ব্রেক্সিট বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে চরমসীমা বেঁধে দিলেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ১৫ অক্টোবরের মধ্যে ইইউ-র সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি না হলে যুক্তরাজ্য আলোচনাই বন্ধ করে দেবে।
বিজ্ঞাপন
ব্রেক্সিটের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে অবাধ বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছে যুক্তরাজ্যের। কিন্তু কোনো মতৈক্য হয়নি। এ বার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙেছে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের। রোববার তিনি চরমসীমা বেঁধে দিয়েছেন। জনসন বলেছেন, ''১৫ অক্টোবরের মধ্যে ইউরোপীয় কাউন্সিলের সঙ্গে চুক্তি হতেই হবে। এর পর আর আলোচনা চালানোর কোনো অর্থ হয় না। চলতি বছরের শেষ থেকে এই চুক্তি কার্যকর হবে।''
জনসনের যুক্তি, ''ওই সময়সীমার পর আর আলোচনা করে লাভ নেই। আমরা যদি এতদিন ধরে আলোচনা করে কিছু করতে না পারি, তা হলে আর তা টেনে নিয়ে যাওয়ার অর্থ নেই। তারপর আমি মনে করব, আমাদের মধ্যে অবাধ বাণিজ্য চুক্তি হওয়া সম্ভব নয়।'' মঙ্গলবার থেকে লন্ডনে ব্রেক্সিটের পর কী হবে তা নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা শুরু হবে। তার আগে এই হুমকি দিয়ে জনসন বাড়তি চাপ তৈরি করলেন।
এর আগে ব্রাসেলসও জানিয়েছিল, অক্টোবরের মাঝামাঝির মধ্যে এই চুক্তির কাজ শেষ করে ফেলতে হবে। কারণ, তা ইউরোপীয় পার্লামেন্টে পাস করাতে হবে।
বাণিজ্য, শুল্ক ও টয়লেট ব্রাশ: ২০১৯র ব্যবসা চিত্র
যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য যুদ্ধ চরমে পৌঁছেছে, ব্রেক্সিট অচলাবস্থা নিরসনেও নেই আশার আলো৷ যুক্তরাষ্ট্রের বিমান নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বোয়িংও তাদের নতুন মডেল ৭৩৭ ম্যাক্স নিয়ে চরম বেকায়দায়৷ দেউলিয়া হয়েছে বিখ্যাত টমাস কুক৷
ছবি: Getty Images/AFP/STR
ট্রাম্প ব্রাশ কেন বেস্টসেলার?
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দারুণ সক্রিয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনর্থক কথার জন্যও কুখ্যাত৷ তার উদ্ভট কর্মকাণ্ডের প্রভাব এমনকি দেশটির ফেডারেল রিজার্ভের উপরও পড়েছে, মন্থর হয়েছে অর্থনীতির চাকা৷ চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করে তিনি দেশি কোম্পানিগুলেও বিপদে ফেলেছেন৷ এই যখন অবস্থা তখন রাগ কমাতেই হয়তো ট্রাম্পের আদলে তৈরি এই টয়লেট ব্রাশের এত চাহিদা৷
ছবি: Getty Images/AFP/STR
পাল্টা-পাল্টি শুল্কারোপ, কবে হবে চুক্তি?
বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দুই দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে গত দুই বছর ধরে যে বাণিজ্য যুদ্ধ চলছে তাতে শুধু তারাই নয় বরং বিশ্বজুড়ে প্রায় সব কোম্পানিকে ফল ভোগ করতে হচ্ছে৷ উভয় দেশ পরষ্পরের পণ্যের উপর চার হাজার ৫০০ কোটি টাকার শুল্কারোপ করেছে৷
ছবি: AFP/M. Medina
হুয়াওয়ে কি শেষ?
চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধের সবচেয়ে বড় বলি সম্ভবত হুয়াওয়ে৷ ট্রাম্প চীনের বৃহৎ এ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্কের উপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন৷ ওই নিষেধাজ্ঞার গ্যাড়াকলে পড়ে অন্যান্য দেশও হুয়াওয়ের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারছে না৷
কোন পথে ব্রেক্সিট?
গত দুই বছর ধরে ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্কোচ্ছেদ প্রশ্নে যুক্তরাজ্যে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা আবসানের পথ এখনো দেখা যাচ্ছে না৷ যদিও আগাম নির্বাচনে আরো বড় জয় নিয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসা প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন যেকোনো মূল্যে ব্রেক্সিট চান৷ কিন্তু পার্লামেন্ট তাকে সেই পথে কতটুকু সফল হতে দেবেন সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা৷
ছবি: Reuters/F. Lenoir
বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্সের ভবিষ্যৎ কী?
মাত্র পাঁচ মাসের ব্যবধানে দুইটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ৩৬০ জনের বেশি আরোহী নিহত হওয়ায় পর বিশ্বের সব এয়ারলাইন বোয়িংয়ের নতুন এ মডেলের বিমান উড্ডয়ন বন্ধ করে দেয়৷ বেশ কয়কজন পাইলটও বিমানটির স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ প্যানেল নিয়ে আভিযোগ করেছেন৷ বোয়িং আপাতত এই মডেলের বিমান উৎপাদন বন্ধ রেখেছে৷
ছবি: AFP/Getty Images/M. Ralston
বাঁচানো যেত কি টমাস কুক?
যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো অবকাশ পর্যটন কোম্পানি টমাস কুককে সেপ্টেম্বরে দেউলিয়া ঘোষণার পর প্রায় দেড় লাখ পর্যটককে দেশে ফেরত আনতে দেশটির সরকারকে নতুন করে ফ্লাইটের ব্যবস্থা করতে হয়েছিল৷ যুদ্ধ পরিস্থিতি ছাড়া কখনো এমনটা করতে হয়নি৷ ১৮৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিটির এ পতন অনেকের কাছেই দারুণ হতাশার৷
ছবি: Reuters/E. Calvo
6 ছবি1 | 6
এই বছর ৩১ জানুয়ারি যুক্তরাজ্য ইইউ থেকে বেরিয়ে এসেছে। বহু বছর তারা ইইউ-তে ছিল। গণভোটে খুব অল্প সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ব্রেক্সিটের পক্ষে মত দেন যুক্তরাজ্যবাসী। এরপর থেকে অবাধ বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে। দুই পক্ষই একে অন্যের বিরুদ্ধে অনড় মনোভাবের অভিযোগ এনেছে। যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা আটকে গেছে তা হলো, যুক্তরাজ্যের সীমান্তে মাছ ধরার অধিকার এবং শিল্পগুলিকে সরকারি অনুদান দেওয়া নিয়ে। যুক্তরাজ্য দুইটি ক্ষেত্রেই পূর্ণ অধিকার দাবি করেছে।
যুক্তরাজ্যের পক্ষে প্রধান আলোচনাকারী হলেন ডেভিড ফ্রস্ট। তিনি সংবাদপত্রকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তাঁদের আশঙ্কা নো ডিল ব্রেক্সিট হতে চলেছে।
জনসন বলেছেন, ''ইইউ-র সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার ধাঁচে চুক্তি হলেও তা স্বাগত।'' অস্ট্রেলিয়া বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম ও মাসুল মেনে ইইউ-র সঙ্গে বাণিজ্য করে। জনসন বলেছেন, ''সরকার হিসাবে আমরা সব বন্দর ও সীমান্তকে এই ধরনের চুক্তির ব্যাপারে প্রস্তুত রাখছি। আইন, নিয়ম ও মাছ ধরার ব্যাপারে আমাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্র্রণ আছে। আমরা ইইউ-র বন্ধুদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করতে রাজি। আমাদের দরজা বন্ধ হবে না। আমরা বন্ধু ও অংশীদারদের সঙ্গে বাণিজ্য করব। কিন্তু আমরা আমাদের মৌলিক বিষয়গুলির সঙ্গে সমঝোতা করব না।''
জনসন বলছেন, ''ইইউ যদি তাঁদের বর্তমান অবস্থান বদলায়, তা হলে এখনো চুক্তি সম্ভব।'' অর্থাৎ, যুক্তরাজ্য তাদের অবস্থান নরম করবে না। মনোভাব বদলাতে হবে ইইউ-কেই।