ইইউ-যুক্তরাজ্য বাণিজ্য চুক্তিতে সই করল ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশ। ১ জানুয়ারি থেকে চুক্তি কার্যকর হবে।
বিজ্ঞাপন
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাকি ২৭টি দেশও ইইউ এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যে হওয়া নতুন বাণিজ্য চুক্তিতে সই করল। প্রায় ১০ মাস ধরে চলা বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা শেষ পর্যন্ত সবুজ সংকেত পেল। তবে এখনো বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। পরবর্তী ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্যের বৈঠকে চুক্তিটি লিখিত আকারে গ্রহণ করা হবে। তারপরেই তা স্থায়ী হিসেবে গণ্য হবে। তবে আপাতত ১ জানুয়ারি থেকে চুক্তিটি কার্যকরী হয়ে যাবে।
ব্রেক্সিটের পরে ইইউ-র সঙ্গে যুক্তরাজ্যের আদৌ কোনো বাণিজ্য চুক্তি হওয়া সম্ভব কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় ছিল। এক সময় মনে হচ্ছিল, জট কাটবে না। বাণিজ্য চুক্তিও সফল হবে না। চুক্তি না হলে ইউরোপের দেশগুলি এবং যুক্তরাজ্য দুই তরফই যথেষ্ট ক্ষতির মুখে পড়ত। কিন্তু সমস্যা ছিল চুক্তির খসড়া নিয়ে। সকলেরই আলাদা আলাদা দাবি ছিল। শেষ পর্যন্ত গত সপ্তাহে চুক্তি চূড়ান্ত হয়। সোমবার ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলি বৈঠকে বসেছিল। সেখানেই ২৭টি দেশ চুক্তিতে সই করে।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন লিখেছেন, ইইউ-র প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা হয়েছে। নতুন চুক্তি নিয়ে আশাবাদী।
ইইউ প্রধান উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন াগেই এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। সোমবার তিনি জানিয়েছেন, এই চুক্তির ফলে ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ স্থাপিত হলো। দ্রুত চুক্তিটি স্থায়ী হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ইইউ-যুক্তরাজ্য ব্রেক্সিট বাণিজ্য চুক্তিতে যা আছে
ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথ যতটা সম্ভব মসৃণ করতে বাণিজ্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে যুক্তরাজ্য৷ চলুন দেখে নেয়া যাক চুক্তির চুম্বক অংশগুলো....
ছবি: Getty Images/AFP/G. Kirk
শূন্য শুল্ক
যুক্তরাজ্য ইইউর বাজার ছাড়ার পর পণ্যের শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের সুবিধা দেবে এই চুক্তি৷ এর ফলে ২০২১ সালের জানুয়ারিতেও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নির্বিঘ্নে চলবে, ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে৷ ওয়াইন, অর্গ্যানিকস, অটোমোটিভ ফার্মাসিউটিক্যালস এবং কেমিক্যালসের মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পগুলোর জন্য কিছু বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে এ চুক্তিতে৷
ছবি: Aaron Chown/AFP/Getty Images
যাতায়াত
এই চুক্তির মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যে অবাধ যাতায়াত, চাকরি, লেখাপড়া করা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা বা বসবাস করার সুযোগের অবসান হলো৷তবে সর্বোচ্চ ৯০ দিনের জন্য ইইউভুক্ত দেশ এবং যুক্তরাজ্যে যাওয়া আসার জন্য ভিসা লাগবে না৷ এছাড়া ইইউ বা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বাসিন্দার যদি কোনো চাকরি, ব্যবসা বা অবসরভাতার মতো কোনো বিষয় কিংবা বাবা-মায়ের রেখে যাওয়া সম্পদ থাকে, সেগুলো তাদেরই থাকবে৷
ছবি: picture-alliance/empics/S. Parsons
বিমান চলাচল এবং নিরাপত্তাজনিত সহযোগিতা
যুক্তরাজ্যের যাত্রীবাহী বিমানগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়নে আগের মতো মুক্তভাবে যাতায়াতের অধিকার হারাবে৷এখন থেকে দু পক্ষ পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে বিমানের নিরাপদ চলাচল, নিরাপত্তা এবং এয়ার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করবে৷
ছবি: Markus Mainka/picture alliance
ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারদের স্বীকৃতির প্রশ্ন
ইইউ এবং যুক্তরাজ্যের ডাক্তার, নার্স, ফার্মাসিস্ট, ইঞ্জিনিয়ার এবং এমন আরো কিছু পেশাজীবী যে আগে অবাধ স্বীকৃতি পেতেন, সেই সুযোগ আর থাকবে না৷
ছবি: Maciek Musialek/NurPhoto/picture alliance
জ্বালানি সহযোগিতা
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরীন জ্বালানি বাজার, ইউরোপিয়ান অ্যাটমিক এনার্জি কমিউনিটি এবং ইইউর এমিশন ট্রেডিং সিস্টেম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে ব্রিটেন৷
ছবি: Gareth Fuller/empics/picture alliance
বিজ্ঞান, গবেষণা
শিক্ষা, গবেষণা এবং প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এরাসমুস ইউনিভার্সিটি প্রোগ্রাম, গ্যালিলিও স্যাটেলাইট সিস্টেমসহ সব কর্মসূচি বন্ধ করবে যুক্তরাজ্য৷ তবে হরাইজন ইউরোপ, দ্য ইউরাটম রিসার্চ এবং ট্রেনিং প্রোগ্রামসহ ছয়টি কর্মসূচির সঙ্গে থাকবে ব্রিটেন৷
ছবি: Chris Ison/empics/picture alliance
ট্রাক যাতায়াত
যুক্তরাজ্যের ট্রাক আর আগের মতো অবাধে সীমান্ত পেরিয়ে ইইউ-তে আসতে পারবে না৷তবে একটি স্থান থেকে আরেকটি স্থানে যাতায়াতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এই চক্তিতে৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিটি দেশই এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে। জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল চুক্তিটিকে ঐতিহাসিক বলে ব্যাখ্যা করেছেন। তবে ফ্রান্স জানিয়ে রেখেছে, ফরাসি জেলেদের স্বার্থ সুরক্ষিত না হলে তারা ভেটো দেবে। ব বস্তুত, ১০ মাস ধরে চুক্তিটি নিয়ে আলোচনায় ফরাসি মৎসজীবীদের বিষয়টি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্স এই বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ বিতর্ক করেছে। ফ্রান্স জানিয়েছে, যুক্তরাজ্য জেলেদের মাছ ধরার বিষয়ে সমস্যা তৈরি করবে না বলে আশ্বাস দিয়েছে। আশ্বাস যথাযথ না হলে তারা চুক্তিতে ভেটো দেবে। ফরাসি মৎসজীবীরাও চুক্তিটিকে স্বাগত জানিয়েছেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁর এক পারিষদ ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, মুখে ভেটো দেওয়ার হুমকি দিলেও মাক্রোঁ চুক্তিটিকে স্বাগত জানিয়েছেন।