ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাপানের মধ্যে বড় আকারের একটি বাণিজ্য চুক্তি হচ্ছে৷ মঙ্গলবারের এই চুক্তিতে দুই পক্ষই প্রায় শুল্কমু্ক্ত সুবিধা দিচ্ছে, যা ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বাণিজ্য নীতির একেবারেই পরিপন্থি৷
বিজ্ঞাপন
টোকিওতে হতে যাওয়া এই চুক্তির বিষয়ে গত বছরই ঐক্যমত্যে পৌঁছায় ইউরোপ ও জাপান৷ এ মাসে আরো আগেই চুক্তি হবার কথা ছিল৷ কিন্তু জাপানে ভয়াবহ বন্যার কারণে তা পিছিয়ে যায়৷ জাপানের প্রেসিডেন্ট শিনজো আবে'র ব্রাসেলসে আসার কথা ছিল৷
ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টুস্ক ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জ্যঁ-ক্লদ ইয়ুঙ্কার চুক্তি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সোমবারই টোকিও পৌঁছেছেন৷ মঙ্গলবার একটি গালা ডিনারে যোগ দেবার কথা রয়েছে তাঁদের৷
বিশ্বের অর্থনীতির এক তৃতীয়াংশ নিয়ন্ত্রণ করা এবং প্রায় ৬০ কোটি জনসংখ্যার প্রতিনিধিত্বকারী দুই ব্লক এই চুক্তি নিয়ে বেশ আশাবাদী৷
চুক্তি অনুযায়ী, জাপানের ভোক্তাদের জন্য ইউরোপীয়ান ওয়াইন, চিজ, বিস্কুট, চকোলেট ও শুকরের মাংসের দাম কমবে৷ বাড়বে রাসায়নিক, পোশাক ও বিয়ার রপ্তানি৷ আর ইউরোপে কমবে জাপানিজ যন্ত্রপাতি, চা ও মাছের দাম৷
কীভাবে বড় হলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন
১৯৫৭ সালে পশ্চিম ইউরোপের ছয় দেশ নিয়ে শুরু হয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ এরপর থেকে এর পরিসর বেড়ে এখন ২৮টি দেশ এর সদস্য৷ বিগত বছরগুলোতে এই জোটের পরিসর কীভাবে পরিবর্তিত হলো তা থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Diezins
১৯৫৭: ছয় দেশের নতুন ইউরোপ
রোম চুক্তি সই করার মধ্য দিয়ে ১৯৫৭ সালের ২৫ মার্চ জোট বাধে জার্মানি, ফ্রান্স, ইটালি, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস ও লুক্সেমবুর্গ৷ সমন্বিতভাবে অভ্যন্তরীণ ও আন্তঃদেশীয় বাণিজ্যে সুবিধা নেয়াই ছিল ইউরোপীয়ান ইকোনোমিক কমিউনিটি বা ইইসি নামের এই জোটের লক্ষ্য৷ ইইসি ও অন্য জোটগুলো মিলে কয়লা, ইস্পাত ও পরমাণু সহযোগিতায় একসঙ্গে কাজ শুরু করলে এর নাম হয় ইউরোপীয়ান কমিউনিটিস বা ইসি৷
ছবি: picture-alliance/AP Images
১৯৭৩: ব্রিটেন, আয়ারল্যান্ড ও ডেনমার্ক
যুক্তরাজ্য শুরুতে গররাজি থাকলেও ষাট এর দশকে এসে যোগ দেয়৷ ফ্রেঞ্চদের বিরোধিতার কারণে প্রথম দু’বার তাদের যোগ দেয়ার প্রচেষ্টা সফল হয়নি৷ পরে অবশ্য প্যারিস তাদের আপত্তি তুলে নেয় এবং আয়ারল্যান্ড ও ডেনমার্কের সঙ্গে ১৯৭৩ সালে ইসি-তে যোগ দেয় যুক্তরাজ্য৷ তবে সেজন্য ১৯৭৫ সালে নিজ দেশে একটি গণভোটেরও আয়োজন করতে হয় ব্রিটিশদের, যেখানে সিংহভাগ মানুষ এর পক্ষে ভোট দেয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Lipchitz
১৯৮১: গ্রিস
ছয় বছর চেষ্টার পর ১৯৮১ সালে দশম সদস্য হিসেবে ইসি-তে যোগ দেয় গ্রিস৷ ১৯৭৪ সালে ভূমধ্যসাগরের দেশটিতে সামরিক স্বৈরশাসনের পতন ও গণতন্ত্রের পুনর্বহালের সময় চলমান টানাপোড়েন জোটে যোগ দেয়ার বিষয়টিকে বাধাগ্রস্ত করে৷ এমনকি এই অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল দেশটির জোটভুক্ত হওয়া নিয়ে মতভিন্নতা ছিল অন্য দেশগুলোর মধ্যে৷
ছবি: Getty Images/C. Furlong
১৯৮৬: স্পেন ও পর্তুগাল
পাঁচ বছর পর জোটভুক্ত হয় স্পেন ও পর্তুগাল৷ গ্রিসের মতো তারাও ছিল নতুন গণতন্ত্রের দেশ৷ স্পেনের স্বৈরশাসক ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কো মারা যান ১৯৭৫ সালে৷ সে বছর পর্তুগালেও স্বৈরশাসক সরকারের পতনের পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়৷
ছবি: picture-alliance/G. Silva
১৯৯৫: অস্ট্রিয়া, সুইডেন ও ফিনল্যান্ড
ইসি আজকের দিনের ইউরোপীয় ইউনিয়নে পরিণত হয় ১৯৯২ সালে মাস্ট্রিক্ট চুক্তি অনুযায়ী৷ ১৯৯৫ সালে নতুন রূপের এই জোটে যোগ দেয় অস্ট্রিয়া, সুইডেন ও ফিনল্যান্ড৷ শীতল যুদ্ধের সময় এই তিন দেশই নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে৷ ফলে নর্থ অ্যাটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন বা ন্যাটো জোটভুক্ত হয়নি তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/L. Bry
২০০৪: পূর্ব ইউরোপের দশ দেশ
২০০৪ সালের ১ মে ইইউ-তে সবচেয়ে বড় সম্প্রসারণের ঘটনা ঘটে৷ চেক রিপাবলিক, এস্তোনিয়া, সাইপ্রাস, লাটভিয়া, লিথুনিয়া, হাঙ্গেরি, মাল্টা, পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া ও স্লোভেনিয়া যুক্ত হয়৷ এই দেশগুলোর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অগ্রগতির জন্য এটি একটি বিরাট উদ্যোগ ছিল৷ দুই দশক আগেও এই দেশগুলোতে কমিউনিজম ছিল৷ সেখান থেকে বেরিয়ে এসে গণতন্ত্র ও পুঁজিবাদি রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছে এই উদ্যোগ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
২০০৭: রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া
২০০৪ সালেই রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া জোটভুক্ত হতে চেয়েছিল৷ কিন্তু জোট থেকে দেশ দু’টির বিচার বিভাগ ও রাজনীতিতে যে সংস্কারের শর্ত দেয়া হয়েছিল, তা পূর্ণ করতে দেরি হওয়ায় তাদের জোটভুক্তির প্রক্রিয়াও দেরি হয়৷ এই ব্লকের সবচেয়ে গরিব ও দুর্নীতিপরায়ণ দেশ এরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Donev
২০১৩: ক্রোয়েশিয়া
সবশেষ জোটভুক্ত দেশ ক্রোয়েশিয়া৷ স্লোভেনিয়ার পর রক্তক্ষয় করে যুগোস্লাভিয়া থেকে বেরিয়ে আসা দ্বিতীয় দেশ হিসেবে ইইউ-তে যোগ দেয় তারা৷ যুগোস্লাভিয়া থেকে বিচ্ছেদ হওয়া আরো দু’টি দেশ মন্টেনেগ্রো ও সার্বিয়া ২০১২ ও ২০১৪ সাল থেকে জোটে যোগ দেবার চেষ্টা করে যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/D. Puklavec
ভবিষ্যত: মেসিডোনিয়া ও আলবেনিয়া
২০১৮ সালের জুনে ইইউ সিদ্ধান্ত নেয় যে, আরো দু’টি বলকান দেশ, মেসিডোনিয়া ও আলবেনিয়াকে যুক্ত করার বিষয়ে কথাবার্তা শুরু করা যেতে পারে৷ তবে বসনিয়া-হ্যারৎসেগোভিনা ও কসভোর মতো অন্য যুগোস্লাভ দেশগুলোর বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot/Qian Yi
9 ছবি1 | 9
এর কারণ জাপানের পণ্যের ওপর ৯৯ ভাগ আমদানি শুল্ক কমানো হচ্ছে৷ তবে ইউরোপীয় পণ্য জাপানে রপ্তানির ওপর ৯৪ শতাংশ শুল্ক কমানো হচ্ছে৷ তবে সেই কমানোর হার আস্তে আস্তে ৯৯ শতাংশে নেয়া হবে৷
যদিও এই বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে ২০১৩ সাল থেকে, চুক্তিটি এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে শুল্ক আরোপ নিয়ে দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে৷ এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র চীনের ৩৪ বিলিয়ন ডলারের চীনা পণ্যের ওপর ২৫ ভাগ শুল্ক আরোপ করেছে৷ চীনও প্রায় সমমূল্যের যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের উপর শুল্ক বাড়িয়ে এর জবাব দিয়েছে৷
ইইউ'র সঙ্গে শুল্ক আরোপ নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের৷ ক'দিন আগে এ সংকট চরম আকার ধারণ করে৷
এদিকে, ইইউ ওজাপান চুক্তির বাইরেও আরো বড় পরিসরে বাণিজ্য সমঝোতায় আসার পরিকল্পনা পোক্ত করেছে৷ সেখানে যোগ দিচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, মেক্সিকো, ভিয়েতনামসহ আরো কয়েকটি দেশ৷ পূর্ব-পশ্চিমের এই নতুন বাণিজ্যের পথচলায় সঙ্গে নেই যুক্তরাষ্ট্র৷
ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলছে, এই চুক্তির ফলে শুধু রপ্তানিই বাড়বে না, ইউরোপে চাকরি বা কাজের নিরাপত্তা বাড়বে৷
জেডএ/এসিবি (এপি)
যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা
২০১৭ সালে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩৭৫ বিলিয়ন ডলার৷ ঘাটতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করেছে৷ চীন পালটা জবাব দিচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/Minneapolis Star Tribune
তদন্তের ঘোষণা
২০১৭ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেয়ার কয়েকদিন পর মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লাইটহাইজার বাণিজ্য ক্ষেত্রে চীনের অন্যায় আচরণের তদন্তের ঘোষণা দেন৷ ১৯৭৪ সালের বাণিজ্য আইনের ৩০১ ধারা অনুযায়ী, মার্কিন প্রেসিডেন্ট কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়াই কোনো দেশের উপর শুল্ক আরোপ করতে পারেন৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
চীনের প্রতিনিধি প্রেরণ
গত মার্চ মাসে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তাঁর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা লিউ হে-কে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠান৷ সেখানে তিনি মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী স্টেভেন মানুশিন ও বাণিজ্য প্রতিনিধি লাইটহাইজারের সঙ্গে বৈঠক করেন৷ এই সময় বাণিজ্য ক্ষেত্রে উত্তেজনা প্রশমন নিয়ে দুই পক্ষ কথা বলে৷ লিউ হে এখন চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী৷
ছবি: Reuters/J. Lee
চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ
চলতি বছরের ২২ মার্চ ৬০ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ চীনা পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করা হবে বলে জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ চীনের বিরুদ্ধে তিনি মেধাসত্ত্ব চুরির অভিযোগ আনেন৷
ছবি: Reuters/J. Ernst
চীনের জবাব
পালটা প্রতিক্রিয়া হিসেবে চীনও ৫০ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ মার্কিন পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়৷ যুক্তরাষ্ট্রের মতোই তারা এসব পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হবে বলে জানায়৷ ট্রাম্প সমর্থক ভোটাররা বেশি বাস করেন এমন সব রাজ্যের সয়াবিন, মাংস, হুইস্কিকে শুল্কের আওতায় আনার কথা জানায় চীন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা?
গত এপ্রিলে যাত্রীবহণকারী গাড়ি আমদানির উপর শুল্ক কমানোর ঘোষণা দেয় চীন৷ এ ধরনের গাড়ির উপর ধার্য থাকা শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হবে বলে জানায় দেশটি৷
ছবি: picture-alliance/Xinhua/Li Xueren
হুমকি স্থগিত
মে মাসের ২০ তারিখে মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী স্টেভেন মানুশিন জানান, দুই দেশ বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে৷ তাই যুক্তরাষ্ট্র আপাতত চীনা পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের বিষয়টি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান তিনি৷
ছবি: Reuters/A.P. Bernstein
আবারও ঘোষণা
শুল্ক আরোপ স্থগিত রাখার তিন সপ্তাহ পর ট্রাম্প প্রশাসন আবারও ৫০ বিলিয়নের সমপরিমাণ চীনা পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়৷ পালটা প্রতিক্রিয়া হিসেবে চীনও সমপরিমাণ মার্কিন পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করে৷
ছবি: picture-alliance/MediaPunch/CNP/C. Kleponis
কার্যকর
অবশেষে ১৫ জুন যুক্তরাষ্ট্র জানায় যে, ৬ জুলাই থেকে ৩৪ বিলিয়নের সমপরিমাণ চীনা পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে৷ চীন বলেছে, এর ফলে ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য যুদ্ধ’ শুরু হতে পারে৷ বিষয়টি নিয়ে তারা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবে বলেও জানায় চীন৷