য পক্ষ গণতান্ত্রিক সরকারের পক্ষে। বুরহান জানিয়েছিলেন, ২০২৩ সালে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হবে। কিন্তু তার আগে সেনা শাসন করবে। ক্ষমতা দখল করেই দেশ জুড়ে জরুরি অবস্থাও ঘোষণা করে দিয়েছিলেন বুরহান।
সুদানের রাস্তায় বিক্ষোভ, সেনার গুলি
সোমবার সুদানের ক্ষমতা দখল করেছিল সেনা। তারপর থেকে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছেন সাধারণ মানুষ। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে সেনার গুলি।
ছবি: AFP/Getty Images
সেনার গুলি, মৃত অন্তত সাত
সুদানের রাস্তায় প্রতিবাদ করছেন সাধারণ মানুষ। সেনার বিরুদ্ধে সরব মানুষ। সেনার পাল্টা গুলি। অন্তত সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত ১৪০। হাসপাতাল সূত্র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, আহতের সংখ্যা বাড়ছে।
ছবি: Mohamed Nureldin Abdallah/REUTERS
রাস্তাই একমাত্র রাস্তা
হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েছেন। গুলির চালিয়েও তাদের প্রতিবাদ বন্ধ করা যায়নি। যেভাবে সোমবার সেনা ক্ষমতা দখল করেছে, সাধারণ মানুষ তার প্রতিবাদ করছেন। পুরনো সরকার ফেরানোর দাবি করছেন।
ছবি: Ashraf Idris/AP Photo/picture alliance
মধ্যবর্তী সরকার
সুদানে এতদিন অন্তর্বর্তী সরকারই শাসন করছিল। দেশ পরিচালনায় সামরিক ও রাজনৈতিক দলের নিয়োগ দেয়া ব্যক্তিদের নিয়ে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়েছিল৷ যার প্রধান ছিলেন আব্দাল্লা হ্যামডক। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন তিনি। সোমবার সেনা তাকে গ্রেপ্তার করে গোপন ডেরায় নিয়ে যায়।
ছবি: Hannibal Hanschke/REUTERS
সেনার অভ্যুত্থান
সোমবার সকালে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান চালায় সেনা। সভরেন কাউন্সিলের প্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের নেতৃত্বে এই অভ্যুত্থান হয়। এরপরেই দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়।
ছবি: Mahmoud Hjaj /AA/picture alliance
গ্রেপ্তার মন্ত্রীরা
প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও দেশের অধিকাংশ মন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সকলকেই অজানা ডেরায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বুরহান জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করার জন্যই এই অভ্যুত্থান হয়েছে।
ছবি: Rasd Sudan Network/AA/picture alliance
২০১৯ সালের অভ্যুত্থান
তিন দশক ধরে সুদানের শাসন ক্ষমতা ছিল ওমর আল-বশিরের হাতে। ২০১৯ সালের এপ্রিলে তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। এরপরেই সামরিক এবং রাজনৈতিক দলের যৌথ প্রচেষ্টায় একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। ২০২৩ সালে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। নতুন নির্বাচিত সরকার গঠনের কথা ছিল।
ছবি: Getty Images/AFP/E. Hamid
বুরহানের দাবি
বুরহান জানিয়েছেন, আগামী দুই বছর সামরিক শাসন জারি থাকবে। তবে ২০২৩ সালের নির্বাচন হবে। সেনাই সেই নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।
ছবি: Mohamed Nureldin Abdallah/REUTERS
সাধারণ মানুষের বক্তব্য
সাধারণ মানুষ বলছেন, এর ফলে সুদানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াটি নষ্ট হয়ে গেল। সেনা নতুন করে একনায়কতন্ত্রের দিকে ঠেলে দিল দেশকে।
ছবি: Nureldin Abdallah/REUTERS
বিশ্বের নিন্দা
অ্যামেরিকা, যুক্তরাজ্য, নরওয়ে সোমবার রাতেই বিবৃতি প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, সুদানের ঘটনা অত্যন্ত চিন্তার এবং দুঃখজনক। দুই বছর আগে রীতিমতো বিপ্লবের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ এবং রাজনৈতিক শক্তি একনায়ক শাসককে ক্ষমতাচ্যূত করেছিল। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়েছিল। পুরো প্রক্রিয়াটি নষ্ট করে দেওয়া হলো।
ছবি: ASHRAF SHAZLY/AFP via Getty Images
অনুদান বন্ধ
অ্যামেরিকা এবং জাতিসংঘ সুদানের নতুন শাসককে অনুদান দেবে না বলে হুমকি দিয়েছে। সুদানের অর্থনীতির অবস্থা ভয়াবহ। অনাহারে আছেন বহু মানুষ। এই পরিস্থিতিতে বিদেশি অনুদান বন্ধ হলে আরো ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হবে।
ছবি: ASHRAF SHAZLY/AFP via Getty Images
10 ছবি1 | 10
আন্তর্জাতিক চাপ
আন্তর্জাতিক বিশ্ব সুদানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে। দ্রুত প্রধানমন্ত্রী-সহ সকলকে মুক্তির দাবি জানানো হয়। চাপের মুখে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বুরহান জানান, প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। নিরাপত্তার কারণে তাকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বুরহান জানান, ''প্রধানমন্ত্রী আমার বাড়িতে আছেন।'' এরপরেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়। তবে তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। অন্য মন্ত্রী এবং নাগরিক সমাজের নেতাদের অবশ্য এখনো মুক্তি দেওয়া হয়নি। তাদের অবস্থানও স্পষ্ট নয়।
জার্মানির দাবি
মঙ্গলবার জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, তারা সুদানের এই অভ্যুত্থান সমর্থন করেন না। মাস জানিয়েছেন, জার্মানি গণতান্ত্রিক সুদানের লক্ষ্যে যে ভাবে প্রধানমন্ত্রী আব্দাল্লা হ্যামডক কাজ করছিলেন, তা সমর্থন করে। সমস্ত মন্ত্রীর মুক্তির দাবিও জানিয়েছে জার্মানি।
বুরহানের কৈফিয়ত
বুরহান দাবি করেছেন, সেনা অভ্যুত্থান না হলে সুদানে গৃহযুদ্ধ শুরু হতো। গৃহযুদ্ধ থেকে দেশকে বাঁচাতেই তিনি একাজ করেছেন। তবে ২০২৩ সালে নির্বাচন হবে এবং তার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার গঠিত হবে বলে এদিনও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।