ফেলে দেয়া প্লাস্টিক ব্যবহার করে চমক সৃষ্টি করেছেন এক ইংলিশ শিল্পী৷ বিশ্বের নামি সব চিত্রকর্ম নতুন করে গড়ছেন তিনি৷ উদ্দেশ্য মানুষকে আনন্দ দেয়া, তাদের মুখে হাসি ফোটানো৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত সব পোরট্রেটগুলো প্লাস্টিক দিয়ে পুনরায় তৈরি করেন জেন পার্কিন্স৷ রিসাইক্লিং আর্টিস্ট হিসেবে পরিচিত তিনি৷ তাঁর কথায়, ‘‘আমি প্লাস্টিক উপাদান নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করি৷ ব্যতিক্রমী রং, আকার আমাকে উৎসাহ যোগায়৷ সাধারণ মানুষ অন্যান্য পেন্টিং এর চেয়ে এগুলোর দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকে, কেননা এতে সবসময়ই নতুন কিছু খুঁজে পাওয়া যায়৷''
অসংখ্য একক উপাদান ব্যবহার করে ছবি তৈরি করেন পার্কিন্স৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা কত কত জিনিস যে আবর্জনা হিসেবে ফেলে দেই তা দেখে আমি সবসময়ই শঙ্কিত হই৷ আপনি পুরনো জিনিস-পত্র বিক্রির বাজারে গেলে পাহাড়প্রমাণ অপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর সন্ধান পাবেন৷''
ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত এক্সেটার শহরের ফ্লি মার্কেটে নিয়মিত যান জেন পার্কিন্স৷ সেখান থেকে খুঁজে খুঁজে চিত্রকর্মের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান কিনেন তিনি৷ প্লাস্টিকের খেলনাও রয়েছে তাঁর তালিকায়৷ এ সব সামগ্রীতে কোনো রকম পরিবর্তন করেন না তিনি৷ তাই সব আকার এবং রংয়ের জিনিস কিনতে হয়৷
প্রতিটি ছবিতে হাজার হাজার সামগ্রী ব্যবহার করেন জেন৷ সেগুলো তিনি ফ্লি মার্কেট থেকে কেনেন৷ কখনো কখনো বন্ধু এবং অনুসারীরা বিভিন্ন সামগ্রী দানও করেন৷ তবে ছেলের খেলনায় হাত পড়ে না৷
বিখ্যাতরা ছোটবেলায় যেমন আঁকতেন
আজ তাঁরা বিখ্যাত৷ কিন্তু ছোটবেলায় কেমন আঁকতেন তাঁরা? তাঁদের সেসময়কার কাজেকর্মে কি বোঝা গিয়েছিল যে, তাঁদের ভবিষ্যত উজ্জ্বল৷ ছবিঘরে এই বিষয়টাই জানার চেষ্টা করা হয়েছে৷
ছবি: Courtesy: Jonathan Meese . Com.m Copyright VG Bild-Kunst, Bonn
ইয়োনাথান মেসে
ছয় বছর বয়সে এই ছবিটি এঁকেছিলেন জার্মান শিল্পী ইয়োনাথান মেসে৷ এখন তাঁর বয়স ৪৪৷ শিশু অবস্থায় যিনি ললিপপ আর লণ্ঠনের ছবি এঁকেছিলেন, তিনি পরবর্তীতে বিতর্কের জন্ম দেন৷ মেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তাঁর শিল্পকর্মে নাৎসি প্রতীকের উপস্থিতি ছিল৷ এজন্য তাঁকে আদালতেরও মুখোমুখি হতে হয়৷ অবশ্য পরে সেটা খারিজ হয়ে যায়৷
ছবি: Courtesy: Jonathan Meese . Com.m Copyright VG Bild-Kunst, Bonn
কাটিয়া স্ট্রুনৎস
জার্মানির কাটিয়া স্ট্রুনৎস ১২ বছর বয়সে আঁকা এই ছবিতে জঙ্গলের চিত্র তুলে ধরেছেন৷ একপাশে হাতির পিঠে টারজান আর অন্যপাশে বাঘকে দেখা যাচ্ছে৷ এর মধ্যে গাছগুলোতে তিনি বেশ রংয়ের ব্যবহার করেছেন৷ অবশ্য স্ট্রুনৎসের এখনকার তৈরি ভাস্কর্যগুলোতে রংয়ের ব্যবহার কমে এসেছে৷
ছবি: Courtesy Katja Strunz
টাল আর
যুদ্ধের সময় জন্ম নেয়ার কারণেই হয়ত শিল্পী টাল আর-এর ছোটবেলায় আঁকা এই ছবিতে সশস্ত্র মানুষ, ট্যাংক আর যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে৷ বর্তমানে তিনি জার্মানির একটি আর্ট অ্যাকাডেমিতে শিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন৷
ছবি: Courtesy: TAL R / Copyright Paradis
আক্সেল গাইস
বর্তমানে জার্মানির অন্যতম নামকরা শিল্পী আক্সেল গাইস৷ মাত্র ছয় বছর বয়সে আঁকা তাঁর এই ছবিটি ভালো করে দেখুন৷ কুকুরের চুল কাটছেন একজন নাপিত৷ আর ওদিকে আয়নায় কুকুরের মুখটা দেখা যাচ্ছে৷ মনে আছেতো, ছবিটা কিন্তু এঁকেছেন ছয় বছরের একটা ছেলে!
ছবি: Courtesy Axel Geis
উভে হেনেকেন
ছবিটি যখন এঁকেছিলেন তখন উভে হেনেকেনের বয়স আট৷ তিনি হতে চেয়েছিলেন নৃতত্ববিদ৷ কিন্তু খেয়াল করে দেখুন ছবির এই মেয়েটির দুই কান থেকে গাছ বের হচ্ছে, অর্থাৎ তিনি যে ফ্যান্টাসি পছন্দ করেন এটা তার প্রমাণ৷ হেনেকেনের এখনকার ছবিগুলোতেও সেই ফ্যান্টাসি জগৎ আর রূপকথারই পরিচয় পাওয়া যায়৷
ছবি: Courtesy Uwe Henneken and Galerie Giselal Capitain, Cologne
নোর্বার্ট বিস্কি
সাবেক পূর্ব জার্মানিতে জন্ম নিয়েছিলেন বলেই হয়ত সাত লবছর বয়সে আঁকা এই ছবিতে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের দেখা যাচ্ছে৷ বর্তমানে বিস্কি ‘ফ্রেস্কো’ (ভেজা প্লাস্টারে জল রংয়ের ব্যবহার) আঁকেন, যেগুলোতে কিশোরদের জীবনের গল্প ফুটে ওঠে৷
ছবি: VG Bild-Kunst, Bonn, Courtesy Norbert Bisky
ফিয়া লেভান্ডোভস্কি
গ্রিম ভাইদের জনপ্রিয় রূপকথাগুলোর অন্যতম ‘লিটল রেড রাইডিং হুড’৷ মাত্র চার বছর বয়সে সেটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন ফিয়া লেভান্ডোভস্কি৷ বর্তমানে জার্মানির বিভিন্ন স্থানে তাঁর ভাস্কর্য দেখতে পাওয়া যায়৷
ছবি: Courtesy Via Lewandowsky, Copyright VG Bild-Kunst, Bonn 2014
7 ছবি1 | 7
নিজের বাড়িতে ছোট্ট একটি স্টুডিওতে কাজ করেন জেন৷ পেশায় নার্স এই নারী ২০০৩ সালে শিল্পকলা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন৷ চূড়ান্ত প্রজেক্ট তৈরির সময় ‘রিসাইক্লিং'-এর প্রতি আগ্রহী হন তিনি৷ এরপর শুরু করেন পোরট্রেট তৈরির কাজ৷
অনেকে জানতে চান, তিনি কেন নিজে কিছু করার চেয়ে বিখ্যাত চিত্রকর্ম নিয়ে কাজ করেন? কিন্তু তার মধ্যেই যে আসল মজা! পার্কিন্স বলেন, ‘‘আসলে শুধুমাত্র পরিচিত ছবির সঙ্গে ব্যাপারটি ঠিকভাবে কাজ করে৷ এটা অনেকটা পরিচিত ছবি নতুন করে অপরিচিত আকারে দেখার মতো ব্যাপার৷
‘‘আমি ছবির মাধ্যমে মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই, তাদের খুশি করতে চাই৷ ছবির অন্তর্নিহিত অর্থ এখানে গুরুত্বপূর্ণ নয়৷ অপরিচিত ছবি হলে ব্যঙ্গকৌতুকের ব্যাপারটা থাকবে না৷''
লন্ডনের একটি গ্যালারি জেন পার্কিন্সের চিত্রকর্ম বিক্রি করে৷ নিউ ইয়র্ক, মেক্সিকো এবং সিঙ্গাপুরেও এগুলো বিক্রি হয়৷