জাপানের ক্ষমতাসীন দলের প্রবীণতম মহাসচিব তোশিহিরো নিকাই জানিয়েছেন, অলিম্পিক গেমস বাতিল হতে পারে।
বিজ্ঞাপন
জাপানেও করোনা বাড়ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অবস্থাও খারাপ। এই পরিস্থিতিতে জাপানে অলিম্পিক গেমস বাতিল হতে পারে বলে জানালেন তোশিহিরো নিকাই। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন দলের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। একটি টিভি অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ''বলা হচ্ছে, অলিম্পিক গেমস করা সম্ভব নয়। সেরকম হলে আমাদেরও না করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।''
এই প্রথম ক্ষমতাসীন দলের একজন প্রধান কর্মকর্তা স্বীকার করলেন টোকিও অলিম্পিক গেমস বাতিল হতে পারে। জাপানের রাজনীতিতে নিকাই খুবই ক্ষমতাশালী। তিনি এই কথা বলায় অলিম্পিক গেমস হওয়া নিয়ে সন্দেহ আরো বেড়েছে। গত বছর গেমস হওয়ার কথা ছিল। করোনার কারণে এমনিতেই তা একবছর পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।
টোকিও অলিম্পিক: অনিশ্চয়তা এবং লাভ-ক্ষতির হিসাব
২০২০ সালের ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’, অর্থাৎ অলিম্পিক গেমস নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনো কাটেনি। দেখা যাক কেন এখনো অনিশ্চয়তা আর আসর হলে বা না হলে কার কত ক্ষতি হতে পারে।
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Melnikov
কবে শুরু?
শুরু হওয়ার কথা আগামী ২৪ জুলাই থেকে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে মৃত্যুর মিছিল শুরু হওয়ায় আসরের আয়োজন নিয়েই দেখা দেয় অনিশ্চয়তা।
ছবি: picture-alliance/dpa/ZUMA/A. Vafeiadakis
আইওসি এখনো অনড়
গত সোমবার বেশ কিছু দেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করেছে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি)। আলোচনা শেষে এক বিবৃতিতে আইওসি বলেছে, "গেমসের চার মাসের বেশি বাকি থাকতে কঠোর কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন নেই। এখনই কিছু অনুমান করতে যাওয়া হবে অগঠনমূলক।" আয়োজক জাপানের প্রধানমন্ত্রী আগেই বলেছেন, তার দেশ চায় সময়মতো অলিম্পিক আয়োজন করে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে মানবজতির জয় ঘোষণা করতে।
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
কেন অনড় আইওসি?
মূল কারণ টাকা। অলিম্পিক গেমস না হলে বা পিছিয়ে গেলে আয়োজক জাপান, আইওসি, ক্রীড়াবিদ, স্পন্সর এবং প্রচারের সত্ত্ব পাওয়া টিভি চ্যানেল- সবারই বিশাল অঙ্কের ক্ষতি হবে। তাই আগেই 'নেতিবাচক' সিদ্ধান্ত নিতে সবাই নারাজ।
ছবি: picture-alliance/dpa/Maxppp/Kyodo
কেন ক্ষতি?
১১ হাজার ক্রীড়াবিদের এই আয়োজন সার্থক করতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছে সব পক্ষ। আয়োজক জাপান, আইওসি এবং অংশগ্রহণেচ্ছু দেশগুলো অনিবার্য কারণে আসর পেছাতে বা বাতিল করতে বাধ্য হলে ইনস্যুরেন্স কোম্পানির কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবে। আগেভাগে পেছানো বা বাতিল করা হলে ক্ষতিপূরণ দেবে না ইনস্যুরেন্স কোম্পানি।
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/S. Belcher
বড় ক্ষতির আশঙ্কায় জাপান
টোকিও অলিম্পিকের আয়োজক কমিটি গত ডিসেম্বরে জানিয়েছিল, আসরের আয়োজনে তাদের ১১৫০ কোটি ডলারের মতো খরচ হয়ে গেছে। আয়োজকরা তখনই বলেছিল, ম্যারাথন টোকিও থেকে সাপ্পোরোতে সরিয়ে নেয়াসহ আরো কিছু কাজে যে ব্যয় হবে তা হিসেব করা হয়নি।
ছবি: picture-alliance/AP/Wang Zhao
অলিম্পিক না হলে স্পন্সরদের সর্বনাশ
স্পন্সর কোম্পানিগুলোর ক্ষতির দিকটাও মাথায় রাখতে হচ্ছে আয়োজক কমিটি এবং আইওসিকে। টয়োটা, ব্রিজস্টোন, প্যানাসনিক এবং স্যামসাংয়ের মতো প্রতিষ্ঠান প্রচুর বিনিয়োগ করেছে এই আসরে। জাপানের কোম্পানিগুলোই নাকি ২৭৫ কোটি ডলারেরও বেশি খরচ করেছে।
ছবি: picture alliance/AP Photo
আইওসির আর্থিক দুশ্চিন্তা
অলিম্পিক আয়োজনে সর্বোচ্চ ২৩০০ কোটি ডলার ব্যয় হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমন মহাযজ্ঞে আইসির অবদান সাত কোটি ৪০ লক্ষ ইউরো।
ছবি: Imago-Images/Xinhua
ক্রীড়াবিদদের ক্ষতি
প্রতি চার বছর পর আসে একটা সুযোগ। ক্রীড়াবিদদের প্রস্তুতিও চলে চার বছর ধরে। আসর না হলে সব কষ্ট মাটি, সব স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ।
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Jones
আসর হলে কী সমস্যা?
সবচেয়ে বড় ঝুঁকি দর্শক এবং ক্রীড়াবিদদের নভেল করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার।
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Melnikov
অলিম্পিক বাতিলের অতীত
১৯১৬, ১৯৪০ আর ১৯৪৪ - এই তিনবার অলিম্পিক হয়নি। সেই তিনবার না হওয়ার কারণ ছিল বিশ্বযুদ্ধ।
ছবি: Reuters/D.Sagolj
পরে হলে কবে?
জুলাইতে না হলে আগামী অক্টোবর মাসে আয়োজন করা যেতে পারে অলিম্পিক গেমস।তখন হলে সমস্যা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের টেলিভিশন চ্যানেল এনবিসির। কারণ, সেপ্টেম্বরে শুরু হবে এনএফএল। বাস্কেটবলের এই আকর্ষণীয় আসরের সম্প্রচারসত্ত্ব পেয়েছে এনবিসি। অবশ্য বাতিল না করলে আগামী বছর বা তার পরেও হতে পারে অলিম্পিক৷ তাতে অন্য ধরনের জটিলতার আশঙ্কা থাকলেও সেটাও হবে মন্দের ভালো৷
ছবি: Reuters/Kim Hong-Ji
11 ছবি1 | 11
নিকাইয়ের এই মন্তব্য এসেছে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির সহ সভাপতি জন কোটসের কথার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। তিনি বলেছিলেন, টোকিও অলিম্পিক গেমস বতিল করার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না।
করোনার কারণে বুধবার জাপানে অলিম্পিক মশাল রিলে বন্ধ করা হয়েছে। কারণ, কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা ছিল, এর ফলে করোনা সংক্রমণ হতে পারে। জাপানে এখনো কড়াভাবে করোনা-বিধি চালু আছে।